নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
বুঝে না বুঝে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ পাশ হওয়ার পরই সর্বত্র হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছে। সবাই এটা নিয়ে মেতে ওঠেছে। মূলত “দলিল যার জমি তার” মুখরোচক স্লোগানটি ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই আইনের প্রয়োগের চেয়ে অপপ্রয়োগ হলে সাধারণ মানুষ কতটা বিপদে পড়বে সেটা নিয়ে কোন বিশ্লেষণ চোখে পড়ছে না। অথচ আইনের প্রয়োগিক বিষয় পর্যালোচনা করলে আশার পাশাপাশি হতাশারও নানাবিধ দিক রয়েছে। এটা ঠিক, চলমান ভূমি নিয়ে অরাজকার রাজত্বে ভূমি সমস্যা নিরসনকল্পে দেশের বিদ্যমান আইন ও বিচারিক কার্যক্রেমের অতিরিক্ত হিসাবে এই আইনটি যদি সত্যিকার অর্থে প্রয়োগ করা যায় তাহলে কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। কিন্তু সমস্য হলো আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা এবং আইনগতভাবে অস্বয়ংসম্পূর্তা।
প্রথমে আসা যাক, দলিল যার জমি তার বিষয়টি আসলেই কি। পূর্বে কি দলিল যার মালিকানা তার ছিলো না?
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ মোতাবেক দলিল বলতে শুধু সম্পত্তির হস্তান্তরের কিংবা মালিকানা অর্জনের দলিলকেই বুঝানো হয় নি বরং সংজ্ঞার মধ্যে নকশা, স্কেচ ম্যাপ, হাত নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র প্রভূতিকে দলিল হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
আইনের সংজ্ঞাটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
“দলিল” অর্থে ভূমির মালিকানা হস্তান্তর বা বন্টনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত বা কৃত যে কোনো দলিল, বায়না দলিল, রসিদ, আম মোক্তারনামা, নকশা, স্কেচ ম্যাপ, হাত নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র, এফিডেভিট এবং এতদসংক্রান্ত অন্য কোনো দলিলও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে,
তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। কারণ খতিয়ান সংশোধনের জন্য একবার ল্যান্ড সার্ভে মামলা হলে তা অনন্তকাল ধরে চলতে থাকলে এই আইন কি সমাধান দিতে পারবে? কিংবা যার খতিয়ান না থাকলে তিনি কি অবৈধ দখলদার হিসেবে গণ্য হবেন?
আইনের ৭ ধারার বিধান মোতাবেক State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান মালিক অথবা তাহার নিকট হইতে উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে মালিকানা বা দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হইলে, কোনো ব্যক্তি উক্ত ভূমি স্বীয় দখলে রাখিতে পারিবেন না।
তবে, শর্ত থাকে যে, উত্তারাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা বা অন্য কোনো কার্যধারা দায়ের করিয়া থাকিলে তাহার উক্ত কার্য এই ধারার অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
তার মানে বলা হচ্ছে আপনার নামে রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। তবে , উত্তারাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা করলে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
এখানে হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে বিষয় বিধায় এই ধারা কতটুকু কার্যকর করা যাবে তা চিন্তার বিষয়। অপরদিকে, এই ধারায় কোন অপরাধ সংগঠিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং জরিমানাও করতে পারবে। সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হলো, এই বিচার টা সরাসরি মোবাইল কোর্ট দ্বারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও করতে পারবে। এখন মোবাইল কোর্টের বিচার দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বা স্বীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদ হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রক্ষান্তরে, সঙ্গবদ্ধ ভূমি দস্যু বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরার প্রয়োগ করে ভূমি দখলের একটা অঘোষিত লাইসেন্স পেয়ে যেত পারে!
অপরদিকে আইনের ৮ (৭) ধারায় বলা হয়েছে;
কোনো দেওয়ানি আদালতে দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোনো মামলা বিচারাধীন থাকিলে একই বিষয়ে এই ধারার অধীন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না।
তাহলে এই আইনের প্রয়োগ কি আসলেই আইনত কতটুকু সম্ভব?
ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর বিলটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে, আইনটি অনেকটা তড়িগড়ি করে এবং অনেক বিষয়ের সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি। আশাকরি বিধিতা তা সুষ্পষ্ট করা হবে। তবে, আইনটির প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতার পাশাপাশি অভিজ্ঞ বিজ্ঞ আইনজীবীদের প্যানেলে রাখা হলে বাস্তবতার আলোকে আরো ভালো ফলাফল আসতে পারে। এই আইনে মোবাই্ল কোর্টের বিধান রাখার মাধ্যমে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ এর দ্বারা কতটুকু সুবিধে পাবে তা বিবেচনার বিষয় রয়েছে। দলিলের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে মালিকানার জটিলতা নিরসন বা সিদ্ধান্ত প্রদান বরাবরেই সময় সাপেক্ষে বিষয় হয়ে পড়বে। আইনের ৭ ধারাটি একটি ভয়ংকর ধারা। ওই ধারায় বলা হচ্ছে আপনার নামে রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। এই ক্ষেত্রে মূল মালিকও দখলচ্যুত হতে পারেন। কারণ, ভূমি রেকর্ড প্রক্রিয়াটিই ১০০% স্বচ্ছ নয়।
তবুও, নাগরিকগণের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলসহ প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধসমূহ প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহে লক্ষ্যে উক্ত আইন পজিটিভ ভূমিকা রাখবে মর্মে আমরা আশা করতেই পারি!
- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)
লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৩
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৯
শাহ আজিজ বলেছেন: অনলাইনে কি জমির খাজনা দেওয়া যায় , জানাবেন দয়া করে ।
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তারিক ভাই, একটা জবাব চাই।
আমার চাচা ও বাবা দুই ভাই, তাদের এক বোন। একদিন হঠাৎ চাচা জানালেন যে, তিনি তার ফুফুদের অংশ (ফুফুদের ওয়ারিশ) তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিজের নামে লিখিয়ে এনেছেন।
আমরা সরল মনে এটা মেনে নিয়ে শুধু বাবার প্রাপ্য অংশটুকুই ভোগ করছিলাম।
হঠাৎ কিছুদিন আগে বাড়ির দলিলপত্র চেক করা হলো। দেখা গেল যে, বাড়িটির পর্চায় আমার দাদার নাম নাই, পর্চায় আমার বাবা ও চাচার নাম। আমার চাচার কাছে একটা দলিল আছে, যার মাধ্যমে ফুফুর অংশ লিখিয়ে আনা হয়েছে।
প্রশ্ন : পর্চায় আমার দাদার নামই নাই, তাহলে আমার চাচা কি তার ফুফুদের অংস লিখিয়ে আনতে পারবেন? যে দলিল তিনি বানিয়েছেন, ঐ দলিল কি টিকবে? ওটা কি ভূয়া দলিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
উল্লেখ্য, আমার দাদার ছিল ৩ বোন, ভাই নাই। আমার ছিল এক ফুপু। ফুপুর অংশ নিয়ে কোনো সমস্যা নাই।
উত্তরের অপেক্ষা থাকলাম। শুভেচ্ছা।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ভাই, আপনার বর্ণনা সঠিক থাকলে আপনার চাবা এবং বাবা কি মূলে মালিক হয়েছেন?
আর চাচার দলিলটি দেখতে হবে মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে।
৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৬
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: ভাল একটা উদ্যোগ শুভ কামনা