নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আস্থা অনাস্থার দোটানায় গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থা!

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০

সকাল বেলা এক সুহৃদ কল দিয়ে জানালেন তার এলাকায় দোকান লুট হয়ে যাওয়া চাল উদ্ধার হয়েছে স্থানীয় চোরের বাড়ি থেকে। তার মাঝে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ থাকার কথা হলেও তিনি হতাশ। উৎসাহ থাকার কথা বলছি কারণ, ছোট বেলায় যখন গ্রামে কোন চোর ধরা পড়তো তার বিচার কিংবা যে কোন বিচার বসলে অতি উৎসাহ সহকারে তা দেখতে যেতাম। গ্রাম্য সালিশ থেকে একাধারে শিক্ষণীয় ও বিনোদনময় ছিলো। অভিযুক্ত/অভিযুক্তরা সালিশের দু'পাশে, বিচারক মন্ডলী ( জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মুরব্বীরা) মাঝখানে আর চারপাশে অগণিত দর্শকের সমারোহ থাকতো। বিচারের মাঝখানে অভিযুক্তের ইতিহাস বৃত্তান্ত আর বিচারক মন্ডলীর মান অভিমানের জায়গাও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে স্থান পেত। যেমন একদিন সালিশে জনৈক বিচারক অভিযুক্ত গরু চোর কে এই বলে মার দেওয়া শুরু করলো, " ... পুত, টুয়া..., তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী টুয়া (পেন্ট) চোখে দেখছে"। যেন গরু চুরি নয় চৌদ্দ গোষ্ঠীর ঐতিহ্য ভেঙ্গে ভদ্র সমাজের খানদানি প্রতিক টুয়া পরার অপরাধে তার বিচার চলছিলো!।

না, এমন কোন উৎসাহ তো দূরের কথা কল দেওয়া সুহৃদ হতাশা ব্যক্ত করলো এই বলে, সর্ব প্রকার প্রমাণাদি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও চোর নাকি রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। আমি কিছু করতাম! । আমি কি করবো? আমি স্থানীয় নেতা কিংবা প্রভাবশালী কেউ তো নয় এমনকি ঘটনাটিও আমার ইউনিয়নের বাহিরে। করোনার ভুক্তভোগী হয়ে লক ডাউনে আটকা পড়ে আছি বিধায় বিনা কারণে পনের বছর পর এমন সময় কাটাচ্ছি। না, তিনি জানালেন আমি যেহেতু একটি পেইজ চালায় তাই একটা নিউজ করতে হবে যাতে সহজেই স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে আসে বিষয়টা। কারণ এই চুরিকে বিচারের আওতায় আনা গেলে ইতোমধ্যে সংঘটিত চুরির সাথে সংঘবদ্ধ চোর চক্রকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

নিউজের স্বার্থে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবকে কল দিলাম। আমার জন্মের পূর্বে তিনি এম.এ পাশ করেছেন। শিক্ষিত মানুষ যখন জনপ্রতিনিধিত্ব করেন তখন সাধারণ মানুষের বুকটা ভরে যায় আস্থায়। এমনি আশা থেকে কল দিলাম। চেয়ারম্যান সাহেব জানালেন স্থানীয় মেম্বার সাহেব বিষয়টি দেখছেন। মেম্বার সাহেবকে কল দেওয়া হলে জানান চেয়ারম্যান সাহেবের কথা। শেষমেশ তিনি ইফতারের পর দেখা করতেও বলছেন, আমার বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়ে!
স্থানীয় এক সাংবাদিক এর সাথে আলাপ হলে জানান বেশিরভাগ। ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়। দফারফা হয়ে তার আর সংবাদ হয়ে ওঠেনা আর ওঠলেও সাংবাদিকের জীবনাশঙ্কা থাকে!
যাইহোক, শেষমেশ যা হবার তাই হলো। চাল ফেরৎ আর দোকানের নতুন তালা পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো দোকানিকে।

কার্যত আসামীর বিচার না হলেও জনমুখে তার ট্রায়াল হয়ে গিয়েছে এবং চোরের কালিমা তার গায়ে ঠিকই লাগছে কিন্তু যথাযথ বিচার না হওয়ার চাপা অভিযোগে সহজ-সরল মানুষগুলোর অকৃত্রিম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার জায়গায় যে জনপ্রতিনিধি আঘাত দিয়েছেন তা শোধরাবেন কিভাবে!
তার চেয়ে বড় হলো বিচার কার্য পরিচালনা করা যে আমানত তা আমরা ভুলে যাই কি করে!
গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সালিশ ব্যবস্থার সাথে জড়িত। মানুষ সালিশ বা বিচার ব্যবস্থা থেকে যেমনি বের হতে পারে না, তেমনি সালিশ বা বিচার ব্যবস্থা ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করতেও পারে না। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে সমাজ জীবনে উন্নয়নে ছোঁয়া লাগলেও গ্রামীণ বিচার বা সালিশ ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মনে হতাশা কাজ করে।

দুঃখজনক হলেও সত্য কথা গ্রাম সালিশ ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত না হয়ে শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে যায়!।
রাজনৈতিক প্রভাব,বিচার প্রার্থীদের অর্থনৈতিক বৈষম্যতা , ন্যায়পরায়ন গ্রহণযোগ্য মানুষের সংকট, দীর্ঘ মেয়াদী সালিশ (বার বার বসা), বাদী-বিবাদী কর্তৃক পৃথকভাবে সালিশকারী নিয়োগ, বংশ/এলাকা/ভোটার প্রীতি, নেতৃত্ব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন প্রতিনিধি না থাকা,
মিথ্যা সাক্ষী, সালিশে অতিঃ জামানত নেওয়া, অনভিজ্ঞ/অগ্রণযোগ্য লোক দ্বারা সালিশী করা, কুচক্রী মহলের কুপরামর্শ, ব্ল্যাংক
স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া, আইনী জ্ঞানের অভাব, চূড়ান্ত মীমাংসা না করা( আপোষ করা), সমস্যা চিহ্নিত না করে সমাধান করা,
সালিশে বাহুবল দেখিয়ে মারামরি, সালিশ থেকে উঠে চলে যাওয়া, হুমকি-ধমকি দেয়া, দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ সহ অসংখ্য সংকট বিরাজমান সালিশকে কেন্দ্র করে।

অথচ, এ সালিশ ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারলে সামাজিক সহিংসতা নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। গ্রামের মানুষের আদালতে যাওয়ার বিকল্প হচ্ছে সালিশ।
ছোট খাটো চুরি, বাচ্চাদের মারামারি, মহিলা-মহিলায় ঝগড়া, গরু-ছাগলে ক্ষেতের ফসল খাওয়া, জমির আইল-ঠেলাঠেলি, পিতা-মাতার দেখাশোনা, অবাধ্য সন্তান নিয়ে ঝামেলা, প্রেম-পিরিতি, পরকীয়া এমন সব অভিযোগ গ্রামের মাতব্বররা/মেম্বার/চেয়ারম্যানরা সালিশে সমাধান করতে পারলে আইন- আদালতের উপরও চাপ কমে আসবে।
সর্বোপরি, আস্থা অনাস্থার দোটানা না হয়ে গ্রাম্য সালিশ ব্যবস্থাই হতে পারে আদর্শিক ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত। বিষয়টি নিয়ে এখনো ভাববার সময় আছে।

**লেখক- এম টি উল্যাহ। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও একাধিক গ্রন্থ রচিয়তা।
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রাম্য শালিশ আর পঞ্চায়েত আমার খুব অপছন্দ।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৪০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এটা থাকা উচিত নয়।
আধুনিক যুগে এই জাতীয় বিচার থাকা উচিত নয়।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৬

এম টি উল্লাহ বলেছেন: হয়তো!

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪১

মোঃ ইকবাল ২৭ বলেছেন: বাংলাদেশের বিচার হলো জোর যার মুল্লুক তার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.