নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রবাদটি সার্থক একটি প্রবাদ। আর সেটা যদি রাজনীতির ব্যাপার হয়, তাহলে হ্যাঁ অবশ্যই জয়যুক্ত হবেই। সংবিধানকে বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দিক নির্দেশনা অর্থাৎ একটি দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনই হচ্ছে সংবিধান। সুতরাং রাজনীতি তো এটাকে নিয়েই চলবে! আমাদের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৫টি সংশোধনী পাশ হয়েছে। যার মধ্যে ৫ম ও ৭ম সংশোধনী ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা (আংশিক) করেছে। ৬ই এপ্রিল, ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৫ম সংশোধনী আইন পাশ করেন। সেখানে তিনি সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল¬াহহির-রাহমানির রাহীম’ যুক্ত করেন। অষ্টম সংশোধনীতে এরশাদ সাহেব (৯ই জুন, ১৯৮৮)’ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’ যুক্ত করেন। এইতো তারা বিতর্কের চাবি আমাদের হাতে তুলে দিলেন। এক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, যেহেতু বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী রাষ্ট্র সেহেতু অধিকাংশ জনগণের মতের প্রাধান্য পাওয়াই স্বাভাবিক। আবার এও ঠিক ‘বিসমিল¬াহ’ সংবিধানে যখন ছিলনা তখনও আমরা মুসলমান ছিলাম, এখনো আছি। আবার যে নামেই ডাকি না কেন সৃষ্টিকর্তা সবার এবং সব ধর্মের জন্য এবং সবাই সৃষ্টিকর্তার জন্য ১। আর সর্বশেষ ১৫তম সংশোধনীতে (৩০ জুন, ২০১১ইং) ও সাংবিধনিক রাজনীতির ধারবাহিকতা বজায় রয়েছে, খুবই সুস্পষ্টভাবে। সেখানে ‘বিসমিল¬াহির রাহমানির রাহিম’ এর জায়গায় যুক্ত করা হয়েছে ‘পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’ কথাটি। এই শাব্দিক পরিবর্তনের মানে কি সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝে নিয়েছে। আর তত্বাবধায়ক খেলা এখনো চলতেছে, যে রাজনীতির গতি কোন দিকে তা নিয়ে পুরো জাতিই আজ সন্দিহান। আবার আমরা আরও দেখি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ঘোষণা পত্রের দিকে (যা রচনায় স্বয়ং বঙ্গবন্ধু অংশগ্রহণ করন), সেখানে শাসনতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এর দুই নম্বর পয়েন্টে উলে¬খ আছে ‘জনসংখ্যার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের প্রিয় ধর্ম হলো ইসলাম। আওয়ামীলীগ এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শাসনতন্ত্রে সুস্পষ্ট গ্যারান্টি থাকবে যে পবিত্র কোরআন ও সুন্নায় সন্নিবেশিত ইসলামের নির্দেশনাবলীর পরিপন্থী কোন আইন পাকিস্তানে প্রণয়ন বা বলবৎ করা চলবে না। শাসনতন্ত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের পবিত্রতা রক্ষার গ্যারান্টি সন্নিবেশিত হবে। সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা স¤প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ২। এই ঐতিহাসিক ২১ দফায় (যেটি ৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩ সালে, যুক্তফ্রন্টের দ্বারা প্রণীত যে, যার নেতৃত্বে ছিলেন শেরে বাংলা, মাওলানা ভাসানি, শহীদ সোহরাওর্য়াদীর মত বাঘা নেতারা) উলে¬খ করা হয় কোরআন ও সুন্নাহর মৌলিক আদর্শের পরিপন্থী কোন আইন হবে না এবং নাগরিকরা ইসলামিক ন্যায়পরায়নতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের সহিত জীবন যাপন করবে ৩। তার পরেও কেন এত বিতর্ক? বিতর্ক এ কারণেই যে, আমরা যদি ঐতিহাসিক দিকটা একটু পর্যালোচনা করে দেখি সংবিধান ধর্মীয় দিকটা যোগ করার ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে চতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছিল। যার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল অনেকটা রাজনৈতিক কৌশলে সরকারের ব্যর্থতাকে কাজে লাগানো। আমরা দেখি অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে উলে¬খ করা হলেও রাষ্ট্রীয় জীবন ও যন্ত্র ইসলামীকরণের জন্য তেমন কোন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শুধুমাত্র শব্দটি দিয়ে জনগণকে ‘আইওয়াশ’ করা হয়েছে। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই সংবিধানের শুরুতে আমাদের মত পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ইহার প্রচলন আছে। আয়ারল্যান্ড ও গ্রীক তারা খ্রিষ্টান প্রধান দেশ হয়েও তাদের সংবিধান শুরু করেছে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা দিয়ে, আর মুসলিম দেশ ইরানেও একই অবস্থা। আবার আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে (ইসলাম যেখানে সংখ্যালঘু) সেখানেও রাষ্ট্রধর্মের কথা তাদের সংবিধানে বলা আছে।
আয়ারল্যান্ডের সংবিধানের ৪৪(১) অনুচ্ছেদ, নরওয়ের ২নং অনুচ্ছেদ, ডেনমার্কের ৩নং অনুচ্ছেদ, গ্রীস এর ১ ও ২নং আর্জেন্টিনার ৭৭নং সুইজারল্যান্ডের ৫১নং অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে তাদের স্ব-স্ব সংখ্যাগরিষ্ঠের দর্মকে প্রাধান্য দিয়েছে। সুইডেন, থাইল্যান্ড, হাইতি, ভুটান, ইয়েমেনসহ প্রায় আরও ৩৪টি দেশের সংবিধানে অফিসিয়াল ধর্মের নাম উলে¬খ আছে ৪। যদিও সে সকল দেশ আমাদের চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। তাহলে আমরা বলব তারা রক্ষণশীল? আবার আমরা দেখতে পাই জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা পত্রের পর (যা সদস্য দেশগুলো কর্তৃক স্বীকৃত) ১৮নং ধারায় উলে¬খ আছে। প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সহিত যোগ সাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভূক্ত ৫। আমরা যদি বাংলাদেশের কথা চিন্তা করি, তাহলে আমরা সহজে দেখতে পাই ধর্মকে সর্বদা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের মনে রাখা উচিত ধর্ম মানে বোমা মেরে মানুষ খুন করা বা ফতোয়া দিয়ে জীবন নাশ করা বা ক্ষমতায় অধীন হওয়া নয়, ঠিক তেমনি ধর্মনিরপ্রেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। আমাদের দেশে যদিও ধর্মনিরপ্রেক্ষতার নামে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে কিন্তু শিবসেনার মত কট্টরপন্থী দল বিদ্যমান। জার্মানীর মত দেশেও আছে ধর্ম ভিত্তিক দল। সারা জীবন শ্রেণী-সংগ্রাম, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শে¬াগান ধরে, জনতার আদর্শকে পদতলিত করে সেই পুঁজিপুতিরই কোলে ওঠার মানে হয় না। আবার ক্ষমতার লোভে নিজের দেওয়া ফতোয়া (বৃত্ততাকে) যেমন অস্বীকার করে জোট করা অপছন্দনীয়, ঠিক তেমনি ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে নেত্রীদের মাজার জেয়ারত করে হাতে তসবি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় নামাও কাম্য হতে পারে না। সর্বশেষ আমাদের মনে রাখা উচিত, রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় ট্রাম্পকার্ড যদিও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সহায়ক কিন্তু গণতন্ত্রের অধিকার বাস্তবায়নে নিয়ামক হতে পারে না। ঠিক তেমনি শিক্ষিত লোকের বিবেচনাহীন রায় প্রকৃত পক্ষে জাতির কোন কাজে আসে না। পুনশ্চ (উক্ত কলামের ব্যাপারে কারো কোন মতামত থাকলে লেখক তথ্য প্রমাণ দিয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত)।
তথ্যসূত্র ঃ
১. বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাস ও সংবিধানের সহজপাঠ- ডঃ মোঃ শাহ আলম, পৃষ্ঠা-৩৩
২. আমার কিছু কথা- শেখ মুজিবুর রহমান, শিখা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা- ৬৮
৩. যুক্তফ্রন্ট ও ঐতিহাসিক ২১ দফা- প্রথম প্যারা
৪. ইৎরঃধহরপধ ড়িৎষফ ফধঃধ
৫. মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা পত্র ১৯৪৮ (ধারা-১৮)
৬. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান।
লেখক ঃমোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
শিক্ষার্থী (৪র্থ বর্ষ), আইন বিভাগ, চ.বি।
মেইল :[email protected]
২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩৯
এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭
কাজী দিদার বলেছেন: ভালো লাগলো .................