নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংখ্যালঘু নির্যাতন ঃ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি নষ্টের চক্রান্ত কি চলতেই থাকবে?

০২ রা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫



হাজার বছরের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির জাতি আমরা। কিন্তু আমরা কি পেরেছি তা ধরে রাখতে? বিগত দেড় শতক ধরে বার বার আমাদের জাতি সত্তাকে ক্ষত বিক্ষত করে তুলতেছে একটি শব্দ, সংখ্যালঘু নির্যাতন। কিন্তু কেন? কেন বার বার একই দেশের নাগরিক হয়েও আমরা হায়েনার রূপ ধারণ করি? এই প্রশ্ন আজ সবার। বাঁশখালী, ফকির হাট, সুধারাম, মহালছড়ি, বেগমগঞ্জ, উখিয়া, টেকনাফ, হিলি, হাটহাজারী, পটিয়া, ফুলগাজী ও রামুর ঘটনাগুলো যেন দিন দিন আরো সংগঠিতভাবে, প্রবল আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায় ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামুতে। সেটি ছিল কোন বৌদ্ধ গৌষ্ঠির উপর দেশে প্রথম আক্রমণ। যাতে ১৯টি উপসনালয় পাঁচশতাধিক বৌদ্ধ মূর্তি ও ৪০টি বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। উখিয়া, টেকনাফ, পটিয়া ও রামুতে এ হামলা দুইদিন ধরে একযোগে অনুষ্ঠিত হলেও পুলিশ প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। জামাত-বিএনপি-আওয়ামীলীগ ধর্মীয় উসকানি দিয়ে এক যোগে এই হামলা চালায়। ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সংশি¬ষ্টতা প্রত্যক্ষ করা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে আদৌ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর আগে একই বৎসরের ৪ঠা আগস্ট দিনাজপুরের হিলিতেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে নগ্ন আক্রমণ হয়েছে। বলাই বাজারে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে রাজাপুর ও মাজাপাড়া গ্রামে এই হামলা হয়। হিলির এই ঘটনার সঙ্গে চিরির বন্দর উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন সংখ্যালঘু নেতারা। ৩১শে জুলাই ২০১২ তে বাগের হাটের ফকির হাটে হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রামে সন্তাসী হামলায় অন্ততঃ ছয়জন আহত হয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে একই বৎসরের ২ ও ৩ ফেব্র“য়ারী দফায় দফায় হিন্দুদের মন্দির ও বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সেখানেও প্রশাসন আগে থেকে জেনেও ছিল নিরব। ২০০৩ সালে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে আট-দশটি পাহাড়ি গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুবৃত্তরা। যার সুষ্ঠু বিচার আদৌ হয়নি। বাঁশখালীতে একট সংখ্যালঘু পরিবারের ১২ জনকে পুড়িয়ে মারা হয় ২০০২ সালে, যার কথা যেন কারোরই মনে নেই আজ। আর ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী দেশজুড়ে নির্যাতনের যে উৎসব সম্পন্ন হয়েছে তার কথা সকলেই অবগত। সর্বশেষ ২০১৩ সালের মার্চের ২ তারিখ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, ফেনীতে ও বগুড়াতে সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ কক্সবাজারের সে ঘটনা ঘটে। তাকে কেন্দ্র করে, ২০১২ এর ও অক্টোবর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে চ্যালেন্স করে সুপ্রিম কোটের হাইকোর্ট বিভাগে রামুর বাসিন্দা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন (রিট পিটিশন নং ১২৭৩৮/২০১২)। তিনি সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য ১৩ ডিসেম্বর একটি দরখাস্ত দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (আইন ও বিচার বিভাগ, বিচার শাখা-৫, এর ১১/০৩/২০১৩ইং তারিখের বিচার ৫/৩ এস-২৫/২০০২ (অংশ-১১-২০০নং স্মারক) তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি-২১ মার্চ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে ১৬ মে তা জমা দেয় বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে। প্রতিবেদনে ২৯৮ জনকে সনাক্ত করা সহ ২০ দফা সুপারিশ ও প্রদান করা হয়। যাতে রয়েছে ফেসবুক ও টুইটার সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্ধৃত প্রশাসনকে শক্তিশালী করা প্রভৃতি। প্রতিবেদনে সরকার সহ বিবেকবান মানুষকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয় শুনানী শেষে আদালত কি ব্যবস্থা নেন।

প্রতিটি ঘটনা শেষে, প্রতিটি আমলে সরকারের মাননীয়রা গিয়ে অভিযোগ করেন, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। কিন্তু পরিকল্পনাটা কি? এর পেছনে কারা? তাদের উদ্দেশ্য কি? পূর্বানুমান কি আমরা করছি? করে থাকলে কি ব্যবস্থা নিয়েছি? সংখ্যালঘুরাই বা কেন শিকার? আক্রমনের জায়গাটা কি? এর পেছনে অর্থনেতিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কোন কারণ বিদ্যমান? এগুলোর উত্তর আমরা কখনো দিতে পারি না জাতিকে। ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত যতটি আক্রমণ হয়েছে তার একটিরও বিচার সুসম্পন্ন হয়নি। রাজনৈতিক ধুয়া তুলে বার বার বিষয়টাকে আড়াল করা হয়েছে। অথচ অপরাধীরা সব সরকারের আমলেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর প্রশাসনের ভূমিকা “ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল” ধরণের হয়ে থাকে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে ইদানিং সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হারহামেশা ঘটতে, যা আগে অতটা প্রবল ছিল না দেশে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে একশ্রেণীর লোক হঠাৎ করে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উপসনালয়গুলোতে হামলা করছে। এটার পেছনে মূল চক্রান্তটা আসলে কি তা সরকারকে খতিয়ে দেখতেই হবে। কোন এক অদ্ভূত কারণে আমরা বাংলাদেশে সা¤প্রতিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনকে এড়িয়ে যাচ্ছি। যে পরিমাণ মনোযোগ এই ইস্যুতে দেওয়া দরকার মিডিয়া, সুশীল সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে পরিমাণ মনোযোগ নেই। কিন্তু আমরা যতই অন্ধ হয়ে থাকি না কেন প্রলয় রোধ করা যাবে না। এগুলো আমরা যতই লুকানোর চেষ্টা করি না কেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়া এগুলোকে ঠিকই নজর দিচ্ছে। এতে করে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি যেমনি খর্ব হচ্ছে তেমনি এই ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দিন দিন আশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.