প্রথম পর্বটি এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন
দ্বিতীয় পর্বটি এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন
কিন্তু সে পর্যন্ত তিনি গড়াতে পারেননি। তার আগেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। ঘটনাটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও আজকে যারা আওয়ামী লীগের বড় নেতা তারা সেদিন এর প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এমন কি ঘরের মধ্যে ইন্নালিল্লাহ পড়ার মতো হিম্মত দেখাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজ অনেক বড় বড় কথা শোনা যায়।
বঙ্গবন্ধুর একটি বিশেষ গুণ ছিল সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার পর তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেছিলেন। আর এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমকে গুম করা হয়েছে। সাগর-রুনিসহ ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, ৪৮৬ জনকে আহত করা হয়েছে। ৪ বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকে হরতাল চলাকালীন সময় বিশ্বজিত্ নামের এক তরুণ টগবগে যুবককে চাপাতির আঘাতে কুপিয়ে এবং রড দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সব প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই হত্যাকাণ্ড ধারণ করে প্রচার করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন এরা ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী, এদের পরিবার-পরিজন জামায়াত-শিবির করে। যুুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু মিডিয়ার প্রচার ও বিরোধী দলের চাপের মুখে হত্যাকারীদের চারজনকে গ্রেফতার করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। খুনিরা আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলেছে, ছাত্রলীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের হুকুমেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ’৭০-এর নির্বাচনের আগে এদেশের জনগণ ৬-দফা বুঝতেন না, বুঝতেন বঙ্গবন্ধু দশ আনার পরিবর্তে আট আনা সের চাল খাওয়াবেন, আট আনার পরিবর্তে ছয় আনা কাগজের দিস্তা হবে, বিশ পয়সার লবণ দশ পয়সা হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই এক সের চালের দাম সাড়ে সাত টাকা, এক দিস্তা কাগজের দাম সাড়ে ছয় টাকা, এক কেজি লবণের দাম একশ’ বিশ টাকায় উন্নীত হলো। মানুষ দিশেহারা হয়ে গেল। কচু-ঘেচু খেয়ে জীবন ধারণ করতে শুরু করল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ’৭৪-এ এদেশে এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়িতে (Bottomless Basket) পরিণত হয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ছিল দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রেখে যাওয়া ষোল টাকার চাল পঁয়ত্রিশ টাকা এবং বাইশ টাকার চাল পঁয়তাল্লিশ থেকে আটচল্লিশ টাকা দিয়ে মানুষকে কিনতে হয়েছে। বায়ান্ন টাকার মসুর ডাল বর্তমানে ১৪০ টাকা। আট টাকার ডিমের হালি এখন চল্লিশ টাকা। প্রতারণা করে পিতা-কন্যা দু’জনেই জনগণের ভোট নিয়েছেন, দেশে অশান্তি বৃদ্ধি করেছেন। ইজ্জতের ভয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিক প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস সেদিনও পায়নি, আজও পাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যে তফাত এটুকুই যে, খুন করে একজন স্বীকার করতেন; আরেকজন অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন। তাদের দু’জনেরই খুনের অভ্যাস আছে। দু’জনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পিপাসা কারোরই কম ছিল না এবং নেই। এ পিপাসা শুধুই রক্তের পিপাসা। (ক্রমশ)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



