somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাগজের ফেরিওয়ালা
যদি ভালো ইনসানই না হতে পারি, তবে এই রক্ত-মাংস-রূহ-মস্তিষ্কের মূল্য কী? আমি উড়ার স্বপ্ন দেখি না, উড়তে তো মাছিও পারে! আমি মাটির আদম, মাটিতেই মরতে চাই, আমার বুকে লাগিয়ে দিও কদম ফুলের গাছ।

মোস্তাকিমের পথে (পর্ব ৬)

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যাম্পাসে বসে আছে নুসরাত ও আবিদ।
নুসরাতঃ ও সবার মতো না। ও একটু ডিফরেন্ট।
আবিদঃ কে সবার মতো না?
নুসরাতঃ ফরহাদ।
আবিদঃ কেন?
নুসরাতঃ জানিনা। কিন্তু তার মধ্যে কিছু একটা আছে। সে তাই সবার থেকে আলাদা।
আবিদঃ এলিয়েন কিংবা ভ্যাম্পায়ার না তো?
নুসরাতঃ ধ্যাত! তুমি খালি ফাজলামি করো। আই এম সিরিয়াস।
আবিদঃ ওকে, শোন। এই দুনিয়ার কেউই কারো মতো না। সবাই আলাদা আলাদা। আমার দিকে তাকিয়ে দেখো, আমিও সবার মতো না। আমিও ডিফরেন্ট।
নুসরাতঃ না, তবুও। তার মধ্যে কিছু তো একটা আছে।
আবিদঃ এগুলো তোমার অমূলক ধারণা, অবাস্তব কল্পনা। বাস্তবে ফিরে এসো। তোমার আশেপাশের মানুষগুলোকে গুরুত্ব দাও। কী সব দূরের অজানা মানুষকে নিয়ে পড়ে আছো!
নুসরাতঃ ও অজানা নয়, ও অচেনা নয়। ও আমার খুব চেনা, খুব জানা কেউ একজন। নইলে ও কেন আমার অজান্তেই আমার নির্মিত ভাস্কর্যে ফুটে উঠবে?
আবিদঃ কো ইন্সিডেন্স এটা। কেন বুঝতে চাইছনা?
নুসরাতঃ তুমি যাই বলো, ওর মধ্যে কিছু তো একটা আছে!
আবিদ তার হাতে থাকা খাতাকে গোল করে মাইকের মতো বানালো। তারপর মুখের কাছে নিয়ে গানের মতো করে গাইল, “ওর মধ্যে কিছু তো একটা আছে, ওর মধ্যে কিছু তো একটা আছে...”
নুসরাত খাতাটা কেড়ে নিল আর আবিদের পিঠে তা দিয়ে আঘাত করে বলল, “বদমাশ! খালি শয়তানি করে...”
******
নুসরাতদের বাসার ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে ফাতেমা বেগম, সুরাইয়া ও নুসরাত। ফাতেমা বেগম দেখল বিভিন্ন পদের খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বললেন, “এত খাবার! এত খাবার কে খাবে?”
তাদের কাজের মেয়ে বিনু বলল, “এ বাসায় প্রতিবেলা এভাবেই খাবার রান্না করা হয়। যখন যার যা ইচ্ছা সে সেটা খেয়ে যায়।”
ফাতেমা বেগম বললেন, আর বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো?
বিনু বলল, সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
সুরাইয়া বলল, আম্মা, খান তো। কী সব হিসাব নিকাশ করছেন?
ফাতেমা বেগম বললেন, হিসাব নিকাশ তো আল্লাহ নেবেন। এত খাবার রান্না করার কী প্রয়োজন? আল্লাহর দুনিয়ায় কত মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, আর তোমরা! খাবার অপচয় করে যাচ্ছ এভাবে!
নুসরাত বলল, তুমিই তো বলো দিদা যে রিজিক দেয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের রিজিক দিয়েছেন, আমরা অপচয় করছি। আল্লাহ যাদের রিজিক দেন নাই, তারা খাবে না, ক্ষুধার্ত মরবে। তাদের জন্য আমরা কেন ভুক্তভুগী হবো? আমাদের কি দোষ?
ফাতেমা বেগম বললেন, তওবা কর, নুসরাত। আমাদেরই তো দোষ। এই দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষাক্ষেত্র। এখানে আল্লাহ কাউকে আমির করে পাঠিয়েছেন, কাউকে ফকির করে পাঠিয়েছেন। আমিরের প্রতি যেমন ফকিরের হক আছে, ফকিরের প্রতি তেমন আমিরের হক আছে। আল্লাহ যদি সবাইকে সমান ধনী করে পাঠাতেন, তবে ধনীর দরকার পূরণ করত কে? আবার সবাইকে যদি গরীব করে পাঠাতেন, তবে গরীবের দরকার পূরণ করত কে? এটাই তো আল্লাহর কুদরত যে দুনিয়ায় ভারসাম্য বজায় আছে।
সুরাইয়া বলল, আম্মা, খান। আপনার পছন্দের মাছ রান্না করা হয়েছে।
ফাতেমা বেগম বললেন, হুম, খাবো তো অবশ্যই। কিন্তু শোন, খাবার অপচয় করা আজ থেকে বন্ধ করে দেবে।
সুরাইয়া বলল, জ্বী আম্মা, আপনি খান।
ফাতেমা বেগম বললেন, নুসরাত, বিসমিল্লাহ বলেছিস?
নুসরাত তার মায়ের দিকে একবার তাকাল, তারপর বিরক্তির সাথে বলল, বিসমিল্লাহ।
ফাতেমা বেগম বললেন, এভাবে না। বল, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
নুসরাত দ্রুততার সাথে বলল, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ফাতেমা বেগম বললেন, হুম। আজকালকার বাচ্চারা বড়ই অধৈর্য। আদব, কায়দা কিচ্ছু শিখেনি।
*****
নুসরাত বিছানায় বসে ফরহাদকে রিং দিল।
ফরহাদঃ হ্যালো
নুসরাতঃ হ্যালো
ফরহাদঃ তুমি এত রাতে!
নুসরাতঃ বিরক্ত করলাম?
ফরহাদঃ না, বলো। কী বলবে?
নুসরাতঃ কেমন আছেন?
ফরহাদঃ ভালো। তুমি?
নুসরাতঃ আমিও ভালো। আমার নাম্বার সেভ করেছেন তো?
ফরহাদঃ হ্যাঁ। কেন?
নুসরাতঃ একবারও তো আমায় কল দিলেন না।
ফরহাদঃ কল দেয়ার কথা ছিল নাকি?
নুসরাতঃ কথা তো ছিল না। তবুও, দিতে তো পারতেনই। আমি অপেক্ষায় ছিলাম।
ফরহাদঃ অপেক্ষা?
নুসরাতঃ হুম। কতবার মোবাইলের স্ক্রিন চেক করেছি! কতবার রিংটোন ঠিক আছে কী না দেখেছি, সাইলেন্ট মুডে চলে গেল কী না চেক করেছি। ভেবেছিলাম, আপনি কল দেবেন। প্রতিটি ঘন্টা, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড আশায় কেটেছে যে এই বুঝি আপনি কল দিলেন!
ফরহাদঃ ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি মেয়েদের প্রয়োজন ছাড়া কল দেইনা, আর এমনিতে তো প্রশ্নই আসেনা।
নুসরাতঃ আমি আপনার স্বভাব বদলে দেব।
ফরহাদঃ তাই?
নুসরাতঃ হুম। কী করছিলেন?
ফরহাদঃ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হলাম। এখন ডিনার করব।
নুসরাতঃ ও আচ্ছা। তাহলে আর বিরক্ত করব না। আচ্ছা, আমরা কী আগামীকাল দেখা করতে পারি?
ফরহাদঃ শিউর। কোথায়?
নুসরাতঃ সেটা আমি আপনাকে মেসেজ করে জানিয়ে দেব।
ফরহাদঃ আচ্ছা, রাখি?
নুসরাতঃ হুম। বাই।
ফরহাদঃ বাই।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×