কাজে বাধা দেবেন না : রফিকুল আমীন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ট্রেনার ও ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন বলেছেন, আমাদের কর্মকা-ে বাধা সৃষ্টি করবেন না। দয়া করে কাজ করতে দিন। ২০০৪ সাল থেকে ডেসটিনিকে নিয়ে দশ-বারো বার বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পায়নি। নতুন করে ডেসটিনির বিরুদ্ধে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। আমরা যে কোনো তদন্তকে স্বাগত জানাই। সর্বোচ্চ শক্তিশালী কমিটি তৈরি করে তদন্ত করুন, এর পর আর হয়রানি করবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় টকশো 'তৃতীয় মাত্রা'য় তিনি এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় তৃতীয় মাত্রায় আরো উপস্থিত ছিলেন সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী।
ডেসটিনি নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে হেদায়েতুল ইসলামের আলোচনার সূত্র ধরে রফিকুল আমীন জানান, ডেসটিনিকে নিয়ে বহুবার তদন্ত হলেও এ পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পায়নি কোনো তদন্তকারী সংস্থা। সরকারি ফাইল ঘাঁটলে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। তিনি জানান, ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম স্পেশাল ব্রাঞ্চ তদন্ত করে। এরপর কেয়ারটেকার সরকার পাঁচ-ছয় বার তদন্ত করে। ২০০৮ সালে আবার এনএসআই তদন্ত করে। এভাবে সরকারের প্রত্যেক সংস্থা তদন্ত করে। দুদক বেশ কয়েকবার তদন্ত করে।
রফিকুল আমীন বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় দুদকের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন কর্নেল আমাকে ডেকে বললেন, আপনাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। কি অভিযোগ জানতে চাইলে উত্তরে তিনি জানালেন, অভিযোগটা যে কি তা আমরা ধরতে পারছি না। মনে হচ্ছে আপনারা কিছু যেন একটা করছেন। আমি এ অভিযোগের উত্তরে বলেছিলাম, আপনার জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। এমনিভাবে এনবিআরও কর ফাঁকির অভিযোগে গ্রেফতার করতে এসে দেখে যে, দেশের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়েও আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কর প্রদান করছি। পরে তারা সরি বলে চলে যায়। এমনিভাবে টিভিতেও বিভিন্ন প্রতিবেদন করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ কেউ আনতে পারেনি। অথচ এতে আমাদের হয়রানি হতে হয়েছে। ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাবেক সচিব হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ডেসটিনি নিয়ে এত তদন্ত হল কিন্তু নতুন করে অভিযোগ তোলা হচ্ছে কেন? এতে করে ডেসটিনির ৪৫ লাখ ক্রেতা-পরিবেশক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় কে নেবে?
বর্তমানে যে বিতর্ক উঠছে তাতে ডেসটিনির ক্রেতা-পরিবেশক কোনো ঝুঁকিতে রয়েছে কি না অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের এ প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আমীন বলেন, এক কথায় ঝুঁকির মধ্যে নেই। এখানে কোনো ঝুঁকির সিস্টেম রাখা হয়নি। তিনি বলেন, যারা ফুলটাইম কাজ করছে তাদের মধ্যে কোনো ব্যর্থতা নেই। কোনো অভিযোগ নেই। আবার যারা পার্টটাইম কাজ করছে তারাও সফল হচ্ছে। তবে এখানে একটি গ্রুপ সফল ও ব্যর্থ কোনোটাই হচ্ছে না। আমার ধারণা এদের কাছে কোম্পানির অনেক তথ্য যাচ্ছে না।
তিনি জানান, ডেসটিনি থেকে যে কোনো একটি পণ্য কিনে সারা জীবনের জন্য পরিবেশক হওয়া যায়। তাই অনেকে প্রথম দিকে পরিবেশক হয়ে ডেসটিনি থেকে দূরে চলে গিয়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন আমরা আর হয়তো ডেসটিনির পরিবেশক নই। এর মধ্যে ডেসটিনি অনেক বড় হয়েছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দুই থেকে তিনশ পণ্য ডেসটিনিতে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল মিডিয়ায় ডেসটিনির খবর প্রকাশিত হওয়ায় ওইসব পুরনো ডিস্ট্রিবিউটররা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আমি বলেছি আপনারা নতুন করে কাজ শুরু করলে আমরা প্রশিক্ষণ দেব। সহযোগিতা করব।
উপস্থাপক বলেন, মিডিয়াতে নেতিবাচক খবরে আপনাদের ক্ষতি হয়নি লাভ হয়েছে? রফিকুল আমীন বলেন, অবশ্যই মিডিয়া যা বলেছে তাতে আমাদের সতর্ক হতে সহযোগিতা করেছে। যদিও ডেসটিনি নিয়ে অধিকাংশই কাল্পনিক তথ্য দিয়েছে তারা। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমরা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি কোনো অবস্থাতেই বাড়তি কথা বলে ডেসটিনির কোনো পণ্য বিক্রি করা যাবে না। মানুষকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া যাবে না। এ ধরনের কাজ করলে তার ডিস্ট্রিবিউটরশিপ বাতিল করে দেওয়া হবে বলে জানান।
রফিকুল আমীন বলেন, অনেক সাংবাদিক আমার কাছে এসে বলেছেন, আপনি যেভাবে আমাদের বুঝিয়েছেন, তাতে করে আমাদের ভুল ভেঙে গেছে। মনে হচ্ছে এখুনি আপনাদের পরিবেশক হয়ে যায়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে অনেক ভুল তথ্য প্রচার হয় বলে তারা অভিযোগ করেন। কোম্পানি এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানান তিনি।
রফিকুল আমীন বলেন, এমএলএম নিয়ে আল-আমীন প্রকাশনী নামে একটি প্রকাশনা বই বের করেছে। এতে করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। সে কারণে আমরা পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেছি।
পণ্যের ব্র্যান্ড সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আমীন বলেন, আমরা ডিটুকে, ডেসটিনি এবং ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এ তিন ধরনের ব্র্যান্ড ব্যবহার করছি, যা আইনগতভাবে স্বীকৃত।
হঠাৎ করেই মিডিয়াতে আপনাদের নিয়ে এত কথাবার্তা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল আমীন জানান, এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে। তার মধ্যে আমাদের সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ে গণসংযোগের অভাব রয়েছে। জনসাধারণ আমাদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পাচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে। কারণ এটা অপেন মার্কেট। কে কিভাবে পণ্য বিপণন করছে, তা ভাববার বিষয়।
ডেসটিনি গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে রফিকুল আমীন বলেন, ডেসটিনিতে মোট ৪৩ লাখের বেশি পরিবেশক রয়েছে। এদের মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে বিনিয়োগ করেছে। আর ১১/১২ লাখ বিনিয়োগ করেছে ট্রি প্ল্যানটেশনে। এখানে যারা বিনিয়োগকারী তারা সকলেই আবার ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর পরিবেশক। এরা যখন মাল্টিপারপাসে তখন আমরা তাদের বলছি সদস্য। আবার এরা যখন ট্রি প্ল্যানটেশনে তখন বলছি বিনিয়োগকারী।
রফিকুল আমীন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে বলেছে, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে ৩৮ লাখ লোক বিনিয়োগ করেছে। এটা অসত্য তথ্য। এখানে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখ। আরো বলা হয়েছে ৭০ লাখ লোকের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছে। এসবই ভুল তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই রিপোর্ট নিয়ে মিডিয়াতে রিপোর্ট করার আগে যদি আমার বক্তব্য নেওয়া হতো তবে খুশি হতাম। যে আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই রিপোর্ট হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? কিন্তু কোনো মিডিয়া রিপোর্ট করার আগে আমার কাছে আসেনি। তিনি বলেন, আমিও বেশ কয়েকটি মিডিয়া পরিচালনা করি। তবে এসব ক্ষেত্রে আমি সাংবাদিকতার ইথিকস প্রাধান্য দিই।
হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, এমএলএম বিশ্বে একটি স্বীকৃত বিপণন পদ্ধতি। এখান থেকে সফল হওয়া সম্ভব। কিন্তু আমার ধারণা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে ডিরেক্ট সেলিং পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডিরেক্ট সেলিং আইন রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত ওই আইন সরকার করতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেসটিনি যদি সত্যিই ব্যাংকিং করে তবে তা ডেসটিনিকে আগে জানাতে হত যে, আপনারা ব্যাংকিং করছেন। এই এই অভিযোগ রয়েছে। এটা হলে তারা (ডেসটিনি) সংশোধনের সুযোগ পেত। কিন্তু ওনারা রিপোর্ট অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠিয়ে দিলেন। সময় ক্ষেপণ করলেন। এখন যদি সত্যিই ডেসটিনি ব্যাংকিং না করে তবে এত প্রচার-প্রচারণা হল, এর দায় কে নেবে?
তিনি আরো বলেন, ডেসটিনির বিরুদ্ধে তাদের কোনো ক্রেতা-পরিবেশক ও বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ দেয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ে কে অভিযোগ করল? জাতিকে অবশ্যই তা জানাতে হবে যে, ডেসটিনি কি প্রতারণা করেছে? ডেসটিনি যদি কোনো প্রতারণা করে না থাকে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডেসটিনির এমএলএম ব্যবসার বৈধতা সম্পর্কে রফিকুল আমীন বলেন, আমরা ২০০১ সালে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে যে অনুমোদন নিয়েছি তার পাতা ২ সেকশন ৯তে খুবই পরিষ্কার ভাষায় লেখা রয়েছে যে, আমরা ডিরেক্ট সেলিং করতে পারব। তবে ডেসটিনি ছাড়া ডিরেক্ট সেলিংয়ের আর কোনো কোম্পানির বৈধ লাইলেন্স রয়েছে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।
এছাড়া হাইকোর্ট থেকেও আমরা এমএলএম ব্যবসার কয়েকটি রায় নিয়েছি। এর জন্য হাইকোর্টে কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল আমীন বলেন, একটা জবাবদিহিতার মধ্যে স্বচ্ছভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে আমরা এটা করেছি। তিনি বলেন, বিগত চারদলীয় সরকারের কাছে ডিরেক্ট সেলিং আইন করতে অনুরোধ তারা করেননি। কেয়ারটেকার সরকারের আমলে আইন করতে ধরনা দিলেও তারা ফিরে তাকায়নি। বর্তমান সরকারের আমলে তিন বছর ধরে আইনটি পাস করতে অনুরোধ জানিয়ে আসছি। তবে এখনো কোনো ভালো সংবাদ পাইনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল আমীন বলেন, ডেসটিনি সম্পর্কে আর যেন কেউ ভুল তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য ডেসটিনির পণ্য, বিপণন সিস্টেম ও অন্যান্য তথ্যাদি জনসম্মুখে তুলে ধরতে মিডিয়াতে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডেসটিনির বিপণন সিস্টেম সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আমীন বলেন, এখানে পিরামিড সিস্টেমের কোনো অবকাশ নেই। ডিরেক্ট সেলিং সিস্টেমে এখানে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সকল ক্রেতা-পরিবেশক যাতে আয় করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে নিচের দিকের চেয়ে ওপরের দিকের পরিবেশকরা একটু বেশিই লাভবান হবেন। তিনি বলেন, আমি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট করেছি। আমার থিসিসের বিষয় ছিল- গখগ পধহ চৎড়ারফব ভরহধহপরধষ ্ ঢ়বৎংড়হধষ ভৎববফড়স ঃড় ঃযব সধংং ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ইধহমষধফবংয ঢ়বৎংঢ়বপঃরাব.
৪০০ পৃষ্ঠার ওই থিসিসে আমি ডিরেক্ট সেলিং নিয়ে যে থিওরি দিয়েছিলাম, তা প্রশংসিত হয়েছিল। এই আইডিয়া অনেকে গ্রহণ করেছে। আমরা এর মূল্যায়নের ভিত্তিতে ডিরেক্ট সেলিং করছি, যাতে সকল স্তরের ডিস্ট্রিবিউটর লাভবান হতে পারেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করেছে, তা তথ্যভিত্তিক নয়। এ বিষয়ে আমরা আইন ব্যাবস্তা নিবো