হিয়াবাসিনী-১। ০২০৮১৩। মধ্যরাত।
কে আমার গন্ধমাখা শার্টের গায়ে মেখে রেখেছে সুগন্ধি
বুকের ভেতর ওমপাখির পালকে সন্ধ্যাফুলের আল্পনা
কে এঁকেছে মুঠোভরা কান্নাগানের সুর বিজন টানে
সামনে এসো - হিয়াবাসিনী, জানি নও শুধুই কল্পনা!
হিয়াবাসিনী-৪। ১২০৮১৩। দিনসমাপ্তি।
কবে কখন ভালোবেসে ফেলেছি
সে কি আর আমি জানি!
চোখের জলে কার ছায়া ডানার মত ভাসে
সে না হয় পাখি জানে
জল জানে তার কতখানি!
হিয়াবাসিনী-৫। ১৮০৮১৩। রাত্রিশেষ।
আমার রাতজাগা চোখ কপাট খুলে রাখে
হিয়ার মালিকানা চাইতে কেউ যদি ফিরে আসে
চেয়ে চেয়ে চোখের উঠোন ভরলো শ্যাওলাদাগে
হিয়াবাসিনী-আগের মতই কী ভালোবাসে!
হিয়াবাসিনী-৬। ১৯০৮১৩। রোদবিকেল।
তুমি উন্মোচিত হও মরুভূমির মত
স্পর্শ করো;
আমি তৃষিত প্রাণে জাগাতে জানি
জলের গান!
হিয়াবাসিনী -৭। ২১০৮১৩। ক্লান্তছায়াদুপুর।
বাতাসের হিসেব লেখা থাকে রোদের কাগজে
আমি সেখানে আঁকি হিয়ার সুরলেখচিত্র
যে থাকে দূরে-সে আমার কেউ নয়
আমি কেবল জানি মুগ্ধতার কম্পন কিছুমাত্র!
হিয়াবাসিনী-৮। ২৩০৮১৩। বুড়োসন্ধ্যা।
নীলমেঘরাত-আধখানা চাঁদ-হেঁটে যাব বলে
জলজ বিষাদ-ধুয়ে মুছে হাত-যূথবদ্ধ দোলে
বিষাদনাশিনী-হিয়াবাসিনী-হিয়ার ছায়াতলে
হঠাৎ মায়ায়-বেয়াড়া আমায়-বশ করে ফেলে।
হিয়াবাসিনী-৯।৩০০৮১৩।আঁধার আলোর ভোর।
পুড়ে যাবে জেনেও হাত রেখেছি আগুনে
পাঁজরভাঙা শব্দগুলো খুব নীরবে
ভেবেছিলাম একটা দুটো কাব্য হবে
তাই হাত বাড়ালাম না বুঝে-না জেনে
সবশেষে পুড়ে গেছে হাত দুটো - আগুনে।
*
কথা ছিল চাঁদদেখা রাত পাশাপাশি কবিতায়
কথা ছিল আরেকবার বৃষ্টিসফর রিকশায়
কথা ছিল শাদা কাশফুল চিলতে বারান্দায়
কথা ছিল আলুভর্তা-ভাত এক কাপ চা সন্ধ্যায়।
হিয়াবাসিনী-১০। ০১০৯১৩। মেঘলাবিকেলবুড়ো।
*
আমার বিকেলগুলো স্থির হয়ে গেছে
বিষণ্নাহত গৃহকোণ
নিঃসঙ্গতার অসুখ বাড়ছে আবার
ঘুমিয়ে গেছে মুঠোফোন।
হিয়াবাসিনী-১১। ০২০৯১৩। নীরব একা সন্ধ্যা।
*
মেঘলা জলের পাড় ধরে তুই
আমার সাথে হাঁটবি কবে,
একটা পায়েল জল ছুঁয়ে বল
জলকথারা তোর আমার হবে?
হিয়াবাসিনী-১২। ০৩০৯১৩। মেঘলাদুপুর।
*
বরঙ তুমি তোমার বাতাসে হাত খুলে রাখো
মাতাল টানে যদি হিয়ার খোঁজ পাও!
আজ ঊড়ে গেছে আমার লেখা শেষ চিঠিটাও।
হিয়াবাসিনী-১৩। ০৪০৯১৩। ঝড়সন্ধ্যা।
*
শরৎ কুয়াশার কোনো ভোরে কাশফুলে বনে
দেখা হয়ে যায় কখনো আবার যদি,
হিয়াবাসিনী কথা দিলাম, লিখে দেব তোকে
আমার বাতায়নবিলাস নদী।
হিয়াবাসিনী-১৪।০৬০৯১৩। অপার্থিব রাতজাগা ভোর।
*
ঘুমভাঙা চোখের আলমিরায় উঠে আসা প্রথম রোদে
দুপুরের নির্জনতা আর শেষবিকেলের পাতাঝরা বাতাসে
আমি আছি তোর হাসি কান্নায়- আনন্দ ক্রোধে
আমি হারিয়ে যাই নি, যাবো না, আছি ছায়ারুপে তোর পাশে!
হিয়াবাসিনী ১৫। ০৭০৯১৩। গুমোট দুপুরের নির্জনতায়।
*
কে আমার কান্নার রঙে আপন বাসর সাজায়
আমি খুঁজি তার চোখের দেখা রোদের ভুলে
বুকের গহীন বেখেয়ালি কে এখনো সুর বাজায়
অপেক্ষাতেই একটা জীবন অবহেলায় যায় চলে।
হিয়াবাসিনী -১৬। ০৯০৯১৩। গুমোটদুপুর।
*
হিয়াবাসিনী মানে নিজেকে হারিয়ে ফিরে পাওয়া
একটা জীবনের সবগুলো ভুল - ভুলের কাটাকুটি
হিয়াবাসিনী মানে শুধুই ভালোবাসা
চাওয়া পাওয়ার ইশকুলে আজীবন ছুটি।
হিয়াবাসিনী-১৭। ১১০৯১৩। বিষাদবিকেল।
*
আহত যন্ত্রণা, নির্জন কবিতার মত আমায়
একা খুব একা করে ফেলে রোজ,
যে আকাশে আমার মুক্তির নিঃশ্বাস উড়ে যায়
তার হারানো নাগাল করি বেসামাল খোঁজ।
হিয়াবাসিনী-১৮।২০০৯১৩। কাশফুলরাত।
*
ঘুমের সুঁচ বিদ্ধ করে চোখের কপাট
বন্ধ হয়ে আসতে চায় চোখ
তবু আলগোছে চুকিয়ে দেই ঘুমবিভ্রাট
বরঙ কিছু প্রেমের কথা হোক।
হিয়াবাসিনী-১৯। ২২০৯১৩। ঘুমাক্রান্ত রাত্রিশেষ।
*
হিয়াবাসিনী মানে হিয়ার সিম্ফনী
মাতাল করা সর্বংসহা চন্দ্রহাসি,
হিয়াবাসিনী মানে হিয়ার ডাক শুনি
বুকের ক্ষতে পরম পরশ অযুত রাশি।
হিয়াবাসিনী-২০।২৩০৯১৩। কালো আলো মধ্যরাত।
*
তোর আঁখিঝরা অশ্রুফুল
আমি ধরে রাখি হৃদফুলদানিতে,
হিয়ার কান্না লুকিয়ে রেখেই ভুল
নিজের ভেতর মরি তবু কেউ পারে না জানিতে।
হিয়াবাসিনী-২১। ২৭০৯১৩। মধ্যমেঘলাদুপুর।
*
কে আমায় রোজ ভাঙে আর গড়ে
প্রেমে হাসায় - বিরহে কাঁদায়
পাবো না তারে তবু অপেক্ষা বাড়ে
রাতের কালোচোখে দিনের শাদায়!
হিয়াবাসিনী -২২। ২৮০৯১৩। রাতনির্জনে।
*
এত শব্দ এত কোলাহল তবু কেমন নির্জনতা
প্রাণের ভেতর- নীরবে যেখানে বয় বিরহসিন্ধু
এই শব্দ এই কোলাহল নয় - প্রাণ চায় যে কথা
হিয়াবাসিনী হেসে বলুক, 'কেমন আছিস, বন্ধু?'
হিয়াবাসিনী-২৩। ৩০০৯১৩। কোলাহলপূর্ণবিকেল। বিজয়স্মরণী।
*
বাতাসের গায়ে গায়ে হিমেল ছোঁয়া
উচাটন করে তোলে মন এই রাত্রি,
হিমেল হাওয়া পথে হেঁটে যাওয়া
চল হয়ে যাই অনন্ত সহযাত্রী!
হিয়াবাসিনী-২৪। ০৩১০১৩। ঠান্ডাহাওয়ারাত। লেকসিটি।
*
আজকাল সব পরিচয় অচেনা অচেনা লাগে
সব চেনা মানুষ বদলাচ্ছে ধীরে,
জলের মানুষ আমি আমার একলাই স্রোত জাগে
বাকী সব জলকেই দেখি যাচ্ছে ফিরে!
হিয়াবাসিনী-২৫। ০৩১০১৩। ভেজাবৃষ্টিদুপুর। বাতায়নবিলাসপাড়ে।
*
আমার কেন ঘুম আসে না রাত্রি দিন
আমার কেন ইচ্ছে করে ঘুমজড়ানো স্বর
সবকালেই তো আমি ছিলাম একা একা সঙ্গীহীন
আজকে তবে কে এসে ঘুমের গায়ে কাটে আঁচড়!
হিয়াবাসিনী-২৬। ০৫১০১৩। ভ্যাপসাবিকেল। লেকসিটি।
*
তোর লাল নীল হলুদে আলো মায়া
আমার ধূসরকেও রাঙিয়ে তোলে খুব,
পিয়ানোতে অলস জমে তোর আঙুল ছায়া
আমার নীরব সন্ধ্যা সুরে ভরিয়ে দেয় খুব।
হিয়াবাসিনী-২৭। ০৬১০১৩। একাকীসন্ধ্যা। বাতায়নবিলাসপাড়।
*
আমিই কেবল পুড়ছি অনলে বিরহে
নিকোটিন প্রেম ধীরে ধীরে ক্ষয়,
তরল ব্যথা দগ্ধে সমারোহে
কী করে আগলে রাখি এই সংশয়!
হিয়াবাসিনী-২৮। ০৬১০১৩। নির্ভাতি সন্ধ্যা। বাতায়নবিলাসপাড়।
*
জানতেই পারিনি কখন নীরবে
জড়িয়ে গেছে সব অনুভবে
ভাঙাঘুমে কারো কথার ঘ্রাণ
কিছু ব্যথা কিছু সুখ অভিমান
জানতেই পারিনি হঠাৎ হারিয়ে যাবে!
হিয়াবাসিনী-২৯। ০৬১০১৩। কষ্ট সন্ধ্যা। বাতায়নবিলাসপাড়।
*
কত অভিনয় কতই না শত ছলে
দিনযাপনটা সারতাম!
আজ মনে হয় ভুলে সংশয়
না বলা কথা বলে দিলেই পারতাম!
হিয়াবাসিনী-৩০। ০৬১০১৩। কষ্ট সন্ধ্যা। বাতায়নবিলাসপাড়।
*
ঝুপঝাপ জল অধিকার ভুলে গিয়ে
চিলতে আকাশ নিষিদ্ধ অভিলাষে
নিষিদ্ধ গাঙচিল তবু ঊড়ে দুর্বার!
হিয়াবাসিনী-৩১। ০৬১০১৩। কষ্ট সন্ধ্যা। বাতায়নবিলাসপাড়।
*
শহরের শীরে মেঘেরা ভিড়ে কালো ঘুম
আমি একা মেঘের রেখা খুঁজি বহুদূর,
এই সন্ধ্যায় ভীষণ দায় বসে থাকা নিঝুম
হিয়াবাসিনী আর আসেনি প্রিয় গানের সুর!
হিয়াবাসিনী- ৩২। ০৮১০১৩। অন্ধসন্ধ্যা। বিজয়স্মরণী।
*
একটা বিকেল লিখতে গেলে হাজারখানেক পৃষ্ঠা
একটা জীবন লিখবো কী করে!
একটা গল্পেই জমে গেছে হাজার জনমের তেষ্টা
জানি না ঠিক কি লিখবো এর পরে!
হিয়াবাসিনী-৩৩। ০৮১০১৩। কালিময়রাত। বিজয়স্মরণী।
*
কোথাও কোনো শব্দ নেই, এমনকি গুঞ্জরণ
কেবল গহীনে পাড় ভাঙছে আহত নদী,
ভাঙনের ব্যথা কেবল নদী জানে কী ভীষণ
একটু পরশ বুলিয়ে যেত প্রিয় হাত যদি!
হিয়াবাসিনী-৩৪। ০৯১০১৩। প্রথম প্রহর নির্জনে। লেকসিটি।
*
আমি এই শহরের নির্জন কোণে সবচেয়ে দিশেহারা
পাহারা দিয়ে রেখেছি এক শহরের অশ্রুজল
এই কান্না কেঁদে গেছে খুব গোপনে যারা
আমার কান্নার খোঁজ তারা নেয় নি এক পল,
তবুও কান্নার পাহারায় আমি নিমগ্ন অবিচল।
হিয়াবাসিনী-৩৫। ০৯১০১৩। বুড়োসকাল ঘুমচোখে। লেকসিটি।
*
আমার নাম লেখা থাকবে না কারো মনে, ইতিহাসে
আমি যে হেরে যাওয়া এক মানুষমাত্র,
আজ আমি প্রতীয়মান তবু দিনশেষে
কেউই লিখবে আমার নামে দু'চার ছত্র!
কি ভীষণ নিয়তি এই
কি প্রস্তরকঠিন তার নিয়ত সন্ধিপত্র!
হিয়াবাসিনী-৩৬। ০৯১০১৩। শেষপ্রহরে। লেকসিটি।
*
ক্রমাগত হেরে যাওয়ার নাম জীবন পরম্পরা
এই তথ্য জেনেছি পাখিদের কাছে, জীবনের ভেতরে কত হারানো গল্প আছে কত বৃষ্টিরাত প্রেমিকার উত্তাপে প্রবল খরা এই আমার জীবন জীবনীহীন এক অনুরণন
এই আমার জীবনের নিয়তধারা!
হিয়াবাসিনী-৩৭। ১০১০১৩। দ্বিতীয়প্রহর। লেকসিটি।
*
ঘুম আসে তবু জেগে থাকি
যদি ঘুমিয়ে গেলেই সব মিথ্যে হয়ে যায়,
আমি জানি আমি কিসের অনুরাগী
ঘুম কী জানে? আর কে জানে? কেউ কি জানতে চায়!
হিয়াবাসিনী-৩৮। ১০১০১৩।আলোআঁধারি ভোর। বাতায়নবিলাস।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৯