[একটি নতুন ধরনের নীরিক্ষা থেকে একটা গল্প লিখলাম। কাজী আনোয়ার হোসেন "মাসুদ রানা"য় যেমন বিদেশী গল্পের ছায়ানুসারে গল্প লিখেন, তেমনি আমার গল্পটাও মৌলিক নয়। একটি খাঁটি দেশীয় গল্পের ছায়া ও কায়া ধরে বেড়ে উঠেছে এটি। এ যেন রসালের দেহ বেড়ে স্বর্ণলতিকা (আহেম)। এই সূচনাটুকু দিলাম গল্পের শরীরকে ঢেকে রাখার জন্যে।
ওহ, বলতেই ভুলে গেছি, এমেচারিশ ভুল। এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কোন চরিত্রের সাথে কোন মিল পাওয়া গেলে তা একান্তই ব্লা ব্লা ব্লা... ]
পাইদুর যাহা ভনে
'আপনারা তো পর্নোগ্রাফির ছবিতে অভিনয় করেন। আপনাদের মধ্যে কোনো রুচি নাই। পরিচালকদের ভেতরে-ভেতরে আর্টফ্লিম করার কথা বলেন আর নিজেরা সস্তা ছবিতে অভিনয় করে ইয়ে করার ধান্ধা করেন। আমি আজ ঠুঁটো পরিচালক আর আপনারা সাধু সেজেছেন, না? এমন কোন শট কি আছে, যা আপনাদের ছাড়া টেক করেছি?'
নিষিদ্ধ ঘোষিত পিএমবি'র (পর্নো মুভি বিলায়াতীন) কুখ্যাত পরিচালক পাইদুর জাঝামান আর্টফ্লিম-এ-গুলতামীর সেক্রেটারি জেনারেল নায়ক চালী শাহকান ঢ়োগাম্মত গুজামিলকে উদ্দেশ করে এভাবেই এক চোট নিলেন মঙ্গলবার রাতে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময়। ওই রাতে ছিল তাঁদের দ্বিতীয় দফা মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ। পিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে আর্টফ্লিম-এ-গুলতামীর তিন শীর্ষ মেগাস্টার ঝাঁকিউর জাঝামান মিজানী, গুজামিল, সালোয়ার পিন্দাইন বাঈজী ছাড়াও পিএমবির পাইদুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গোয়েন্দা পুলিশের সাব ডিটেকটিভ (নর্থ) ঘনাদা পত্রিকাকে জানান, এদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। অন্য এক ঘাগু অফিসার জানান, এর আগে পিএমবির পরিচালক পাইদুর ও গুলতামীর মেগাস্টারদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট যাচাই-বাছাইয়ের জন্যই তাদের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
পর্নো মুভিতে অভিনয় ছাড়াও সম্প্রতি আউটডোর শ্যুটিং স্পটে অশালীন পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ (যেমন হুটহাট গেলমান নিয়ে মগবাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া, সালোয়ারের ফিতে খুলে যাওয়া ইত্যাদি) আছে গোয়েন্দাদের হাতেঃ এসবও যাচাই-বাছাই চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একটি সূত্র জানায়, এ দফায় রিমান্ডে পাইদুরকে বেশ জলি দেখায়। তিনি জোর গলায় বলছেন, একটি চিত্রনাট্যও মিথ্যা বানাই না। গ্রীনরুম থেকে আসার আগে সাজানো স্ক্রিপ্ট ছিঁড়ে নকল পরচুলা-দাড়িতে সেট-ওয়েট জেলও মেখে এসেছেন তিনি। গোয়েন্দা তাই দেখে মাথা নাড়েন, রিপোর্টার খস খস করে লেখেন, "বেরি বেরি সেক্সি!"
মঙ্গলবার বিকেলে কারাগার থেকে তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এনে সন্ধ্যার পর কিছুক্ষণের জন্য মিজানী ও গুজামিলের মুখোমুখি করা হয়। দ্বিতীয় দফা শ্যুটিংয়ে ওই রাতের শিফটেই ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাকে তিন গুলতামী নায়কের পেছনে দণ্ডায়মান করে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এ সময় বেশি প্রম্পট করার কোনো প্রয়োজনই হয়নি। খালি ক্যামেরা অন রেখে ঘনাদা একশন বলেছেন আর তারা নিজেরাই গড়গড় করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নাটকের স্টাইলে বিনাস্ক্রিপ্টে ডায়ালগ মেরেছেন। সেখান থেকে তারা অজানা অনেক তথ্য দিয়েছেন। তবে পাইদুরের ক্ষোভ বেশি গুজামিলের প্রতি। তাদের প্রথম সিনের সময় পাইদুর নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে গুলতামীর তিন মেগাস্টারের সঙ্গে করমর্দন করেন। মীজানী ও বাঈজী করমর্দন করলেও গুজামিল অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন।
সূত্র মতে, পাইদুর গুলতামীর তিন মেগাস্টারকে দেখা মাত্রই সাজানো স্ক্রিপ্টের বাইরে ডায়ালগ বলতে শুরু করেন। একপর্যায়ে গুজামিল বলেন, 'পাইদুর সাহেব, এসব কী বলতে শুরু করেছেন?' উত্তরে পাইদুর ছিনেমাটিক ঢঙে বলেন, 'কেন! ভুলে গেছেন্ন্? (ইকো হবেঃ গেছেন্ন্? গেছেন্ন্? গেছেন্ন্?) ১৯৯১ সালে আর্টফ্লিমে গুলতামীর অফিসের দোতলায় কী বলেছিলেন্ আপনি?' গুজামিল বলেন, 'আপনার সঙ্গে আমি শেষ কবে ছবি বানিয়েছি তাই তো খেয়াল নাই।' পাইদুর বলেন, 'ওই যে সময় আপনি বলেছিলেন, সাদাকালো পর্নে গুলতামীর শ্যুটিংয়ের মধ্যে সমন্বয় ছিল না। সমন্বয় থাকলে আজ গুলতামীর ওপর পিএমবি মাথাচাড়া দিতে পারত না।' এ সময় গুজামিল ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'এসব কোনো আলাপ হয়নি আপনার সঙ্গে।' পাইদুর বলেন, 'খেয়াল করার চেষ্টা করেন, সব মনে করতে পারবেন। দরকার পড়লে আপনার স্পটবয় গেলমানকে জিজ্ঞেস করেন। ওই দিন আপনি আমাকে উটপাখির ডিম দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন।' এ সময় গুজামিল মাথা নিচু করে থাকেন।
গুজামিল পাইদুরকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, 'আপনাকে তো আর্টফ্লিম-এ-গুলতামী থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আপনার সঙ্গে আলাপ করব কেন?' পাইদুর তখন ক্ষিপ্ত হয়ে পাঁই করে ঘুরে বললেন, 'আবার ভুল ডায়ালগ বলছেন! আমাকে বহিষ্কার করেছেন এরকম কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারবেন আপনারা? আমার ছেলে পা.মো.শু পিএমবি'র একটা ছবির ইনডোর সিনের শ্যুটিংয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তো আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করেছি। তখন আপনারা সবাই মিলে আমাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে বলেছিলেন।' পাইদুর পই পই করে এক দিকে ঘাড় কাত করে আরো বলেন, 'আপনারা আমাকে পর্নো মুভিখোর বলেন আবার যোগাযোগ করে সাহায্য চান। আপনাদের মতো আমি না। আমার অন্তর্বাস-বর্ম আছে। আমি এক বর্মে বিশ্বাস করি। আমি পিএমবির দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি "ইয়ে" ঘটনাও ঘটতে দিইনি। আপনারা তো শ্যুটিংয়ের জন্য সব কিছু্ই করেন। নারী চরিত্র হারামের কথা বলেন, আবার সুযোগ পেতে নারী নায়িকাদের গান ছবিতে বসিয়ে দিয়ে বসে থাকেন। এসবের জন্য আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।'
এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীরা পাইদুরকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, 'আপনার সব রাগ তো দেখি গুজামিল সাহেবের ওপর। এর কারণ কী?' পাইদুর বলেন, 'সব নষ্টের মূলে তো উনি।' জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, 'মিজানী সাহেব তো তাহলে ভালো।' পাইদুর দাবি করেন, 'ওনাদের সবাই এক রকম। কেউ একটু শ্যুটিংয়ে একশন বেশি বলেন, কেউ কম।' পাইদুর বলতে থাকেন, 'দুই দিন আগে এফডিসির কোর্ট-এ মিজানী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। এ সময় তো মিজানী সাহেব আমার কাছে দোয়া চেয়ে বলেছিলেন, আপনি কি আসলেই পুলিশকে এসব বলছেন?'
দীর্ঘক্ষণ নীরবে পাশে বসে থাকা মিজানী ডায়ালগ মনে করতে না পারায় নীরব থাকলেও সালোয়ার পিন্দাইন বাঈজী পাইদুরের এসব কথা শুনে মুখ খোলেন। পাইদুরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'এসব কী ডায়ালগ বলছেন আপনি?' তখন পাইদুর আরেক দফা বাঈজীর ওপর ক্ষেপে যান। বলেন, 'আপনি বড় মুজরা নাচনেওয়ালী হয়েছেন। আপনার মধ্যে আর কোনো এলেম আছে নাকি! আপনার চাইতে আমার গেলমান ঢের ভালো। আপনার পেশাই হচ্ছে ঠুমকো নেচে ব্যবসা করা। মগবাজারের গেলমানদের মতো মনের আর দেহের ধৈর্য আপনার নাই। আপনি খুলনার ফকির সাহেবের ব্যাগ টেনে টেনে এখন বড় মুজরা নাচনেওয়ালী হয়েছেন, টাকা কামিয়েছেন। এটা কি কেউ ভুলে গেছে মনে করেন?' এসব শুনে বাঈজী আর কথা বাড়াননি। ফারুকীর মত স্ক্রিপ্টের সাথে ফিক্সড স্ক্রিপ্টে কুলিয়ে পারা যায় না।
এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারীদের মধ্যে একজন বাঈজীর মুজরা নাচনেওয়ালী হওয়ার কাহিনী জানতে চান পাইদুরের কাছে। পাইদুর বলেন, 'বাঈজী বেগমের কাজ ছিল খুলনার ফকির সাহেবের লুঙ্গি গামছা টানা। ফকির সাহেব কোথাও গেলে বাঈজী তার গামছা নিয়ে আগেই সেখানে পৌঁছে যেত। কিংবা কোনো সময় ফকির সাহেবের বিনা কাপড়ে মঞ্চে উঠে গেলে বাঈজী তাড়াতাড়ি উঠে যেতেন। আর লুঙ্গিবিহীন ফকিরকে দেখে উত্তেজিত শ্রোতাদের কিছুক্ষণের জন্য শান্ত রাখতে মুজরা নাচতেন কিংবা ফকির সাহেব চা বা খাবার খেতে গেলে সেই ফাঁকে বাঈজী মুজরা নাচতেন। এভাবেই বাঈজী বেগম বড় মুজরা নাচনেওয়ালা হয়ে গেছেন। পরে ফকির সাহেবের সঙ্গেও বাঈজী বেইমানি করেছেন। তাকে ভুলে আর্টফ্লিম-এ-গুলতামীর ধামা ধরেছেন। আসলে গলার জোরে এ পর্যন্ত আসা আর কী। পাইদুর দাবি করেন, বাঈজী অনেক সময় নাচের মধ্যেও ভুলভাল তাল ঠোকেন। চোখ নাচাতে গিয়ে ভুল তালে কেবল কোমর নাচাতেই পারেন!
****
- ১৫.৭.১০
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৯:৫৩