somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রীতু আরাশিগে

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আপনার এখান থেকে আমি বাংলাদেশে ফোন করতে চাই।’
শ্রীলংকার কুকুলেগংগা জেলার মাতুগামা উপশহরের এক টেলিফোন বুথে ঢুকে ইংরেজিতে এ কথা জিজ্ঞাসা করতেই দশ-বারো বছরের কিশোরীটি তার মুখমণ্ডলে একটা অপূর্ব নির্মল হাসি ছড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।
শ্রীলংকায় উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সবাই ইংরেজি বলতে পারলেও দরিদ্র জনগণের ভাষা সিনহালা। দরিদ্র-সম্ভবা টেলি-অপারেটর কিশোরী তাই পরদেশি আগন্তুকের ইংরেজি বাচ্য বুঝলো না। কাজেই সে তার নিজস্ব সিনহালা ভাষায় কী যেন বলতে চাইলো, কিন্তু সেই ভাষা মেজর এজাজ রহমান চৌধুরির কাছে পাখির ভাষার মতোই দুর্বোধ্য মনে হলো।
মাত্র দু-দিন হয়েছে তাঁরা শ্রীলংকায় এসেছেন। আমেরিকা, বাংলাদেশ, নেপাল, মংগোলিয়া ও স্বাগতিক শ্রীলংকার যৌথ অংশ্রগ্রহণে জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমের উপর প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তাঁদের এখানে আগমন।
বাংলাদেশ থেকে আসার সময় মেজর বলে এসেছিলেন কুকুলেগংগায় পৌঁছেই বাসায় ফোন করবেন। কিন্তু এখানে আসার পর দেখা গেলো টেলিসংযোগ স্থাপিত হতে আরো চার-পাঁচ দিনের মতো লেগে যাবে। এতদিন অপেক্ষা করা যায় না, দেশে পরিবারের সবাই খুব দুশ্চিন্তায় থাকবেন।

যেখানে মার্কিনিদের আগমন সেখানে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের প্রাচুর্য সুনিশ্চিত। কিন্তু আয়োজক কর্তৃপক্ষের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও ব্যস্ততার দরুণ ভিনদেশিগণের কুকুলেগংগায় পৌঁছাবার সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রাচুর্যের সুব্যবস্থা হয় নি, এবং একই কারণে নিজ নিজ দেশে টেলিফোনে যোগাযোগের জন্য কাউকে ক্যাম্পের বাইরে নিকটস্থ শহরে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হলো না।
পরদেশে প্রবেশের সাথে সাথেই কয়েকটি দরকারি কথা ও-দেশের ভাষায় শিখে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। যেমন :
‘আপনি কেমন আছেন?’
‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
‘একটু দয়া করে আমার কথাটি শুনবেন কি?’
‘এই জিনিসটার দাম কত?’
‘আমি কলম্বো যেতে চাই।’
‘অনুগ্রহ করে আমাকে ক্যান্ডি যাওয়ার পথ বলে দিন।’

মেজর এজাজ মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার এখান থেকে কি বাংলাদেশে ফোন করা সম্ভব হবে?’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বোধোদয় হয় যে, মেয়েটি হয়ত তাঁর ইংরেজি বাচন বুঝতে পারে নি। গত দু দিনে দু-একটা ভাঙা-ভাঙা অতি সাধারণ সিনহালা শব্দ ও বাক্য শেখা হলেও টেলিফোন করার কথাটি কীভাবে বলতে হবে তা তাঁর জানা হয় নি, অথচ এখন মনে হচ্ছে এ কথাটি সর্বাগ্রে শেখা জরুরি ছিল। কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়েটি তার টেলিফোনটি মেজরের দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় তার ডান পাশে দেয়ালে ঝোলানো চার্টটির দিকে নির্দেশ করে; সেখানে বাংলাদেশে ফোন করার প্রতিমিনিট কলচার্জ বাবদ ৪৫ রুপি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
‘ঠিক আছে।’ বলে মেজর নিজের দিকে টেলিফোনটি টেনে এনে ডায়াল করতে থাকেন। অপর প্রান্তে তাঁর আট বছর বয়সি কন্যা আবেগে কেঁদে ফেলে। সে বলে, ‘আব্বু, তুমি এত পরে আমার কাছে ফোন করলে কেন? আমি গত তিনদিন ধরে তোমার কথা শুনতে পাই না। তোমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি তোমাকে খুব...খুউব মিস করছি আব্বু।’ এরপর মেজর তাঁর দশ বছর বয়সি ছেলের সাথে কথা বলেন। সে-ও কিশোর, কিন্তু কনিষ্ঠা ভগ্নির তুলনায় সে নিজেকে সর্বদা অধিকতর ব্যক্তিত্ববান, দায়িত্বশীল ও বোঝবান মনে করে। সে বলে, ‘আব্বু, রীতু একটুও বোঝে না। তুমি তো চার সপ্তাহ পরেই চলে আসবে, তাই না আব্বু? তবু সে দিনভর তোমার জন্য কাঁদে। আমি সেজন্য ওকে অনেক বকা দিয়েছি।’ স্ত্রীর সাথে কথা হলে তিনি জানালেন ফোন করতে এত বিলম্ব হওয়াতে গত দু-দিন তিনি খুব দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছেন।
উপরের কথাগুলো দশ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে মেজর অত্যন্ত তৃপ্তি ও সুখের সাথে জিন্‌সের পেছন পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করেন। মানিব্যাগের মুখ খুলতে খুলতে তিনি কিশোরীর দিকে তাকান, সে তখন একপায়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে অপলক চোখে মেজরের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল— কী অদ্ভুত সুনির্মল তার হাসিভরা মুখখানি, সমস্ত অবয়ব কী এক করুণ মায়াবী মমতায় ছেয়ে আছে— অকস্মাৎ মেয়েটির চোখের উপর তাঁর চোখ পড়তেই মেজরের বুকটা হুহু করে ওঠে— ঠিক এ রকম, অবিকল এ রকম একজোড়া চোখ তিনি তাঁর ঘরে সুদূর বাংলাদেশে রেখে এসেছেন, সেই চোখদুটি এখন তাঁর জন্য দিনরাত অশ্রুতে ভিজে থাকে।
‘স্যার...।’ ইউনিভার্সেল এই ইংরেজি সম্বোধনে মেজরের ধ্যানভঙ্গ হয়। তিনি মানিব্যাগ থেকে পাঁচটি একশ রুপির নোট বের করে কিশোরীর হাতে দিয়ে সংকেতে বোঝাতে চেষ্টা করেন, ‘বাড়তি পঞ্চাশ রুপি ফেরত দিতে হবে না। দেশে আমার একটা কন্যা আছে, তার চোখদুটো তোমার চোখের মতো। তার কথা মনে করে আমি তোমাকে অতিরিক্ত এই পঞ্চাশ রুপি বকশিস দিচ্ছি। তা দিয়ে তুমি চকোলেট কিনে খেয়ো।’
কিন্তু কিশোরী এ সংকেতের কোনো কিছুই বুঝলো না। সে পাঁচটি দশ রুপির নোট মেজরের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ততক্ষণে টেলিফোন বুথে আরো দু-চারজন শ্রীলংকান নাগরিক টেলিফোন করার উদ্দেশ্যে এসে জড়ো হয়েছেন। কিন্তু কেউ তাঁর ইংরেজি বাচন ও সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে পারলেন না। অবশেষে পঞ্চাশ রুপি ফেরত নিয়ে মানিব্যাগে গুঁজলেন এবং কিশোরীর মাথায় দু বার হাত বুলিয়ে ‘গুডবাই’ বলে বিদায় নিলেন।

রাতে একটা আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলেন মেজর। টেলিফোন বুথের সামনে গিয়ে তিনি অনর্গল মেয়েটির সাথে কথা বলছেন। মেয়েটির ইংরেজি বাচন শুনে তাঁর মনেই হচ্ছে না সে কোনো দরিদ্র ঘরের ইংরেজি না-জানা টেলিফোন অপারেটর।
‘তুমি কতদিন ধরে এখানে আছো, খুকি?’
‘তিনমাস হলো।’
‘তুমি কি স্কুলে যাও?’
‘আমি স্কুলে যাই না। আমার মা-বাবা কেউ জীবিত নেই। এটা আমার এক দূর সম্পর্কীয় খালুর টেলিফোন বুথ। মাসিক মাইনে নেই। পেটে-ভাতে তাঁদের বাসায় থাকি, আর এখানে কাজ করি।’
‘আমি খুবই দুঃখিত যে তুমি একটা এতিম বালিকা।’
‘আপনাকে ধন্যবাদ, আমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের জন্য।’
‘তোমার নামটা কি আমাকে বলবে, খুকি?’
‘নিশ্চয়ই। আমার নাম আরাশিগে।’
নামটি মেজরের কাছে খুব স্পষ্ট হলো না। ভ্রূ-যুগল ও কপাল কুঞ্চিত করে মেয়েটির নাম পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ‘আরিচেগা?’
‘না না, আপনি ভুল উচ্চারণ করছেন। আমি কাগজে লিখে দিচ্ছি। Arachchige. উচ্চারণ করুন— আ-রা-শি-গে।’
মেজর মেয়েটির মতো টেনে টেনে উচ্চারণ করলেন, ‘আ-রা-শি-গে। হয়েছে?’
‘চমৎকার।’
‘আচ্ছা আরাশিগে, তুমি কি কখনো বাংলাদেশের নাম শুনেছো?’
‘জি না স্যার।’
‘স্যার’ কথাটি উচ্চারিত হবার সাথে সাথেই তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়। মানুষ বাস্তবে যা দেখে না বা শোনে না, স্বপ্নেও তা দেখতে কিংবা শুনতে পায় না। কিন্তু ‘আরাশিগে’ নামটি কীভাবে তাঁর স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে গেলো তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। এখনো মেজরের কানের কাছে মেয়েটির নিজ কণ্ঠে উচ্চারিত ‘আরাশিগে’ নামটি গানের সুরের মতো বাজছে।
মেয়েটির নাম কি সত্যিই আরাশিগে? এ কথা যখন ভাবছেন তখন হঠাৎ করে তাঁর একটা কথা মনে পড়ে যায়— টেলিফোন বুথের দেয়ালে কলচার্জের যে চার্টটি ঝোলানো ছিল, তার উপরে কলম দিয়ে অসুন্দর ইংরেজি অক্ষরে এই নামটি লেখা ছিল। কিন্তু এ থেকেই ধরে নেয়া যায় না যে মেয়েটির নাম আরাশিগে। প্রথমত, মানুষের নাম আরাশিগে হতে পারে এটা নিয়েও তাঁর মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এটা যে একটা মেয়ে-নাম তা-ও নিশ্চিত করে বোঝার উপায় নেই। মেয়েটার নাম জানতে মেজরের খুব ইচ্ছে করতে লাগলো, তার চাইতেও মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছেটা তাঁর প্রবল হতে থাকলো। কিন্তু এর পরের দুটি সপ্তাহ খুব ব্যস্তভাবে কাটলো। ইতোমধ্যে আবাসিক-ক্যাম্প এলাকায় টেলিসংযোগ স্থাপিত হয়েছে। দু-তিন দিন পরপর মেজর বাংলাদেশে পরিবারের সবার সাথে কথা বলেন।
‘রীতু মামণি, তুমি ভালো আছো?’
‘আমি ভালো আছি। তুমি?’
‘আমিও। তুমি কি এখনো আমার জন্য কাঁদো?’
‘কাঁদি। কিন্তু সব সময় না। রাতে ঘুমোবার সময় কাঁদি, আর ভাইয়া যখন আমাকে বকে তখন কাঁদি।’
‘তুমি একটুও কেঁদো না। আমি বাড়ি এসে তোমার ভাইয়ার বিচার করে দিব। ঠিক আছে?’
‘হুঁম। ওকে ১০ বার টাইমস-টেবিল লিখতে বলবে।’
‘আচ্ছা বলবো।’
‘তারপর পুরো একদিন আমরা ওর সাথে কেউ কথা বলবো না।’
‘ঠিক আছে মামণি। তাই হবে।’
‘উঁহু, একদিন না। এইট আওয়ারস। একদিন হলে ও কষ্ট পাবে।’
‘আচ্ছা, তুমি যা বলবে তাই করবো।’
‘আব্বু, আর কতদিন পর আসবে তুমি?’
‘আরো দু সপ্তাহ পর।’
‘দু সপ্তাহে কি ফোরটিন ডেইজ হয়?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমার জন্য চকোলেট আনবে। ভাইয়ার জন্য কিন্তু কিচ্ছু আনবে না।’
‘ঠিক আছে। মামণি শুনতে পাচ্ছো?’
‘শুনছি তো।’
‘এখানে তোমার মতো একটা মেয়েকে দেখেছি।’
‘সে কী করে?’
‘টেলিফোনে কাজ করে।’
‘একদম আমার মতো!’ রীতু অবাক হয়ে বলে।
মেজর বলেন, ‘ওর চোখদুটো তোমার চোখের মতো। তুমি যখন ওর সমান হবে তখন তোমাকে ওর মতোই দেখাবে।’
রীতু খিলখিল করে হেসে উঠে বলে, ‘তাহলে তো দুটো রীতু হয়ে যাবে।’
‘হ্যাঁ, তবে ওর নাম কিন্তু রীতু নয়, আরাশিগে।’
আরাশিগেকে নিয়ে প্রতিবারের টেলিফোনেই দু-একটা কথাবার্তা হয়। মেজরের স্ত্রীও তাকে নিয়ে খুব উৎসাহ প্রকাশ করেন। দেশে ফেরত যাবার সময় আরাশিগের একটা ছবিও সঙ্গে নিতে বলে দিলেন।

একদিন মেজর সামিরা নামক এক শ্রীলংকান অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে আরাশিগের টেলিফোন বুথে এলেন বাংলাদেশী মেজর। বুথে ঢোকামাত্র দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালো মেয়েটি এবং বাংলাদেশী মেজরকে যে সে চিনতে পেরেছে তা সে শ্রীলংকান মেজরের মাধ্যমে জানিয়ে দিল। দ্বিতীয়বারের মতো তার বুথে আগমন করায় সে যারপরনাই গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছে। আগের বারের মতো আজ পারস্পরিক কথোপকথনে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে না, কেননা, মেজর সামিরা আজ দোভাষীর কাজটি করে দিচ্ছেন।
‘তোমার চোখ দেখলে আমার মেয়ের কথাটি মনে পড়ে যায়।’
‘আপনার মেয়েটির বয়স কত?’
‘আট বছর।’
‘আমার বয়স বিশ বছর।’
মেজর একটু বিব্রত হোন। মেয়েটির বয়স দশ-বারো’র মতো দেখায়, সেভাবেই এ যাবত তার সাথে আচরণ করছিলেন তিনি।
মেজর বলেন, ‘তোমার সাথে আমার মেয়েটির প্রচুর মিল। এত মিল যে সে যখন তোমার বয়সে পদার্পণ করবে তখন তাকে অবিকল তোমার মতো দেখাবে।’
আরাশিগে সলজ্জ হেসে নীচের দিকে তাকায়।
‘তুমি কি বাংলাদেশে বেড়াতে যাবে, আমার প্রিয় কন্যা?’
‘আমার বাবার প্রচুর অর্থকড়ি নেই। থাকলে নিশ্চয়ই আপনার মতো আমার আরেকজন বাবার দেশে বেড়াতে যাওয়াটা আমার জন্য বেজায় সুখকর হতো।’
‘তুমি কদ্দূর লেখাপড়া করেছো?’
‘আমি লেখাপড়া করতে পারি নি। আমার আট বছর বয়সে আমার মা মারা যান। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। তিনি বর্তমানে একজন অকাল-অবসরপ্রাপ্ত পঙ্গু সার্জেন্ট। জাফনা যুদ্ধে তিনি উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।’
দুই মেজরই অবাক হোন এবং তার প্রতি সহানুভূতি জানাতে থাকেন।
মেয়েটি বলে, ‘পেনশনের টাকার একটা অংশ দিয়ে এই টেলিফোন বুথটি করা হয়েছে। আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে আমিই বড়ো। বাকিরা লেখাপড়া করছে বলে এ কাজটি আমাকেই করতে হয়।’
‘তোমার প্রতি আমার অশেষ সহানুভূতি রইলো বাছা। তুমি তোমার মনোবল, পরিশ্রম আর কর্মদক্ষতা দিয়ে তোমাদের সংসারটাকে টিকিয়ে রাখছো, তোমার মতো আর মেয়ে হয় না।’
‘আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।’
‘তুমি আমার প্রিয়তমা কন্যার মতো। আমি এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে তোমাকে একটা সামান্য উপহার দিয়ে যেতে চাই। আমি খুবই খুশি হবো আমার আদরের কন্যাটি, যদি তুমি আমাকে তোমার পছন্দের একটা জিনিসের নাম বলতে।’
‘স্যার, আপনি আপনার এ মেয়েটিকে একটা উপহার দেয়ার কথা ভেবেছেন, এজন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এবং আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তবে দয়া করে আমাকে কিছু দেবার জন্য ব্যস্ত হবেন না, আপনি সারাটি জীবন আমার হৃদয়ে অবস্থান করবেন, ঠিক আমার জন্মদাতা পিতার মতোই।’
‘আমার প্রিয় কন্যা, তোমার কথায় আমি খুবই সন্তুষ্ট হলাম।’

নিজ কন্যা কী পেতে ভালোবাসে তা তো তাকে জিজ্ঞাসা করাই যায়। সলজ্জ বালিকা সবিনয়ে উপহার গ্রহণে অনিচ্ছার কথা জানালেও মেজর মনে মনে স্থির করলেন, দেশে ফেরত যাবার আগে এ মেয়েটিকে তিনি অবশ্যই একটা উপহার প্রদান করে যাবেন এবং কী দিবেন তা-ও তিনি স্থির করে ফেললেন।
কলম্বোর সর্বাধুনিক ‘ম্যাজেস্টিক সিটি’ শুধু শ্রীলংকায় তৈরি সামগ্রীর জন্যই বিখ্যাত নয়, বিশ্বের প্রায় সকল উন্নত ব্র্যান্ডের সামগ্রীই এখানে পাওয়া যায়। এসব সামগ্রীর আকাশছোঁয়া মূল্যের কারণে ম্যাজেস্টিক সিটি মূলত শ্রীলংকান উচ্চবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণি এবং ধনিক পর্যটকদের ‘পারচেজ সেন্টার’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
ম্যাজেস্টিক সিটিতে গিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য মেজর বেশ কিছু দুর্লভ ও আকর্ষণীয় উপঢৌকন ক্রয় করলেন। কিন্তু মনে মনে যা তিনি খুঁজছেন তা কোথাও পাচ্ছেন না। মাঝখানে অবশ্য ‘হাউজ অব ফ্যাশন’ থেকেও ঘুরে এলেন। হাউজ অব ফ্যাশনকে কলম্বোর সবচাইতে ব্যস্ত শপিং মল বলা যেতে পারে। এখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সবার জন্যই সর্বাধুনিক ফ্যাশনের পোশাকাদি ন্যায্য মূল্যে পাওয়া যায়।
সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ফেরার আগ দিয়ে আরেকবার সেই ম্যাজেস্টিক সিটিতে ঢুকলেন এবং দুটি দোকান পরই আরাশিগের জন্য চমৎকার একটা পোশাক পেয়ে গেলেন, ঠিক যেমনটি তিনি খুঁজছিলেন, যেটি পরলে আরাশিগেকে রাজকুমারীর মতো মনে হবে, রীতু যেদিন বড়ো হবে সেদিন ঠিক যেরকম তাকে দেখবেন বলে তিনি সর্বদা কল্পনা করেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরের দিনগুলো এতই ব্যস্তভাবে কাটতে লাগলো যে দম ফেলবার মতো একদণ্ড অবসর পাওয়া গেলো না।

২০ জুন ২০০৪

(অসমাপ্ত। আগামীতে বাকি অংশ পোস্ট করা হবে)

***

'কালের চিহ্ন', একুশে বইমেলা ২০১৬

***

বাকি অংশ কেউ পড়তে চাইলে প্লিজ নীচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে সরাসরি ১০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় চলে যান।

কালের চিহ্ন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫
৩৭৫ বার পঠিত
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×