পবিত্র কোরানকে হলের দোতলা থেকে ছুড়ে মাটিতে নিক্ষেপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা। গত মঙ্গলবার সৈয়দ আমীর আলী হলে এ ঘটনা ঘটে। নিক্ষেপকারীর নাম সূর্য কুমার। সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই ছাত্রলীগ ক্যাডারের ছাত্রত্ব বাতিল এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আমীর আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ওই হলের আবাসিক শিক্ষক সাইদুর রশিদ সুমনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন এ কে এম আরিফুল ইসলাম ও সেলিম রেজা। তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ‘ক্যাম্পাসে নাশকতা সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলগুলোতে শিবির গোপন বৈঠক করছে’ এই সন্দেহের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম মনির-উজ-জামানের নেতৃত্বে শিবির ধরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন আবাসিক হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পুলিশের সঙ্গে ছিল। শহীদ শামসুজ্জোহা হলে শিবির ক্যাম্পাসে নাশকতা সৃষ্টির জন্য গোপন বৈঠক করছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথমে ওই হলেই তল্লাশি চালায় পুলিশ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শতাধিক পুলিশ হলের সবগুলো রুমে তল্লাশি চালিয়ে শিবিরের কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা কোন জিহাদি বই বা অন্য কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।
জোহা হলে নিষ্ফল তল্লাশির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমির হলে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশকে তল্লাশির কাজে সহযোগিতা করছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক সূর্য কুমার সৈয়দ আমীর হলের ২৩১ নম্বর কক্ষ থেকে একটি কোরান শরীফ নিয়ে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। এ সময় ওই হলের ছাত্রলীগের কর্মী শফিক, হালিম, হাফিজ ও ইমন তার সঙ্গে ছিল।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত সূর্যের ছাত্রত্ব বাতিল এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর চৌধুরী মুহম্মদ জাকারিয়া, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমানসহ হলের আবাসিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পরে দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ, হলের আবাসিক শিক্ষক, হল মসজিদের পেশ ইমাম ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আহমদ আলী আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল মসজিদে বিষয়টি নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আলোচনায় বসেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সৈয়দ আমীর হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ‘হলের ২৩০ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী রায়হান মাটিতে পড়ে থাকা কোরান শরীফটি তুলে নিয়ে মসজিদে রাখেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং অভিযুক্ত সূর্যের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
এ ঘটনায় খোদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা এ কাজকে চরম ঘৃণিত এবং ছাত্রলীগের জন্য এক বিরাট ক্ষতি বলে মনে করেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জাকির বলেন, কোরান শরীফকে হলের দোতলা থেকে ফেলে দেয়া- এটা ধর্মকে অবমাননা করার শামিল বলে আমি মনে করি। এটা শুধু কোরান কেন যে কোন পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে এভাবে ফেলে দেয়া মানে হচ্ছে ওই ধর্মকে অবমাননা করা। এটি নিঃসন্দেহে একটি ঘৃণিত কাজ। এ ব্যাপারে সভাপতি-সেক্রেটারিসহ বসে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শ্রী সূর্য কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোরান শরীফ নিচে নিক্ষেপ করিনি। বাইরের বারান্দায় রেখেছিলাম।
সূর্যের এ কাজের বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আহমদ আলী বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। সে এ কাজের জন্য আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আবারও তাকে সকলের সামনে মাফ চাইতে বলবো। আর যাতে এরকম কাজ কেউ কখনও না করতে পারে- এজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:৩৫