নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কামলার আসল নাম অনেকেই জানে না। তার আসল নাম জৈবন আলী, তবে এই নামে খুব কম মানুষই তাঁকে ডাকে। অনেক ছনের ঘর আছে এই এলাকায়, কামলা এইসব ছনের ঘর মেরামতের কাজ করে। সে তার কাজ নীরবে করে যায় বলে তার বেশ নাম ডাক। অনেক দূর থেকে ও তাঁকে কাজের জন্য ডাকে। নতুন ঘর বানানোর কাজেও সে বেশ দক্ষ। তার চাহিদা থাকায় আয় রোজগার বেশ ভাল। অনেক ছনের ঘর আছে এই এলাকায়, কামলা এইসব ছনের ঘর মেরামতের কাজ করে। সে তার কাজ নীরবে করে যায় বলে তার বেশ নাম ডাক। অনেক দূর থেকে ও তাঁকে কাজের জন্য ডাকে। নতুন ঘর বানানোর কাজেও সে বেশ দক্ষ। তার চাহিদা থাকায় আয় রোজগার বেশ ভাল।
কামলা বেশ মুখ চোরা আর চুপচাপ, তার স্ত্রী তার ঠিক উল্টা, সবসময় বাকবাকুম চলতেই থাকে। সে এখানকার স্থানীয় মেয়ে হওয়াতে তার প্রভাব আছে এখানে। কামলা দুরের গ্রাম থেকে এসে এই গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করে এখানে স্থিতু হয়েছে। এই জায়গাতে দুটি পরিবার থাকে, একটা কামলার পরিবার আর আরেকটা কালামিয়া, শাহলমের বাপের পরিবার। শাহলমের মা ও বেশ মুখরা, তবে কামলার বউ আর সে মিলে মিশে এই জায়গাতেই বসবাস করছে। শাহ লমের এক বোন, তার নাম জোহরা, কামলার কোন ছেলে মেয়ে নেই তাই কামলার বউ খুব ছোট বেলায় জালাল কে পালক নিয়েছে, এখন তারা জালালের মা বাবা। জালাল আর শাহ লম দুজনেই সমবয়সী। শাহ লম একটু শুকনা আর ছোট খাট। তার মুখটা বেশ ছোট। সে বেশ দ্রুত এবং টুকটাক চুরিতে হাত পাকিয়েছে ছোটবেলা থেকেই। মানুষজন তাঁকে সাইয়া চোরা বলে ডাকে। সে রঙ এর কাজ করে। জালাল হাতুড়ে দাঁতের ডাক্তারের কাছে কাজ শিখে জালাল ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। তবে তারও দুর্নাম আছে চুরির জন্য। সাইয়া আর জালাইল্ললা দুইজনে মিলে মাঝে মাঝে অন্য এলাকায় চুরি করে। শাহ লমের বন্তা বেশ ভাল, একটু বড় হলেই তার বিয়ে হয়ে যায়, বিয়ের পর বাপের বাড়ি ছেড়ে সে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়, খুব কমই সে বাপের বাড়ীতে আসত।
জালাল বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে, সুন্দর গোলগাল মুখের ছোট খাট এক কিশোরীকে।কতই বা হবে তার বয়স, চৌদ্দ কিংবা পনেরো আরও কম ও হতে পারে। কামলার বউ জালাল কে পালক নিয়েছিল, তার কোন সন্তান হয়নি, বাজা মহিলার দুঃখ গুছাতে জালাল কে মায়ের আদরে বড় করেছে সে। জালাল মায়ের আদেশ মেনেই বিয়ে করে নিয়ে এসেছে এই মেয়েকে। মায়ের সেবা জালালের সেবা দুটোই করবে এই মেয়ে। কপালের কি ফের, জালালের মা কেন যেন প্রথম থেকেই এই মেয়েটাকে অপছন্দ করে আসছিল। সুঠাম দেহের স্বাস্থ্যবান জালাল কে মেয়েটা প্রচণ্ড ভয় করত। বিয়ের পর প্রায় প্রতিদিন গভীর রাতে মেয়েটার বিলাপ শোনা যেত।
জালালের মা এইসব ন্যাকামি একদম সহ্য করতে পারত না। সকাল থেকেই শুরু হত গঞ্জনা। কামলা আর জালাল ভোরে গোসল সেরে খেয়ে দেয়ে চলে গেলেই শুরু হত মহিলা মহলের তিরস্কার। কিছুদিন পর মেয়েটা পোয়াতি হয় , তারপরও তার কান্না কমে না। জালাল ও তার উপর বিরক্ত। সময় মত তাঁদের ঘর আলো করে একটা মেয়ের জন্ম হয়, নাম দেয় পাখী। তখন থেকে মেয়েটার নাম হয়ে যায় পাখির মা। বাচ্চা হওয়ার পর ও পেটানো জালাল কে সে সামাল দিতে পারে না। রাতে বাচ্চাত কান্না, বাচ্চার মায়ের কান্না সব মিলিয়ে জালাল ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে যায়। যুবক জালালের অভিযোগ আর কষ্ট শুনতে ভাল লাগে না, মাঝে মাঝে তাই চড় কিল ঘুসি চলতে থাকে, কান্নার শব্দ আরও বেড়ে যায়। অযত্ন আর অবহেলা চলতে থাকে পাখির মায়ের সাথে।
এক সময় জালাল পাখিকে তার মার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তার বউকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মেয়েকে নিতে আবারও ফিরে আসে পাখির মা। জালাল এবার তাকে মেরে তালাক দিয়ে বের করে দেয়। বিলাপের শব্দে এলাকা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। জালালের মার মন এত কান্নাতেও গলে না, কয়েকমাস বয়সের পাখিকে তারা রেখে দেয় তার মাকে শাস্তি দেয়ার জন্য। এত ছোট মেয়ে মা ছাড়া কয়দিনই বা থাকতে পারে, একমাসের মধ্যেই মেয়েটা মরে যায়। একটা দুঃখের জীবনের যবনিকা নেমে আসে। পাখির মায়ের গল্প শেষ হয়ে যায়, সবাই তাকে আস্তে আস্তে ভুলে যায়।
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৩
শোভন শামস বলেছেন: গ্রাম থেকে মফস্বল তারপর শহরে রুপান্তরের গল্প, এক জীবনের কথা বলা যেতে পারে, ধন্যবাদ সাথে থাকবেন।
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: এভাবেই একদিন পাখির গল্প শেষ হয়ে যায় - দারুণ লিখেছেন হে সুপ্রিয়। ভালো থাকবেন ভাইয়া।
২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৪
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ অনুপ্রেরণার জন্য, একবার ভেবেছি আর লিখব না। এখন আবারও লিখতে ইচ্ছা করছে। সাথে থাকবেন।
৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৬
আমি সাজিদ বলেছেন: আরও পড়তে ইচ্ছে হলো। পাখির মায়ের জন্য খারাপ লাগলো।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৬
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ অনুপ্রেরণার জন্য , সাথে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: গ্রাম দেশের কাহিনী।