রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের খাতা জালিয়াতির সময় পরীক্ষক ও দুই ছাত্রসহ ৫ জনকে গতকাল সকালে রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশ বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দু’টি ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের খাতা, দু’টি কলম ও ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো বগুড়ার সান্তাহারের শহীদ আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক মো. আবুল কালাম আজাদ, দালাল ইব্রাহীম, আলতাব ফটিক, বরেন্দ্র কলেজের ছাত্র আল আমিন ও হাসিবুর রহমান হাসান। গত রোববার দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ‘নম্বর বাড়িয়ে পাসের হার ও গ্রেড বৃদ্ধি’ শিরোনামে খবর প্রকাশের পর রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশ এ ব্যাপারে তত্পর হয়। ডিবি পুলিশের দুই কনস্টেবল পরীক্ষার্থী সেজে অভিনব কায়দায় জালিয়াতদের গ্রেফতার করে। এ নিয়ে রাজশাহীজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাত্ক্ষণিকভাবে ওই শিক্ষকের পরীক্ষকশিপ বাতিল এবং তার কাছে থাকা সব খাতা ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মহানগর ডিবি পুলিশ জানায়, রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষক শহীদ আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ খাতায় নম্বর বাড়িয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে রাজশাহীর দুই দালাল ইব্রাহীম ও আলতাব ফটিকের মাধ্যমে রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা এ পর্যন্ত ১২ পরীক্ষার্থীকে প্রভাষকের বগুড়া শহরের সেউজগাড়ীর বাসায় নিয়ে যায়। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার্থীরা স্বহস্তে নিজ নিজ খাতায় প্রশ্নোত্তর লিখে দেয় এবং ভুল উত্তর সংশোধন করে দেয়। এভাবে ওই পরীক্ষক তার অনৈতিক কাজ চালাতে থাকে। এরই মধ্যে বরেন্দ্র কলেজের ছাত্র নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের ওয়াসেলের ছেলে আল আমিন ও পাবনার ভাঙ্গুরার আবদুল মালেকের ছেলে হাসিবুর রহমান হাসান দালাল ইব্রাহীমের কাছ থেকে তাদের পরীক্ষার খাতায় পুনরায় লেখার অফার পায়। বিষয়টি রাজশাহী ডিবি পুলিশ জানতে পেরে দুই কনস্টেবলকে ছাত্র সাজিয়ে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করায়। গত রোববার রাতে দুই কনস্টেবল, দালাল ইব্রাহীম ও আলতাব, দুই ছাত্র আলামীন ও হাসান একইসঙ্গে ওই পরীক্ষকের বগুড়ার বাসায় যায়। রাতে বাসায় অতিথি থাকায় তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরীক্ষকের কথা অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাসায় বসে দুই ছাত্র খাতা লেখার সময় এসি মাহফুজের নেতৃত্বে সবাইকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। দালাল আলতাফ ফটিকের বাড়ি বাগমারা থানার হাট দামনাশ গ্রামে ও ইব্রাহীমের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। গ্রেফতারকৃত প্রভাষকের বাড়ি আক্কেলপুর থানায়।
ডিবি পুলিশের এসি মাহফুজুর রহমান জানান, পরীক্ষার এসব খাতায় রোল নম্বর বা নাম কিছুই লেখা থাকে না। কিছু দুষ্ট পরীক্ষার্থী পরীক্ষা খারাপ হলে তাদের উত্তরপত্রে মোবাইল নম্বর লিখে দেয়। অসাধু পরীক্ষকরা এসব মোবাইল নম্বর ও দালালদের কাজে লাগিয়ে এ জালিয়াতি করে। বিনিময়ে তারা খাতাপ্রতি ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয়। পাস নম্বর, এ গ্রেড, বি গ্রেড, সি গ্রেড ও ডি গ্রেড অনুসারে টাকার পরিমাণ কম-বেশি হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত শিক্ষক ওই দুই দালালের যোগসাজশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল সার্টিফিকেটও সরবরাহ করে থাকে। এসব সার্টিফিকেট সরকারি কাজ ছাড়া সব কাজে ব্যবহার করা যায় বলে প্রভাষক ও দালাল স্বীকার করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
এ ধরনের অপরাধের দায়ে পরীক্ষক ও প্রভাষক হিসেবে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে এবং সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের বিরুদ্ধে কি ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে তা জানতে গতকাল বিকালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপ কেন্দ্রনাথ দাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব। এছাড়া তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু হুরায়রা বলেন, তাত্ক্ষণিকভাবে ওই শিক্ষকের পরীক্ষকশিপ বাতিল এবং তাদের কাছে যেসব খাতা ছিল তা ক্লোজ করা হবে। এছাড়া বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পেশ করা হবে। সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এ ধরনের অপরাধের দায়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে আজীবনের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া ওই শিক্ষকের অপরাধের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিজির কাছে সুপারিশ করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১০ রাত ২:০৮