মব ট্রায়াল করে বঙ্গবন্ধু, সাত বীরশ্রেষ্ঠসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। মাজার ভাঙা হচ্ছে। এমনকি হাজারো শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্র গাজী টায়ার্স, প্রাণ-আরএফএলের দুটি প্লান্টসহ অগণিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে; লুটপাট করা হয়েছে। এগুলো এখনও থামেনি। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তেমনি দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
গত শনিবার রাজশাহীতে ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে শিবিরের হামলায় তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাঁর হাতের রগ কেটে দিয়েছিল। তাঁকেও মব ট্রায়াল করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, ছাত্রলীগের ওই কর্মী তো অচল ছিল। তবু তাঁকে কেন হত্যা করা হলো? সরকার এদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? এসব ঘটনা দেশব্যাপী একটি নৈরাশ্য ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা। বিগত সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ চাপা পড়ে ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে মানুষ সেসব ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রকাশ করতে শুরু করে। এর মধ্যেও আবার অনেক দুষ্কৃতকারী সুযোগ নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে। তবে সে যা-ই হোক, আইনের বাইরে কোনো কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না। কারও অপরাধ থাকলে মব ট্রায়াল নয়, তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার যদি মব ট্রায়ালের এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত ও দমন করতে না পারে, তাহলে ছাত্র অভ্যুত্থান হোক আর রাষ্ট্র সংস্কার– তারা যেভাবেই বলুক, সেটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। জনগণের যে আশা-উদ্দীপনা ছিল, সেটি যদি বিপর্যস্ত হয়, তা হবে জাতির জন্য এক বিশাল হতাশার অধ্যায়।
বিচারাঙ্গনেও মব ট্রায়াল হয়েছে। আমরা দেখেছি, বিগত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের আদালতে নাজেহাল করা হচ্ছে। শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। যদিও গত কয়েক দিনে সেটি কমেছে। বিগত সরকারের সমর্থক আইনজীবীরা আদালতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভীতির মধ্যে রয়েছেন। অতীতের সরকার যে ভুল বা অন্যায় করেছে, তারই যদি পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে বা চলতে দেওয়া হয়, সেটা কিন্তু পরিবর্তনের লক্ষণ নয়।
আমরা দেখছি, গণহারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা হচ্ছে। এসব মামলা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে বর্তমানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে এ সরকারকেই দায়ভার বহন করতে হবে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। কিন্তু হেনস্তার জন্য কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেন মামলা দেওয়া না হয়। আশা করছি, যাদের হেনস্তার উদ্দেশ্যে মামলা হয়েছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সরকার অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আমরা চাই, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত হোক। একই সঙ্গে মব ট্রায়ালের যে ধারা চলছে, সেটার অবসান হোক। নাগরিকদেরও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
লেখক : জেড আই খান পান্না
আমার প্রশ্ন, ১৭ জুলাই ২০২৪ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত হোন। মি. সাঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা হতে দেখা যায়, যার মূলে রয়েছে ঘটনার সময় ধারণ করা কিছু ভিডিও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওইসব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশের তাক করা অস্ত্রের বিপরীতে মি. সাঈদ বুক পেতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তখন যদি সেই পুলিশ কে আটক করা হতো তবে ততকালীন সরকারের আজ এই পরিনতি হতনা।
তেমনি ৭ সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
মি. মাসুদকে আহত অবস্থায় বোয়ালিয়া থানায় আনার পর তাঁর কথাবার্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বোয়ালিয়া থানা হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মি. মাসুদকে বলতে দেখা যায়, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’
তাই এখনো সময় আছে মব ট্রায়াল হতাশা ছড়ানো মুক্তি পেতে ,আবদুল্লাহ আল মাসুদ হত্যাকাণ্ড জড়িত অন্তত কাউকে আটক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৬:১১