নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের নির্বাচন: রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির হিসাব নিকাশ (পর্ব -৩)

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

রাজনীতি বলি আর পররাষ্ট্র নীতি বলি সব কিছুর গতিবিধি নির্ভর অর্থনীতিকে কেন্দ্র করেই। আর এ জন্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঠিকে থাকতে পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকা ব্যাপকতর হয়ে পড়েছে। সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাথে সাথে প্রতিবেশী দুই পরাশক্তির মন জুগিয়ে টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এর মাঝে আমাদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে মায়ানমারের কাছে। বলতে গেলে মায়ানমারের পররাষ্ট্রনীতির কাছে রীতিমত ধরাশয়ী আমরা। একদিকে সম্ভাবনার হাতছানি, অন্যদিকে অসংখ্য প্রতিকূলতা। সম্ভাবনার সাথে বাস্তবতার আলোকে বৈশ্বিক বিচ্যুতিমূলক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা কতটুকু খেলতে পারতেছে? নাকি শুধু বলের পিছনে দৌড়াচ্ছি?

সব হিসাব-নিকাশের সাথে ২০১৮ সালের কূটনীতি নিয়ে বিশেষ ভাবে ভাবতে হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে। দেশীয় রাজনীতিক শক্তিগুলোর জনগণকে পাশ কাটিয়ে কূটনীতিকদের নিকট ধরা দেওয়া কিংবা কূটনীতিকে কেন্দ্র করে রাজনীতি চর্চা করাটা দেশের জন্য ভিন্ন বার্তা বয়ে আনতেছে, বাড়িয়ে দিচ্ছে বিদেশীদের অনৈতিক আবদারের সুবিধা। চীন-ভারতের ঠেলাঠেলির সাথে নতুন অস্হিতরা তৈরী করলো মায়ানমার।বিশ্বের পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কৌশলগত গুরুত্ব তৈরির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক কূটনীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য বলি আর প্রতিযোগিতার ভাগিদার বলি তা হলো মায়ানমার। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মায়ানমার বিশ্ব পররাষ্ট্রনীতি বলি আর আঞ্চলিক পররাষ্ট্রনীতির মোড়লদের সুনজর বলি তার সবটুকু ফসল মায়ানমার তার নিজের ঘরেই তুলে নিচ্ছে। এ কলামটি যখন লিখছি তখনও আন্তর্জাতিক মিড়িয়াতে খবর আসতেছে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ব্যাপক নৃশংসতা চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্তে জন্য দেশটির ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চাপ লঘু করতে চায় চীন।

চীনের পররাষ্ট্র নীতিতে চীনে কোমড় বেঁধে নেমেছে। একদিকে আমরা চীনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতা এবং ভারত তোষণনীতিতে ব্যস্ত থাকছি; অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন বাণিজ্যিকভাবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে ফেলেছে। নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তানে অর্থনীতি, শিল্পনীতি, যোগাযোগে চীনের বিপুল বিনিয়োগ।এর কারণ হলো ভারত মহাসাগরে নিয়মিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন।হর্ন অব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে দেশের বাইরে প্রথম সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে চীন। একইসাথে নেপাল, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প, এটার সাথে জড়িত ৬০ বিলিয়ন ডলারের চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর এবং গোয়াদরে কথিত সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার গুজব – এগুলোকে ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার কৌশল হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লী।
আর মজার ব্যাপার হলো সর্বশেষ ২০১৭ সালে চীন-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৮৪.৪৪ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চীন এখন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী। অর্থাৎ একদিকে তাদের অসম প্রতিযোগিতা/উত্তেজনা অন্যদিকে বাণিজ্যিক স্বার্থ। একটি চিত্র হলো ভারত অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত চারদেশীয় সহযোগিতামূলক ফোরাম কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ যেটা কোয়াড নামে পরিচিত, সেটাকে আবারও চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লী চায়নার সাথে প্রতিযোগিতার জন্য। সাথে মহাসাগরীয় এলাকার অন্যতম শক্তি ফ্রান্সের সাথেও কিছু প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে ভারত। আবার ভারত, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে নৌ সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ সীমা নিয়ে চীনের সাথে বিরোধকে কেন্দ্র । যদিও যুদ্ধের আশঙ্কা আপাতত নেই, কিন্তু উত্তেজনার সাথে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। আর এটাই হলো ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচেছ মায়ানমার। বিনিয়োগ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে বন্ধু হিসেবে কাউকে না পাওয়া অঞ্চলের উদীয়মান শক্তি মায়ানমারের কারণেই।বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। আর চীন, জাপান ও ভারতের বড় বিনিয়োগে বাংলাদেশের পরীবর্তে মায়ানমার সবার প্রথম পছন্দ হচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশকে এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শুধু রোহিঙ্গাদের কারণেই নয়, বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণেও বাংলাদেশ আজ সংকটে। বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থান হাতছাড়া হয়ে যাওয়া, অভিবাসনের খরচ বাড়া, অনিয়মিত ও বিনা বেতনে নিম্নমানের কাজের পরিবেশে কাজ করা, নানা রকম নির্যাতন, নির্ধারিত সময়ের আগে দেশে ফেরার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে আমরা আমাদের অবস্হান হারিয়ে ফেলতেছি।

আর দেশের বিনিয়োগ বান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্হার অনুপস্হিতি বিনিয়োগে শঙ্কিত করে তুলতেছে বিনিয়োগকারীদের। অন্যান্য ব্যাংকের মুমূর্ষ অবস্হার সাথে যোগ হলো দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের সংকট। ইসলামী ব্যাংকে শুরু থেকেই বিদেশি মালিকানা ছিল সিংহভাগ।তাঁদের অনেকেই ব্যাংকের মালিকানা ছেড়ে দেন গত ১ বছরে। ব্যাংকটির ৮ কোটি ৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে উদ্যোক্তা পরিচালক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। আইডিবির ছেড়ে দেওয়া সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয় এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। আবার কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস বিক্রি করে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইসলামী ব্যাংকের সোয়া ৫ শতাংশ শেয়ার ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক জেপি মরগানের একজন গ্রাহক ২০১৫ সালের শেষ দিকে ইসলামী ব্যাংকের ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েও আবার ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যাংকটির শুরুতে বিদেশিদের অংশ ছিল ৭০ শতাংশের মতো, বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সবকিছু ছাপিয়ে আগামী দুই মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ঝড় যাবে বলে মনে হচ্ছে। ট্রানজিট সুবিধা, সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের সুযোগ, রেল যোগাযোগ চালু, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগসহ দিল্লি অসংখ্য সুবিধা পেলেও ৩০ বছরের ফারাক্কা চুক্তি অবাস্তবায়ন, ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি দূরের কথা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমত হলেও পানিচুক্তি হচ্ছে না কোন অজানা কারণে!। ভোটের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসলে আগের মতোই তাদের ইচ্ছে মতো সুবিধা দাবি করবেন। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃত্ব আরো বাড়ানো এবং মংলা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ চাওয়াটাই হয়তো সফরের মূল উদ্দেশ্য।
আর চীনের সবচেয়ে বড় চাওয়া চীনের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর। এফটিএ নিয়ে বার বার আলোচনার আয়োজন করছে চীন। ২০১৬ সালে প্রথম এফটিএ সইয়ের প্রস্তাব দেয়া হলেও বাংলাদেশ গড়িমসি করছে। আর এ গড়িমসির সুযোগটা চীনারা হাতছাড়া করতে নারাজ এ নির্বাচনী বছরে। কারণ, কোন বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গেই বাংলাদেশের এফটিএ নেই। এফটিএ ইস্যুতে চীন-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক কঠিন হিসাব নিকাশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। চীন-ভারত তাদের থলি ভারী করার প্রতিযোগিতার নির্বাচনী বছরটির সাথে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হিসাবে মায়ানমারকে উপসহাপন এক বিশাল কৌশলেরই অংশ মাত্র নয় কি!। ( চলবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.