নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিলটি, ২০২৩ (এটি এখনো আইনে পরিণত হয় নি) প্রকাশিত হওয়ার পরই সর্বত্র হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছে। বুঝে না বুঝে সবাই এটা নিয়ে মেতে ওঠেছে। মূলত “দলিল যার জমি তার” মুখরোচক স্লোগানটি ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই আইনের প্রয়োগের চেয়ে অপপ্রয়োগ হলে সাধারণ মানুষ কতটা বিপদে পড়বে সেটা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আইনের প্রয়োগিক বিষয় পর্যালোচনা করলে এমন কিছুরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অপরদিকে ভূমি সমস্যা নিরসনকল্পে দেশের বিদ্যমান আইন ও বিচারিক কার্যক্রেমের অতিরিক্ত হিসাবে এই প্রস্তাবিত আইনটি কতটুকু পজিটিভ ভূমিকা রাখবে এবং কেনই বা এই অতিরিক্ত আইনটি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো তা নিয়ে আজকের আলোচনা। আলোচনাটি আমরা চেষ্টা করবো ধারা ভিত্তিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে করতে।
প্রথমে আসা যাক, দলিল যার জমি তার বিষয়টি আসলেই কি। পূর্বে কি দলিল যার মালিকানা তার ছিলো না?
প্রস্তাবিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল, ২০২৩ মোতাবেক দলিল বলতে শুধু সম্পত্তির হস্তান্তরের কিংবা মালিকানা অর্জনের দলিলকেই বুঝানো হয় নি বরং সংজ্ঞার মধ্যে নকশা, স্কেচ ম্যাপ, হাত নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র প্রভূতিকে দলিল হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
আইনের সংজ্ঞাটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
“দলিল” অর্থে ভূমির মালিকানা হস্তান্তর বা বন্টনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত বা কৃত যে কোনো দলিল, বায়না দলিল, রসিদ, আম মোক্তারনামা, নকশা, স্কেচ ম্যাপ, হাত নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র, এফিডেভিট এবং এতদসংক্রান্ত অন্য কোনো দলিলও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে,
তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়।
আসুন এবার আমরা সরাসরি ধারা ভিত্তিক ব্যাখায় চলে যায়ঃ
ধারা ৩ঃ
৩। এই আইনের বিধানাবলির অতিরিক্ততা। এই আইনের বিধানাবলি অন্যান্য আইনের কোনো বিধানের ব্যাত্যয় না হইয়া উহার অতিরিক্ত হইবে।
ব্যখ্যা/আলোচনাঃ এটি বিদ্যমান ভূমি সংক্রান্ত আইন সমূহের একটি অতিরিক্ত বিধান হিসাবে গণ্য হবে। এই আইনের বিধান অন্য কোন আইনের বিধানকে ব্যাত্যয় না ঘটিয়ে সহায়ক ভূমিকায় থাকবে।
ধারা ৪ঃ
৪। ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড:
(১) ভূমি জরিপ, রেকর্ড হালনাগাদকরণ বা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিম্নবর্ণিত কোনো কার্য ভূমি প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে, যথা:-
(ক) অন্যের মালিকানাধীন ভূমি স্বীয় মালিকানাধীন ভূমি হিসাবে প্রচার করা;
(খ) তথ্য গোপন করিয়া কোনো ভূমি, সম্পূর্ণ বা উহার অংশবিশেষ, কোনো ব্যক্তি বরাবর হস্তান্তর বা সমর্পণ করা।
(গ) স্বীয় মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি, তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হইয়া, কোনো ব্যক্তি বরাবর হস্তান্তর বা সমর্পণ করা।
(ঘ) কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি বলিয়া মিথ্যা পরিচয় প্রদান করিয়া বা জ্ঞাতসারে এক বাক্তিকে অপর ব্যক্তিরূপে প্রতিস্থাপিত করিয়া কোনো ভূমি সম্পূর্ণ বা উহার অংশবিশেষ হস্তান্তর বা সমর্পণ করা:
(ঙ) মিথ্যা বিবরণ সংবলিত কোনো দলিল স্বাক্ষর বা সম্পাদন করা।
(চ) কর্তৃপক্ষের নিকট মিথ্যা বা অসত্য তথ্য প্রদান করা; এবং
(ছ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো কার্য সম্পাদন।
(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটন করিলে তজ্জন্য তিনি। অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদর ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ব্যখ্যা/আলোচনাঃ
এই ধারার সহজ কথা হলো অন্যের মালিকানাধীন ভূমি স্বীয় মালিকানাধীন ভূমি হিসাবে প্রচার করলে এবং তথ্য গোপন করে হস্তান্তর করলে বা যতটুকু মালিকানায় নেই তার বেশী হস্তান্তর করলে বা কোন প্রকার ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও হস্তান্তর দলিল করলে, নিজেকে অপর ব্যক্তি হিসাবে মিথ্যা পরিচয়ে দলিল সম্পাদন করলে বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোন মিথ্যা তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদন্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। মানে এর সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং আদালত জরিমানাও করতে পারবে। এই ধারায় অপরাধ করলে থানায় সরাসরি মামলা করা যাবে , থানা মামলা না নিলে সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শরণাপন্ন হওয়া যাবে (সি আর মামলা করা যাবে)। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে মামলাটি তদন্তে পাঠাতে পারেন কিংবা সরাসরি সমন/ওয়ারেন্ট দিতে পারেন। এই ধারায় অপরাধ জামিন অযোগ্য মর্মে বিবেচিত হইবে এবং এই ধারায় দায়েরকৃম মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করিতে হইবে।
ধারা ৫ঃ
৫। ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড :
(১) ভূমি হস্তান্তর, জরিপ, রেকর্ড হালনাগাদকরণ বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নিম্নবর্ণিত কোনো কার্য ভূমি জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে,
(ক) কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করিবার বা কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করিবার অথবা কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ বা চুক্তি সম্পাদন করিতে বাধ্য করিবার অথবা প্রতারণা করা যাইতে পারে এইরূপ অভিপ্রায়ে কোনো মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুতকরণ;
(খ) কোনো দলিল বা উহার অংশবিশেষ এইরূপ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার কর্তৃত্ববলে প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সিলমোহরকৃত বা সম্পাদিত বলিয়া বিশ্বাস করিবার অভিপ্রায়ে, যে ব্যক্তি কর্তৃক বা যে ব্যক্তির কর্তৃত্ববলে উহা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সিলমোহরকৃত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জ্ঞাত বা অবগত, অথবা এইরূপ কোনো সময় উহা প্রস্তুত, স্বাক্ষরিত, সিলমোহরকৃত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জাত বা অবগত, অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে অনুরূপ দর্পন বা উহার অংশবিশেষ প্রস্তুত, স্বাক্ষর, সিলমোহর বা সম্পাদন;
(গ) কোনো দলিল সম্পাদিত হইবার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব বাতিরেকে, অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে, উহার কোনো অংশ কর্তন করা বা অন্য কোনোভাবে উহার কোনো গুরুত্বপূর্ণ অংশের পরিবর্তন;
(ঘ) সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুতকরণ;
(ঙ) অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিল স্বাক্ষর, সিলমোহর, সম্পাদনা বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করা।
(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটন করিলে তজ্জন্য তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ব্যখ্যা/আলোচনাঃ
৪ ধারায় আলোচনা করা হয়েছিল সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রতারণার বিষয় নিয়ে আর এই ধারার বিষয়বস্তু হলো ভূমি হস্তান্তর, জরিপ, রেকর্ড হালনাগাদকরণ বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয় নিয়ে। সহজ কথা হলো কাউকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার বা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে জাল দলিল বা দলিলের অংশ তৈরী করা হলে এবং এমনকি কাউকে অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিল স্বাক্ষর, সিলমোহর, সম্পাদনা বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদন্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। মানে এর সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং আদালত জরিমানাও করতে পারবে। এই ধারায় অপরাধ করলে থানায় সরাসরি মামলা করা যাবে , থানা মামলা না নিলে সংশ্লিষ্ট এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শরণাপন্ন হওয়া যাবে (সি আর মামলা করা যাবে)। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে মামলাটি তদন্তে পাঠাতে পারেন কিংবা সরাসরি সমন/ওয়ারেন্ট দিতে পারেন। এই ধারায় অপরাধ জামিন অযোগ্য মর্মে বিবেচিত হইবে এবং এই ধারায় দায়েরকৃম মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে সমাপ্ত করিতে হইবে।
ধারা ৬ঃ
৬। ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতি সংক্রান্ত অপরাধ রোধে ব্যবস্থাঃ
(১) এই আইন বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীন দায়েরকৃত মামলায় কোনো দলিল প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত বা প্রস্তুতকৃত মর্মে প্রমাণিত হইলে, সংশ্লিষ্ট আদালত উক্ত মামলার রায় বা আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করিয়া উহা প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত বা প্রস্তুতকৃত মর্মে সংশ্লিষ্ট নথি, রেজিস্টার বা রেকর্ডপত্রে লিপিবন্ধ করিবার আদেশ প্রদান করিবেন ।
(২) ভূমি হস্তান্তর, জরিপ, রেজিস্ট্রেশন, রেকর্ড হালনাগাদকরণ বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে প্রদর্শিত বা উপস্থাপিত কোনো দলিল বা তথ্য ভূমি বিষয়ক প্রতারণা বা জালিয়াতি করা হইয়াছে মর্মে বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করিয়া উহা বিচারার্থ উপযুক্ত ফৌজদারি আদালতে প্রেরণ করিবে।
(৩) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির নামে ভূমির State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকিলে এবং অনুরূপ খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণক প্রদর্শনে ব্যর্থ হইলে, তিনি উক্ত ভূমি কিনা, দান, হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল রেজিস্ট্রেশন করিতে পারিবেন না।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
এই ধারায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এসেছে। এখানে বলা হচ্ছে আইনের ৪ এবং ৫ ধারায় মামলা করার পর আদালতের নিকট যদি কোনো দলিল প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজিত বা প্রস্তুতকৃত মর্মে প্রমাণিত হইলে তার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালত আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে (ডিসি/রেজিস্ট্রার) বরাবরে পাঠাবে এবং সেই আলোকে সংশ্লিষ্ট নথি, রেজিস্টার বা রেকর্ডপত্রে সংশোধন আসবে।
এবং কেউ যদি ভূমি হস্তান্তর, জরিপ, রেজিস্ট্রেশন, রেকর্ড হালনাগাদকরণ বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে কোন অফিসে এমন কোন জাল দলিল বা প্রতারণামূলক দলিল প্রদর্শন করেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস উক্ত বিষয় বিচারের জন্য ফৌজদারি আদালতে প্রেরণ করিতে পারিবে। মানে, মামলা করার সুপারিশ আদালতে পাঠাতে পারবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আপনার নামে হালনাগাদ রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি বিক্রয়, দান, হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল রেজিস্ট্রেশন করিতে পারিবেন না। আগে বিক্রি না করা গেলেও দান/হেবা এসব করে হস্তান্তর করা যেত। এখন এসব করতে হলে আগে রেকর্ড সংশোধন করে আসতে হবে।
ধারা ৭ঃ
৭। অবৈধ দখল প্রতিরোধ ও দণ্ড:
(১) State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান মালিক অথবা তাহার নিকট হইতে উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে মালিকানা বা দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হইলে, কোনো ব্যক্তি উক্ত ভূমি স্বীয় দখলে রাখিতে পারিবেন না।
(২) আইনানুগভাবে দখলের অধিকারপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে উপযুক্ত আদালত বা কর্তৃপক্ষের আদেশ ব্যতীত তাহার দখলীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করা যাইবে না এবং তাহাকে উক্ত ভূমির দখল বা উহাতে প্রবেশে বাধা প্রদান করা যাইবে না।
(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) বা (২) এর বিধান লংঘন করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, উত্তারাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা বা অন্য কোনো কার্যধারা দায়ের করিয়া থাকিলে তাহার উক্ত কার্য এই ধারার অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
ব্যাখ্যা ও আলোচনাঃ
এটি একটি ভয়ংকর ধারা। এখানে বলা হচ্ছে আপনার নামে রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। তবে , উত্তারাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা করলে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
এখানে হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে বিষয় বিধায় এই ধারা কতটুকু কার্যকর করা যাবে তা চিন্তার বিষয়। অপরদিকে, এই ধারায় কোন অপরাধ সংগঠিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং জরিমানাও করতে পারবে। সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হলো, এই বিচার টা সরাসরি মোবাইল কোর্ট দ্বারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও করতে পারবে। এখন মোবাইল কোর্টের বিচার দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বা স্বীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদ হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রক্ষান্তরে, সঙ্গবদ্ধ ভূমি দস্যু বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরার প্রয়োগ করে ভূমি দখলের একটা অঘোষিত লাইসেন্স পেয়ে যেত পারে!
ধারা ৮ঃ
৮। অবৈধভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার:
(১) কোনো ব্যক্তিকে উপযুক্ত আদালত বা কর্তৃপক্ষের আদেশ ব্যতীত তাহার দখলীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করা হইলে, তিনি দখল পুনরুদ্ধার করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করিতে পারিবেন।
(২) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আইনানুগ প্রক্রিয়া ব্যতীত উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করা হইয়াছে মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, তাহাকে তাহার পূর্ব- দখলীয় ভূমিতে দখল পুনর্বহাল করিবার নিমিত্ত | যথাযথ আদেশ প্রদান ও এতদুদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার জন্য, উভয়পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ ও সরেজমিন তদন্ত করিতে হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, যথাযথভাবে নোটিশ জারি করা সত্ত্বেও কোনো পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত থাকিলে সরেজমিনে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান করিবার পর লিখিত আদেশ প্রদান করা যাইবে।
(৪) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো আবেদন প্রাপ্তির পর হইতে ৩(তিন) মাসের মধ্যে উহার নিষ্পত্তি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, দখল পুনরুদ্ধার করিতে হইবে এবং কোনো কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ উহাতে অসহযোগিতা বা অবহেলা করিলে তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে।
(৫) উপ-ধারা (১) এর অধীন সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি নিজে বা তদকর্তৃক নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করিতে পারিবেন।
(৬) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সংশ্লিষ্ট জেলার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণের মধ্যে দায়িত্ব কটন বা অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করিয়া আদেশ জারি করিতে পারিবেন।
(৭) কোনো দেওয়ানি আদালতে দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোনো মামলা বিচারাধীন থাকিলে একই বিষয়ে এই ধারার অধীন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না:
তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত আদালত তাহার নিকট দায়েরকৃত বা বিচারাধীন কোনো মামলা উহার কোনো পক্ষের আবেদনক্রমে বা স্বীয় বিবেচনায় এই ধারার অধীন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে।
(৮) এই ধারার অধীন ব্যবস্থা গ্রহণের অন্যান্য পদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত Code of Civil Procedure, 1908 (Act No. V of 1908) এর section 145 এর বিধান অনুসরণ করিয়া ব্যবস্থা সহ্য করা যাইবে।
ব্যাখ্যা ও আলোচনাঃ
এই ধারায় মূলত কেউ বেআইনীভাবে দখলচ্যুত হলে কিভাবে প্রতিকার পাবেন তা বলা হয়েছে। যা অনেকটা এখন ফৌজদারি কার্য
বিধির ১৪৫ ধারায় গৃহিত পদক্ষেপের মতো। এখানে বলা হয়েছে আদালত কা কর্তৃপক্ষের আদেশ ব্যাতিত দখলচ্যুত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। "কর্তৃপক্ষ" অর্থে জেলা প্রশাসক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদালত বা অন্য কোনো কর্মকর্তাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে মর্মে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে ক্ষমতাটা মূলত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রয়োগ করবেন এবং সরজমিনে তদন্ত ও পক্ষগণকে শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেজন্য নোটিশ দিতে হবে। তবে, দেওয়ানি আদালতে দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোনো মামলা বিচারাধীন থাকিলে এইটা প্রয়োগ করা যাবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি নিজে বা তদকর্তৃক নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করিতে পারিবেন। কোন ব্যক্তি শব্দটি দ্বারা বিভিন্ন দালাল, টাউট, প্রতারক চক্রকে শুনানী করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিজ্ঞ আইনজীবী শব্দটা আসাটা জরুরি ছিল। আইন পেশাকে শ্রদ্ধা করে বা আইননাঙ্গনের সহিত সম্পৃক্ত অভিজ্ঞ কোন প্রফেশনাল ব্যক্তি যে ড্রাফটির সহিত যে জড়িত ছিলেন না এটি তারই প্রমাণ বহন করে।
ধারা ৯ঃ
৯। ক্রেতা বরাবর বিক্রিত ভূমির দখল হার না করিবার দন্ড:
বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত মুলোর সম্পূর্ণ অর্থ বিক্রেতা বরাবর পরিশোধ করা সত্ত্বেও যদি তিনি, যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত, ক্রেতা বরাবর উক্ত ভূমির দখল হস্তান্তর না করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ বায়না করার পর ক্রেতা টাকা দেওয়ার পরও বা সাফ কবলা করার পর সমস্ত টাকা দেওয়ার পরও দখল না দিলে ২ বছরের সাজা হবে সাথে জরিমানাও। মোবাইল কোর্ট বসিয়েও এটার বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আগে যেখানে বিক্রির পর দখল বুঝিয়ে না দিলে মামলা করলে বছরের পর বছর ঘুরতে হতো এটা দ্বারা তার তড়িৎ সমাধান হবে মর্মে আশা করা যাচ্ছে।
ধারা ১০ঃ
১০। সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধনের দন্ড:
যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির আইনানুগভাবে দখলকৃত ভূমির সীমানা বা সীমানা চিহ্নের ক্ষতিসাধন করেন অথবা এইরূপ কোনো কার্য করেন যাহাতে উক্ত ভূমি অথবা উহাতে অবস্থিত স্থাপনা, বৃক্ষ, ফসলের কোনো ক্ষতি সাধিত হয়, তাহা হইলে অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
পরিস্কার আলোচনা। কারো সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করলে ২ বছরের সাজা হবে সাথে জরিমানাও। মোবাইল কোর্ট বসিয়েও এটার বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ধারা ১১ঃ
১১। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোনো কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধনের দন্ড:
যদি কোনো ব্যক্তি সরকারি, আধা- সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য কোনো ভূমি অবৈধ উপায়ে দখল বা উহাতে প্রবেশ করেন বা কোনো স্থাপনা বা কাঠামো নির্মাণ করেন অথবা উক্ত ভূমি বা উহার কোনো স্থাপনা, বৃক্ষ বা সীমানা চিহ্নের কোনো ক্ষতিসাধন করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোনো কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধন করলে ২ বছরের সাজা হবে সাথে জরিমানাও। মোবাইল কোর্ট বসিয়েও এটার বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ধারা ১২ঃ
১২। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধ ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন, ইত্যাদির দন্ডঃ
যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য কোনো ভূমি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ভরাট করিয়া উহার শ্রেণি বা প্রকৃতি পরিবর্তন করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন ।
তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ কোনো কার্য দ্বারা স্থায়ীভাবে পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হইলে উহা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ( ১৯৯৫ সনের ১নং আইন) অনুযায়ী বিচারযোগ্য হইবে।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ বক্তব্য ক্লিয়ার, ব্যাখ্যার প্রয়োজন মনে করিছি না।
ধারা ১৩ঃ
১৩। মাটির উপরি-স্তর কর্তনের দন্ডঃ
যদি কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিরেকে আবাদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমির উপরি-স্তর কর্তন করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনুধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদর ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন । তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তি তাহার বসতবাড়ি নির্মাণ বা স্বীয় প্রয়োজনে স্বীয় মালিকানাধীন ভূমি হইতে সীমিত পরিসরে, জমির উর্বরতার ক্ষতিসাধন না করিয়া, ভূমি কর্তন বা উত্তোলন করিলে উহা এই ধারার অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
এই ধারায় কঠোর একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এই ধারার প্রয়োগ হলে ইটভাটা গুলো সংকটে পড়ে যাবে। একদিকে ইটভাটা চালু রাখা অন্যদিকে এই ধারার প্রয়োগ করতে গেলে বিষয় দুটো বিপরীতমুখী হয়ে যাবে। আবদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমি নিজের মালিকানাধীন হলেও ডিসির অনুমতি নিতে হবে। এমনকি বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য বা ভরাটের জন্য সীমিত পরিসরে মাটি উত্তোলন করা যাবে। এখন সীমিত পরিসরের সীমা কতটুকু তা উল্লেখ করা হয় নি বিধায় বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে গেল। এই ধারায় অপরাধ করলে করলে ২ বছরের সাজা হবে সাথে জরিমানাও। মোবাইল কোর্ট বসিয়েও এটার বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
ধারা ১৪ঃ
১৪। অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা :
(১) যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১১ বা ১২ এ বর্ণিত অপরাধমূলক কোনো কার্য করেন, তাহা হইলে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট ভূমি হইতে বেআইনী দখল স্থাপনা, প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করিতে এবং উরু ভূমিকে উহার পূর্বের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে যথাযথ আদেশ প্রদান ও এতদুদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন।
(২) এই ধারার অধীন ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে ।
তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত Government and Local Authority Lands and Buildings Recovery of Possession) Ordinance, 1970 (Ordinance No. XXIV of 1970) এর বিধান অনুসরণ করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ বক্তব্য ক্লিয়ার, ব্যাখ্যার প্রয়োজন মনে করিছি না।
ধারা ১৫ঃ
১৫। আদেশ অমান্যে দন্ড:
যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৮ বা ধারা ১৪ এর অধীন প্রদত্ত কোনো আদেশ ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য বা লংঘন করেন বা উহা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন, তাহা হইলে উক্তরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ধারা ১৬ঃ
১৬। অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনার দত্ত। যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনে বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা প্রদান করেন তাহা হইলে উত্তৰূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ, এবং তাজন্য তিনি প্রকৃত অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ধারা ১৭ঃ
১৭। অপরাধ পুনাসংঘটনের দন্ড:
আইনের কোনো ধারার অধীন কোনো ব্যক্তি দোষী। সাব্যস্ত হইয়া সাজাপ্রাপ্ত হইলে এবং পরবর্তীতে একই অপরাধ পুনঃসংঘটন করিলে তিনি যে ধারায় ইতিপূর্বে দোষী সাব্যস্ত হইয়াছেন উক্ত ধারায় নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ পরিমাণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
ধারা ১৮ঃ
১৮। কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন:
এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি কোনো কোম্পানি বা ফার্ম হইলে, তাহা বাংলাদেশে নিগমিত (incorporated) হউক বা না হউক, উক্ত কোম্পানির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোন কর্মকর্তা উক্ত অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হইবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্তরূপ অপরাধ সংঘটন তাহার অজ্ঞাতসারে হইয়াছে অথবা উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
কোন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোন কর্মকর্তা আইনের অধীনে কোন অরাধ করিলে তারা উক্ত অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন। মানে কোম্পানীর মালিক/পরিচালক বা প্রতিষ্ঠানের কর্তা বা কর্মকর্তা
হিসেবে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তবে, তারা যদি প্রমাণ করতে পারেন তাদের অজ্ঞাতসারে হইয়াছে অথবা উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন তাহলে মাফ পাবেন। মানে আইনের একটা ফাঁক তাদের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে কারণ আইনের এই ধারার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এলিটদের স্বার্থ জড়িত! কর্পোরেট ভূমি দস্যুরা এর ফায়দা নিবেই।
ধারা ১৯ঃ
১৯। অপরাধের বিচার –
(১) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ আমলযোগ্য (cognizable), ধারা ৪ ও ৫ এ বর্ণিত অপরাধ অজামিনযোগ্য (non-bailable), অন্যান্য ধারায় বর্ণিত অপরাধ জামিনযোগ্য এবং আপোষযোগ্য (compoundable) হইবে।
(২) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে ।
(৩) এই আইনের অধীন অপরাধের বিচার মামলা প্রাপ্তির তারিখ হইতে ১৮০ (একশত আশি) দিনের মধ্যে সমাপ্ত করিতে হইবে।
(৪) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন অপরাধের বিচার ও আপিলের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
ধারা ২০ঃ
২০। ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার :
(১) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের বিচারকালে যদি কোনো ফৌজদারি আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ব্যক্তির অনুকূলে দখল অর্পণ করা আবশ্যক, তাহার হইলে আদালত তদ্ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অন্য বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে।
(২) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের বিচারকারী ফৌজদারি আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, সংঘটিত অপরাধের ফলশ্রুতিতে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে, তাহা হইলে উক্ত আদালত অপরাধীর নিকট হইতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করিয়া ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রদানের আদেশ প্রদান করিতে ও এতদুদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করিতে পারিবে।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
এখানে বিচারকালেই আদালতকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার একটা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আদালত যদি মনে করেন , বিচার নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে সেক্ষেত্রে অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিচার চলাকালেই উপযুক্ত ব্যক্তির অনুকূলে দখল অর্পণ করার জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন। যদিও আইনে বলা হয়েছে এই আইনের অধীন অপরাধের বিচার মামলা প্রাপ্তির তারিখ হইতে ১৮০ (একশত আশি)। দিনের মধ্যে সমাপ্ত করিতে হইবে কিন্তু বাস্তবে তা অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব এবং ১৮০ দিনের বিষয়টি নির্দেশনামূলক। তাই জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে এই ব্যবস্থা। যা অনেকটা দেওয়ানী মামলার নিষেধাজ্ঞার মতো। তবে, বিচার নিষ্পত্তি না করে দখল অর্পণের প্রক্রিয়াটা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিচার শেষে আদালত ক্ষতিপূরণও করতে পারেন মের্মে ক্ষমতা এই ধারায় দেওয়া হয়েছে। তার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি কিন্তু উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে পারবেন আদালত।
ধারা ২১ঃ
২১। সাক্ষীর সুরক্ষাঃ
ফৌজদারি আদালত সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে বা স্বীয় বিবেচনায় বিচারাধীন মামলার বাদী বা কোনো সাক্ষীকে নিরাপত্তা বা সুরক্ষা প্রদানে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান ও ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
মামলার অবস্থা বুঝে সংশ্লিষ্ট পক্ষ সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবেন আবার আদালতও নিজ বিবেচনায় মনে করলে সাক্ষীর সুরক্ষা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। এটি মামলার বিচার কার্যকে সিহজতর করবে এবং সাক্ষীদের সুরক্ষা আইনের ভালো একটি দিক।
ধারা ২২ঃ
২২। মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচার্য এই আইনের ধারা ৪,৫.১৫ এ বর্ণিত অপরাধ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নং আইন) এর তফসিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে, মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচার্য হইবে।
ধারা ২৩ঃ
২৩। ভূমির তথ্য সম্বলিত সমন্বিত ডাটাবেজ প্রস্তুতকরণ :
(১) সরকার, সরকারি স্বার্থযুক্ত, দেওয়ানি মোকদ্দমাভুক্ত, ফৌজদারি মামলা ও সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ। বা দায়বদ্ধ জমির তথ্য এবং ভূমি নিবন্ধন, জরিপ, রেজিস্ট্রেশন ও রেকর্ড হালনাগাদকর সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি ও যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে আন্তঃ ব্যবহারযোগ্য সমর্থিত ডাটাবেজ প্রস্তুত করিবে।
(২) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষসমূহ উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
ভূমির তথ্য সম্বলিত সমন্বিত ডাটাবেজ এটি অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ এবং ভূমির জটিলতা নিরসনে সহায়ক হবে।
ধারা ২৪ঃ
২৪। সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তাঃ
(১) এই আইনের অধীন ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিবে।
(২) কর্তৃপক্ষ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনবোধে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এজেন্সি বা কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে এক বা একাধিক দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য নিয়োগ করিতে পারিবে।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন নিয়োগের উদ্দেশ্যে আবশ্যকীয় খরচের পরিমাণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হইবে, যাতা প্রতিকার প্রার্থী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা অন্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদেয় হইবে।
ব্যখ্যা/আলোচনাঃ
ধরুন আপনি দখল পাওয়ার আদেশ ফেলেন। সেক্ষেত্রে চাহিদা মোতাবেক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিবে কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক। তবে, এর খরচ আপনাকেই/বিচারপ্রার্থীকেই দিতে হবে এবং কত খরচ হকব তা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত করবে। আর আগেই বলেছি আইনের সংজ্ঞা মোতাবেক "কর্তৃপক্ষ" অর্থে জেলা প্রশাসক, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ক্ষমতাপ্রাপ্ত আদালত বা অন্য কোনো কর্মকর্তাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।
এই ধারার বিধানের আলোকে অসহায় মানুষের জন্য আইনী প্রতিকার পাওয়াটা একটু দুরূহ হয়ে পড়বে। যার ফলে ভূমি দস্যুদের নিবারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
ধারা ২৫ঃ
২৫। অস্পষ্টতা দূরীকরণ এই আইনের কোনো বিধানের অস্পষ্টতার কারণে উহা কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার, আইনের অন্যান্য বিধানের সহিত সামজস্য রাখিয়া উক্ত অসুবিধা দূরীকরণার্থ আদেশ দ্বারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
ধারা ২৬ঃ
২৬। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাঃ
এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে, তবে বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকার আদেশ দ্বার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
ব্যাখ্যা/আলোচনাঃ
আইনের প্রয়োগিক বিষয়গুলো বিধিতেই ইল্লেখ থাকে। বিধি ছাড়া অস্পষ্টতা দূরীকরণ বা প্রয়োগিক বিষয়গুলো সুষ্পষ্ট হয় না । তাই সরকার আইনের কার্যকরিতা নিশ্চিত করার জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারবে এবং বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকার আদেশ দ্বার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
ধারা ২৭ঃ
২৭। ইংরেজিতে অনুদিত পাঠ প্রকাশ :
(১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, যথাশীঘ্র সম্ভব, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞান দ্বারা এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনুদিত একটি নির্ভরযোগ্য। পাঠ প্রকাশ করিবে।
(২) বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে, বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।
আইনজীবী হিসেবে আমার সর্বশেষ মতামত/পরামর্শঃ
ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর বিলটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে, আইনটি অনেকটা তড়িগড়ি করে এবং অনেক বিষয়ের সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি। আশাকরি বিধিতা তা সুষ্পষ্ট করা হবে। তবে, আইনটির ড্রাফট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতার পাশাপাশি অভিজ্ঞ বিজ্ঞ আইনজীবীদের প্যানেলে রাখা হলে বাস্তবতার আলোকে আরো ভালো ফলাফল আসতে পারে। এই আইনে মোবাই্ল কোর্টের বিধান রাখার মাধ্যমে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ এর দ্বারা কতটুকু সুবিধে পাবে তা বিবেচনার বিষয় রয়েছে। দলিলের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে মালিকানার জটিলতা নিরসন বা সিদ্ধান্ত প্রদান বরাবরেই সময় সাপেক্ষে বিষয় হয়ে পড়বে। আইনের ৭ ধারাটি একটি ভয়ংকর ধারা। ওই ধারায় বলা হচ্ছে আপনার নামে রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। এই ক্ষেত্রে মূল মালিকও দখলচ্যুত হতে পারেন। কারণ, ভূমি রেকর্ড প্রক্রিয়াটিই ১০০% স্বচ্ছ নয়। ১৩ ধারারও অপ্রপ্রয়োগ হতে পারে কিংবা প্রয়োগটা কঠিন হতে পারে। এই ধারায় কঠোর একটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এই ধারার প্রয়োগ হলে ইটভাটা গুলো সংকটে পড়ে যাবে। একদিকে ইটভাটা চালু রাখা অন্যদিকে এই ধারার প্রয়োগ করতে গেলে বিষয় দুটো বিপরীতমুখী হয়ে যাবে। আবদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমি নিজের মালিকানাধীন হলেও ডিসির অনুমতি নিতে হবে। এমনকি বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য বা ভরাটের জন্য সীমিত পরিসরে মাটি উত্তোলন করা যাবে। এখন সীমিত পরিসরের সীমা কতটুকু তা উল্লেখ করা হয় নি বিধায় বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে গেল। ১৮ ধারায় কোন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোন কর্মকর্তা আইনের অধীনে কোন অপরাধ করিলে তারা উক্ত অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন। মানে কোম্পানীর মালিক/পরিচালক বা প্রতিষ্ঠানের কর্তা বা কর্মকর্তা হিসেবে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তবে, তারা যদি প্রমাণ করতে পারেন তাদের অজ্ঞাতসারে হইয়াছে অথবা উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন তাহলে মাফ পাবেন। মানে আইনের একটা ফাঁক তাদের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে কারণ আইনের এই ধারার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এলিটদের স্বার্থ জড়িত! কর্পোরেট ভূমি দস্যুরা এর ফায়দা নিবেই। ২০ ধারায় বিচারকালেই আদালতকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার একটা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আদালত যদি মনে করেন , বিচার নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে সেক্ষেত্রে অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিচার চলাকালেই উপযুক্ত ব্যক্তির অনুকূলে দখল অর্পণ করার জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন।যা অনেকটা দেওয়ানী মামলার নিষেধাজ্ঞার মতো। তবে, বিচার নিষ্পত্তি না করে দখল অর্পণের প্রক্রিয়াটা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ২৪ ধারায় বিচারপ্রার্থীর উপর একটা খরচ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে রায় পেলেও তা বাস্তবায়নের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের খরচ বিচারপ্রার্থীকেই দিতে হবে এবং কত খরচ হবে তা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত করবে। এই ধারার বিধানের আলোকে অসহায় মানুষের জন্য আইনী প্রতিকার পাওয়াটা একটু দুরূহ হয়ে পড়বে। যার ফলে ভূমি দস্যুদের নিবারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। আর পুলিশ এই আইনের অধীন একটি বিশাল সুবিধে পেতে যাচ্ছে কারণ, আইনের বিধান মোতাবেক এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ আমলযোগ্য (cognizable) অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এখন ভূমি জটিলতা নিয়েও পুলিশ থানায় মামলা করার অবারিত সুযোগ পাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ কতটুকু সুবিধা পাবে তা নিয়ে ভাবার বিষয় রয়েছে। তবুও, নাগরিকগণের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলসহ প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধসমূহ প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহে লক্ষ্যে উক্ত আইন পজিটিভ ভূমিকা রাখবে মর্মে আমরা আশা করতেই পারি!
- - মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)
লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৬
এম টি উল্লাহ বলেছেন: এখনও মতামত প্রকাশের সুযোগ আছে এবং বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। আইনটি সংসদে পাশ হয় নি এখনো
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫
শাহ আজিজ বলেছেন: বিশাল পোস্ট , প্রিয়তে নিলাম পড়ে পড়ব ।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৪
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।
৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১৪
রানার ব্লগ বলেছেন: পোস্ট টি প্রীয় তে রাখলাম । আমি জমির মালিকানাগত ঝামেলায় দ্বির্ঘ ২৮ বছর ধড়ে ঝুলছি ।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৪
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৪
দারাশিকো বলেছেন: আইনের খসড়া প্রকাশের পর মতামত জানানোর আহবান জানানো হয়। আপনার মতামত সেখানে দিয়েছিলেন/দিতে পারেন।
একটা প্রশ্ন ছিল: জমি মাপজোকের ক্ষেত্রে জিপিএস ব্যবহার করা হয় না কেন? কোন দেশে কি ব্যবহার করা হয়? আমার তো মনে হয় জিপিএস দিয়ে জমি চিহ্নিত করা গেলে শুধু জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে তাই না, নগরায়ন সহ জমি সংক্রান্ত আরও বহু সমস্যার দ্রুত সমাধাণ করা সম্ভব হবে।