somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণ সচতেনতায় চেতনার বিকাশই একমাত্র পথ

১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুরুতে একটি পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। শুরুতেই পরিসংখ্যান। কিন্তু কেন? পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আর সে কারণটি হচ্ছে, ‘লজ্জা’! লজ্জাবোধের কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা স্বাধীনতার প্রায় ৪৭ বছরেও গড়া সম্ভব হয়নি। হবে হয়তো। কিন্তু কখন হবে সেটাও আমরা কেউ জানি না। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কোনো দিনই সম্ভব হবে না। গত ১৬ অক্টোবর কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘দেশে গড়ে প্রতিদিন ধর্ষণ হয় দুজন নারী’। আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত মাসিক বুলেটিনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার মোট নারীদের মধ্যে ছয় বছরের কম থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার মোট নারীদের মধ্যে ৪৫ জনের বয়স ছয় বছরেরও নিচে। এ ছাড়া ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৮৪ জন ও ১৩ থেকে ১৮ বছরের ৯৮ জন রয়েছেন। ধর্ষণের পর নিহত নারীদের মধ্যেও ৬ বছরের কম বয়সী শিশু থেকে ১৮ বছরের নারীর সংখ্যাই বেশি। পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে দুজনের বয়স ৬ বছরেরও কম। এছাড়া ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ১৪ জন ও ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১৫ জন নারী রয়েছেন। এছাড়া ধর্ষণের অপচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৯০ জন নারী। এসব ঘটনায় থানায় ৫৯টি মামলা হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের পর নিহতের সংখ্যা গত বছরের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর এরই মধ্যে ধর্ষণের পর নিহত হয়েছেন ৫৪ জন। যা এখন পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে সাতজন বেশি।

এই হিসাব তো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও থানায় দায়ের করা মামলার তালিকা থেকে নেওয়া। কিন্তু প্রতিদিন এমন আরো অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হন, যে খবর বিভিন্ন কারণে খবর প্রকাশিত হয় না কিংবা থানায় মামলা করাও হয় না। আজকাল ধর্ষণ নিয়ে অনেক কথাবার্তা এবং বিতর্ক হলেও ধর্ষণের ওপর তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য সমাধান চোখে পড়ে না। যদিও প্রতিনিয়ত কিছু সচেতন মানুষ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ধর্ষণের কুফল নিয়ে লিখছেন। অনেকে ভুল ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানা, বোঝা এবং সচেতনতা তৈরি করা শুধু নারীর জন্যই নয়, সমাজের প্রতিটি পুরুষের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বস্তরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বহুমুখী পদক্ষেপ ছাড়া সমাজে যৌন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের আজকের এই পুঁজিবাদী পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষরাও যত দিন না এ বিষয়ে সচেতন হবেন এবং সমাজের প্রতিটি মানুষ এর বিরুদ্ধে সক্রিয় না হবেন তত দিন পর্যন্ত এই সর্বত্র বিরাজমান ঘৃণ্য অপরাধটি রোধ করা বা অন্তত পক্ষে এর সংখ্যা কমিয়ে আনা কখনই সম্ভব হবে না!

অনেক লেখক ধর্ষণ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। যার কারণে তরুণ প্রজন্ম সেই ব্যাখ্যা থেকে তেমন কোনো শিক্ষা নিতে পারছে না। ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন নির্যাতন যে মানব প্রজাতিতে সেই আদি থেকেই ছিল সেটা অনুমান করে নিলে বোধ হয় খুব একটা ভুল হবে না। আমাদের কয়েক হাজার বছরের লিখিত ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ মেলে। তার আগে মানবসমাজে ধর্ষণ ছিল না সেটা ধরে নেওয়া চরম বোকামিই হবে। এমনকি প্রাণী জগতেও ধর্ষণ ঘটতে দেখা যায়। এটা আমাদের আদিমতম সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। ধর্ষণ পৃথিবীর একমাত্র অপরাধ, যে একবার ধর্ষিত হয় সে বাকি জীবন বার বার ধর্ষণের শিকার হতে থাকে। একটা পর্যায়ে বার বার অপমাণিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একজন নারী প্রথমবার একজন পুরুষের হাতে, তারপর ধর্ষণ শুরু হয় পরিবারের হাতে, সমাজের হাতে, বিচার চাইতে গেলে পুলিশের হাতে, ডাক্তারের হাতে, রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার হাতে। আমাদের দেশে ধর্ষণ যেন নরকে প্রবেশের ওয়ানওয়ে টিকিট, আত্মহত্যা না করলে আমরণ হেঁটে যেতে হবে সেই নরকের প্রতিটি স্তরের মধ্য দিয়ে।

আমাদের সমাজের কিছু প্রচলিত প্রথা আছে। এগুলোকে প্রথা নয়, অপরাধ। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে ধর্ষিত মেয়েটিকেই প্রথমে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়Ñ নিশ্চয়ই মেয়েটি ‘খারাপ’ কাপড় পরেছিল! নিশ্চয়ই মেয়েটি ছেলেটিকে প্রলোভিত করে! এক হাতে তালি বাজে না! মেয়েটিরও নিশ্চয়ই কোনো দোষ আছে! এত রাতে বাসার বাইরে কেন থাকবে? খাবার ঢাকা না থাকলে মাছি তো বসবেই! কোনো ভালো মেয়ে কি এভাবে ছেলেদের বাসায় চলে যায়? সে কি টাকা পয়সার লোভে বা প্রতিহিংসার চরিতার্থ করা জন্য ছেলেটিকে ফাঁসাচ্ছে? ধর্ষক যদি বিত্তশালী বা প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের হয় তাহলে তো কথাই নেই। হুমকি-ধমকি চলতে থাকবে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। বহু ধর্ষণের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয় না কিংবা থানায় মামলা হয় না। না হওয়ার কারণ বিত্তশালী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকির কারণে ভয়ে চুপ করে থাকে ভিকটিম।

এখন প্রশ্ন হলো, ধর্ষণ কি মনুষ্য সমাজের একটি অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য? আর যদি অভিযোজিত বৈশিষ্ট্যই হয় তবে এর সার্থকতা কী? ধর্ষণ, মানবসমাজের অভিযোজনীয় বৈশিষ্ট্য কিনা, তা ব্যাখ্যা করার আগে আমরা অন্য প্রাণীদের মধ্যে এর যৌক্তিকতা বিচার করে নেয়া যায়। মানুষ, অন্যান্য প্রাণী থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। মানুষ জীবজগতেরই একটা অংশ মাত্র। কুকুর, শিম্পাঞ্জি, হাতি, গরিলা যেমন আলাদা আলাদা প্রজাতি। মানুষও তেমন। তবে প্রজাতিভিত্তিক প্রাণিকূলের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন- জোনাকি পোকা জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তার শরীরে আলো জ্বালাতে পারে এবং এই আলো তাদের যৌন মিলন ও শিকারে সাহায্য করে। জোনাকির এই বৈশিষ্ট্যকে জৈব বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। অথচ মানুষের এমন কোনো বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করার সময় আমরা জীববিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে কেবল সামাজিক অবস্থাগুলো বিবেচনা করি।

সমাজবিজ্ঞানের প্রচলিত যে ধ্যান-ধারণা, তা মানুষকে

অন্যান্য প্রাণী থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা করে দেখার পক্ষপাতী। বিশেষত মানুষের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-কে

শুধু সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা না করে জীববিজ্ঞানের নিরিখে দেখার প্রয়াস বেশির ভাগ সমাজবিজ্ঞানীর মধ্যেই নেই। একজন আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর লি এলিস প্রভূত এই সমস্যাটিকে বায়োফোবিয়া বলে চিহ্নিত করেন।

লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×