দুদলে ভাগ হইয়্যা মিনিবার নামক এক ধরনের ফুটবল শুরু করিলাম। মিডফিল্ডে নিজের দক্ষতার সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান থাকার দরুন নিজেকে আমি গোলকিপার রুপে বসাইলাম। ভাগ্য দেবতা মহাবদ। মূহুর্তের জন্য আমারে ভুলাইয়্যা দিলেন ইহা মিনিবার, ইহাতে গোলকিপার হাত দিয়া ধরিতে পারে না।আমি হাত দিয়া ধরিয়া যে অপরাদ করিলাম তাহার শাস্তি স্বরুপ বন্ধুদের হাল্কা গালি (খুবই অশ্লীল),এ বং একখানা গোল হজম করিলাম। কিছুক্ষন পর আবার আরেকটি হজম করিলাম। এবার গালি হাল্কা এবং মাঝারি মানের (চরম অশ্লীল)। সে যাই হোক দুদটি গোল হজম করিলাম কিন্তু হজমটা ঠিক হজম হইতেছিল না। ভাবিলাম জানপ্রাণ দিয়া লড়িব। শপথ করিলাম “তুমি বল হও আর যাই হও আমারে ফাঁকি দেয়া তোমার কম্ম নয়। মহি নামের আমার শয়তান বন্ধুটি বল নিয়া আগাইতেছিল।আমাদের দলের দুজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বল নিয়া যখন গোলবার সম্মুখে তখন কোন ভাবে তাহারে আটকাইতে না পারিয়া ঠ্যাং দ্বারা ল্যাং মারিবার চেষ্টা নিলাম।কিন্তু নিজেই হলাম চিৎপটাং।আরেকখানা গোল আমার অন্দরে প্রবেশ করিল।এবার হাল্কা মাজারি,ভারী সবগালি এক সাথে রব উঠিল।নিজেকে আর ধরিয়া রাখিতে পারিলাম না। দলের এ বিপদের মূহুর্তে আমি ব্যাতিত কে ধরিবে হাল। একজনকে গোলকিপার করে মাঝমাঠে উঠিয়া গেলাম। বন্ধু বাহারকে বলিলাম “দেখ বাহার যে দুখানা গোল আহার করিয়াছি তাহা তাহাদিগকে বোনাস সমেত ফেরত দিব, বাহার দেখা তোর বাহার” বাহার কি বুঝিল জানিনা তবে সে জ্ঞানীর মত মাথা নাড়িল।মনে হইল সব বুঝিয়া ফেলিল।
বল ততক্ষনে গোল কিপার নাড়াইয়্যা দিয়াছে, আমি “এদিকে এদিকে” গলা ফাটাইয়্যা চিৎকার দিচ্ছি কিন্তু বল আমার দিকে আর আসে না। কেমন করে যেন বল চলিয়া আসিল। কেউ একজন আসিয়াছিল বল কাড়িয়া লইবার প্ররোচনায়। কিন্তু তাহাকে হাল্কা কাট দিয়ে (কুনুই দিয়া) ঘুরাইয়্যা বল লইয়্যা ছুটলাম একে একে বিপক্ষ দলের সব প্লেয়াররে (এক দলে তিনজন করে প্লেয়ার) ফাকিঁ দিয়া গোলকিপারকে বোকা বানাইয়্যা বল জালে (স্যান্ডেলের গোলবার) পাঠাইয়্যা দিলাম।ড্রিবলিং এর অসাধারণ দক্ষতায় ওরা কুপকাৎ। গোল দিয়া এদিক ওদিক তাকাইলাম আশ পাশে কেহ আছে নাকি। সামনের বিণ্ডিংয়ের ব্যালকনিতেও কেহ নাই। অদূরে একটি রোগাটে কুকুর ব্যাতীত কাউরে চোখে পড়িলনা এমনকি কোন গরুও আজ ঘাস খাইতে আসে নাই।। প্রদর্শনী ম্যাচের বেহাল দর্শণ দেখে ব্যাপক হতাশ হলাম। মেসিরে খুব নস্যি মনে হইতে লাগিল, নিজেরে ম্যারাডোনার চেয়ে কিঞ্চিত বড় খেলোয়াড় মনে হইতেছে।সে ৬ জনরে কাটাইছে আমি দলের সব খেলোয়াড়কে কাটাইছি।আমি কিঞ্চিত মর্যাদার দাবিদার।ভাবিতেছি ফিফাকে এ ব্যাপারে কিছু বলিবো।কিন্তু টেনশনে পড়িলাম পেলেরে নিয়া।সে ব্যাটাতো আবার ঢুকাইয়্যা দিব।

প্রদর্শনী ম্যাচের উত্তেজনাপূর্ণ একটি মুহূর্ত।আমাকে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।কিন্তু আমি গোল করেছি।
উত্তেজনায় তখন আমি কাঁপিতাছিলাম।এক গোল করার পর দলে আমার সম্মান কিঞ্চিত বাড়িয়া গিয়াছে,খুজিয়া খুজিয়া আমাকে বল দেয়া হইতেছে। মাঠে দৌড়াইতে গিয়া হঠাৎ মনে হইল একটু রেষ্ট দরকার।তাই বল হইতে কিছুটা দূরে এক কোনায় দাড়াইয়াছিলাম।আচমকা বল আমার বুকে আসিয়া ঠেকিল।সবাই ভাবিল আহা বলটাকে আমি কি কারিশমার সহিতনা রিসিভ করিয়াছি।আচমকা বল আসার ধরুন বুঝিলাম না কি করিব। দুর (রেষ্টের সময় ডিষ্টার্ব)!! বলিয়া দিলাম বিপক্ষ দলে দিকে কিক। উহাদের গোলকিপার হইল আমার বলদ বন্ধু হিমেল। সে আবার অফিসার শ্রেণীর ফুটবলার। সে তাহার প্যান্ট কাদা হইতে বাচাইতে গিয়া লাফাইয়া উঠিল আর বল সোনাই তাহার গায়ে লাগিয়া ডাইরেক্ট জালে (স্যান্ডেলের গোলবার)।কেউ পারিলানা আমার দুরপাল্লার শর্টে গোল ঠেকাইতে।রোনালদিনহোর ছবিটা মুখে ভাসিয়া উঠিল।“তোমার দিন শেষ বাপু”
দুদুটি গোল করিবার পর আমার দাম আরও বাড়ীয়া গেল।বল দখল (ধাক্কাইয়্যা ধাক্কাইয়্যা) আমার নিজেরই ৭০% ।কিন্তু মহি নামে আমার বেয়াদব বন্ধুটি খুজিয়া খুজিয়া আমার থেকে বল কাড়িয়া নিয়া যাইতেছে। নিজের মান ইজ্জত বাঁচাইতে মহিরে পিছনে বল লইবার তাগিদে দৌড়াইতে লাগিলাম।আমি ভুলিয়া গেলাম আমার ওজন কিঞ্চিত বেশী , হঠাৎ করিয়া বুকে কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব হইতে লাগিল। কিছু না করিতে পারিয়া আবার নিজেকে গোলকিপার বানাইলাম। খুব দুঃখ হইতেছিল আমার দলের জন্য, আহা আমার খেলাটা তাহারা পাইলনা। দল আমারে মিস করিতেছে। আফসোস।
একসময় খেলা শেষ হইল,আমরা ১২-০৯ গোলের বিরাট ব্যবধানে জিতিলাম। আমি মধ্যমাঠে খেলিলে স্কোর লাইন আরও বেশী হইতে পারত। তাহা যাহাই হোক না কেন। এই ফুটবলে আমি নতুন একটি প্রত্যয় আবিস্কার করিলাম। ফুটবলের মাঠে আমি প্রথম অলরাউন্ডার। একাধারে গোলকিপার, মিডফিল্ডার, স্ট্রাইকার। ফুটবল দুনিয়া প্রথম একজন অলরাইন্ডার দেখিল।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া বুঝিলাম আমার শরীরের মোড়ে মোড়ে ব্যাথা। নড়াইতেও পারিনা।পাঁচ বছর পর ফুটবল খেলিবার খেসারত হাতে হাতে না শরীরের প্রতিটি অঙ্গে অঙ্গে পাইতাছি। গোটা দুয়েক পেইন কিলার খাইলাম।কিন্তু পেইন কিলার পেইন কিল করতে গিয়ে মনে হইতেছে পেইনের হাতে কিল হয়েছে।পেইন বাড়ুক।অলরাউন্ডারদের একটু পেইন সহ্য করিতে হয়।আমার পেইন আমার অহংকার।
এই লিখা ফেসবুকে শেয়ার করিবার পর আমার লিখায় মুগ্ধ হইয়্যা অনেকেই বার্স বা রিয়ালে যাইবার পরামর্শ দিয়াছে। কিন্তু কি লাভ মেসি-রোনালদোর পেটে লাথি দিয়া? দুপয়সা ইনকাম করিয়া পেট চালাইতাছে। এত অমানবিক আমি না।