নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
আত্মরক্ষার অধিকার (Right of Private Defence) আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। একজন ব্যক্তি তার শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো কাজ করলে তা আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এ কাজ করতে গিয়ে কারো কোনো ক্ষতি হলে আইনের চোখে অপরাধ না। আইনানুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে কোনো কাজ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এ 'সাধারণ ব্যতিক্রম' ( General Exception) পরিচ্ছেদে (৯৬-১০৬ নং ধারা) বর্ণিত বিশেষ ব্যক্তি অধিকার যা দ্বারা কেউ নিজের বা অপরের শরীরের আঘাত, অনিষ্ট, বা অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ প্রতিরোধে অথবা নিজের বা অপরের সম্পত্তি রক্ষার্থে বল প্রয়োগ করতে পারে। এই অধিকার প্রয়োগে অপরাধীর কোনো ক্ষতি হলে ৯৯ নং ধারা ব্যতিক্রম সাপেক্ষ তা আইনের চোখে অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ক্ষতিসাধনকারী কাজটি একটি অপরাধ হতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে যদি অপরাধ না হয় তবে এ ধারায় অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না
আত্মরক্ষার অধিকার (Right to Self Defence or private defence):
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৯৬-১০৬ অনুযায়ী যদি কোন বেআইনী আক্রমন হতে নিজের দেহ, সম্পত্তি বা অন্য কারো দেহ বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য কোন অপরাধ করে তা দন্ডবিধি অনুযায়ী অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না অর্থাৎ কোন শাস্তি পেতে হবে না
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৯৬ ধারা – আত্মরক্ষার করতে গিয়ে করা কাজ –
➡আত্মরক্ষা অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে কোনও কাজই একটি অপরাধ নয়।
৯৭ ধারা – শরীর ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার –
➡এই আইনের ৯৯ ধারায় যা বলা আছে সেই ব্যতিক্রম সাপেক্ষ – প্রত্যেক ব্যক্তি –
প্রথমত: নিজের শরীর বা অপরের শরীরকে , মানুষের দেহের/শরীরে ক্ষতি-সাধনকারী যে কোনও অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: – নিজের বা অপরের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকে চুরি (theft), দস্যুতা(robbery), অনিষ্টসাধন (mischief) বা অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ (criminal trespass)-এর অপরাধ বা ঐ সমস্ত অপরাধের চেষ্টা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে।
৯৮ ধারা – যে কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না তার বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা চলে –
➡যখন কোন কাজ যা অন্য ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোন অপরাধ হত, কিন্তু তা কোন শিশু, বুঝতে অপরিপক্ব কোন ব্যক্তি, বিকৃত মস্তিষ্ক কোন ব্যক্তি বা মদমত্ত কোন ব্যক্তি অথবা ভুল ধারণার বশবর্তী কোন ব্যক্তির দ্বারা করা হয়ে থাকলে অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না – সেই রকম কাজের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে – যে আত্মরক্ষার অধিকার ঐ কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হলে প্রয়োগ করে যেত।
▶উদাহরণ ১ – একজন পাগল এক পথচারীকে লাঠি দিয়ে মারতে গেল। পাগল বলে তার এই কাজ ৮৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না ঠিকই, কিন্তু তা হলেও সেই পথচারী পাগলটির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে তার ক্ষতিসাধন করতে পারবে। এক্ষেত্রে পথচারী কোনও অপরাধ করছে না।
▶উদাহরণ ২ – কোন যুবক গভীর রাতে বৃদ্ধ বাবা-মা যাতে না জেগে ওঠে তাই লুকিয়ে লুকিয়ে বাড়িতে ঢুকছিল। বাড়ির দারোয়ান যুবকটিকে চোর মনে করে আঘাত করতে উদ্যত হল। বৃত্তান্ত/তথ্য-ঘটিত ভুলে জন্য দারোয়ানের এই কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না, তবুও যুবকটি দারোয়ানের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
৯৯ ধারা – যে কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায় না -
(১) যদি কোনও লোক তার দপ্তরের ক্ষমতা বলে কোন কাজ সদ্ভাবে (in good faith) করেন বা করার উদ্যোগ নেন এবং সেই কাজের ফলে যদি কারোর যথাযথ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত পাবার আশঙ্কা না জন্মায় তবে ঐ কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না ➡যদিও কাজটির মধ্যে আইনের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেও থাকে।
▶[দৃষ্টান্ত – দুজন পুলিশ কনস্টেবল তাদের পরিচয় দিয়ে রাম নামে এক আসামীকে ধরতে গেল। রাম ধরা না দেবার জন্যে পালাবার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে উদ্যত হল। পুলিশ দুজনের বিরুদ্ধে রামের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করার কোনও অধিকার থাকবে না।
▶অন্যপক্ষে, ঐ দুজন পুলিশ যদি সাদা পোষাকে ঐ আসামীকে ধরতে যায় এবং আসামী তাদের পুলিশ বলে (অর্থাৎ লোকসেবক বলে) চিনতে না পেরে মারধর করে তবে আসামীর কোনও অপরাধ হবে না, কারণ আসামী আত্মরক্ষার অধিকার পাবে।]
(২) যদি কোন লোকসেবক তার দপ্তরের ক্ষমতাবলে সদ্ভাবে কোন কাজ করতে নির্দেশ দেয় এবং সেই নির্দেশের বলে কোন কাজ করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়, তবে নির্দেশটিতে আইনের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকলেও সেই কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না - যদি না সেই কাজ থেকে যথাযথ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা জন্মায়।
[দৃষ্টান্ত – দুজন পুলিশ কনস্টেবল ওয়ারেন্ট-বলে একজন আসামীকে ধরতে গেল। আসামী ওয়ারেন্টে আদালতের সিলমোহর দেখতে না পেয়ে গ্রেপ্তারবরণ করতে রাজি হল না। পুলিশ জোর করে ধরতে গেলে, আসামী তাদের মারধোর করল। এখানে আসামী আত্মরক্ষার অধিকার পাবে না, কারণ ওয়ারেন্টটি পুরোপুরি আইন সম্মত না হলেও একেবারে বে-আইনীও ছিল না।]
(৩) যদি সরকারী কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত রক্ষামূলক প্রতিকার পাবার মত সময় থাকে, তবে সেক্ষেত্রে কোন অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
▶[দৃষ্টান্ত – একটি ক্লাবঘর থেকে থানার দূরত্ব মাত্র আধ মাইল । হঠাৎ খবর এলো তিন মাইল দূর থেকে অন্য ক্লাবের একদল ছেলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসছে প্রথম ক্লাবের ছেলেদের আক্রমণ করতে। প্রথম ক্লাবে ছেলেরা নিজেরাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ঐ আক্রমণ প্রতিহত করতে। মাইল খানেক দূরে প্রচণ্ড মারামারি হল। এক্ষেত্রে প্রথম ক্লাবের ছেলেরা আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে বলা যাবে না, কারণ কাছাকাছি থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশের সাহায্য নেওয়া হয় নি।]
⏩আত্মরক্ষার অধিকার কতদূর পর্যন্ত প্রয়োগ করা যাবে –
➡ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ঠিক যতটুকু হানি ঘটানো দরকার তার বেশী ঘটানো চলবে না।
▶ব্যাখ্যা ১ - কোন লোকসেবক কোন কাজ করলে বা করার চেষ্টা করলেও ঐ কাজের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হবে না – যদি না ঐ ব্যক্তি জানে বা ঐ ব্যক্তির বিশ্বাস করা কারণ আছে যে ঐ কাজ করছে একজন লোকসেবক।
▶ব্যাখ্যা ২ – কোন লোকসবকের নির্দেশে কোন কাজ করা হলে বা তার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঐ কাজের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবে না – যদি না ঐ ব্যক্তি জানে বা তার বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে কাজটি ঐ লোকসেবকের নির্দেশে করা হচ্ছে, অথবা যদি যে ঐ নির্দেশে কাজটি করছে সে কোন অধিকারে কাজটি করছে তা প্রকাশ না করে, অথবা তার কাছে ঐ কাজ করার লিখিত অধিকার থাকলেও সেটি দেখাতে অস্বীকার করে।
▶১০০ ধারা – শরীরের ওপর হামলার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায়।
এই বিধির ৯৯ ধারার বিধিনিষেধ অনুযায়ী যে ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায় না, সেই সমস্ত ক্ষেত্র বাদ দিয়ে – শরীরের ওপর যদি নিম্নলিখিত কোন এক প্রকারের হয়, তবে আত্মরক্ষার জন্যে স্বেচ্ছায়/স্বেচ্ছাকৃত ভাবে (voluntarily) হামলাকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায় –
▶(১) যে হামলায় (assault) যথাযথ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে;
▶(২) যে হামলায় যথাযথ গুরুতর আঘাতের *grievous hurt) আশঙ্কা থাকে;
▶(৩) হামলাকারী বলাৎকার/ধর্ষণ (rape) করার অভিপ্রায়ে হামলা করলে;
▶(৪) হামলাকারী অস্বাভাবিক যৌনসংসর্গ (unnatural lust) চরিতার্থ করার অভিপ্রায় হামলা করলে;
▶(৫) হামলাকারী মনুষ্য অপহরণ অথবা বলপূর্বক বা ধোঁকা দিয়ে মনুষ্য অপহরণ-এর (kidnapping or abducting) হামলা করলে;
▶(৬) হামলাকারী এমনভাবে কোনও ব্যক্তিকে অন্যায্য আটক করে যে সরকারী সাহায্য ছাড়া তার মুক্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই এইরকম আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
▶১০১ ধারা – কখন শরীরের উপর হামলার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারে মৃত্যু ঘটানো ছাড়া অপর কোন হানি ঘটানো যায় -
শরীরের উপর যে সমস্ত হামলা এই আইনের ১০০ ধারায় বলা অপরাধগুলোর মধ্যে পড়ে না সেই সব অপরাধ বা হামলার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষায় করতে হামলাকারীর মৃত্যু ছাড়া অন্য যে কোনও হানি ঘটানো যায়।
▶১০২ ধারা – শরীরের উপর হামলার ক্ষেত্রে কখন আত্মরক্ষার অধিকার জন্মায় এবং তা কতক্ষণ বহাল থাকে -
যেই মুহূর্তে অপরাধ-প্রচেষ্টা বা ভীতি প্রদর্শনের ফলে শরীর বিপন্ন হবার যথাযথ আশঙ্কা দেখা যায় – অপরাধটি ঘটুক বা না ঘটুক, তখনই আত্মরক্ষার অধিকার জন্মায় । যতক্ষণ পর্যন্ত শরীরের উপর ওই বিপদের আশঙ্কা বর্তমান থাকে আত্মরক্ষার অধিকারও ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে।
▶১০৩ ধারা – সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারে কখন মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায় -
এই বিধির ৯৯ ধারার বিধিনিষেধ অনুযায়ী যেক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায় না, সেই সমস্ত ক্ষেত্র বাদ দিয়ে যদি সম্পত্তির উপর কোন আক্রমণ বা অপরাধ নিম্নলিখিত কোন এক ধরণের হয়, তাহলে ঐ আক্রমণ বা অপরাধের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে স্বেচ্ছায়/স্বেচ্ছাকৃত-ভাবে (voluntarily) অপরাধীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায় –
(১) দস্যুতা (robbery)
(২) রাত্রে গৃহভেদ (house breaking by night)
(৩) বাসগৃহ, দালান, তাঁবু, জলযান – যাতে হয় মানুষ বসবাস করে, নয় সম্পত্তি/মালপত্র রাখা থাকে – তাতে আগুন ধরিয়ে অনিষ্টসাধন (mischief) করলে বা তার চেষ্টা করলে।
(৪) চুরি (theft), অনিষ্টসাধন (mischief) বা অনধিকার প্রবেশ (house trespass) এমনভাবে করতে আসে যে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা হলে মৃত্যুর বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা থাকে।
আলোচনা – কয়েকজন চোর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চুরি করতে কারো বাড়িতে ঢুকল। গৃহস্বামী হঠাৎ জেগে উঠে দেখে তার মাথার কাছে একজন তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ গৃহস্বামী জেগে উঠে চিৎকার করলে তাকে আঘাত করা। এক্ষেত্রে গৃহস্বামী ঐ চোরের মৃত্যু ঘটালে কোনো অপরাধ হবে না। কারণ সেটা আত্মরক্ষার অধিকারে ঘটানো হচ্ছে।
১০৪ ধারা – কখন ঐরূপ অধিকারে মৃত্যু ছাড়া অন্য যেকোনো হানি ঘটানো যায়-
যে ক্ষেত্রে চুরি , অনিষ্টসাধন বা অনধিকার গৃহপ্রবেশ এই আইনের ১০৩ ধারায় উল্লিখিত পর্যায় পড়ে না – কিন্তু যা ঘটলে বা ঘটাবার চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার অধিকার জন্মায় – সেই ক্ষেত্রে এই বিধির ৯৯ ধারার বিধিনিষেধ সাপেক্ষ আত্মরক্ষার অধিকারে স্বেচ্ছায়/স্বেচ্ছাকৃত-ভাবে অপরাধীর মৃত্যু ঘটানো ছাড়া অন্য যে কোন হানি ঘটানো যায়।
▶১০৫ ধারা – সম্পত্তির উপর আক্রমণের ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার কখন শুরু হয় এবং তা কতক্ষণ বর্তমান থাকে –
(১) যে মুহূর্তে সম্পত্তির উপর বিপদের যথাযথ আশঙ্কা শুরু হত, সেই মুহূর্ত থেকেই আত্মরক্ষার অধিকার শুরু হয়।
(২) চুরির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত চলে যতক্ষণ না পর্যন্ত অপরাধী চোরাইমাল সহ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অথবা যতক্ষণ না পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের সাহায্য পাওয়া যায় কিংবা চোরাইমাল উদ্ধার না হয়।
(৩) দস্যুতার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত চলে যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধী কোন ব্যক্তির মৃত্যু বা আঘাত ঘটায় বা ঘটাবার চেষ্টা করে, অন্যায়ভাবে আটকে রাখে বা আটকে রাখার চেষ্টা করে কিংবা যতক্ষণ না পর্যন্ত আশু-মৃত্যু (instant death) বা আশু আঘাতের (instant hurt) বা আশু অন্যায্য আটকের ভয় বর্তমান থাকে।
(৪) অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ বা অনিষ্টসাধনের বিরুদ্ধে সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত চলে যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধী অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশ বা অনিষ্টসাধনের কাজ চালাতে থাকে।
(৫) সম্পত্তির জন্যে রাত্রে গৃহভেদ (house breaking) ঘটলে আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ অপরাধজনক অনুপ্রবেশ (criminal trespass) বর্তমান থাকে।
▶আলোচনা – চোর চুরি করে মাল নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে, আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। যেমন চোর সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ করার পর গৃহস্বামী জেগে উঠল। চোরকে চিনতে পারলেও চোর হাতঘড়ি তুলে নিয়ে পালিয়ে গেল। পরের দিন গৃহস্বামী চোরকে দেখতে পেয়ে আটক করলে কাজটা আইনসম্মত হবে না, কারণ গৃহস্বামী তখন আর আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। কিন্তু যদি চোরাই ঘড়িটা তার কাছে পাওয়া যেত, তাহলে আত্মরক্ষার অধিকার আবার জন্মাত এবং সেক্ষেত্রে চোরকে আটক করা যেত।
▶১০৬ ধারা – মারাত্মক হামলার ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার -
যে হামলায় যুক্তিযুক্ত ভাবে মৃত্যুর আশঙ্কা জন্মায় – সেই রকম আক্রমণের বিরুদ্ধে অধিকার প্রয়োগে যদি আত্মরক্ষাকারী এমন এক অবস্থায় থাকে যে আত্মরক্ষা করতে গেলে একজন নির্দোষ ব্যক্তির হানি ঘটার ঝুঁকি থাকে, সেক্ষেত্রেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে সেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে।
উদাহরণ – কোন একটি লোককে জনতা আক্রমণ করেছে। ওই জনতা ওকে খুন করতে উদ্যত হয়েছে। জনতার হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে হলে গুলি না ছুঁড়লে অন্য কোনও উপায় নেই।কিন্তু ওই জনতায় মিলেমিশে শিশুও আছে। সুতরাং গুলিতে ছুড়লে শিশুর গায়েও লাগা সম্ভব। এক্ষেত্রে গুলি ছোড়ায় কোনও অপরাধ হবে না, এমন কি গুলি লেগে শিশুর মৃত্যু ঘটলেও।
- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( সন্ধ্যা ৬ - ৮ টা)
২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৩১
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: এই কারণ গুলো ঘটার পর প্রমান করা খুবই দূরহ ব্যাপার। কোট-কাচারীতে যারা গেছে তারাই জানে এগুলো কত যন্ত্রনাদায়ক।
৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:১৬
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: কিছুদিন আগে খবরে দেখলাম, মাদ্রাসার এক শিক্ষক ছাত্রকে বলাৎকার করতে গিয়ে ওই ছাত্র দ্বারা তার বিশেষ অংগ কর্তিত হয়। শিক্ষকের বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। ছাত্রটি দেহ (নিজেকে) রক্ষা করতে গিয়ে সেই কাজটি করেছিল। আর সে হলো আসামী! আর যে তাকে জোরপূর্বক বলাৎকার করতে গেল, সে নিষ্পাপ আদম!
দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৯৯ ধারা আইন তাহলে কি কথা বলে?
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:১০
গরল বলেছেন: কোল্যাটারাল ড্যামেজ থেকে আত্মরক্ষার জন্যও কি এই আইন কার্য্যকর হবে? যেহেতু আক্রমণ বা ক্ষতি সরাসরি আপনার উদ্দেশ্যে না তথাপি আপনি নিজেকে অরক্ষিত মনে করে যদি আক্রমণ করে বসেন?