somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা।

১৫ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফেলে আসা দিনের কিছু গল্প কিছু স্মৃতি।
বছরে একবার খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্কুলের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। নবম শ্রেণীতে উঠে নাটকে অংশ নিয়ে নিজেকে অভিনয়ের পাঠশালায় হাজির করি। খেলাধুলায় বরাবর আমার অনীহা তাই কোন দিন তার ধারেকাছে যাওয়া হয়নি।এই জন্যই মনে হয় নাটকের পিছনেই পড়ে ছিলাম। ফেনী থিয়াটার এবং লেমুয়ার নাটক এখনো আমাকে স্বপ্নে অভিনেতা করে তুলে। আগে যাত্রা, পালাগান, নাটক শীতকালে মানুষকে বিনোদন দিতো সাথে সাথে মানুষের মনকে নরম করতো, প্রশস্ত করতো ও মানবিক করতো। এখন রাজনীতি রাজনীতি নাটকে মানুষ মনকে শক্ত, লোভী ও লিপ্সু করার দৌড়ে যুবসমাজকে ব্যবহারে লিপ্ত। আর যুবসমাজ বাইক, মোবাইল এবং ক্ষমতার কাছে নিজেকে সপে দিয়ে পুতুল হয়ে যেমন খুশি তেমন সাজে ব্যস্ত।

নাটকের রিয়ার্সেল চলার সময় কখনো কখনো এক মানবীর দুইটা চোখ জানালার ওপাশ হতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। এতে আমার বুকে কাঁপন হতো আমি বুকে হাত দিয়ে হৃদয় খুজতে চেষ্টা করতাম। সাদা সাদা চোখের মিষ্টি মিষ্টি নজরে আমার হৃদয় বাতসে উঠতো আমি তখন মুকুটহীন সম্রাট হয়ে নাটকের ডায়লগ বলা শুরু করতাম। “বাংলা বিহার উড়িয়্যার শেষ অধিপতি নবাব---------”। সেই দুই চোখের যাদুর টানে আজও আমি শুনি “আকাশের ওই মিটিমটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে।” আবার কখনো কখনো শুনি “ ইন আখোকি মাস্তি মে” তারপর ইউটিউবে খুজি মোগল-লে আজম কিংবা পাকিজার নরম নরম সুরের ঠান্ডা ঠান্ডা গান। লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার ঝরে যাওয়া কলির জন্য আমি গাছ তলায় নীরব পথিক। লোকে বলে ঝরে যাওয়া ফুলে মালা হয় না অথচ ঝরে যাওয়া ফুলেই সুঘ্রাণ বেশী। যদি কখনো পেয়ে যাই তাহলে ঘন কালো রেশমী চুলের খোঁপায় গুজে দিবো বকুল ফুলটা।

দেয়ালে দেয়ালে, সিড়িঁতে, উপরে-নিচে সব জায়গায় একটা স্লোগান “নাটক চাই নাটক চাই”। কিন্তু কারা লিখছে আর তারা কিভাবে জানলো এবার নাটক হবে না বুঝতে পারলাম না অথচ আমি তখন দশম শ্রেণীতে। রোজার পর ২৬শে মার্চ এখনো অনেক দেরী স্বাধীনতা দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে খেলাধূলার পুরষ্কার বিতরণ হবে, নাটক হবে, যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার স্যারেরা চুপ থাকায় সরব ছাত্র সমাজ, নাটক চাই নিয়ে। হাজ্বি স্যার, হুজুর স্যার নাটক করা নিয়ে কখনো প্রকাশ্য বিরোধিতা করতো না। খায়ের মোল্লা স্যার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বলতেন না। তবে সাজেদুল্লা স্যার খুবই উদ্যমী ছিলেন কারণ উনি খুবই সাংস্কৃতিক মনের মানুষ তাই প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের সাথে মিলে সমস্ত সাংস্কৃতিক কাজ সমাধানে সহযোগিতা করতেন।

নাটক হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষকমণ্ডলী। শুনে সমস্ত স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভিতর আনন্দ আনন্দ ভাব। ৯০ সালে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে নাটক হবে। একদিন কয়েক ঘন্টা হওয়ার পরে সব ছাত্রছাত্রীর ডাক পড়লো উত্তর পাশে দালানের দ্বিতীয় তলায়। প্রাইমারী স্কুলের শাহ আলাম স্যার যথারীতি পরিচালনার দায়িত্বে। নাটকের নাম “দুই ভাই”। সব স্যার মঞ্চে বসেছেন অভিনয়ের জন্য পার্থী নির্বাচন করবে তাই। আমি নিলাম গ্রাম্য মাতব্বের বখাটে ছেলের (তারা) অভিনয়। পার্থী নির্বাচন শেষ কিন্তু মাতব্বর কে হবেন তা ঠিক হলো না। তখন স্কুলে নতুন একজন স্যার সদ্য যোগ দিয়েছেন, রফিক আহম্মদ সেলিম। পরে সিদ্ধান্ত হলো উনিই হবেন গ্রাম মাতব্বর। শুরু হলো রিয়ার্সেল শাহ আলাম স্যারকে কখনো ভোলা স্যার কখনো সাজেদুল্লা স্যার কখনো শ্রীধাম স্যার সহযোগিতা করেন। মাতব্বরের অভিনয় দাপটে আমি অসহায়, ডায়লগে আব্বাজান বলতে হয় অনেক বার। সিংহনগরের সেলিম স্যার এখনো আমাকে ছেলের মত আদর করেন। কিন্ত তখন প্রথম প্রথম আব্বাজান বলতে খুব লজ্জা লাগতো।

আগের নাটকের রিয়ার্সেলের সময় সাদা চোখের পরির যে নজর লেগে ছিলো তা যেন আরো প্রকট হয়ে আমাকে আড়ষ্ট করেছে। আমি এখন শমশের গাজীর রাজ্য দখলে ব্যাকুল তাই অভিনয় আমার কাছে মৃত কিৎসা। সবার সাহসী এবং হৃদয়গ্রাহী অভিনয়তে আমি পদ্মফুলের শিশির মাত্র। গ্রাম্য মাতব্বরের বাচনভঙ্গি, অভিনয়, শব্দ উচ্চারণে আমি তাঁর ছেলে মিলাতে পারি না। অথচ ওই মানবীর জন্য ঘোড়ায় চড়ে চাঁদের ওপারে যেতে মরিয়া আমি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:১৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×