হিমুকে Samsung মডেলের এই ফোনটা গিফট করেছে মাজেদা খালা।
ঠিক গিফট নয়, মাজেদা খালা এখন iPhone ইউজ করছে।তাই তার Samsung মডেলের ফোনটি অকেজো পড়ে থাকায় হিমুকে দিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এই ফোনটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা হিমু জানেনা।
স্মার্টফোন দিয়ে ফেবু চালানোর মজাই আলাদা। তাই হিমুকে একটি ফেইসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে দিলো মজিদ।
মজিদ হলো হিমুর রুমমেট। নর্থ সাউথে পড়ে।টোটালি ডিজে ভার্শনের ছেলে।সারাদিন কানের সাথে ব্যান্ডেজের মতো হেডফোন লাগিয়ে রাখে।
হিমু যেদিন প্রথম রুমে উঠলো, সেদিন মজিদ এরকম কানের সাথে সাদা রঙের হেডফোন লটকিয়ে শুয়ে ছিলো।হিমু মনে করেছে, হয়তো কোথাও এক্সিডেন্ট করেছে,এইজন্যে ব্যান্ডেইজ করে শুয়ে আছে।কিন্তু পরে বুঝলো এটি আজব এক যন্ত্র।এটি যে কানে লাগাবে সাউন্ড খালি সেই-ই শুনবে।
'
যাহোক, মেসে মজিদ,শাপলুদের মাধ্যমে হিমু নতুন নতুন অনেক যন্ত্রপাতির নাম শুনে।
হিমুকে মজিদ যে ফেবু এ্যাকাউণ্ট খুলে দিয়েছিলো সেটির নাম হলো- 'নির্ভেজাল হিমু।'
হিমু মজিদকে জিজ্ঞেস করলো, - 'এরকম অদ্ভুত নাম কেনো?'
মজিদ বললো,- 'আরে হিমুদা, ফেইসবুকে এখন এত্ত এত্ত হিমু।লাল হিমু,নীল হিমু,সাদা-কালা কত্তো কিছিমের হিমু যে এইখানে আছে তুমি বিশ্বাস করতে পারবা না।তাই তোমার নাম দিলাম 'নির্ভেজাল হিমু', মানে তোমার মইধ্যে কোন দুই নাম্বারি নাই।তুমি দুইন্নাই এক পিসই আছো।নির্ভেজাল।'
হিমুদের সংখ্যা বাড়ছে শুনে হিমু মনে মনে খুশি হলো।সে মজিদকে জিজ্ঞেস করলো,- 'আচ্ছা, ফেইসবুকের এই হিমুরা কি জোছনা দেখে? হলুদ পাঞ্জাবি পরে? খালি পায়ে জোছনা রাতে হাঁটে?'
মজিদ হাসতে হাসতে বললো,- 'ধুরো!! কইছি না এগুলা দুই নাম্বার হিমু। এগুলা বাথরুমে বইসা ফেবুতে পোষ্ট মারে- 'এনজয়িং চাঁদনী রাত উইথ রূপা।হেহেহেহেহেহে।'
সারাদিন বলিউড-হলিউডের সিনেমা দেখে, আর রাতে বাংলা গানের লিরিকস পোষ্টাইয়া ভাব লয়।'
মজিদের কথা শুনে হিমু মনে মনে কিছুটা আহত হলো। হিমু প্রজন্মের অধঃপতন হচ্ছে।
'
আইডি খোলার একমাসের মধ্যে হিমুর কাছে প্রচুর ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট আসে।
একে তো 'নির্ভেজাল হিমু' নাম, তারউপর হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে,খালি পায়ে,উস্কোখুস্কো মাথায় ভ্যাগাবন্ড টাইপের একটি রিয়েল প্রো-পিক সেট করা।তাই একসপ্তাহের মধ্যে হিমুর কাছে অনেকগুলা ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এসে জমা পড়লো।
মেয়েরাই বেশি পাঠিয়েছে রিকোয়েষ্ট।
হিমু আস্তে আস্তে ফেইসবুক ব্যবহার কিছুটা শিখে ফেলেছে।অবশ্য এরজন্য পুরো কৃতিত্বই মজিদের।
'
একদিন রাতে হিমু ফেইসবুকে ঢুকলো।ঢুকে দেখে 'Angel Rupa' নামের একটি মেয়ে তার একটি পিক আপলোড দিয়েছে।
পিকটি দেখে হিমুর খুব কষ্ট লাগলো।হিমুর নরম মন।মেয়েটির জন্য কখন যে হিমুর চোখ বেয়ে ক'ফোটা অশ্রু এসে গেলো, হিমু বুঝতেই পারেনি।
হিমু খেয়াল করলো, মেয়েটির মুখের এক সাইড বাঁকা।ঠোঁট দুটো একটি অন্যটির উপরে উঠে গেছে।তাতে খয়েরি রঙের লিপষ্টিক দেওয়া।কপালখানা কুঁকড়ানো। আহা!! বেচারিকে মনে হয় ছোটবেলায় 'হেপাটাইটিস-বি' ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়নি।তাই তার শরীরের আজ এই অবস্থা- হিমু ভাবলো।
হিমু মজিদকে ডাক দিলো।
- 'মজিদ দেখো, এই মেয়েটির কি করুণ অবস্থা।বেচারি কতোই না কষ্টে আছে।'- হিমু কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
মজিদ দেখলো।দেখে সে হো হো করে হেসে উঠলো।বললো,- 'আরে হিমু দা, এটা সেলফি পিক।মেয়েটি একটু ঢং করে মুখ ত্যারা-ব্যাকা করে তুলেছে।'
হিমু অবাক হলো।কতো সুন্দর স্বাভাবিক চেহারাটিকে ত্যারা - ব্যাকা করে ছবি তোলার মধ্যে কি স্মার্টনেস আছে হিমু বুঝলোনা।
'
আরেক রাতে হিমু খাওয়া-দাওয়া সেরে একটু এফবিতে ঢুকলো।
ঢুকে দেখে 'স্বপ্ন বালিকা স্বপ্না' নামের একটি এ্যাকাউন্ট থেকে হিমুকে একটি ম্যাসেজ করা হয়েছে।
লিখেছে- 'Hi hemu via, kaman asa? Rupa kaman asa?'
ম্যাসেজটি দেখে হিমু প্রচন্ড ভয় পায়।তার মাথা ঘুরপাক খায়।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করছে, হিমুর কাছে কামান আছে কিনা? রূপার কাছে কামান আছে কিনা।ডেঞ্জারাস তো।
হিমুর কাছে কামান কোত্থেকে থাকবে? হিমু খুব শান্ত-শিষ্ট-ভদ্র ছেলে।তাছাড়া এসব গুলি-পিস্তল-কামান সে খুবই ভয় পায়।
রূপার কাছেইবা কামান থাকবে কেনো? হিমু ভাবলো, - 'আচ্ছা, রূপার বাবা তো রাজনীতি করে।আওয়ামিলীগ পন্থী।মুজিব বলতেই বেঁহুশ।রূপার বাবার সূত্র ধরেই কি রূপার কাছে কামান আছে কিনা জিজ্ঞেস করছে?'
হিমু উত্তর দিলো- 'আমার কাছে কামান কোত্থেকে থাকবে বলুন? আমি তো কামান কোনদিন দেখিইনি। রূপার বাবা হয়তো রাজনীতি করে, কিন্তু রূপা এসবে একদম নেই।বিশ্বাস করুন।'
-- ' r a via, ame kamanar katha balchina.balchi apna kaman asan?'
-- 'বলেছি তো আমার কামান নেই।'- হিমু উত্তর দিলো।
-- 'Ohhh via, apna bangla bugen na? balchi apna kaman asan?'
হিমু উত্তর দেয়না। মেয়েটিকে হিমুর সুবিধার মনে হয়না।বারবার কামানের কথা বলছে।মনে হয় বিএনপি-জামাতের কোন অনলাইন গোয়েন্দা-টোয়েন্দা হবে হয়তো।
ওইদিক থেকে আবার ম্যাসেজ- ' via, apna ki sabsamay halad pangabi paran?'
হিমুর সন্দেহ আরো শক্ত হয়।এই মেয়ে এখন পাঞ্জাবিদের কথা জিজ্ঞেস করছে।একটুপর হয়তো আল বদর- আল শামসের কথা জিজ্ঞেস করবে।এরপর হয়তো পাকিস্তানের কথা জিজ্ঞেস করবে।মেয়েটি নিশ্চয় বিএনপি-জামাতের কোন পেইড এজেন্ট।হিমু কথা বাড়ায় না।দ্রুত মেয়েটিকে ব্লক করে এ্যাকাউন্টটি ডিএকটিভেইট করে দেয়।
মজিদ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে আর পা দুলাচ্ছে।মুখে বিড়বিড় করে গাইছে- 'হ্যাম তেরে বিনে আবে রাহে নাহি ছ্যাকতে,তেরে বিনা কিইবা জুদে মিলা............'