somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমল নামা, মিস করলে হারাবেনঃ পর্ব-১ (৪)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। পেয়েছি মানচিত্র, পতাকা, ভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতি ইত্যাদি। ৪১ বছর পর আজ জ্ঞানী ব্যক্তিদের মুখ থেকে বের হয়ে আসছে—আমরা তো এমন স্বাধীনতা চাইনি। শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, নির্বিচারে খুন, হত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, গণগ্রেফতার—এসব তাণ্ডব দেখে সুধীজনের মুখ থেকে বের হয়ে আসছে—এমন স্বাধীনতা আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ—যা বিশ্ব দরবারে মডেল হয়ে থাকবে। যেখানে অবাধ গণতন্ত্রের চর্চা থাকবে, অনুশীলন হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে, ভাষা, সংস্কৃতি ব্যবহারে মানুষ সভ্যতার পরিচয় দেবে—এমনই একটি স্বাধীনতা আমরা চেয়েছিলাম। স্বাধীনতা-উত্তর শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার সুফলকে নিজেদের ঘরে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। অবাধ লুটপাট হয়েছে, রিলিফের চাল, গম, আটা এমনকি কম্বল চুরি করেও রেকর্ড স্থাপন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলেন, সরকার গঠন করলেন। জাতি তাকে অনেক বড় মাপের নেতা হিসেবে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করত। গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ভাষা-সংস্কৃতির স্বাধীনতা, হত্যা-খুন-গুম ও পাকিস্তানি বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। জেলে ঢুকিয়ে, বরফ দিয়ে, মাথার ওপর পাওয়ার বাতি দিয়ে নির্যাতন করে তাকে আন্দোলন থেকে সরে আসার চাপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি পিছপা হননি।
স্বাধীনতার পর আমরা তাকে কীভাবে দেখেছি? ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি রক্ষী বাহিনী, লাল বাহিনী, নীল বাহিনী এসব রংবেরঙের বাহিনী তৈরি করে এদেশের শিক্ষিত প্রতিবাদী যুবকদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছেন। কেউ বলে ৪০ হাজার আবার কেউ বলে ৩৬ হাজার মেধাবী টগবগে যুবক তার রক্ষী বাহিনীর নির্যাতনে খুন হয়েছেন। ৫ হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে গুম করা হয়েছে। তাদের হদিস আজও মেলেনি। ২৬২টি সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মাত্র ৪টি দালাল পত্রিকা চালু রাখা হয়েছিল। এরপরও জনগণের মুখ বন্ধ করতে না পেরে ’৭৫-এর জানুয়ারিতে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। অর্থাত্ ভিন্ন মতের কোনো রাজনৈতিক দল এ দেশে থাকতে পারবে না। স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। মাত্র ১৩ মিনিটে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সাল, বঙ্গবন্ধু তখন প্রধানমন্ত্রী। সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ তার এ বক্তব্যের রেকর্ড এখনও পার্লামেন্টে বহাল তবিয়তে আছে। বঙ্গবন্ধু আদেশ দিলেন নকশাল দেখামাত্রই গুলি করতে হবে। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, এই মুজিব, নকশাল কারো গায়ে লেখা আছে নাকি? কে নকশাল আর কে বাকশাল তোমার পুলিশ কীভাবে চিনবে? মওলানা ভাসানীর এ ধমকে শেখ মুজিব প্রকম্পিত হয়েছিলেন। অথচ তাকে আজ রাজনৈতিক অর্থে খুনি বলা গুরুতর অপরাধ। তার বিরুদ্ধে কথা বললে আইন লঙ্ঘন হয়ে যায়। ’৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির কথা কে না জানে? প্রতি রাতে প্রতি গ্রামে দু’চার বাড়িতে ডাকাতি হতো। মানুষ একসের চাল কিনে সন্ধ্যার পর বাজার থেকে বাড়ি যেতে পারতেন না। রাস্তায় আওয়ামী লীগের দুর্ধর্ষ ডাকাতরা আগ্নেয়াস্ত্র, ছোরা, চাকু, লাঠি, বল্লম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সে ছিল এক বিভীষিকাপূর্ণ অবস্থা। ডাকাতরা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইন ছিল তাদের কাছে পরাজিত। তখন মানুষ মনে করতেন দেশ আজ ‘হীরক রাজার’ হাতে বন্দি। স্বাধীনতার পর মানুষ এমন লুটেরার হাতে বন্দি হবে এটা কেউ প্রত্যাশা করেননি। এমন লুটতরাজ হবে এটা ছিল মানুষের কল্পনার বাইরে। বঙ্গবন্ধু এমন হিংস্র হবেন এটাও ছিল ধারণার বাইরে। ভয়ঙ্কর এই শাসকগোষ্ঠীর তাণ্ডব দেখে মানুষ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্কগ্রস্ত জনতাকে রক্ষা করার জন্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাসদের মেজর জলিল, আসম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজের মতো নেতারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। গণবাহিনীর নেতা বর্তমান তত্তমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ছিলেন তখন দেশের চতুর্থ শ্রেণীর নেতা। তিনিও মুজিবী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন। (ক্রমশ)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×