বিশ্ববিদ্যালয়ে নুসরাত তার ভাস্কর্যটি ফরহাদকে দেখালো। তারপর বলল, সারপ্রাইজ!
ফরহাদ ভাস্কর্যটি দেখে অবাক হয়ে গেল। তারপর মৃদু হেসে বলল, এটা তো আমি!
নুসরাত বলল, কেমন লাগল সারপ্রাইজটা?
ফরহাদ বলল, ভেরি নাইস। কিন্তু তুমি এত তাড়াতাড়ি এটা বানালে কীভাবে?
নুসরাত বলল, এটা তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগেই তৈরী করেছি।
ফরহাদ অবাক হয়ে বলল, তাই?
নুসরাত বলল, হুম। বিশ্বাস হচ্ছে না?
ফরহাদ বলল, কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করতে। আচ্ছা, আমি এটা নিয়ে যেতে পারি?
নুসরাত বলল, এখন না। একদিন আমিই তোমাকে এটা গিফট করব।
ফরহাদ বলল, তাই?
এমন সময় আবিদ এসে উপস্থিত হলো।
নুসরাত বলল, পরিচয় করিয়ে দেই। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আবিদ। আর আবিদ, ও হলো...
আবিদ বলল, ফরহাদ।
ফরহাদ বলল, আরে, আপনি তো আমায় চিনেন দেখছি।
আবিদ বলল, না চিনে উপায় আছে? নুসরাত তো সবসময় আপনারই জিকির করে।
ফরহাদ ও আবির হ্যান্ডশেক করল। ফরহাদ বলল, আমি এখন যাই।
নুসরাত বলল, এখনই চলে যাবে? একটু ঘুরে দেখাতাম ভার্সিটিটা।
ফরহাদ বলল, না, আরেকদিন।
ফরহাদ চলে গেল। আবিদ মুখটিপে হাসতে লাগল।
নুসরাত বলল, হাসো কেন?
আবিদ বলল, এই প্রথম দেখলাম, ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দর মেয়েকে কেউ এভাবে ইগনোর করছে।
নুসরাত বলল, মোটেই না। ও আমাকে ইগনোর করছে না।
আবিদ বলল, চোখ খুলো নুসরাত। কেন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছ?
নুসরাত বলল, আমার ইচ্ছা। আমার চোখ। আমার ঘুম। আমি যখন ইচ্ছা ঘুমাব, যখন ইচ্ছা জাগব। তাতে কার কী! আমি ক্লাসে যাচ্ছি।
নুসরাত চলে গেল।
*****
আবিদ ও সুমাইয়া লাইব্রেরিতে বসে আছে। আবিদের মুখ মলিন দেখে সুমাইয়া জিজ্ঞাসা করল, পাখি কী উড়ে গেছে?
আবিদঃ ওর ছেলেমানুষি কখন যাবে বলো তো? প্রতিটি ব্যপারেই জেদ আর জেদ। ফরহাদ ওকে পাত্তাই দেয় না। আর ও, পাগলের মতো বিহ্যাভ করছে।
সুমাইয়াঃ তুমি নুসরাতকে জানিয়ে দাও যে তুমি তাকে ভালবাসো। না হলে ভীষণ দেরী হয়ে যাবে। সম্ভব হলে আজই জানিয়ে দাও।
*****
ক্লাস শেষে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই নুসরাতের পথ আটকে দাঁড়াল আবিদ।
নুসরাতঃ কী, কিছু বলবে?
আবিদঃ হ্যাঁ, বলব।
নুসরাতঃ তাড়াতাড়ি বলো। আমাকে আবার এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে।
আবিদঃ তুমি ফরহাদকে ভুলে যাও।
নুসরাতঃ মানে?
আবিদঃ ফরহাদ তোমার যোগ্য নয়। তুমি ফরহাদকে ভুলে যাও।
নুসরাত হাটতে হাটতে বলল, সেটা আমি বুঝব।
আবিদ বলল, কিন্তু আমাকেও তো বুঝতে হবে।
নুসরাত বলল, কেন বুঝতে হবে?
আবিদ বলল, কারণ, আমি তোমাকে ভালবাসি।
নুসরাত চমকে উঠল আবিরের কথা শুনে। তারপর কোন কথা না বলে চলে গেল। আবিদ তাকে বাধা দিল না।
*****
নুসরাত বাসায় এসে মনমরা হয়ে বসে রইলো। বিনু এসে বলল, আপা, খাবেন না? আজ আপনার পছন্দের খাবার রান্না করা হয়েছে।
নুসরাত বলল, জাহান্নামে যাক খাবার। তুই যা এখান থেকে।
বিনু চলে যাচ্ছিল। নুসরাত বলল, শোন, দিদা ঘরে আছে?
বিনু বলল, দাদি তো সকালেই নারায়নগঞ্জে চলে গেছেন।
নুসরাত বলল, আচ্ছা, তুই যা।
নুসরাত ব্যালকনিতে এসে বসে রইলো। তার চোখে বিন্দু বিন্দু অশ্রু। হটাৎ দেখল, আবিদ এসেছে। নুসরাত চোখ মুছল।
আবিদঃ খাচ্ছ না কেন? খাবার কী দোষ করল?
নুসরাতঃ তুমি এখানে এসেছ কেন? কী দেখতে এসেছ? বন্ধু বন্ধুকে ধোঁকা দিলে কেমন লাগে সেটা দেখতে?
আবিদঃ দেখো, আমি তোমাকে কখনও কোন ধোঁকা দেইনি। আমি তো ব্যস আমার হৃদয়ের কথা তোমাকে বলেছি। আর তোমার উত্তরের অপেক্ষায় আছি।
নুসরাতঃ কীসের উত্তর?
আবিদঃ তুমি আমাকে বিয়ে করবে কী না তার উত্তর।
নুসরাতঃ না, করব না। উত্তর পেয়ে গেছ? এখন যাও।
আবিদঃ দেখো, বিয়েটা কিন্তু কোন ছেলেখেলা নয়, কোন জেদের ব্যপার নয়। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়। তুমি ফরহাদকে কতদিন চেনো? চারদিন, পাঁচদিন, বড়োজোর এক কি দুই সপ্তাহ। কিন্তু আমাকে? আমাকে তুমি ছোটবেলা থেকে চেনো। আমিও তোমাকে ছোটবেলা থেকে জানি।
নুসরাতঃ আফসোস তো সেখানেই। এতদিন ধরে জেনেও আমি তোমাকে চিনতে পারিনি। শেষমেশ আমার বেস্ট ফ্রেন্ডই কী না আমাকে ধোঁকা দিল!
আবিদ রেগে গেলো আর চলে যেতে যেতে বলল, আমি জীবনেও আর তোমার চেহারা দেখব না।
*****
নুসরাত নারায়নগঞ্জে তার দাদির বাড়িতে গেল। তাকে দেখেই কুকুর তাড়া করল। সে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর চিৎকার করে বলতে লাগল, এই পাগলা কুত্তাটাকে এখানে রেখেছে কে? একে পিটিয়ে মারা উচিৎ।
সে দাদির রুমে ঢুকে দেখল দাদি কুরআন শরীফ পড়ছেন। দাদি আয়াত পড়া শেষ করে তার তর্জমা পড়লেন।
“তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয় দরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় মোতি ও প্রবাল। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? দরিয়ায় বিচরণশীল পর্বতদৃশ্য জাহাজসমূহ তাঁরই নিয়ন্ত্রনাধীন। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধবংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমায় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?”
ফাতেমা বেগম কুরআন শরীফে চুমু খেয়ে তা রেখে দিলেন। নুসরাত বলল, দিদা, আমার মন খুব খারাপ।
ফাতেমা বেগমঃ কেন? কী হয়েছে?
নুসরাতঃ আজ এক সপ্তাহ ধরে ফরহাদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না। তার মোবাইলও বন্ধ।
ফাতেমা বেগমঃ আল্লাহকে ডাক। তওবা কর। তিনিই কিসমত লিখনেওয়ালা।
নুসরাতঃ মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজেই গড়তে পারে। কেউ ভাগ্য লিখে দেয় না।
ফাতেমা বেগমঃ তুই যতই চেষ্টা করিস, আল্লাহ যদি না চান, তোর তকদীরে যদি না থাকে, তবে কিছুই সম্ভব নয়।
নুসরাতঃ ক্ষুধা লেগেছে। কিছু খেতে দাও আগে। নাকি তোমার বাড়িতে খাবারও আমার তকদীরে নেই?
ফাতেমা বেগমঃ তুই হাত মুখ ধুয়ে নে। আমি নাস্তা বানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০০