somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়া

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওদের ওখানে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল তূর্য। ওর দাদা তূর্যের নিকটাত্মীয় হন। অন্যখানে বাসা রেখে হয়তো থাকা যেত, এমনকি বাসা ঠিকও করে রাখা হয়েছিল; কিন্তু উনি তূর্যকে সেখানে থাকতে দেননি- জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন।

মেয়েটার নাম ছিল স্বর্ণালি। বয়েস এগারো কিংবা বারোর মতো। তূর্যকে খুবই জ্বালাতন করত সে। পড়তে বসলে, এমনকি খেতে বসলেও। কোথাও ঘুরতে গেলে সেও তার সাথে যাওয়ার বায়না ধরত সবসময়। তূর্যের সাথে ঘুমাতেও চাইত। প্রথম প্রথম চোখ বুজে সব সহ্য করলেও একসময় প্রতিবাদী হয়ে উঠে তূর্য, সজোরে ধমকায়; কখনও কখনও ঘর থেকে জোর করে বের করে দেয়। কিছুক্ষণ পর আবার সেই পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে মেয়েটা। তূর্যের বইপত্র কেড়ে নিয়ে যায়। চঞ্চলা স্বর্ণাকে তাড়াতে নিষ্ফল হয়ে একসময় বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকে তূর্য। এবার সে তূর্যের মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়, পরম যত্নে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়; বিলি কেটে দেয় । তূর্য্য আর কিছু বলে না। আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

একদিন দুপুরের খাবারের পর ঘুমিয়েছিল তূর্য, স্বর্ণাও চুপচাপ তার পাশেই ঘুমিয়েছিল। সে যে কখন এসে ঘুমিয়েছে, তূর্য টেরই পায়নি। যাহোক, ঘুম ভাঙার পর হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসল তূর্য। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল মহারানি হাজির। শাড়ি পরে এসেছে। তূর্যকে জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগছে, ভাইয়া?”
তূর্য বলল, “বোন, তোমাকে অপূর্ব রুপবতী লাগছে। এবার তুমি আমাকে নিষ্কৃতি দাও।”
স্বর্ণা মুখটা গোমড়া করে চলে গেল।

অন্যদিনের ঘটনা। বাইরে থেকে এসে তূর্যের শরীর খুব ক্লান্ত। ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ স্বর্ণার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল। আবার জ্বালাতন করতে এসেছে। তূর্য বিরক্ত হয়ে কষে একটা থাপ্পড় মারল ওর ফর্সা চিবুকে। কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল সে।

রাত দশটার দিকে ওর মা এসে তূর্যকে জিজ্ঞেস করলেন, “স্বর্ণার কী হয়েছে?” তূর্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
উনি বললেন, “সারা দিন ধরে কাঁদছে। কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না।”

হঠাৎ তূর্যের মনে পড়ল, সে তো ওকে চপেটাঘাত করেছে, বকা দিয়েছে। মামিকে (স্বর্ণার মাকে মামি, বাবাকে মামা, দাদাকে নানা আর দাদিকে নানি ডাকত তূর্য) বলল ঘটনাটা। উনি চুপ হয়ে গেলেন, একটু পর জিজ্ঞেস করলেন, “খুব দুষ্টুমি করেছিল বোধহয়, না?”

নিজের আচরণে খুব কষ্ট পেল তূর্য। “আমি কী করে পারলাম এতটুকুন একটা বাচ্চা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে?” সে জানে, মামি-মামা তাকে কখনোই কিছু বলবেন না। কারণ, তাঁরা জানেন, বিনা অপরাধে সে স্বর্ণাকে শাস্তি দেয়নি। অনুতপ্ত হলো তূর্য। এরপর আর কখনও স্বর্ণার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা, একটা বকা পর্যন্ত দেয়নি তূর্য। মেয়েটা তাকে আপন ভাইয়ের মতোই ভালোবাসত। ওদের বাড়ি ছেড়ে আসার পরও বহুদিন ওর সাথে তূর্যের যোগাযোগ ছিল।

৪ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×