somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরওয়েজিয়ান ভাষার ব্যুৎপত্তি ও কিছু অভিজ্ঞতা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি। একদিন ক্লাস নিতে গিয়ে আমি আমার পরিচিতি পর্ব শেষ করতে না করতেই এক ছাত্রী প্রশ্ন করল- ডেনিশ আর নরওয়েজিয়ান এর মধ্যে পার্থক্য কি? প্রশ্নটা অপ্রাসঙ্গিক ছিলনা! কারন কিছুক্ষণ পূর্বেই আমি ওদের বলেছিলাম- আমি ডেনমার্কে প্রায় সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে এসেছি।আমি যখন বললাম, আমি এখনো পার্থক্য করার মত পর্যায়ে পৌঁছাইনি। সে সাথে সাথে আমাকে তার উত্তর জানিয়ে দিল। বলল তার কাছে নরওয়েজিয়ান ভাষাটা হল পদ্যের মত (কথা বলার মধ্যে ছন্দ আছে) আর ডেনিশ ভাষাটা হল গদ্যের মত অর্থাৎ ছন্দ নেই।
এখন আমার অভিজ্ঞতাও ঠিক ওই ছাত্রীর মতই। আসলেই নরওয়েজিয়ান ভাষায় কথা বলার মধ্যে ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে নরওয়ের লোকজন ভালই ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে পারে কিংবা যোগাযোগ করার ইচ্ছা রাখে, যা ইউরোপের অন্যান্য দেশে কম পরিলক্ষিত হয়।
যাই হোক, এখন নরওয়ের ভাষা নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক।



নরওয়ের অফিসিয়াল ভাষা হল norsk (নরস্ক); যা মূলত নর্থ জার্মানিক ভাষা (North Germanic language) কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাষা (Scandinavian language )থেকে এসেছে বলে ধরা হয়। Norsk ভাষাটি যদিও খুব অল্পসংখ্যক লোকের ভাষা, মাত্র ৫৫ লাখ মানুষের মাতৃভাষা। কিন্তু আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য যে, এত অল্প মানুষের ভাষা হয়েও এই নরস্ক এর দুটা লিখিত রূপ আছে। এক Bokmål, যার আক্ষরিক অর্থ বইয়ের ভাষা এবং, দুই Nynorsk, যার আক্ষরিক অর্থ নতুন নরওয়েজিয়ান। পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে যেখানে একই ভাষার দুইটি লিখিত রূপ সরকারিভাবে ব্যবহার হয়।
Norsk ভাষাটি কমসংখ্যক লোকের মুখের ভাষা হলেও ভাষাটির ইতিহাসটি বেশ সমৃদ্ধ। না, বাংলা ভাষার মত তাকে বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়নি।কিন্তু নিজেকে সার্বভৌম করতে তাকে অনেক চড়াই উৎড়াই পাড়ি দিতে হয়েছে।
ভাইকিং সাম্রাজ্যের প্রতিপত্তির কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি।এই ভাষাটি ছিল মূলত ভাইকিংদের ভাষা। ভাইকিং সাম্রাজ্যের প্রতিপত্তির সাথে সাথে ভাষাটিও পৃথিবীতে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।তারপর ১০৫০ সালের দিকে ভাইকিং সাম্রাজ্যের পতনের পর এই অঞ্চলে Chirstianity এর আবির্ভাব হয় ।ফলস্বরূপ প্রচুর ল্যাটিন বর্ণমালা মূল ভাষায় ঢুকে পড়ে। আদি ভাষা, যাকে old norse বলা হত, তার ক্রমে ক্রমে বিচ্যুত হতে থাকে যা রূপ নেয় middle norwegian নামে।চৌদ্দশ খ্রিস্টাব্দে নরওয়ে যুক্ত হয় ডেনমার্ক আর সুইডেন এর সাথে।তখন আবার মূল ভাষাতে ডেনিশ প্রভাব পড়ে এবং গড়ে উঠে আজকের mordern norwegian যা মূলত ডেনিশ ই। নরওেয়ের ভাষা তখন শুধু ব্যবহৃত হত কথ্য হিসেবে।লিখিত রূপে ব্যবহৃত হত ডেনিশ ভাষা।১৮১৪ সালে নরওয়ে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীন হয়।কিন্তু ভাষাতে ডেনিশ প্রভাব রয়ে যায়। এরপর Ivar Aasen নামক এক ব্যক্তি নরওয়ের বিভিন্ন প্রদেশের ভাষা সমন্বিত করে এক নতুন ভাষা প্রবর্তন করেন যা মূলত Nynorsk নামে এখন পরিচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য নরওয়ে ১৯ টি বিভাগে বিভক্ত।বিভাগ ভেদে নরওয়েজিয়ানদের ভাষার উচ্চারণ বিভিন্ন,যা ঐ বিভাগের উপভাষা হিসেবে পরিচিত।অনেকটা আমাদের দেশের চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল এসব অঞ্চলের মানুষের বাংলা ভাষায় আঞ্চলিক টানের মত।এই প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ছোট্ট একটা ঘটনা শেয়ার করি। ‘একদিন আমার এক অফিসিয়াল মিটিং এ এক ভদ্রলোক প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর আমি আমার নরওয়েজিয়ান সহকর্মীদের বললাম, আমিতো সব পয়েন্ট ঠিকমত বুঝতে পারিনি। সাথে সাথে আমার পাশের জন বলল, তোমার কথা বাদ দাও আমরাও সম্পূর্ণ বুঝতে পারিনি। কারণ সেই ভদ্রলোক তার নিজের উপভাষায় কথা বলছিলেন’। অর্থাৎ, তাদের মধ্যেও ভালই আঞ্চলিক টানের প্রভাব রয়েছে।
১৯২৯ সাল থেকে নরওয়েতে লিখিত ভাষা দুরকম।Bokmål, যা মূলত ডেনিশ।আর Nynorsk, যা এসেছে নরওয়ের বিভিন্ন উপভাষা গুলোর সমন্বয়ে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ লিখার কাজে bokmål ব্যবহার করেন। কিন্তু বর্তমানে নরওয়েজিয়ানরা Nynorsk কে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে অর্থাৎ তার ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রয়াস চালাচ্ছে।

বি দ্র: এই লেখাটি জার্মান প্রবাসে ম্যাগাজিনের জন্য লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×