কানাডায় এসে দেখি ছাড়ের রাজত্ব। প্রতি সাপ্তাহে কম করে কেজি খানিক ফ্লায়ার বাসায় দিয়ে যায়। ফ্লায়ার মানে কোন দোকানে কি ছাড় এবং কত পার্সেন্ট ছাড় দিচ্ছে তার বিশদ বিবরন। এবং সে ছাড়ে কোন ফাকি-ঝুকি নাই সত্যিকারেরই কম দাম।
কানাডায় আসার পর প্রথম প্রথম নাক উচুঁ করে পাশের বাসার ভাবীর সাথে গল্প করতাম, "দেখছেন ভাবী এরা কেমন কৃপন, ১০ সেন্ট ছাড় দিয়েছে তা ও পত্রিকায় ছেপে বাড়ি পৈাছে দেয় আবার সবাই হুমড়ি খেড়ে সে ছাড়ের জিনিস কিনতে যায়। শুধু তাই না, প্রতিটিটা দোকানে দোকানে ঢু মারে ও কিনে যেখানে যা ছাড় দেয়।" যাইহোক সে সব ছাড়কে তোয়াক্কা না করে আমি আমার মতো সংসার গোছাতে লাগলাম... আমার ধারনা ছিল যে তারা নিশ্চয় বাংলাদেশের মতো বেশী দাম লিখে তারপর ছাড় দেয়। যাহোক অনেক কিছুর মধ্যে ৪০ ডলার দিয়ে একটা ফিল্টার জগ কিনলাম ওয়ালমার্ট থেকে। এবং তার ঠিক পর সাপ্তাহে দেখি ওটাতে ৫০% ছাড় দিয়ে দাম হয়েছে ২০ ডলার। নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করলো তারপরও ঠিক হলাম না। কদিন পর এক জোড়া বুট ও ৩টা টি শার্ট কিনেছিলাম। তার ১৫ দিন পর দেখলাম ১০০ ডলারের জুতা ৩৫ টাকা আর ২২ ডলারের টি শার্ট ৬ ডলারে ছাড় দিয়েছে... এবার বাকি চুল ছিড়ার অবস্থা। যাহোক চাল ডাল তেল সব কিছুতেই ছাড় থাকে কোথাও না কোথাও এবং অনেক কমে। যেমন গত মাসে ১৭ ডলারের চাল ছাড় দিয়ে হয়েছে ৯ ডলার.... কিনে নিলাম অনেক প্যাকেট। আরেক সাপ্তাহে তেল এ ৯ ডলারের পরিবর্তে ৫ ডলার। কিনে নিলাম কয়েক মাসেরটা.... এভাবে আমার ছাড়ের জীবন শুরু এবং বাকী ভাবীদের মতো আমিও ফ্লায়ার ধরে খোঁজা শুরু করি কোথায় কি ছাড়.... হাহাহাহাহাহা... জীবন যেখানে যেমন।
ছাড়ের আসল রাজত্ব শুরু হয় ক্রিসমাসের সময়। ব্লাক ফ্রাইডে মানে নভেম্বরের শেষ শুক্রবার ও বক্সিং ডে মানে ক্রিসমাসের পরের দিন থাকে মহা ছাড়। ৭০%-৮০% ছাড় থাকে বড় বড় নাম করা স্টোরের সব জিনিসে...শুধুমাত্র একদিনের জন্য। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে... ভোর থেকে শুরু হয় কেনা কাটা। কাস্টমারের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও অনেক সময়। তাই সে দিনেই সাহস করি হাডসন বে এর মতো দোকানে শপিং করার কারন সেখানে ১০০ ডলারের জিনিস ৪০০ ডলারে বিক্রি হয়। তবে বক্সিং ডে তে সবচেয়ে বেশী থাকে ইলেকট্রিক আইটেমে ছাড়। যে টিভি বা ল্যাপি ৮০০ ডলার তা হয়তো পাবেন ৫০০ ডলার। আর ফার্নিচারে থাকে অনেক ছাড়...... বড় বড় ফার্নিচার সপগুলো প্রথম ১০ কাস্টমারকে ৮০% ছাড় দিল তার পরের ১০ জনকে ৫০% ছাড়.......... ছাড়ের এ সত্যিকারের মৈাসুম ক্রিসমাসের সময় থাকলে ও অন্য সময়ও কম বেশী ছাড় থাকে।
তবে ভালোলাগে ঈদ বা পুজা বা ক্রিসমাসে যখন যেটা বেশী প্রয়োজন সে জিনিসে ছাড় দেয়। যেমন রোজায় ছোলা, খেজুর সহ সব আইটেমে ছাড় থাকে, আবার যখন থ্যাংকস্ গিভিং ডে থাকে তখন টার্কিতে ছাড় দেয়। আমাদের দেশের মতো না যে রোজা আসলেই ১০ টাকার বেগুন ১০০ টাকা ....। সাধারন মানুষকে বিপদে ফেলে ব্যবসা করার বুদ্ধি মনে হয় শুধু আমরাই জানি......
এবার শুনুন আসল রহস্য। প্রফিট মার্জিন নিয়ে পড়ানোর এক পর্যায়ে প্রফেসারকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, প্রফেসার, বে এর মতো কোম্পানি ৭০% ছাড় দিয়ে কেমনে ব্যবসা করে? স্যার বললেন, অংক করো.... বে এর যেকোন প্রডাক্ট এর প্রফিট মার্জিন ৪০০%। তো একটা শার্ট ওরা কিনে ১০ ডলারে চায়না থেকে। তারপর অন্যান্য কস্ট যোগ করার পর দাম দাড়ায় ৫০ ডলার। তো ৪০০% মার্জিন মানে বিক্রির দাম ২০০ ডলার। ৭০% ছাড়ের পর দাম ৬০ ডলার। তো লাভ তারপরও কত??? ১০ ডলার!!!!!!!!!! আর লাভ তো ওরা প্রথম ১০০ পিস বিক্রি করেই তুলে ফেলে... বাকিগুলো ফাও
তাই মোরাল: যদি পয়সা বাচাঁতে চান কানাডায় তাহলে কেনার আগে ছাড় দেখুন ও মনের আনন্দে কেনা কাটা করুন.....
ভালো থাকেন আজ এ পর্যন্ত..........