গত ০৯ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসর পাতায় একজন লেখক সৌদি আরবের মদিনা থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ওয়াদি আল বায়জা বা জিনের পাহাড় নামক সড়কে বন্ধ গাড়ি কিংবা পানি ঢাললে ঢালু দিকে না গড়িয়ে উপরের দিকে গড়ানোকে অলৌকিক বলেছেন। আমি লেখক বা ওই লেখার সমালোচনা করবো না, শুধু মাত্র বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করছি।
উনি একটি জায়গায় লিখেছেন, ‘বিষয়টা অনেকে মনে করেন, এটা কোন জিনের কা-। আবার অনেকের মতে, সেখানকার পাহাড়গুলোতে এমন কিছু চৌম্বক শক্তি রয়েছে যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করছে। যেখা যায়, সেখানকার রাস্তায় পানি ঢাললেও ঢালু দিকে না গড়িয়ে বরং ওপরের দিকে উঠছে। সেক্ষেত্রে এই চৌম্বক শক্তি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়। কারণ পানির মধ্যে চুম্বরে আকর্ষণ করার মতো কিছু নেই।’ অর্থ্যাৎ, তিনি বুঝিয়েছেন, ‘মাধ্যাকর্ষণ এখানে কাজ করছে না আর অতি-প্রাকৃতিক কোনো ব্যাপার আছে! কিন্তু বিজ্ঞানের কাছেও একটি প্রমাণিত সহজ ব্যাখ্যা আছে।
এইটা হল “ম্যাগনেটিক হিল” বা “গ্রাভিটি হিল” এর কারণ। এটা এক ধরণের দৃষ্টি ভ্রান্তি (optical illusion)। চোখে দেখার ভুলের কারণে এমন হয়। আসলে গাড়ি ঢালু রাস্তা বরাবরই নামে। কিন্তু চোখে দেখার ভুলের কারণে মনে হয় গাড়ি সোজা রাস্তা দিয়ে একা একাই চলছে (ইঞ্জিন বন্ধ থাকা অবস্থায়) অথবা মনে হয় উঁচু থেকে নিচুতে গাড়ি নামানোর সময় ইঞ্জিন চালাতে হচ্ছে (অথচ এক্ষেত্রে কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ রাখালেও গাড়ি চলার কথা ছিল) তানা হলে গাড়ি গড়িয়ে উঁচুদিকে চলে যাচ্ছে। এসব দেখে মনে হয় অভিকর্ষ বল উল্টা দিকে কাজ করছে।
বিষয়টা একটু সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলি, আমরা আমাদের অবস্থানের কোণ বুঝতে ইন্দ্রিয় ব্যবহার করি, নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এক্ষেত্রে দৃষ্টি ব্যবহার করি। সাধারণত এসব রহস্যময় জায়গা পাহাড়ী এলাকায় পাহাড় কাটা রাস্তায় হয়। এসব জায়গা থেকে আমরা দিগন্তরেখা (Horizon) ঠিকমত দেখতে পারি না, আর দিগন্তরেখাকে আমাদের মস্তিস্ক প্রসঙ্গ কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে। এজন্য নিচের দিকে নামতে থাকা গাড়িকেও আমরা মনে করি পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। এখানে প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে না এখানে, অতিপ্রাকৃতিকও কাজ করছে না; এটা শুধু একটা দৃষ্টিভ্রম। মূলত কোন জায়গার দৃশ্য যদি এমন হয় যেখানে দিগন্ত (Horizon) সরাসরি দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে উঁচু নিচু নির্ধারনের জন্য কোন রেফারেন্স থাকে না। ফলে উঁচু দিক কে নিচু আর নিচুু দিক কে উঁচু বলে মনে হয়।
আপনার মস্তিষ্ক হয়তো তো জানা মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল বস্তু, তবে এটাও বোকা বনতে পারে। এর পরীক্ষা আপনি নিজেও করতে পারেন। একটা দুই ফিট লম্বা যন্ত্র পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনিও এর পরিমাপ করতে পারেন। যন্ত্রটার নাম Carpenteros Level. অথবা দেখে নিতে পারেন, https://www.youtube.com/watch?v=pUasuxHZXZo.
এর মানে এই না যে অতিপ্রাকৃতিক কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। পৃথিবীজুড়ে এমন এৎধারঃু যরষষ/ গুংঃবৎু ংঢ়ড়ঃ/ ঝঢ়ড়ড়শু যরষষ অসংখ্য। পাশের দেশ ভারতের লাদাখেও আছে। আমেরিকার মেরিল্যান্ডেও আছে, লোকে মনে করে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে নিহতদের আত্ম এই অস্বাভাবিকতার কারণ! ব্যাপারটা বেশ মজার। নিচে পেনসিলভ্যানিয়ার পিটসবুর্গ থেকে নেয়া একটি ভিডিও লিংক দিচ্ছি। এখানে কার্পেন্টার লেভেল দিয়েও ব্যাপারটা বোঝানো হয়েছে। দেখুন,
https://www.youtube.com/watch?time_continue=56&v=M2lAqYZ6N5o
যেখানেই কাউকে এই অলৌকিক ব্যাপারটা প্রচার করতে দেখবেন, অনুগ্রহ করে তাদেরকে সুন্দর করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবেন।
লেখক: আকাশ ইকবাল
প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৬