somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলো অন্ধকারে যাই...

২৭ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



…We all carry these things inside that no one else can see.
They hold us down like anchors, they drown us out at sea...


না হয় আমি তুচ্ছ আর তুমি গুরুত্বপূর্ণ, তা বলে কি আমার হৃদয় নেই? হৃদয় কোথায় থাকে তা তো তুমিও জানো না। যদি বলো আমার হৃদয় নেই, তাহলে তোমারও হৃদয় নেই। তোমার কেবল একটা হৃৎপিণ্ড আছে যা খালি ধুকপুক ধুকপুক করে রক্ত পাম্প করছে; বিরতিহীন। সে জানেও না তোমার হাতের একটু ছোঁয়ার জন্যে আমি কতোটা কাতর।

সেই স্পর্শ হঠাৎ অঘটনে পেয়ে গেলে আমার ভেতরে কী তোলপাড় হয়! মনে হয় টেবিল চেয়ার বাবদ এই বাস্তব চরাচর দুমড়ে মুচড়ে উঠছে কাগজের মতো। কেউ নির্বিকার আমার জগতটা কুড়ানো কাগজের মতো ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে। তুমি যখন না বুঝেই হেসে ফেলো আমাকে দেখে, যখন আমি তোমার হুটহাট তীব্র কথার জবাব দিতে পারি না, থতমত খাবি খেতে থাকি- তখন তোমার ঐ শাদা দাঁতের হাসি দেখা যায়।

তুমি অবিরাম হাসো আর দাঁতের কামড়ে খুঁড়ে ফেলো আমার শরীর। উড়িয়ে দিতে পারো, কিন্তু আমি সত্যিই টের পাই এই বেদনাবোধ। আমি টের পাই তুমি কীভাবে আমার ভেতরে ভাঙচুর করছো আর আমি হাসিমুখে তোমার দিকে চেয়ে আছি। একটা পলকের জন্যেও বুঝতে দিচ্ছি না আমি কতোটা ফুরিয়ে গেছি। তুমি একটু পরে বিরক্ত হয়ে গেলে, আমার চাহনি আর তোমার ভালো লাগছে না। তোমার দমবন্ধ লাগছে তাই তুমি জানালা খুলে দিলে। তিনতলার জানলা হাট করে খুলতেই দমকা বাতাস উড়ে এলো।

নিচের রাস্তায় দুয়েকটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো- যাদের দেখে তুমি স্মিত হাসলে।

তুমি কি জানো তোমার ঐ এক চিলতে স্মিত হাসির কতোটা কাঙাল আমি? আমি একটু পেছন থেকে দেখলাম তোমার চোখের রঙ বদলে যাচ্ছে। মেয়েদের ওড়নার রঙে ঘোলা হয়ে উঠছে মণি। তুমি বারকয়েক পলক ফেলতেই দেখলাম তুমি নেই! উদামখোল জানালা গলে চলে গেছে ওড়নার ভাঁজে। তোমার ঐ খিলখিলে মেয়েগুলোকে ভালো লাগে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখি দুটো মেয়ে হাঁটছে আর তুমি তাদের দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে চলে যাচ্ছো।

আমার সামনে জানালা খোলা। আমার সামনে তুমি নেই।

আমার সামনে ঘোলাটে চোখ নেই। হাসির ছুরি নেই। ঝকঝকে শাদা দাঁতগুলো আমাকে আর কাটছে না। তোমার মাথায় যে এলোমেলো মেঘ ভেসে বেড়াতো, সেটাও এখন অনেক দূরে ঐ আকাশে উড়ে যাচ্ছে। আমার হঠাৎ খুব সাধ হলো, জানো? আমি তো ঐ মেয়েগুলোর ওড়নাকে ভালোবাসি না, কখনো বাসি নাই। আমি খালি তোমার কাঙাল হয়ে গেছি বহুদিন ধরে। আমি খালি তোমাকেই দেখি, তুমি মাঝে মাঝে আমাকে ছুঁয়ে দিলে আমি বারবার মারা যাই। আজ হঠাৎ কী যে হলো? আমার খুব মরতে ইচ্ছা হলো। আমি বারবার তোমার হাতে মরতে চাই না আর। আমার ক্লান্ত লাগে।

আমার তো আর কেউ নাই। আমার মতো আর কেউ নাই। তুমিও আমার নও, আমার মতো নও।

আমি কেবলই আমার মতো, আর আমি জানি এই কথাটা তুমি জানো না। তাই আমি আজকে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলাম। জানালাটা হাট করে খোলা, আমি সেটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। জানালা বললো, “তুমি কেমন আছো ছেলে?” আমি বললাম, “আমি ভালো আছি, জানালামনি।” তোমার মাথার চুলের মতো মেঘগুলো ভাসতে ভাসতে লাফাতে লাফাতে হঠাৎ থমকে গেলো আমার এই মিথ্যা শুনে। তারা ভীষণ অবাক! বললো, “তুমি তো ভালো নেই ছেলে। তুমি বার বার মরে যাচ্ছো। তোমার শরীরে ঐ ছেলেটার দাঁতের দাগ দেখতে পাচ্ছি আমরা।” আমি হঠাৎ হেসে ফেলি, এতো দুখেও ফিক করে বলি, “বোকা মেঘ, তোমরা জানো না শরীরে কেন দাগ পড়ে। তোমাদের শরীরে কেউ দাগ ফেলে না। এই দাগগুলো আমি ভালোবাসি। বুঝলে?” মেঘগুলো মাথা নেড়ে চলে গেলো। আর জানালাটাও চুপ করে কী কী যেন ভাবছিলো। আমি হেসে বললাম, “আমাকে নিয়ে এতো ভেবো না জানালামনি।” ফিসফিস করে বললাম, “আমি ভালো আছি। আমি ভালো আছি।”

আমি খুব তুচ্ছ আর আমার একটা হৃদয় আছে। সেটা কিচ্ছু শেখে নি, সেটা কেবল তোমাকে চায়। তুমি তা জানো না। তুমি জানলেও আমাকে চাইতে না। আমি খুব তুচ্ছ।



===***___***===
১৯.৭.১০


*||চতুর্মাত্রিক এবং ক্যাডেট কলেজ ব্লগে পূর্বপ্রকাশিত||

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৫২
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×