somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি”

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে বড় কষ্ট নিয়ে লিখাটা লিখছি। আমার এক বন্ধু সেদিন গান গেয়ে আসছিল-“তেরি মেরি তেরি মেরি প্রেম কাহানিয়া” (বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত) । আমাকে বলল-দোস্ত গানটা জটিল না? একদম দিলের ভেতর গাইথ্যা গেছে। বললাম-খারাপ না। ক্যাম্পাস থেকে সিলেট শহরের দিকে যাচ্ছি। একটি বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আহা কি মধুর সুর। পেছনে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে গাইলাম। শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। ছোট বেলায় আমি আমার স্কুলের এসেমব্লি (শরীর চর্চা) পরিচালনা করতাম। সবাই মিলে জোড়ে জোড়ে জাতীয় সংগীত গাইতাম। সত্যি কথা বলতে তখন অতটা আবেগ কাজ করতনা। গাইতে হবে তাই গাইতাম। মির্জা স্যার জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় কতজনকে জালী বেত দিয়ে পেটাতেন আর বলতেন-জোড়ে গা। আজ সেই দিন গুলো মনে পড়ে গেল।

বই মেলার অনুষ্ঠান শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরে সেই তেরি মেরি বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল।
-জানিস আজ কত দিন পড়ে জাতীয় সংগীত গাইলাম
-তাই নাকি । ভাল। দোস্ত চল বিকালে সিনেমা দেখে আসি।
-তোরে বললাম কি। শোন জাতীয় সংগীত নিয়ে ছোটবেলার একটা মজার কাহিনী আছে।
-রাখ তো তোর জাতীয় সংগীত।
-মানে?
-মানে আবার কি? ওসব জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, দেশপ্রেম আমার ভাল লাগেনা। ওসব রাজনীতিবীদদের কাজ। তারা এখন দেশপ্রেমের নামে ব্যাবসা করে। লোক ঠকায়। সাধারন কিছু পাবলিক স্বার্থের জন্য তাদের পেছন পেছন দৌড়ায়। তুই আমি সবাই জানি এগুলা। কেউ কিছু বলেনা।
-কিন্তু!!
-কিন্তু আবার কি? শুধু বিটিভিতে দিনে একবার জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। তাও যখন বাজানো হয় তখন কেউ শোনে না। মার্চ ও ডিসেম্বর মাসের কয়েকদিন বাদে টিভিতে জাতীয় সংগীত সহ অন্যান্য দেশের গান শোনানো হয় না। তাছাড়া অন্যান্য সময়ে দেশপ্রেম নিয়ে নাটক হয় না, সিনেমা হয় না, পত্রিকাগুলো রিপোর্ট ও ছাপে না। তুই রাজনীতিবিদদের উপর জড়িপ চালিয়ে দেখ, সিংহভাগ মানুষ রাজনীতি করছে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ধান্দায়। তারা আমজনতার চেয়ে নিজেদের পকেটের কথা বেশি ভাবে। ছাত্ররাজনীতিবিদদের অবস্থা আরও করুন। যারা নিজেদের একাত্তরের স্বপক্ষের বলে দাবী করে তাদের বেশিরভাগ ৭জন বীরশ্রেষ্ঠ নাম জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবে না। ভুল বলেছি, বল??
আমি তার প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারিনি।

বিকাল বেলা সেই বন্ধুটির সাথে সিনেমা দেখতে গেলাম। সিনেমা শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজানো হল, জাতীয় পতাকা উড়ানো হল। কারও ভিতর ভাবলেশ নেই। আমি দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম । পেছন থেকে এক দর্শক চেচিয়ে উঠল-অ বাই তাম্শা করেন কেনে? বইয়া থাকুইন (তামাশা না করে বসে থাকুন)। এত মানুষের ভিড়ে আমি খুব বিব্রত বোধ করছিলাম। অগ্যতা বসে গেলাম।

হলে এসে মনে মনে আমি ১৯জন বন্ধুর উপর একটা জরিপ চালালাম। তাদের মধ্যে মাত্র ৮জন দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলল, ৩জন সঠিক ভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারল। তবে দু:খের বিষয় এর মধ্যে একজনও আমাদের জাতীয় সংগীতের সঠিক ইতিহাস বলতে পারল না।

সুপ্রিয় পাঠক আমার মনে হয় বাংলাদেশের বেশিরভাগ ভাগ মানুষই জাতীয় সংগীত সম্পর্কে জানেন না। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু তথ্য দিচ্ছি:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। তিনি প্রায় একযুগ বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলায়দহে ছিলেন। তখনকার আমলে কুষ্টিয়া অঞ্চলের একজন ডাক হরকরার সাথে পরিচয় হয়। তার নাম ছিল গগন হরকরা। তিনি বাঊল গান করতেন। রবীন্দ্রনাথ মূলত গগন হরকরার গান “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে..” এর সুরের আদলে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি..” গানটি লিখেন। ১৯০৫ সালে কলকাতার বঙ্গদর্শন পত্রিকাতে “আমার সোনার বাংলা” কবিতা আকারে প্রকাশ হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা করে রবীন্দ্রনাথ মোট ২৫ টি গান লিখেন। তার মধ্যে “আমার সোনার বাংলাও ছিল” । ১৯০৭ সালের ৭আগষ্ট কলকাতার একটি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সমাবেশে প্রথম পানটি জন সম্মুখে গাওয়া হয়। তখনকার শিল্পী গোপাল চন্দ্র সেনের কন্ঠে গানটি প্রথম রেকর্ড করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান তার “জীবন থেকে নেয়া” চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করেন। ঐসময়ে বাংলার বিশেষ করে পূর্ব বাংলার মানুষের মনে গানটি বিশাল দাগ কাটে। তখনকার আমলে স্বাধীনতার চেতনাবোধ যেকয়টি গানের মধ্যে ফুটে উঠেছিল তার মধ্যে “আমার সোনার বাংলা” ছিল অন্যতম। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ তাদের ইশতিহারে “আমার সোনার বাংলা” কে জাতীয় সংগীত ঘোষনা করে। একাত্তরের ঐতিহাসিক ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার ভবেরপারা গ্রামের আ¤্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে “আমার সোনার বাংলা” গাওয়া হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার অজিত রায় বর্তমান জাতীয় সংগীতের “যন্ত্র সংগীত” টি তৈরী করেন।
দেশ স্বাধীর হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার সাংবিধানিক ভাবে “আমার সোনার বাংলা” এর পঁচিশ লাইনের প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং প্রথম চার লাইন যন্ত্র সংগীতে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করার ঘোষণা দেয়।

জাতীয় সংগীতের যথাযথ ব্যবহারের জন্য কিছু আইনও রয়েছে। জাতীয় সংগীত চলাকালে সামরিক বেসামরিক সবাইকেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গাইতে হবে। ধর্মীয় টুপি, পাগরি, ঘোমটা বাদে মাথা থেকে হ্যাট বা টুপি সরিয়ে ফেলতে হবে। জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে গান গাইতে হবে। আইন অনুযায়ী জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় প্রতীকের অবমাননার জন্য কোন ব্যাক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি ২বছরের কারাদন্ড বা ১০হাজার টাকা জরিমানা কিংবা দুধরনের দন্ড হতে পারে।

সুপ্রিয় পাঠক আইন মানা তো দূরের কথা আমরা মনে কয়জন জাতীয় সংগীতের চেতনা ধারন করি বলুন তো? আমাদের দেশটা বড় অভাগা। আসুন না দেশ ও দশের জন্য একটু ভাবি। হৃদয়ে লালন করি "মা তোর বদন খানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি, সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।”

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×