সেদিন সন্ধ্যায় ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ অচেনা একটা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ফোন এলো। “হ্যালো, কে?” আমি জিগ্যেস করলাম। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ অস্পষ্টভাবে কী যেন বলছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না! “হ্যালো, হ্যালো” করছিলাম শুধু। নারীকণ্ঠ অস্পষ্টভাবে বলল, “আমি সামিরা, তুমি শুনতে পাচ্ছ?”
নেটওয়ার্ক বারবার উঠানামা করছিল। আমি শুধু নামটুকুই বুঝতে পারলাম। চেঁচিয়ে বললাম, “কিছুই তো বুঝতে পারছি না! হ্যালো, কে বলছেন?” এরমধ্যে ফোনটা কেটে গেল।
আমার মোবাইলে তখন কোনো ব্যালান্স ছিল না, তাই সাথে সাথে ব্যাক করতে পারিনি। ওপাশ থেকেও আর ফোন আসছিল না! ভাবলাম, ঘণ্টাখানেক পরে রিচার্জ করেই তবে ফোন দেব। আপাতত আগের কাজেই মনোনিবেশ করলাম।
ছাপ্পান্ন মিনিট পরে মোবাইলে রিচার্জ করে ঐ নাম্বারে ফোন দিলাম। “হ্যালো” বলতেই নারীকণ্ঠ জিগ্যেস করল, “কে বলছেন?”
আমি বললাম, “ঘণ্টাখানেক আগে আমার নম্বরে এই নম্বর থেকে ফোন এসেছিল!”
নারীকণ্ঠ বলল, “ভুল নম্বরে ফোন চলে গিয়েছিল!”
আমি বললাম, “কণ্ঠটা যে পরিচিত মনে হলো?”
নারীকণ্ঠ বলল, “না, ভুল নম্বরেই ফোন গিয়েছিল!”
“ও আচ্ছা”, বলেই আমি ফোন কেটে দিলাম।
কাজে মন বসছিল না! মনে করতে লাগলাম, “অস্পষ্টভাবে কী নাম যেন বলেছিল?” মনে পড়ল! নাম বলেছিল, ‘সামিরা’! তাকে তো আমি চিনি! সে আমার কলেজের সহপাঠী!
মেসেজ পাঠালাম তাকে, “তুমি কি সামিরা?” কোনো উত্তর এলো না! সঙ্কোচে আমিও আর তাকে ফোন দিলাম না! পুরোনো কথা মনে পড়ে খুব অভিমানও হলো!
কয়েকমাস আগের কথা! আমি তখন ভার্সিটিতে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক শাখার সামনে বসেছিলাম। কয়েকজন বন্ধুও সাথে ছিল। তাদের সাথে আড্ডা হচ্ছিল! এসময় সামিরা কোথায় যেন যাচ্ছিল! আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি তাকে ইশারায় কাছে ডাকলাম। কিছুক্ষণ কথাও হলো তার সাথে, প্রায় পাঁচ-সাত মিনিট। কলেজ জীবনের দুই বছরে বোধহয় তার সাথে একটানা পাঁচ মিনিট কথা হয়নি! শেষে জিগ্যেস করলাম, “ফেসবুক ব্যবহার করো?”
সে বলল, “হ্যাঁ, করি তো!”
আমি জিগ্যেস করলাম, “প্রোফাইলের নাম কী?”
ও বলল, “সাঁঝের মায়া! তোমারটা?”
আমি বললাম, “রূপক বিধৌত সাধু। প্রোফাইল নেম বাংলায়।”
অনেক চেষ্টা করেছি ‘সাঁঝের মায়া’ নামের কাঙ্ক্ষিত আইডিটি খুঁজে পেতে। কিন্তু তাকে পাইনি! ‘সাঁঝের মায়া’ নামে শত শত আইডি আছে! কী করে তাকে খুঁজে পাব?
তারও কিছুকাল পরের কথা! ভার্সিটির বাসের দিকে যাচ্ছিলাম আমি। ত্রিশাল থেকে ময়মনসিংহ সদরে আসব। আমি ময়মনসিংহ সদরেই থাকতাম। হঠাৎ শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সামিরা!
“কেমন আছো?” আমাকে জিগ্যেস করল সামিরা।
আমি বললাম, “ভালো!”
সামিরা বলল, “আমার মোবাইলে বাংলা নেই। সামিরা লিখে সার্চ দিও!”
আমি জিগ্যেস করলাম, “বানানটা কী হবে?”
সামিরা বলল, “Samira Talukdar!”
সামিরা নামেও কত আইডি! দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালালাম। নাহ, ‘সাঁঝের মায়া’র মতো ব্যর্থ হতে হয়নি! সামিরা নামের কাঙ্ক্ষিত আইডিটা অবশেষে খুঁজে পেলাম। মনে মনে খুব খুশি হলাম! কষ্টটা তাহলে সার্থক! অ্যাড ফ্রেন্ড অপশনটা ছিল না! তাই নিজের নাম লিখে মেসেজ দিলাম তার ইনবক্সে। দেখলাম যে, সে অনলাইনেই আছে। কিন্তু আমার মেসেজের কোনো উত্তর দিল না!
২৬ ভাদ্র ১৪২২ বঙ্গাব্দ
ময়মনসিংহ।
ছবি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯