এদিকে ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া পদ্মার দুই তীরের বিশাল চরের বেলেমাটিতে বাদাম চাষে সফলতা পেয়েছেন দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষকরা। দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, মরিচা, ফিলিপনগর ও চিলমারি ইউনিয়নের চরে ১০-১২ বছর ধরে বাদাম চাষ হচ্ছে। ফিলিপনগর গ্রামের অনেক কৃষক ২০ বছর ধরে চরে বাদাম চাষ করছেন। চাষিরা জানায়, এক বিঘাতে বাদাম চাষে ৭-৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিঘাতে ১০-১১ মণ বাদাম উৎপাদন হয়। বিক্রি করে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরে ১ হাজার ৮৭৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। অন্যদিকে বাদাম চাষের সফলতায় মাগুরার মহম্মদপুরের মধুমতি নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকার নদী ভাঙা বিপর্যস্ত চরাঞ্চলের দুই সহস্রাধিক মানুষের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। মহম্মদপুর উপজেলার নদী সিকস্তি চরসেলামতপুর, বৃহসনগর, দয়ারামপুর, গয়েশপুর, পাল্লা, শিরগ্রাম, বসুরধুলজুড়ি, ভোলানাথপুর, রুইজানি, গোপালনগর, জাঙ্গালিয়া, রায়পাশা, মুরাইল, পাঁচুড়িয়া, আড়মাঝি, চরঝামা, চরদেউলিসহ নদীভাঙনের শিকার অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ চরের জমিতে বাদাম আবাদ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং পুঁজি পেলে বাদাম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পারবে বলে তাদের দাবি। এরই মাঝে আগাম জাতের বাদাম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। চরাঞ্চলের বাদাম চাষকে কেন্দ্র করে বাদাম বিক্রির পাইকারি ও মোকাম গড়ে উঠেছে। বাদাম বেচা-বিক্রির জন্য মোকামগুলোতে ২০ থেকে ২২টি আড়ৎ গড়ে উঠেছে। বাদামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় আড়ৎদারদের মাধ্যমে বাদাম কিনে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার পোস্তগোলার বাদাম ব্যবসায়ীরা জানান, চরাঞ্চলের বাদামের গুণগতমান ভালো হওয়ায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
এদিকে চীনাবাদাম চাষে ঝুঁকেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। সদর উপজেলার বালিয়া, ভুল্লী, শুকানপুকুরী, গড়েয়া ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চীনাবাদামের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য ফসলে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় এবং চীনাবাদামের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ ফসলের দিকে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে দেড় থেকে দুই টন চীনাবাদম উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষকরা ঢাকা-১, বিনা-১, বিনা-২, বিনা-৩, ঝিঙ্গা, বাসন্তী, ত্রিদানা, ঝিঙ্গা এবং মাইজচর জাতের বাদাম চাষ করেছেন। এছাড়া উন্নতমানের হাইব্রিড জাতের বাদামের আবাদও করেছেন। সব জাতের বাদামেরই ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদাম চাষে এ অভাবনীয় সাফল্যে খুশির ঝিলিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণীর চোখে-মুখে।