somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নটে গাছ না মুড়োলে...

০৫ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খাতার পৃষ্ঠা খুলে আমি অনেককিছু লিখতে চাইতাম, কিন্তু পারতাম না। মাঝে মাঝে শব্দহীনতায় কামড় দিতো। আমি প্রায় ছয় বছর কিছুই লিখি নি, কারণ আমার ভেতরে কোন শব্দ জেগে উঠতো না। আমি শব্দহীন হয়ে গিয়েছিলাম। আমি কথা বলতাম, ভাবনাচিন্তাও করতাম, কিন্তু সেগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারতাম না। ওই ছয় বছরের সকল স্মৃতি মগজের ভেতরে আটকে আছে। হয়তো সেগুলো সেখানেই ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। আমি সেই ঘরগুলোতে আর ঢুকতে চাই না। এড়িয়ে যাই। কষে তালা দিয়ে আটকে রেখেছি। ওগুলো নিভৃত- অযতনে থাকুক!

আমার কখনো দলের ভেতরে থাকা হলো না। প্রথাগত হওয়া হলো না। আমি কখনো কারো সাথে আত্মীয়-যোগ করতে পারি নি। আমার চারপাশে হয়তো একটা অদৃশ্য দেয়াল ছিলো সবসময়েই। আমি হয়তো সেই দেয়ালের কারণেই সবার সাথে স্বচ্ছন্দ হতাম। "বি ইয়োরসেল্ফ" বলেছিলেন বড়ো বোন, তারপর থেকে আমি কেবল নিজের মতোই হতে চেয়েছি। এই চাওয়া পূরণ হয়েছে নানা পথে, নানা ভাবে, আমি বদলে বদলে গেছি সময়ের সাথে। এবং আমি কখনই কারো মতো হতে পারি নি। একটি দলের সকলের থেকে আলাদা হয়ে গেছি অচিরেই। দেখেছি তাদের সাথে আমার মিলের পরিমাণ কেবল পোশাকে, বা স্থানিকতায়। আমরা এক জায়গায় আছি, থাকছি বা বসবাস করছি বলেই কেবল যোগাযোগ হচ্ছে, যোজন বিয়োজন হচ্ছে, আদান-প্রদান হচ্ছে। কিন্তু সেটা না হলে আমি ক্রমশ আলাদা, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। তাদের সকলের সাথে আমার যোগাযোগ রক্ষা করা হয় না। তারা বা আমি কেউই কারো অভাব অনুভব করি না।

যদিও মনে হতে পারে এহেন অ-যোগাযোগ আমাকে দুঃখী করে, আসলে তা সত্যি না। আমি দুঃখ পাই না। সম্পর্কের সুতোগুলো ধীরে গুটিয়ে নিতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এই স্বাচ্ছন্দ্যের কোন ভালো বা খারাপ তকমা নেই, নৈর্ব্যক্তিক পুরোটাই। তাই আমি এভাবেই জুড়ে যাই, এবং বিযুক্ত হয়ে যাই। এবং এই প্রক্রিয়া কোনমতেই আরোপিত নয়। খুব প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে থাকে। যেমন পৃথিবীর ঘূর্ণন বা পানির চক্রের কোন ব্যত্যয় নেই, ঠিক তেমনি- নিয়মানুগ!




প্রবলভাবে জাগতিক বলেই, আমি চারপাশের ঘটনাবলিতে উদ্দীপ্ত হই অনেকটা নিপীড়নের কাছাকাছি। প্রতিক্রিয়ায় বিচারে তাই আমার মননে সেগুলোর ছাপ পড়ে থাকে অনেক বছর। আমার চারপাশে পিরিচ-ঘূর্ণনের মতো মানুষরা জুড়ে যায় একে অপরের সাথে। আমি দেখে তৃপ্তি পাই- এই তৃপ্তিটুকুও, স্বাচ্ছন্দ্যের মতোই- অনেতিবাচক ও অনস্তিবাচক অনুভব। তা, যা বলছিলাম, পিরিচের ঘূর্ণিতে মানুষ জুড়ে যেতে থাকে। এ বড়ো অদ্ভুত সুন্দর প্রক্রিয়া! কেউ যদি দেখে থাকেন, কেউ যদি সেইসময়ে অনুভব করতে পারেন, কী অবলীলায় দু'জনে জুড়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন আমি কিসের কথা বলছি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হতে থাকে। আমার দূর্ভাগ্যবানও মনে হয়, যখন দেখি পিরিচের ঘূর্ণিতেই, সেই মানুষরা আলাদা হয়ে যাচ্ছে দেখে। আমি কষ্ট পাই, আর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি।

যখন আমি মানুষদের দু'জনকেই চিনি, তখন এই যোগাযোগ ও অ-যোগাযোগের অশরীরী প্রক্রিয়াটা আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে। আমি এর রসায়ন বুঝে যাই অনেকটাই। পুরোপুরি বোঝা অসম্ভব। তাদের দু'জনের জন্যেই নির্মল ভবিষ্যত কামনা করতে থাকি। এই সময়েরই আগে পরে, টের পাই কেউ কেউ নিঃশব্দে আর কারো কাছে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কী হয়েছে তোর?" অচিরেই জবাব এলো, "আমি ধরা পড়ে গেছি নিজের কাছেই। গোপনীয়তার সূত্র ভেঙে অকপটেই দেয়ালটাকে ভাঙলাম। এখন আমার আবরণ নেই।"

ছেলেটার চোখে আমি কেবলই অদৃশ্য অশ্রু খুঁজি। নেই। সেখানে কেবল আবেগী-শূন্যতা। আমি সেই শূন্যতাকে অনেক যুক্তিতে হারাতে চাই, কিন্তু পারি না। আমার মনে হয় এখানে যুক্তি চলে না। আমার খুব ইচ্ছা করে এতোদিন ধরে পরিচিত ছেলেটির এই সময়ে পাশে দাঁড়াতে। তাকে এভাবে বদলে যেতে দেখে আমার আর ততোটা ভালো লাগে না। তাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখেও ভালো লাগে না। মেয়েটি হয়তো জানতেও পারছে না ও কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে! আমাদের যোগাযোগের এতো এতো মাধ্যম, তারপরেও আমরা একে অপরের সাথে সামান্য এই কথাটুকুও বলতে পারি না যে আমাদের ঠিক কেমন লাগছে। হায়!

আমার মনে হয় পুরনো যুগে মানুষ অনেক আরামে ছিলো। অবশ্যই, তাদের অনেক রকমের অসুবিধা ছিলো। তাদের দৈনন্দিন সুবিধাগুলো ছিলো না, তাদের মোবাইল আর এসএমএস ছিলো না, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হলে প্রচুর শ্রম ও সময় দিতে হতো। কিন্তু কী অদ্ভুতভাবেই না আমরা এই সমস্যাগুলো দূরে করে ফেলেছি! এখন হুট করেই সব করা যায়, চট করেই কাজ সেরে ফেলা যায়, উড়ে চলে যাওয়া যায় দেশ-দেশান্তর। তারপরেও আমরা অনেক বেশি কষ্টে আছি। এখন আমি যখন সেই ছেলেটির চোখের দিকে তাকাই, সেখানের সবগুলো অব্যক্ত কথা পড়তে পারি না। হয়তো সে-ও পারে না। যেমন করে সে মেয়েটিকে বলতে পারছে না অকপটে। মেয়েটিও সেটা বুঝতে পারছে না!

ভাবছিলাম আমরা কী এখনও কৈশোরক? আটকে গেছি বয়ঃসন্ধির দোলাচলে? নাহলে কেন এই বয়সে এসেও এভাবে কারো হৃদয় টুকরো টুকরো হতে দেখবো! সেই অস্থির অন্তর্লীন সময় তো আমরা কবেই পেরিয়ে এসেছি, এখন সময় বুঝে চলার বুঝে নেয়ার। সব কিছু দেখে শুনে সিদ্ধান্ত নেয়ার। ছেলেমানুষীর, খামখেয়ালিপনার দিন ঢলে চলে গেছে কবেই! তারপরেও টের পেলাম যে আমরা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। আমাদের বিচারে ভুল হয়ে গেছে। ছেলেটি যেদিন টের পেলো, সেই ভুলের দিন, সেই খামখেয়ালির দিনে মনে হয় আকাশ গাঢ় কালো হয়ে এসেছিলো। ঝরঝর করে বৃষ্টি ঝরেছিলো মধ্যগ্রীষ্মে। তারপরে সে বুঝে গেছে হৃদয় হারালে কতোটা ক্ষরণ!

ভেবেছিলাম তার জন্যে এলিজি লিখবো। আশাবাদ লিখবো। সাথে তার জন্যে স্মৃতিগুলো লিখবো। কিছুই হলো না। কেবল (অ)যথা-বাক্যক্ষয়! পারা না-পারার দোলাচল।



দেখি ঘরে কে এলো, ওমা! তুমি? যাই এ'বেলা। কথা ফুরোবে না, নটে গাছও মুড়বে না!


******** ********** ***********



৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×