হিন্দুদের সনাতন ধর্মের বেদ সমূহে দ্বাদশ পত্নীধারী ‘নরাশংস’ নামক একজন মহামানবের আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। এ ধর্মের বেদ, গীতা, পুরাণ, ঔপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ ইত্যাদি গ্রন্থে একজন মহর্ষি’র সম্পর্কে বিশ্বমানবকে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে যিনি হবেন কল্কি অবতার বা হিন্দুদের শেষ অবতার। কে তিনি? কি তাঁর পরিচয়? তিনি কি ইতিমধ্যে জন্মগ্রহণ করে ফেলেছেন? এসকল প্রশ্নের উত্তর নিয়েই সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন ধর্মাচার্য অধ্যাপক ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-ই সেই অন্তিম মহর্ষি যার সম্পর্কে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। এই নিবন্ধে সনাতন ধর্মের কিতাবগুলোতে তাঁর আবির্ভাব, নাম-পরিচয়, ধর্মপ্রচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাহাত্য, সহচরগণের কা্যাবলী সম্পর্কে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা-ই সন্নিবিষিত করা হয়েছে।
বাংলা, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত ভাষার অনেক সত্যানুসন্ধানী মনীষীগ্ণ তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, হিন্দু শাস্ত্রের ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ মূল মন্ত্রটি ইসলামের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-এর প্রতিধ্বনি। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে আরেকটি মন্ত্রে উল্লেখ আছে-
‘’ইল্লা কবর ইল্লা ইল্লাল্লোত ইল্লাল্লোং’’
অর্থাৎ, ‘’পৃথিবী ও অন্তরীক্ষস্থ সূক্ষ্ম পদার্থের স্রষ্টা আল্লাহ। আল্লাহ পুণ্যবানদের প্রভু, একমাত্র আল্লাহকেই আল্লাহ বলে করো আহবান।‘’
সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলোর অনেক স্থানে শেষনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। কোথাও তাঁর কার্যাবলী দ্বারা তাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও তাঁর নাম সরাসরি ‘মোহম্মদ’ উল্লেখ করে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কোন কোন স্থানে ‘নরাশংস’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ধর্মাচার্য অধ্যাপক ডঃ বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের মতানুযায়ী, ‘নরাশংস’ এমন একটি শব্দ যা নরস বা ব্যক্তিকে সূচিত করে যাঁর নামের অর্থ হবে ‘প্রশংসিত’, আরবীতে যার প্রতিশব্দ হলো ‘ মুহাম্মদ’। এভাবে, ঋগবেদের ‘কীরি’ শব্দটিও আরবী ‘আহমদ’ শব্দটির সমার্থক যা মহানবী(সাঃ)-এর একটি নাম।
‘আল্লাহ’, ‘মোহাম্মদ’ ও ‘রাসূল’ তিনটি আরবী শব্দযোগে অলোপনিষদে যে শ্লোকটি লিখিত হয়েছে-
‘’হোতার মিন্দ্রো হোতার মিন্দ্রো মহাসুরিন্দ্রবোঃ।
অল্লো জ্যোষ্ঠং পরমং পূর্ণ ব্রহ্মনং অল্লাম।
অল্লো রাসূল মুহাম্মদ রকং বরস্য অল্লো অল্লাম।
আদল্লাং বুকমেকং অল্লাবুকং ল্লান লিখা্র-তকম।‘’
অর্থাৎ,
‘’দেবতাদের রাজা আল্লাহ আদি ও সকলের বড় ইন্দ্রের গুরু। আল্লাহ পূর্ণ ব্রহ্মা, মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল পরম বরণীয়, আল্লাহই আল্লাহ। তাঁর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। আল্লাহ অক্ষয়, অব্যয়, স্বয়ম্ভু।
সামবেদ-এ আরো উল্লেখ আছে-
‘’মদৌ বর্তিতা দেবা দ কারান্তে প্রকৃত্তিতা।
বৃক্ষানং; ভক্ষয়েৎ সদা মেদা শাস্ত্রেচ স্মৃতা।।‘’
‘’যে দেবের নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’ ও শেষ অক্ষর ‘দ’ এবং যিনি বৃষ মাংস ভক্ষণ সর্বকালের জন্য পূণঃবৈধ করবেন, তিনিই হবেন বেদানুযায়ী ঋষি।‘’