নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের নির্বাচন: রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির হিসাব নিকাশ (পর্ব -২)

২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

বিগত এক বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে বারবার নক করলেও সবাই বিষয়টি এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে চীন ও ভারতের স্বয়ং মায়ানমারের পক্ষে অবস্হান নিয়ে তাদেরকে সমর্থনের নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশকে ব্যাথিতই করেনি বরং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রশ্নের সন্মুখীন করে তোলে। মোদি সরকারের মায়ানমারের সাথে পরকীয়া প্রেম প্রকাশ হওয়ায় ঢাকার সাথে মূলত সম্পর্কের চিড় ধরো শুরু হয়। অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত ১০ মে মায়নমার গিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিত কয়েকটি সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ার পাশাপাশি নভেম্বরে নরেন্দ্র মোদি সফরের সময় রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন তা বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করলেন। এখানে বলে রাখা ভাল, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত উদ্বিগ্ন কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহি প্রবন রাজ্য নাগাল্যান্ড ও মনিপুরের সীমান্ত রয়েছে মায়ানমারের সাথে। উক্ত দুই রাজ্যের সক্রিয় কিছু জঙ্গি সংগঠন মিয়ানমারে আশ্রয় নেওয়ায় ভারত উদ্বিগ্ন।

এমন পরিস্হিতিতে ভারতের মায়নমারে সরকারের সাথে সুসম্পর্কটা জরুরী হয়ে পড়েছে। পক্ষান্তরে মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারতের সাথে তার প্রতিবেশী দেশগুলো চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় মায়নমারের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টিতে চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকাটাও ভারতের জন্য বেমানান হয়ে যাবে। কারণ ভারতের চরম আপত্তি ও চোপের কারণে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরী করতে ব্যর্থ হয়ে চীন তার প্রকল্প মায়ানমারে নিয়ে যায় এবং ইতিমধ্যে মিয়ামারের রাখাইনে কাওয়াকফু গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মান করেছে।
সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় যে মহুর্তে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্হির সে সময়ে স্বয়ং ভারত আসামে অবৈধ বসবাসকারী বাংলাদেশীদের খুঁজে বের করার নামে জাতীয় নাগরিক তালিকা (National Register of Citizenship -NRC) নবায়ন করলো। বাদ পড়লো প্রায় দেড় কোটি মানুষ!। যাদের অধিকাংশই নাকি মহান স্বাধীনতার সময় এই পার থেকে যাওয়া। মুসলিম জনগোষ্ঠির বৃহৎ এ অংশের বিষয়ে যদি যথাযথ সুরহা না হয় তার চাপ পড়বে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের উপর। অনেকে এটাকে বলছেন মুসলিমদেরকে বাদ দেওয়ার জন্যই কংগ্রেসের ভোট ব্যাংকে অশান্তি সৃষ্টি করে পায়দা লুটতে মোদি সরকারের হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী নীতির একটি কৌশল এটি। সবচেয়ে আর্শ্চয়ের বিষয় এটি করতে গিয়ে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি (৫ম) ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ এর পরিবারও বাদ পড়েছে তালিকা থেকে!

যাইহোক মূল কথা হলো পররাষ্ট্র নীতিতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো বাংলাদেশ খুব চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে তার স্বার্থের জায়গা থেকে। একদিকে দিল্লীর সাথে ঢাকার রক্তের সম্পর্কের টানপোড়ন অন্যদিকে টাকাওয়ালা চীনের মন রক্ষা করে চলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশ নীরবে তাদের থলে ভারী করতেছে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যান এবং কিছু সমঝোতা চুক্তি করে আসেন। যার মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তা পোগ্রামের সাথে ছিলো দুটি সাবমেরিন ক্রয় বাবদ এক হাজার ৫৬৯ কোটি টাকার চুক্তি। যা নরেন্দ্র মোদি সরকার স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নি। এর পরই ২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করে বাংলাদেশের সাথে ২৪ টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো ২০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়ার চুক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দিনের সফরে আসেন যাতে ২৬ টি সমঝোতা চুক্তি হয় যার মাঝে ১২ টি ছিল ঋণ চুক্তি।

এখানেই শেষ নয়, এরপর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত সফর করেন এবং দুই দেশের মাঝে ৩৬ টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যার মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিও ছিলো । সবচেয়ে হাস্যকর হলো পূর্বের দুই ধাপে ভারতের সহিত সম্পাদিত ৩০০ কোটি ডলারের চুক্তির মধ্যে ভারত মাত্র ৩৫ কোটি টাকা (ডলার নয়) ছাড় দিলেও পুনরায় অক্টোবরে আরো ৪৫০ কেটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই হয় ।তাহলে মূল বিষয়টা কি দাঁড়ালো, বাংলাদেশ থেকে তারা দুই হাতে চুক্তি স্বাক্ষরিত করে নেওয়ার এক প্রতিযোগিতায় যেন নেমে পড়ে গেল। এর থেকে পিছিয়ে ছিলোনা রাশিয়াও।রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের ( প্রায় ৯২ হাজার ডলারের)সর্ব বৃহৎ চুক্তিটি ভাগিয়ে নেয় তারা সবার আগেই। সাথে সেনাবাহিনীর নিকট ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র বিক্রি!।যদিও এর পূর্বে বাংলাদেশ সর্বদা চীন থেকেই অস্ত্র ক্রয় করতো এখনো বাংলাদেশের অস্ত্র ক্রয় চীন নির্ভর। এখানেও ভারতের সাথে মন খারাপ হয় বাংলাদেশের। ভারত চায় বাংলাদেশ অস্ত্র ভারত থেকেই সংগ্রহ করুক অথচ ভারত নিজেই অস্ত্র আমদানিকারক দেশ! আর এখন আমেরিকার সাথে ভারতের টানপোড়ন সৃষ্টি এ অস্ত্র ক্রয় কে কেন্দ্র করে। ভারত তার অস্ত্র ক্রয়ের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল বরাবরই। এরই মধ্যে নয়া দিল্লি এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আলমাজ-অ্যান্টে করপোরেশনের সাথে আলোচনা করছে। গত ৩ এপ্রিল মস্কো বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারামন ও তার রুশ প্রতিপক্ষ জেনারেল সার্গেই শোইগো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতা নিয়েও কথা বলেন। এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ক্রয়ের চুক্তিটির মূল্য আনুমানিক ৫.৫ বিলিয়ন ডলার (৩৯,০০০ কোটি ভারতীয় রুপি)। কিন্তু এতে বাধা আমেরিকা। ভারতের সাথে আমেরিকার ‘কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভাসারিস থ্রু স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট’ (সিএএটিএসএ) চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তি আমেরিকা ভারতের ওপর প্রয়োগ করলে তা আমেরিকা-ভারতের জন্য ভাল বার্তা বয়ে আনবে না। কারণ সিএএটিএসএ-এর ২৩১ ধারাটিতে বলা হয়েছে, কোনো দেশ যদি রাশিয়া থেকে উচ্চমূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কেনে, তবে তার ওপর অবরোধ আরোপ করা হবে। মজার বিষয় হচ্ছে রাশিয়া ইতোমধ্যেই চীনকে এস-৪০০ সরবরাহ শুরু করে দেওয়ায় দিল্লি চাচ্ছে চুক্তিটি তাড়াতাড়ি করে ফেলতে। কারণ এটা তার জন্য চালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।সব মিলিয়ে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক খারাপ হওয়া মানে তার পররাষ্ট্রনীতিতে আরো নানা সমীকরণের পরিবর্তন হয়ে যাওয়া!


এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বের সুবিধা ভোগকারী দেশ হতে কি পারতেছে বাংলাদেশ?। তাদের এই প্রতিযোগিতায় মায়নমার যথেষ্ট সুবিধা আদায় করে নিতে পারলেও আমরা তি তা করতে সক্ষম হচ্ছি। ব্যবসায়ী বলি,কূটনীতিক বলি আর সশস্ত্র বাহিনী বলি গত ১০ বছর পূর্বেও সূচকে যেখানে আমরা মায়ানমারের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম এরই মধ্যে কি হলো এমন। মায়নমারের এ শক্তি অর্জনের উৎসটা আমাদের নিকট অনেকট সুষ্পষ্ট। অনেকটা ধরাশয়ী হয়ে গেলেও এখনো আমাদের সে সুযোগ আছে। তবে আমাদের সম্প্রতি ব্যাংকিং ব্যবস্হার মুনাফা সাবাড় করে ফেলার মতো সংকটের মধ্যে তারা আস্হা আনতে পারছে না। যাইহোক সে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয় তবে পররাষ্ট্র নীতির সাথে এসব জড়িত ।

মূল কথা হলো ভারত-বাংলা সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, যার সূত্র হচ্ছে চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বের জগতে বাংলাদেশ প্রবেশ করে তার নিজের থলে বারি কতটুকু করতে পারছে না যা আছে তাও উজাড় করে দিচ্ছে অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক অসুস্হ প্রতিযোগিতার ফল নিজেদের ঘরে আনার স্বার্থে তা দেখার বিষয়।আন্তর্জাতিক মাঠে আমাদের এ খেলাটা আগে হয় নি । আমরা নবীন। এ খেলায় আমরা কতটুকু ভাল খেলতে পারছি বা পারবো তা নিয়ে জনগণের মুখোমুখি হচ্ছে কি রাজনৈতিক শক্তি গুলো? এগুলো নিয়ে কোন প্রকাশ্য আলোচনা এমনকি ভোটারদের মধ্যেও হচ্ছে না। সবাই ভোটের বাজারের সস্তা গুজব ও কাদা ছড়াছড়ি নিয়ে মাঠ গরম করে চলছে। হ্যাঁ, আমিও একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী, কিন্তু আমি চাই আমাদের পররাষ্ট্র নীতির খেলায় আমার দেশ এগিয়ে চলুক। এ খেলা তারুণ্যকে বুঝতে হবে। তার জন্য সব রাজনৈতিক শক্তির নিকট তারুণ্যের জিঞ্জাসা বাড়াতে হবে (সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। চলবে)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৯

এটম২০০০ বলেছেন: প্রশ্নটি জয়-পরাজয়ের
প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৮, ২০১৮, ২:১২ পূর্বাহ্ণ

আপডেট সময় : আগস্ট ২৮, ২০১৮ at ২:১২ পূর্বাহ্ণ


সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : দেশে জাতীয় নির্বাচন তো মনে হয় ঘনিয়ে এসেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই হবে বলে ধারণা। তাতে কে জিতবে, কীভাবে জিতবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আছে; কিন্তু যে দলই জিতুক এটা নিশ্চিত যে, হেরে যাবে জনগণ। নির্বাচন শেষ হতে না হতেই তারা জেনে যাবে যে, তারা হেরে গেছে।

ঘটনাটা নতুন নয়। খুব বড়, একেবারে ঐতিহাসিক দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এ দেশের জনগণের আছে, একটি ১৯৪৬-এর, অপরটি ১৯৭০-এর; দুটিতেই জনগণের মনে হয়েছিল যে তারা জিতেছে, ভেবেছিল তাদের মুক্তি আসবে। কিন্তু অচিরেই দেখা গেল, মুক্তি আসেনি। তারা হেরে গেছে। ‘৪৬-এর ঠিক আগে অখণ্ড বাংলায় একটা প্রায়-বিপ্লবী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তাতে সাফল্য যে আসেনি তা নয়। নির্বাচন হয়েছে, বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু তারপরেই দাঙ্গা, একটু পরে দেশভাগ। আর ‘৬৯-এ তো একটা অভ্যুত্থানই ঘটেছিল। গ্রামের মানুষ জেগে উঠেছিল। থরথর করে কাঁপছিল সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান। মনে হয়েছিল বিপ্লব ঘটবে। সশস্ত্র শাসকরা প্রশমন চেয়েছে, তারা নির্বাচন দিয়েছে, দ্রুতগতিতে। এ নির্বাচনও বিশ্বাসযোগ্য ছিল। কিন্তু এবারের পরিণতি দাঁড়াল আরও ভয়ঙ্কর; দাঙ্গা নয়, সামনাসামনি যুদ্ধ। সেবার দেশ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে, এবার রাষ্ট্র ভাঙল। কিন্তু জনগণের মুক্তি এলো না। এবারও তারা হেরে গেল। হারল যে সেটা কার কাছে? হারল ব্যবস্থার কাছে। ব্যবস্থাটা পুঁজিবাদী। ১৯৪৬-এর পরে পুঁজিবাদ বিকাশের নতুন পথ পেল, ১৯৭১-এর পরে পুঁজিবাদ তার বিকাশের পথটাকে আরও প্রশস্ত করে নিল; এখন তো তার অগ্রযাত্রা পুরোপুরি অপ্রতিহত।



কিন্তু এ রকমই কি চলবে? জনগণ কি কেবল হারতেই থাকবে? হারার কোনো শেষ থাকবে না? না; তা হবে না। জনগণ জিতবে। আগামী নির্বাচনে যে জিতবে না এটা নিশ্চিত, আগামী দশকেও জিতবে না। কিন্তু জিতবেই জিতবে। ব্যবস্থাটা অবশ্যই বদলাবে। কবে এবং কীভাবে, প্রশ্ন শুধু সেটাই।

এই আশাবাদের কারণ কী? কারণ একাধিক। প্রথম কারণ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অনেক, তারাই ৯০ জন; তাদের তুলনায় সুবিধাভোগীদের সংখ্যা খুবই কম, শতকরা দশজন। হ্যাঁ, এই ৯০ জন আগেও ছিল। কিন্তু তারা আগে এতটা বিক্ষুব্ধ ছিল না। বিক্ষোভের সঙ্গে মিলেছে সচেতনতা। আর এই বিক্ষোভ ও সচেতনতা কোনো এক দেশের মানুষের নয়, এটি এখন বিশ্বময়। সারাবিশ্বের বঞ্চিত-অত্যাচারিত মানুষ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। লড়াইটা চলছে প্রত্যেকটি দেশের অভ্যন্তরে। কোনো দেশের মানুষই সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা আর চায় না, সামাজিক মালিকানা চায়। দমিয়ে দেওয়ার, দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। চলবে। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হবে না। নদীর ওপর বাঁধটা টিকবে না; কারণ স্রোত প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে এবং প্রবল হতেই থাকবে। বাঁধটা ভেঙে পড়বে।

আশাবাদের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা এখন চরম জায়গাতে এসে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে সে যে ভেঙে পড়েনি তার কারণ, তার বুদ্ধিতে যত ছল ছিল, বাহুতে যত বল ছিল, কৌশল উদ্ভাবনায় যত দক্ষতা ছিল, সব সে খাটিয়েছে। তার আয়ত্তে এখন যা আছে তা তলানি বটে। দিশেহারা দশাতে এখন সে কতটা যে বেপরোয়া, সেটা বোঝা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতায়। পুঁজিবাদ এখন রাষ্ট্রকে ব্যবহার করছে মানুষের বিক্ষোভ দমনের জন্য। রাষ্ট্র পরিণত হচ্ছে ফ্যাসিবাদী শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠানে। করতলগত মিডিয়াকে সে ব্যবহার করছে বিভ্রান্তি ও ভোগবাদিতা প্রচারের বাহন হিসেবে। ফেসবুক, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার আত্মসন্তুষ্টি দানের অন্তরালে মানুষকে কেবলই পরস্পরবিচ্ছিন্ন ও অসামাজিক করে তুলছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যক্তিমানুষের সব খবর ছেঁকে তুলছে গোয়েন্দাগিরির জন্য। বিশ্বযুদ্ধ লাগানোর কাজে ক্ষান্তি দিয়ে এখন সে স্থানীয় যুদ্ধের ব্যবস্থা করছে। সমানে চলছে মানুষ মারার অস্ত্রের উন্নয়ন। আর আছে নেশা। ধর্ম, বর্ণ, অন্ধ জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির পুরনো নেশা তো রয়েছেই, যোগ হয়েছে অত্যাধুনিক নতুন নেশা, সেটা মাদকের। পুঁজিবাদ মুনাফা ছাড়া আর কিছু বোঝে না; মুনাফার প্রয়োজনে দুর্বল মানুষদের সে মজুরি-দাস বানায়। মজুরি-দাসত্ব প্রাচীন ক্রীতদাস প্রথারই আধুনিক রূপ। মানুষরা থেকে থেকে ক্ষেপে ওঠে দেখে, পুঁজিবাদীরা এখন চাইছে মানুষের বদলে যন্ত্রই তাদের হয়ে কাজ করুক। যন্ত্র কখনও অবাধ্য হবে না, এমনকি মজুরিও চাইবে না। কিন্তু যন্ত্রের রাজত্ব কায়েম হলে মানুষ যে আর মানুষ থাকবে না, মালিকরা নিজেরাও যন্ত্রে পরিণত হবে, সে চিন্তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। যন্ত্রকে খাটিয়ে শ্রমিককে বেকার করলে লোকের ক্রয়ক্ষমতা যে হ্রাস পাবে, সেটাও হিসাবের মধ্যে রাখে না।

তবে যাই করুক শেষ রক্ষা হওয়ার নয়। বিশ্বের সর্বত্র এখন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহ ফুঁসে উঠছে। সব দেশেই নিজ নিজ উপায়ে মানুষ লড়ছে; লড়াইয়ের ধরনটা স্থানীয়; কিন্তু লড়াইটা আন্তর্জাতিক। এটা না হয়ে উপায় নেই; কারণ পুঁজিবাদ একটা বিশ্বব্যাপী ব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামও বিশ্বময় ঘটতে বাধ্য। পুঁজিবাদীরা আর এক থাকবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলে এখন আর কিছু নেই, ভেঙে পড়েছে; ইউরোপ ও আমেরিকা আলাদা হয়ে যাচ্ছে; ২০১৮ সালে জি-৭ সম্মেলন শেষ হয়েছে বড় পুঁজিপতি দেশগুলোর ঝগড়াঝাঁটির মধ্য দিয়ে; নব্য পুঁজিবাদী চীন তার বিপুল জনশক্তি ও নবীন উদ্দীপনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে প্রতিযোগিতার বাজারে। পুঁজিবাদের পতনটা সবদিক থেকেই অনিবার্য।

বড় সত্য এটাই যে, পুঁজিবাদীদের মুনাফা-উন্মত্ততা মানুষ, মানবতা ও প্রকৃতি- সবকিছুর সঙ্গেই শত্রুতা করছে, তার দাঁত ও নখ কোনো কিছুকেই রেহাই দিচ্ছে না। ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে ভৌগোলিক প্রকৃতির সমস্ত উপাদানকেই সে পণ্যে পরিণত করে ফেলেছে, যার দরুন কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক থাকছে না, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিকৃত হয়ে পড়ছে। ফলটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, পৃথিবী নামে এই গ্রহটির অস্তিত্বই আজ বিপন্ন। মানুষ এখানে টিকতে পারবে কিনা, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু মানুষকে তো বাঁচতে হবে এবং তাকে মানুষের মতোই বাঁচতে হবে; বাঁচার তাগিদেই মানুষ পুঁজিবাদকে ভেঙে ফেলবে। মানুষের সভ্যতা অতীতে বহু রকমের সংকটের মুখোমুখি হয়েছে; তবে বিশ্বব্যাপী অস্তিত্বের এমন সংকট আগে সে কখনও দেখেনি। কিন্তু এই সংকটও মানুষ অতিক্রম করবে বৈকি। মানুষের অসাধ্য কি?

সব মিলিয়ে যে বিষয়টা সামনে আসছে তা হলো, মানুষের ইতিহাস থেমে যাবে না; পেছনে হটে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, সে যাবে সামনে এগিয়ে। পুঁজিবাদ তাই শেষ কথা নয়। পুঁজিবাদের বিকল্প পুঁজিবাদ হবে এমনটা সম্ভব নয়, তাকে সংশোধন করে যে খাড়া করে রাখা যাবে, এটাও হওয়ার নয়। দাসব্যবস্থা ভেঙে যেমন সামন্ত ব্যবস্থা এসেছে, সামন্ত ব্যবস্থা ভেঙে প্রতিষ্ঠা ঘটেছে পুঁজিবাদের, ঠিক তেমনিভাবে পুঁজিবাদকে হটিয়ে দিয়ে নতুন এক ব্যবস্থাকে আসতেই হবে। এই নতুন ব্যবস্থা হবে সমাজতান্ত্রিক। সমাজতান্ত্রিক না হয়ে উপায় নেই। কারণ হাজার হাজার বছর ধরে দাসব্যবস্থা, সামন্তব্যবস্থা ও পুঁজিবাদের ভেতর দিয়ে যে ব্যক্তিমালিকানার কর্তৃত্ব ছিল সেই মালিকানাকে অক্ষুণ্ন রেখে ইতিহাসের পক্ষে আর এগোবার উপায় নেই। ওই ব্যবস্থা ভেঙে যা আসবে সেটা সামাজিক মালিকানা ব্যবস্থা। সামাজিক মালিকানা ব্যবস্থায় মানুষের সৃষ্টিশীলতা অবারিত হবে, প্রাচুর্য দেখা দেবে বিশ্বজুড়ে, মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং মানুষের সঙ্গে উৎপাদনের ও প্রকৃতির বিচ্ছিন্নতা দূর হবে, অবসান ঘটবে অভাব ও সংঘাতের, যুদ্ধ পরিণত হবে অতীত ইতিহাসে; মানুষের উৎপাদিকা শক্তিকে পুঁজিবাদীরা উন্নতির যে স্তরে নিয়ে গেছে, সেখান থেকে সে চলে যাবে উন্নততর এক স্তরে। থাকবে সৃষ্টিশীলতার বিপুল অবকাশ। প্রয়োজনের জগৎ থেকে মানুষ চলে যাবে স্বাধীনতার জগতে।

এটা অনিবার্য। প্রশ্ন হলো- কবে ঘটবে, কীভাবে ঘটবে এবং কেমন করে অবধারিতকে ত্বরান্বিত করা যাবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজবিশ্নেষক

২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫১

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৩০

এটম২০০০ বলেছেন: বিএনপির কেউ বলেনি আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকতে আগ্রহী
প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৭, ২০১৮, ১০:২১ অপরাহ্ণ

আপডেট সময় : আগস্ট ২৭, ২০১৮ at ১০:২১ অপরাহ্ণ


মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল : বিএনপি তো কারো কাছে দরখাস্ত করেনি যে, তাদেরকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারে রাখতে হবে। তাহলে কারো আগ বাড়িয়ে কথা বলার দরকার কি? বিএনপি কোন নি¤œস্তরের প্রতিনিধিও কি এমন কথা বলেছে যে, আমরা অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারে থাকতে আগ্রহী। ওবায়দুল কাদের সাহেব কেন বিনা কারণে অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন? প্রতিদিন ২০-২৫ টা ক্যামেরা নিয়ে ঘুরবেন আর সকালে এক কথা, বিকেলে এক কথা আর রাতে আরেক কথা বলবেন।

কখনো দেখি উনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কখনো দেখি উনি মন্ত্রী, আবার কখনো দেখি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা যে আদালতে হচ্ছে সে আদালতের বিচারকও উনি। রায় কি হবে তাও বলে দিচ্ছেন তিনি। একই অঙ্গে যার এতো রূপ, দল পরিচালনায় তার আরো মনযোগি হওয়া উচিৎ। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যেভাবে বাড়ছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এটি আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। উনার বরং এদিকেই নজর দেয়া উচিৎ।



পরিচিতি: যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি/মতাতম গ্রহণ:ফাহিম আহমাদ বিজয়/সম্পাদনা: রেজাউল আহসান

২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য।

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমি এখন আর অতীত মনে রাখি না। শুধু ঘটনা গুলো গল্প হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান চলমান, আর ভবিষ্যত অন্ধকার দেখি।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:০৯

এটম২০০০ বলেছেন: If BNP does not participate in election, the 'so called elected or constitutional government' formed by Awami league will not be accepted by the international organizations or countries. By this time world has seen what USA did to a country where the government rose to power by unfair election. Hundreds of times the powerful countries have warned for free and fair election. They have observed what BAL did in the local elections. However, they do not care for these, they care only for the national election that decides the fate of a nation in the international arena. If they do not accept BAL govt. after 2019 election, we believe, an anti BAL will be in power under which the people would see democracy and human rights. And definitely the BAL supporters would face hard days.

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:২৪

এটম২০০০ বলেছেন: আঁধার রাত বলেছেন: বিনা বাধায় ভোটারকে ব্যালটে ছিল মারার সুযোগ দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে যাওয়ার রিস্ক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনেও নেয় নাই জাতীয় নির্বাচনে নেবে??? মনে হয় না।

সব ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেবে।

প্রিজাইডিং/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের ট্রেনিং বা নির্দেশনা মুলক কর্মশালায় বলে দেবে আপনারা সবার আগে নিজের নিরাপত্তার নিশ্চিত করবেন। জীবন গেলে পাবেন না, বৌ বাচ্চার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। সে কারনে সবার আগে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। গতবার রিটানিং অফিসারের এ বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছিলাম। এবং জবাব পেয়েছিলাম কেন স্কুল টিচারের চেয়ে নির্বাচনের দায়িত্বে একেবারে নবীন ব্যাংকার রা।

যদি এমন নির্দেশনা আসে তাহলেই বুঝে ফেলব আনুসঙ্গিক আর কি কি ঘটবে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এক মাইক্রোতে চারটা পর্যন্ত আনন্দ ভ্রমন করবে কারন প্রিজাইডিং অফিসারের আহবান ছাড়া তারা কোন কেন্দ্রে যেতে পারবে না। গিয়েও কিছু করতে পারবে না কারন তাদের মাইক্রোতে পেশকার দেওয়া হবে না। অভিযোগ উপস্থাপন করার কোন লজিষ্টিক সাপোটিংই থাকবে না।
সেনাবাহিনীর সৈনিকরা জলপাই রং ড্রেস পড়ে গাড়িতে করে শট ড্রাইভ ইমেজে দিনটা কাটাবে কারন একমাত্র ভোট কেন্দ্রের প্রধান ডাকলেই তারা যাবেন আর ভোট কেন্দ্রের প্রধানকে বলা হয়েছে ”চাচা আপন জান বাচা” । দুই বার তিনবার ফেরত দিলেও সকাল সাড়ে এগারটার সত্যিই আপন জান বাচানোর পরিস্থিতিতে ”তোদের যা খুশি করেক গা “। যা শালা ব্যালেট পেপারই শেষ বেলা বারটার আগেই।

বুইড়াদের একটা মারাত্নক সমস্যা আছে তারা মনে করে ”বাল শুধু তারাই ফেলতে পারে যাদের বয়স কম তারা বাচ্চা, তারা পারে না তারা পারবে না” । অথচ ঐ ছাওয়াল গন্ডায় গন্ডায় বেছোন জন্মাতে পারে। আস্থা রাখুন নতুনদের উপর আপনাদের ডিএনএ এর রেপ্লিকা নিয়েই দুনিয়াতে এসেছে আপনার ভালমন্দ সবটুকু শিক্ষাকে সংঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। প্রয়োজনে বাতিল বুইড়াদের চেয়ে সুনিপুন ভাবে সে জ্ঞান তারা প্রযোগ করতে পারবে।
বাবা মেয়ের মধ্যে অনেক অমিলের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য মিল হল দু’জনই চোরের খনি পেয়েছে”।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.