somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিজাইলাম

১৭ ই মে, ২০০৮ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অস্থির আত্মার সাথে সংকটে আমার সংকট বাড়ে। তাকে শান্ত করার জন্য স্থির হই। স্থিরতা একটা গ্লাসে বুদ মেরে থাকে। তার ভেতরে বুদবুদ ওঠে। আমি কখনও স্থিরতাকে দেয়ালের কালো দাগে স্থির করি। কয়েকদিন আগে রমনীর চুল ঘসে গেছে, বা ছিল অনেকক্ষণ মাথাকে কাত করে, পিঠে লাল বালিশে হেলান দিয়ে। তখন তার স্তন ফুলে উঠেছিল, ঠিক গলার নিচে কাটা দাগ, আমার ঠোঁটের। আমি এরপরেও শান্ত না হলে জানালা খুলে ভ্যাপসা গন্ধ বের করে দেই। জনপথের দিকে তাকিয়ে অতিক্রান্ত মানবের পাংশু বর্ণ দেখে তার ছেড়া স্যান্ডেলে মনযোগী হই। দুই পায়ে দুই ধরণের বেল্ট, সামনের দিকে একটা আঙুল বেঁকে আছে। ভদ্রছেলেটি সৌন্দর্য্যে বাড়েনি, বেড়েছে তার বিনয়ে, কেমন রাস্তা দেখে দেখে হাঁটে। পিচঢালা রাস্তায় ইতস্তত ছড়ানো ছিটানো ইটের টুকরো রয়েছে, একটাকে সে মাড়িয়ে যায়, তারপরে পিছনে ফিরে দেখে। ধরি ছেলেটির নাম রশিদ, তার বাপের নাম কবির। দুজনের নামের শেষে হোসেন আছে। নামের আগে একটা মুন্সী আছে। মানে পুরো নাম হলো মুন্সী রশিদ হোসেন। কিন্তু সমবয়সীরা জানে না পুরো নাম। তাদের কাছে সে কেবলই রশিদ, এবং এ মুহূর্তে সে বড়রাস্তায় দাড়ানো আরো ক’টি ছেলের দৃষ্টিসীমায় চলে এসেছে। এবার আমার স্থির হতে হয়। রশিদ একটু মাথা উচিয়ে পেছনে ঘুরে দেখলো। তারপরে ডানে বামে চেয়ে রাস্তা ক্রস করে সোজা আড্ডায় দাড়িয়ে/যেয়ে স্থির হয়। তার স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেল তখনই।

অথবা আমি স্থির হই দূরের ছ’তলা বাড়ীর ছাদের এন্টেনায়। সেখানে তরঙ্গে পুঁজি হচ্ছে, বিতরণ হচ্ছে, শনাক্তকরণ হচ্ছে আমাদের ডিজিটাল সংখ্যাগুলো। একটা ফোনে স্থির হই।

হ্যালো!

কোন শয়তান ফোনের ওপারে? আমার আগ্রাসী উত্তর। থতমত কণ্ঠস্বরের গোঙানী।

দু:খিত। এটা কি শামীমের ফোন না? আমি স্থির হই। ফোনে কাঁটা স্বরে একটা অপ্রস্তুতি ধরা পড়ে। কোনটা তার, কোনটা আমার!

না। ভুল করেছেন, নম্বরটা দেখে নিন।

এই শামীম হচ্ছে ফোনকর্তার ছেলে। তার হাত ভেঙেছে। ভাঙা হাতে সে মাথার চুল ঠিক করতে পারে না। ফোন করেছে যে তার নাম হচ্ছে সেলিমুর রহমান। ফোন করেছে পায়রাবন্দ থেকে। ক’দিন পরে তার ঢাকায় আসার কথা। ছেলের সাথে কথা বলে জেনে নিতে চেয়েছিল, তার জন্য এবার নারিকেল আনবে কিনা। শামীমের মায়ের জোরাজুরি, এবার নিতেই হবে। সেলিমুর রহমান বাসে করে ঢাকা যায়, বাস থেকে নেমে ভোররাতে দাড়িয়ে থাকে বাসস্টান্ডে। গাবতলী বাস স্টান্ডে।

আরও কিছু স্থিরতার জন্য দরকার। দরকার স্থিরাঙ্কে জানালা থেকে ফিরে পায়চারি করা। তালা ঠিক আছে কিনা পরখ করা। চকচকে তালার গায়ে হাত বুলিয়েও শান্তি। তালা মানে মুক্তি। মানে তালা দিলেই আমি ঘর থেকে মুক্ত। ঠিক এসময়ে ঠংঠং আওয়াজ কলিং বেলের। ভুল হলো এটা আসলে ঘড়ির ঘন্টা। দাদা বাড়ীর বারান্দায় কালো ফ্রেমের বৃটিশ আমলের ঘড়ি। আর এই কলিং বেলের আওয়াজে একটা অর্কেস্ট্রা বাজে। সেটা হয় দ্রিম, দ্রুম, মিমিই, কিয়াকিয়া, হুপহুপ। কিন্তু পছন্দ নয়, ঠংঠং ভাল। দরজা খুলে শিরোস্ত্রান খুলে রাখা মাথায় জ্বলজ্বলে ত্বক ভেসে উঠলো। ধরি তিনি আফজাল। আমি তাকে চিনি না। অথচ তিনি বেশ দরাজ গলায় বললেন, তো ভাই, আপনি আজ অফিসে যাবেন?

আমার কলজে শুকিয়ে যায়। অপরিচিতের পরিচিত ব্যবহার। কোথায় যেন তার কেটে গেছে।

কি বলছেন?

আমিও যাবো না।

আমি অফিসে না গেলে শয়তান লোকটির কি। তার সাথে আমার এখন পরিচিত হতে ইচ্ছে নেই। পরে আসুন। বা কালকে আসুন। বা আপনি কখনোই আসবেন না। অথবা ভাই, আপনি একটা পরিচয় নির্মাণ করে আসুন। কিন্তু এতশত কথা বললে তো বিপদ। সম্পর্ক ফেলতে নেই। মানে নির্দাম করতে নেই। দম দিয়ে আমি অপরিচয়ের সাথে আরো দুরত্ব বাড়াই।
আরে বসুন না! কি হচ্ছে দেশটাতে বলুন তো! কোথায় যাবে এর অংশগতি?

অংশগতি? কিসের গতি?

মানে এখন খন্ডিত অংশ যে গতি পেয়েছে সেটা বোঝাতে চেয়েছিলাম।
হা হা হা হা করে এক দলা থুথুতে শয়তানের দাত হলুদ দেখলাম। আমি তার সাথে আরো দুরত্ব বাড়াই। এবার ঠিকই জিজ্ঞেস করি, ক’টা তেলাপিয়া মাছ পেয়েছিলেন কাল ধানমন্ডি লেকে?

আরে বলবেন না ভাই! মাছ তো কোন বড় ছিলই না, সব পোনা তাও আবার ধরা নিষেধ। কোথায় পাবো তেলাপিয়া? ক’টা রুইয়ের ৮০০ গ্রাম পেয়েছি!

হুম! তাহলে তো দেশে মাছের আকাল যাচ্ছে?

ঐ হোল আর কি! শুক্রবার কাটলো কিছুটা খোলা জায়গায়।

আমার এখন মাছ নিয়ে প্রবন্ধ লেখার অবস্থা নেই। আমি তাকে চিনিনা। মানে এই মুহূর্তে তার সাথে আমার কোন আবেগ নির্মিত নেই। বা হয়নি। কিন্তু মাছের সাথে আহারের একটা ঘটনা টের পেলাম। অনেকদিন বোধহয় রুই খাই না।

ভদ্রলোককে আমি ভুলে গেলাম। এবং যখন বড় একটা মাছ আমাকে খেয়ে ফেললো, মাছেদের স্বাদে জিভে নড়চড় পড়তেই, ভদ্রলোক নিমিষে হাপিস হয়ে গেল। আসলে তো ওনাকে আমি দরজা দিয়ে বিদায় দিয়েছি। তারমানে আমি এখন স্থির হই।

আসলে এরপরে অস্থির হবার জন্য কিছু স্থিরতা দরকার ছিল। এবং সেটা যখন আয়েশসাধ্য হয়েছে কিছু দাগ থেকে রমনীর স্তন খুঁজে পেয়ে, রশিদের স্যান্ডেল ছিড়ে, তরংগের ডিজিটাল সংখ্যায় ভুল নম্বরে, প্রতিবেশী সহকর্মীর অপরিচয়ের আলাপে তখন আমার আরো কিছু অনিশ্চিত খুটিনাটিতে মনযোগ অপ্রয়োজণীয়। এটা চলতে থাকবে অস্থির হতে পেরে। কারণ যেখানে দাড়িয়ে ভাবছি আমি, সেটাতে এখন কলমের মনযোগ। মানে একালে কীবোর্ডের খটখট। রপ্ত করেছি অনেকদিন আগে। তাহলে গল্পটা প্রথম থেকে বলি।

স্পেনিস কোন এক সাগর সৈকতে লিজাইলাম গিয়েছিলেন গল্প লিখতে। লিজাইলাম শব্দের ধরি অর্থ হচ্ছে, এর অর্থ কি! হলো কোন এক ইউরোপিয়। ধরি তিনি কথা বলেন আমাদের ভাষার মত তাদের ভাষায়। মানে তিনি তার জন্মদাত্রীকে মায়ের মত কিছু একটা সন্বোধন করেন। আবার তিনি তৃষ্ণা পেলে আমাদের পানির মত একটা তরলই পান করেন। সৈকতে তার মনযোগ থাকে। তার পাশে এসে বসে থাকে ইলাস্টিক লুজ এক বৃদ্ধ। তার কোমরে কয়েকটা বড় বড় টিউমার। লিজাইলামকে আমি তখন বলতে শুনি, মানে যা বলবেন তাই ধরুন বুঝতে পারি, ওগুলো কি সমস্যা করে?

বৃদ্ধলোকটি হয়তো মনযোগ দিয়ে দেখছিলেন স্কিয়িং, যাকে বলে সীস্কিয়িং। এখানে আমি একটু দেশপ্রেমী হবো। আমি লিজাইলামের ভাষা বুঝি না। কাহাতক আর মুখের অংগভংগি আর অনুমানে বুঝে নেব। তারচেয়ে লিজাইলামকে লিয়াকত বানিয়ে দিলাম। সে এবার কুয়াকাটাতে বসে আছে দশটাকা দামের ছাতির নিচে। আধঘন্টার রোদ্রস্নান। আমাদের বাদামী শরীরে সূর্যের তাপ কৃষ্ণ করে। সেজন্য সানবাথ ঘৃণ্য। কিন্তু লিজাইলামের হাতে ছিল ল্যাপটপ, আধুনিককালের টাইপরাইটার। অথচ লিয়াকতের মাথায় আছে কিছু একটা ধারণ যন্ত্র। সে স্বভাব কবি। তারপাশে আছে কালো বোরখার আল্লাহসেবীরা। সৃষ্টি দেখতে বলেছেন আশরাফুল মাখলুকাতকে। তাতে পুন্য হয়। আমরা বলি ছোয়াব। এসেছেন পর্দানশীন গৃহবধুরা পটুয়াখালী থেকে। সমুদ্র দেখে তার উদারতা কল্পনা করতে হবে। এর মাঝে আছে একধরণের অবগাহন, মানে সব পাপবিযুক্তি।

লিয়াকতের কল্পনা শক্তি প্রবল হয়। সে ভাবে এভাবে, মাথা নাড়ে চতুর্দিকে। তার ভেতরে নাজিল হবে, দুয়েকটা কালো আস্তরণের ভেতরের গৌরবর্ণা সাগরে এসেছে উদার হতে। লিয়াকত একটা প্রয়োজন বোধ করে। এমন চরণগুলো হারিয়ে যেতে দেয়া যায় না। সে দশটাকার ছাতি ফেলে চলে আসে তীরের দোকানে। আজকে তার স্বরণে ভরসা নেই। এক টুকরো কাগজ চেয়ে নিয়ে সে দেখতে পায় এক বৃদ্ধকে। শর্টপ্যন্ট আর খালি গায়ে সে ভুরিতে হাত বুলিয়ে কথা বলে কারো সাথে। এই যে এদিকে আয়!
দূরে কিচিরমিচির করে ওঠে বাচ্চাকাচ্চা। এদের দাদা বৃদ্ধটি। তার কোমরে সেই টিউমার। এবার আমরা খটমট করে কিবোর্ডের চাপ থেকে বিযুক্ত হলাম। কারণ লিয়াকত কাগজে খসখস করে লিখছে, দুয়েকটা কালো আস্তরণের ভেতরে গৌরবর্না এসেছে উদার হতে সাগরে। আর এরপর থেকে আমার কীবোর্ড আর খটমট শব্দ করে না। কারণ এখন আমি সাগর দেখছি। সাগর দেখছি কম্পিউটারের স্ক্রিনে। এটা একধরণের বিযুক্তি, নিশ্বাস থেকে এবং অবস্থা থেকে। কিন্তু এর মধ্যে শান্তি আছে। আবেগ আছে, একধরণের কেমন যেন প্রস্থান আছে। এই যে আমি শব্দগুলোকে সাগরে ডুবতে দেখছি, ঠেউয়ে মাতাল হতে দেখছি, এর সাথে সখ্যাত আছে স্থিরতা অতিক্রমের। কিন্তু এর সাথে আবার স্থিরতাও আছে। সুতরাং গল্পে নতুন একটা অস্থিরতা নিয়ে আসা বাঞ্ঝনীয়। যেমন দরকার এখন স্পষ্ট করে তুলতে হবে খটমট শব্দ। একদম একতালে নয়তো, তাল ছাড়া। মানে এতে সুর হয়না। সুরের একটা লয় থাকতে হবে।

কিন্তু যখন খটমট শব্দে যোগ করি ফ্যান ঘোরার আওয়াজ তখন আরো একটা যন্ত্র বেজে ওঠে। এর সাথে যোগ হতে পারে ঘরোয়া বাতাসে ক্যালন্ডারের পাতা উল্টানোর ফরাত ফরাত। মানে তিনটে আওয়াজ। এই কক্ষ ছেড়ে আমি এবার অন্য কক্ষে কান পাতি। আমার পাশের কক্ষটি পাশের বাড়ীর। সেখানে একজন স্কুল শিক্ষিকা থাকেন। তার জানালার পর্দা খোলা থাকলে তিনি একদম হাত বাড়ানোর নাগলে। শরীরের সাথে শরীরের ভাষায় চেনা পরিচিত হতে দেয়াল শক্র নয়। নিমিষেই অতিক্রমযোগ্য। আমি তার সাথেই বরঞ্চ কথা বলি।

কোথায় এমন শব্দ হয় বলন তো?

জানালার পাশে দাড়িয়েছেন। আমিও জানালার পাশে। তার মাথায় চিড়ুনি। রাত বারোটায় চুল আচড়ানো অমংগলের বলে যারা ভাবে তাদের চেয়ে তিনি উন্নত। তাছাড়া মাঝেমাঝে দেখা হলে হাসি দিয়ে পর্দা টেনে দেন।
বুঝতে পারছি না! পানি পড়ার শব্দ মনে হয়। পাশের বাড়ীর পানির ট্যাংকি প্রায়ই উপচে পড়ে!

ওহ তাই!

আপনার ঘরে আলো জ্বলতে দেখি না সন্ধ্যায়! অনেক রাতে ফেরেন?
এগারোটা বেজে যায়। আপনার স্কুলে কেমন চলছে? ভাইসাহেব কোথায়?
তার ভাইসাহেব মানে তার একজন নিজের পুরুষ আছে কিনা তা আমার জানার কথা নয়। তিনি স্কুল শিক্ষিকা সেটাও জানার কথা নয়। তবে যখন আমি ভেবে নিয়েছি তিনি তাই, তাহলে ভাইসাহেবকে অজ্ঞাত রাখাই আমার জন্য লাভজনক।

স্কুল ভালই চলছে। পরীক্ষা গেল, বেশ ব্যস্ত ছিলাম।

যা ভেবেছি তাই। তিনি ভাইসাহেবের প্রসংগ এড়িয়ে গেলেন। মনে মনে আমি খুশী হয়ে উঠি। তবে এরপরে এর থেকে অন্য কোন সংলাপ চালাতে আমি রাজী নই। কারণ তাতে অনেক উৎসাহ লক্ষ্য করা যেতে পারে। কিন্তু যদি আমি এখন তার একটা মৃত্যু সংবাদ জেনে যাই, বেশ একটা দুঃখবোধ জাগ্রত করা যায়।

উনি তো মারা গেছেন বছর খানেক হলো। ক্যানসার হয়েছিল!
ওহ! আমি ভীষন দুঃখিত। যেমন চেয়েছিলাম তেমন দুঃখ বের হলো না, তবে চেহারা যথারীতি বেশ ভাজে ভাজে কুঞ্চিত করা গেল। এরজন্য অবশ্য অভিনয়ের একটা যোগসূত্র রয়েছে। মানে আমরা প্রতিদিন যত আবেগ প্রকাশ করি তার হাতে গোনা সত্যি বাকীরা অভিনয়। কাজেই এটা রপ্ত জ্ঞান, অপ্রতিষ্ঠানিক একটা চর্চিত শিক্ষা। শিক্ষিকা এখন বিধবা। মানে এ প্রসংগে বিধবাদের জন্য সহানুভূতিশীল হবার একটা নাটক বেশ সহজেই মঞ্চস্থ হতে পারে। এরপরে আরো একটু ঘটনা পরিক্রমা করা যায়। বিধবা জানলার গ্রীলে হাত রেখে পেছনে কক্ষের অন্য প্রান্তের দরজার দিকে তাকালেন। সেখানে একটা শিশুর মুখ ভেসে উঠলো।

মা! কার্টুন দেখবো!

এত রাতে কার্টুন! যাও! ঘুমাতে যাও!

সন্তানের মা অভিভাবক। ছেলেটি কেঁদে ওঠে। বছর তিন বয়স।

মা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে, বুঝলেন ভাই, অসীম একটা বিচ্ছুটি হয়েছে। অসীম নামে ধর্মের গন্ধ পাই। কিন্তু কোনদিন মনে হয়নি ভদ্রমহিলা হিন্দু হতে পারন। সুন্দরী, উদ্ভীন্ন যুবতী বিধবা, কিন্তু পুনর্বিবাহ খুব কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু মা এবার বলেন, আল্লাহ যে কি দুষ্ট বানিয়েছে ছেলেটিকে! বুঝলেন ভাই, আমার এই একটাই ছেলে, সব আশা ভরসা!

তাহলে হিন্দু নন। বাংলা নাম শুনে প্রথম ধারণা তাহলে ভুল। আমার নামটা নিয়েও আমি এই একই ধারণার সম্মুখীন হতাম বলে নিজের মধ্যে চলে এসেছে।

কিন্তু মহিলার সাথে আমার কথা চালানো মুশকিল। বড় জটিল সম্পর্ক মন হচ্ছে। এবার বিদায় নেই। এবং ঘটমট শব্দ যে এতক্ষণ একটুও কানে বাজেনি, তাই ভেবে আশ্চর্য হলাম। এই একটু আগে আমি যখন ফ্যানের শব্দ, ক্যালেন্ডারের পরাত পরাত শব্দ শুনলাম, সেটা হঠাৎ হারিয়ে গেছিল। এখন পৃষ্ঠা পেড়িয়েছে বলে মনে পড়ছে না পরাত পরাত না ফরাত ফরাত লিখেছিলাম। তবে এখন আবার শব্দ ফিরে এসেছে। ফ্যানও গাইছে। এবং আমার এখন শুনতে বাকী নাই অন্য কোন শব্দ, একমাত্র নিজের নাটডাকুনি কোনভাবে যদি নিজের কানে না পৌঁছে দেয় কেউ।

এখন তো বলবেন স্থিরতা তাহলে একটা নিদ্রার নাম। কিন্তু সেটা তো ওয়াইন ওপেনার। মানে একধরণের অঅস্তিত্বশীল জগতে প্রবেশের চাবি। সেইখানে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটা ঘটলো প্রিয় নারীকে অন্যের বাহুলগ্না দেখে। একধরণের ক্ষোভ জন্মানো বাদ দিয়ে আমি বাহুর শক্তি বিন্যস্ত করি। কষ্ট পেতে গিয়ে আমি ঘুরিয়ে দেই সংক্রমন, দেখি জৈবিকতা দিয়ে আপাতত ঘনীভূত ক্ষেদ দূর করা যায় কিনা। সেক্ষেত্রে প্রিয় একজন পুরুষকে এঁকে নিলেই হলো। এখানে চলচিত্র এবং দর্শকের মধ্যের রসায়ন হাত পেতে নেই। কিন্তু বিষয়টা আবার এমন স্থুল স্থিরতায় দেখতে অভ্যস্ত নই। অশ্রুর সাথে সন্বন্ধ হতে পারে। সুতরাং একটা অতিনাটুকীয় সংলাপ লাগবে।

আমার ভালোবাসার পরীক্ষা হচ্ছে!

জ্বলছো?

তা নয়, তবে তোমাকে বেশি ভালবাসি, না নিজেকে, তার প্রমান হচ্ছে!
কাকে ভালোবাসো?

তোমাকে! কারণ আমার পুরুষটিকে খুন করতে ইচ্ছে করছে। আমার জন্যই করছে। কিন্তু করছি না!

এরপরে ওয়াইনের প্রকোপ কেটে যায়। সকাল হয়ে এখন সূর্য্যের চোখ রাঙানি। আমার কি যেন দুঃখ ছিল, কয়েকটা হাতগুটানো বিষন্নতা ছিল সেগুলোকে পোষাকের ভাজ খুলে দেহের সাথে পরিধান করি। তারপরে কড়া একটা সেন্ট মেখে আপাতত রঙিলা। চাবির রিং ঘুরিয়ে ঘরের এপাশ ওপাশ কয়েক চক্কর মেরে এখন একটু বায়োস্কোপ চালিয়ে দেখি। মনের বায়োস্কোপ। একটু নতুন বিষয়। কারণ দরকার একটা নির্মল হাসি। মানে হাসলে কিছুটা খালি হতে পারে জমে থাকা দুঃসহ অস্থির চাপ। সেজন্য উলপক্ষ্য লাগবে না। একটা ভজঘট করে দিলেই হবে। সকালে যে সভাটা আছে চুক্তিসাক্ষরের আগের কিছু শর্তাশর্তি নিয়ে, সেখানে আমার গ্রহীতা আলাপ করছিল, এই জমির পুরোটাতে আমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিতে চাচ্ছি। বুঝতেই পারছেন, এখন সরকার যে হারে রিয়েল এস্টেটদের উপরে খড়গহস্তে নেমেছে; আমি প্রস্তাবে সব খুটিনাটি পরিপাটি করে সাজিয়ে দেব। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এখন শিক্ষিত তো, অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চায়, প্রকল্প অনুমোদনের আগে!

এটা কি বলছেন? আপনি সরকারকে ভয় পান?

কেন? আপনি পান না?

হ্যা, পাই! পাই না মানে, ভয়ে তো রোজ রাতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পেশাব করি সরকারী ওয়ালে!

অপ্রস্তুত গ্রহীতা মনে হলো একবার আমার প্যান্টের দিকে তাকালেন, গন্ধ আসছে কিনা পরখ করতে। কিন্তু হেসে উঠলো তার সুন্দরী সহকারী। হোহোহো! আমি অবশ্য তার হাসির সাথে আমার স্থুল হাসির নির্মাণে প্রীত হলাম না। এখনও অফিসে না গিয়ে আমি একটা বড়গোছের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিকে অসম্মানিত করলাম। দাতে জিভ কেটে ফোন করলাম, সুন্দরী সহকারীর দেয়া নম্বরে। গতকাল দিয়েছিল। মানে গতকালও যখন এমন স্বপ্ন দেখলাম তখন বোধহয় নিয়েছিলাম।
হ্যালো! আজকের সভাটা বাদ দিতে চাই! আমার একটু চাপ বেড়েছে!
কেন স্যার? আজকে না হলে আমাদের ভীষন ক্ষতি হয়ে যাবে।

জমিক্রেতারা অর্থ পরিশোধ করে এখনও বুঝে পায়নি প্লট। অথচ সরকার এই বন্যা রক্ষা বাঁধ ছাড়া আমাদের অনুমোদন দিচ্ছেন না স্থাপনা তৈরীতে!
কিন্তু আমার যে অনেক চাপ বেড়েছে!

দুঃখিত স্যার! কিসের চাপ?

আমি সম্ভবত আপনার বসের সামনে দাড়িয়ে পেশাব করে ফেলেছি!
হ্যালো, কে বলছেন? আপনি কি অমুক কোম্পানীর তমুক বলছেন?
তমুকের সাথে আমার অমুকের একটা গাটবাঁধা উচুঁতা ছিল বটে তবে এখন আমি দাপ্তরিক পোষাকের যে সৌজন্যপরায়ন দৈর্ঘ্য ও রঙ রয়েছে তাকে বাদ দিয়ে একটা মোটা পাজামা মানে বিদেশে যাকে বলে জিনস আর আমরা যার নাম দিতে পারি নাই এখনও কিছু সেটা পরে নিলাম। কারণ সভাভংগ। মানে দপ্তরে যেতে আমাকে এখনই বাধ্য করা যাচ্ছে না। তার চেয়ে আমি এখন একটু হাসবো। এর জন্য আমাকে একটা হাসির গল্প শুনতে হবে। অথবা আমাকে আমার বিষাদের বাইরের কিছু করতে হবে। সেটাই হাসির হবে। মানে আমি হাসবো স্থুলভাবে। কারণ এভাবে নাকি হয়। মনে ভাল করে দেবার কথা বলে আমরা চেহারার আকৃতি ও প্রকাশ কিছুটা পরিবর্তন করে নিয়েই বুঝিয়ে দিতে পারে নিজেকে ও সংশ্লিষ্টদের। কষ্টে নেই, কেঁটে গেছে। আমার এখন হাসি আমদানীর জন্য একটা দরজা খুলতে হবে। অবশ্য এর আগে নিজেকে স্থাপন করতে হবে এমন একটা বাড়ীর ছাদে যার পাশের সব বাড়ীগুলো আরো উঁচু। প্রত্যেকের ফ্লাটের জানালাগুলো খোলা। পর্দা খোলা। পুরো ঘরময় চোখ দিয়ে প্রবেশ করে গেলাম। এখন রাত্রি। কোনদিনের রাত্রি সেটা বিচার্য্য নয়।

মুখের পেশী একটু নড়ে উঠলো ভদ্রলোকের বাথরুম দেখে। দুটো ছোট জানালা বাথরুমের। শুধু মাথা দেখা যাচ্ছে। একবার এই জানালায় তো আরেকবার ঐ জানালায়। অনেক্ষণ যাবত এদিক ওদিক করছে। পাশের রুমে একজন নারী বাথরুমের দরজা বোধহয় খটখট করলো। সেই রুমের জানালাও দেখা যাচ্ছে। আমার মনে হয় এখানে নারীটিকে আমি পতিতা বানাবো। ভদ্রলোক নিয়ে এসেছেন রাতে। সারারাত থেকেছে। সারারাত থাকবে। নারীটিকে পতিতা ভাবার কোন কারণ নেই। পতিতারা এত স্নিগ্ধ হয় না, এমন চশমা পড়ে না। এমন ঘরোয়াও নয়। কিন্তু আমি এমন একজনকে পতিতা দেখছি। এবং সবচেয় আশ্চর্য হচ্ছে কথাও শুনছি।
কি ব্যাপার! এতক্ষন বাথরুমে কি করছেন?

ভেতরে চুপ। ভদ্রলোককে আমি জানালা দিয়ে দেখছি। টাইলসের দেয়ালে একটা ব্রাশ দিয়ে ঘসছিলেন। দরজার খটখটানি শুনে, চেচিয়ে বললেন, এই আসছি!

দরজাটা খোলো না! আমি তোমার সাথে গোছল করি!

ভদ্রলোকের ভুরু নেচে উঠলো, তাতে একটা বিরক্তি। খুব সাধের বাথরুম মনে হচ্ছে। অন্য কেউ ঠুকে পেশাব করবে, বর্জ্য ফেলবে এটা তার পছন্দ নয়। সে এই বাথরুমে কারো সাথে যৌনকর্মও করবে না। ধরি লোকটির বয়স চল্লিশ, নারীটির পয়ত্রিশ। তাহলে এখনও তো এমন চিন্তা তাদের জন্য সময়ানুমাফিক হলো না। আমি ভালো করে কান পেতে শুনলাম।

আরে আমার সময় নেই! অফিসের গাড়ী চলে এসেছে। চুলের ক্লিপটা একটু দাও!

তারমানে রাত্র থেকে দিনে আসতে হবে। এবং নারীটি পতিতা নয়। সে একজন চাকুরীজীবি গৃহীনি। বৈষয়িক পুরুষটি ক্লিপ নিয়ে দরজা খুলে নারীটির হাতে দিয়ে দেয়। তারপরে তাদের ভাষার আর কোন অনুবাদ সম্ভব নয়। সেজন্য যে কাজটা আমার করা দরকার সেই পেশি পরিবতর্নের বিদ্যা ও চর্চা অব্যাহত রাখা। এর সাথে আরো কয়েক ফ্লটের গল্প হলে, একধরণের মিশ্রতা আসবে। কানে হয়তো একটা উল্লাসের ধ্বনি, একটা শীৎকার, একটা চিৎকার, ক্রন্দন এবং ভিন্ন প্রবাহ দেখে প্রবেশ করতে হবে কয়েকটা অস্থির চিত্ত বিশ্লেষণে। সেজন্য পাশের ফ্লাটের উজ্জ্বল আলোতে আমি রান্নাঘর আবিষ্কার করলাম। একজন গৃহবধু, চল্লিশোর্ধ জীর্নশীর্ণ শরীরের ময়লা পোষাকের রমনীটি গ্যাসের চুলাটা বাড়িয়ে দিল।

ভেতরে এলো তার ছেলে। বয়সে তো তাই মনে হচ্ছে। আহ কি তুলতুলে উনিশের দাড়িগোফ ছেলেটির। রান্নাঘরে ঢুকতেই মহিলা তাকে দেখে সরে দাড়ালো। ছেলেটি মহিলাটিকে জরিয়ে ধরলো, কয়েকটা চুমু খেল। তারপরে
ম্যাচটা দেন!

আবার খাবেন!

গৃহবধু তবে এই ঘরের নন। এখানে তিনি কর্মজীবি। আমাকে একটু কল্পনাশক্তি বাড়াতে হবে। কিন্তু উনিশের তরুনের হাত চলে গেল বয়স্কার পিঠে।

আরে আবুলের মা, তুমি ম্যাচটা দেও! হাত চলে গেল তার চুপসে যাওয়া স্তনে। এবার আমি সত্যিই অযোগ্য দর্শক। এখানে দাড়িয়ে আমি বরঞ্চ রাতটাকে দিন করে দেই। রাতারাতি ছেলেটি হয়ে গেল পুরুষ। নারীটি হয়ে গেল একেবারে কিশোরী। পুরুষটি এসে ম্যাচ চাইলো। কিশোরী ম্যাচ খুঁজছে হন্যে হয়ে।

তুই কি সারারাত গ্যাসের চুলাটা জ্বালিয়ে রেখেছিলি!

কিশোরী খুঁজে চলে। আর চলে, ততক্ষণে পুরুষটি এসে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল মেয়েটিকে।

সর কুত্তার বাচ্চা! ম্যাচ কি পানিতে গুলিয়ে খেয়ে ফেলিস!

গ্যাসের চুলার আগুণে সিগারেট জ্বালিয়ে সে সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। মেয়েটি আবার গ্যাসের চুলার ওপরে কড়ইতে পটল আর আলুর ঘন্ট রেঁধে চলে। দিনের আলোতে আমার চেহারা পরিবর্তন হয়েছে। রোদ্রে ভিজে কিছুটা লাল হয়েছে মুখের চামড়া। তবে তার চেয়ে আমি এই উত্তাপকে বৃষ্টি দিয়ে ভিজিয়ে দিলাম। এবং এখানে এই বেলাতে আমার বৃষ্টি দেখার জন্য বাড়ীর ছাদ থেকে একটা অংগ সংস্থাপন করতে হবে। সেটা পাখা হলে ভাল হয়, গেলাম চলে লিজাইলামে। এর অর্থ হচ্ছে উড়ন্ত ঘুড়ি। আমাকে যেতে হবে এখন চেরাপুঞ্জিতে। সেখানে সবসময় বৃষ্টির বাজার বসে। আমার যেখানে স্টেশন সেখানে আমাকে কিছু একটা ঘটনা ঘটাতে হবে। কিছু দৃশ্য ও দৃশ্যান্তরের রূপক নিয়ে আসতে হবে। যেমন আমি জিপ চালিয়েই যাচ্ছি। পাহাড়ী একটা রাস্তা। এমন সময় বৃষ্টিটা নামতে হবে। আঁকাবাঁকা পথে লিজাইলামের রাস্তায়। সরু রাস্তা। গাড়ী রাখার জায়গা নেই। কিন্তু আমি সেখানেই থামবো। পাশের খাড়া পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে পানি মিশ্রিত কাঁদামাটি। পিচের রাস্তায় গড়িয়ে যাচ্ছে, জিপের টায়ারে কিছু বেঁধে। একটা গাছের ডাল ভেঙে কাঁদামাটি ছড়িয়ে দিচ্ছি। ঐপাশে কেউ একজন আসবে এখন। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলেছে। কারণ ষষ্ঠতে চড়ে যখন বেড়াচ্ছি, তখন ঐ পাশে আসতে হবে একজন খাসিয়া যুবকের। যে তার গ্রামের নাম পরিবর্তনের আন্দোলন করেছে। চেরাপুঞ্জি এখন সোহরা নামে ফিরে গেছে। সে বৃষ্টিতে তার চ্যাপ্টা মুখে হাত মুছে আমার কাছে এসে দাড়ায়।

কি হলো বাপু! তোমাদের কত সুখ!

আমি তার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে তার খাসিয়া বড় একটা ক্যাপের নিচে সেধিয়ে গেলাম!

কেন?

আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ঘর ছেড়ে মেয়েটির বাড়ীতে উঠতে হবে।
আহ! কি দুঃখ! তোমাদের এখন নতুন আন্দোলন করা দরকার। সম্পত্বির অধিকার কেন শুধু মেয়েদের থাকবে, তোমার প্রাপ্য তোমাকে আদায় করে নিতে হবে!

সোহরার যুবকের আজ বৃষ্টিতে ভেজার দিন। সে কিছুদিনের মধ্যেই গৃহবন্দী হবে। এরপরে অনেক জটিল হিসাব। মেঘালয়ে আছি বলে আমি তেমন ভাবতে পারি, পচাশি ভাগ মানুষ খৃস্টান, ৭৫ ভাগ মানুষ শিক্ষিত, অথচ কেমন বৈসম্য, সম্পত্বির মালিক নারীরা! আমার এমন অপরিচিত পরিবেশে বৃষ্টি দেখার চেয়ে নিজের প্রকৃতিতে ফিরে বন্যা দেখা উচিত। সেজন্য কোন কথা নেই সোজা আমি নেমে গেলাম সিরাজগঞ্জের যমুনার বাঁধে। আমার স্থিরতার গল্পে সামাজিক জটিলতা ঢুকে গেছে। এখন অন্য বিষয় নিয়ে আসতে হবে। একটা প্রেম। প্রেম মানে সুস্থ্য বিনোদন। এবং যেটা পরিবর্তন হয়ে একসময় স্মৃতি অতপর মিথ অথবা হারিয়ে যায়। একবার পাঠের পরে অচেনা হয়ে যায় এমন প্রেম। এই ফাঁকে আমি কোথায় ছিলাম তা ভাবার জন্য মনযোগ পাওয়া যাবে। রাষ্ট্রিক সংস্কৃতি রক্ষা হবে সেই সাথে ব্যক্তিক অভিজ্ঞতা। তাহলে তো বেশ ভালই, বাঁধে আশ্রিত এক চোদ্দ বছরের কিশোরী ফোনের কথা হতে পারে দারূণ বিনোদন!

হ্যালো! আপনি জসিম?

ওদিকে ধরেছেন আমাদের পাড়ার মুদি দোকানের সেলসম্যান হারুন! সহকর্মী জসিমকে চাইছে। জসিম ময়দার প্যাকেট দিয়ে দিল এইমাত্র বৃদ্ধ ক্রেতাকে। হারুণ চোখ টিপে দিতেই চালের বস্তা পেড়িয়ে সোজা মোবাইল খাবলে নিল। আমি মেয়েটিকে দেখলাম চোখে মুখে কথা বলছে, প্রেমিকের সাথে, ফোন দিলেন না যে?

ধরে নেই, ঐ পাশে জসিম বলছে, পয়সা ছিল না, আর তোমার খালাত ভাই তো কোথায় কোথায় থাকে, ফোন করলেই বলে ঘন্টাখানেক পরে করেন!
আমি তো মিসকল দিছি!

সেখানে মেয়েটির কথা শুনে রহস্য হচ্ছে না। বরঞ্চ এইভাবে ভেবে নেই।
বাবা, আপনি আসবেন কবে? এদিকে মায়ের তো মেলা অসুখ!

এখানে যা বলা হোক না কেন তার সাথে ভাষা নিয়ে আমার গন্ডগোল নেই। সবকিছু এভাবে আঞ্চলিক নির্মাণে প্রকাশ সম্ভব নয়। ধরে নিলাম মেয়েটি হারুনের সাথে কথা বলছে অথবা তার বাপের সাথে, অথবা সে বলছে শুদ্ধ বাংলাতে অথবা সে বলছে সিরাজগঞ্জের বাংলাতে, তাতে আমার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সে ফোনে টাকা মেপে কথা বলছে। আমার পকেটে মোবাইল নেই, রেখে এসেছি সোহরাতে। আমার এখন আসলে কাজও নেই। একটা সভা ছাড়া, সেখানে আমকে পেশাব করতে হবে। বা পেশাবের গন্ধ আসবে। তার আগে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে। মানে আমাকে প্রিয়নারীর বাহুলগ্ন থেকে উঠতে হবে। যখন আমি অন্য কাউকে দেখবো, তখন আমি সেখানে নিজের অবস্থানকে সংহত করবো। তারমানে আমি ভালোবাসাতে জটিল. অনুভূতিতে মৌলিক নই। পরিবর্তন হচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে, স্রেফ স্থিরতা নয়, এটা অস্থিরতাও নয়। এটা হচ্ছে নিজেকে প্রকাশ, নিজের অনুভূতি। দিলাম সরিয়ে সব দেয়াল আর বাড়ানো হাত। এসব ভেবে আমি ফোন টিপলাম। এখন আমার হাতে ফোন, সোহরা থেকে এইমাত্র দিয়ে গেল খাসিয়া যুবক। সিরাজগঞ্জের বাঁধে আমার কাজ নেই, অর্থনেতিক জটিলতা অনুধাবনের। চলে এলাম ঘরের ছাদে। পাশের উঁচু ফ্লাটগুলোতে দিনের আলোতেও রাত হয়ে আছে। মানে এই মুহুর্তে সেখানে রাত নামাতে হবে। এবং যখন সেই নির্যাতিত কিশোরীর কাছে আবার চাইতে আসবে ম্যাচ ঘরের কর্তাটি তখন আমি মনযোগ দিয়ে দেখবো সম্পর্কটা। এসে পড়েছে, এবার কিশোরীর ঠোঁটে লিপস্টিক। কর্তাটি মাথায় আদর করে দিচ্ছে। আমি মোবাইলে সংযোগ পাই।

তোমার ঠোঁটে লিপস্টিক মুছে গেছে?

কেন?

তবে মুছবে এখনই, আসছি আমি!

হাহাহাহা – কেন? তোমার কি প্রেমরোগ আবার খেপেছে? এটা নিয়ন্ত্রণ করো, প্রেম হলে ঠোঁটে নয়, হৃদয়ে কথা কয়!

হুম! তাহলে আমার জমিনের অধিকার তোমার কেন? মেঘালয়ের খাসিয়াদের মত! মাতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি! তুমি আমাকে অধিকার দাও আমার জমির!

পুনঃপ্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০০৮ সকাল ৯:৩৯
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন আজ

লিখেছেন সোহেল ওয়াদুদ, ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিনাকী ভট্টাচার্য টকেশো - ফরহাদ মজহার এবং আমাদের দায়বদ্ধতা

লিখেছেন মুনতাসির, ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫৭

গতকাল পিনাকী এবং ফরহাদ মজহার সাহেবের একটি কথোপকথন ইউটিউবে দেখলাম। ফরহাদ সাহেবের কিছু প্রশ্নের কিংবা উদ্বেগ যাই বলি, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিহ্বল না হয়ে পারলাম না। কথোপকথনের তিন মিনিট... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের জামায়াত ও চব্বিশের আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করি

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০



একাত্তরের জামায়াত নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে এবং চব্বিশের আওয়ামী লীগ নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। এখন আওয়ামী লীগ বলছে ছাত্র-জনতার হত্যাকান্ডে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এক গুচ্ছ কবিতা দিলাম

লিখেছেন সামিয়া, ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪২


ছবি কুটির শিল্প মেলা থেকে তুলেছিলাম

বেঁচে থাকা মানে কি?

গতকাল দেখলাম সে হেঁটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে,
কথাও বললাম—
"কেমন আছেন?"জবাবে
বললো, "ভালো আছি।"
আজ থ হয়ে শুনি,
সে আর এই ভুবনে নাই।

এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পার্ভাট মন

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×