নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ্যানয় শহর - ভিয়েতনাম, ছবি ব্লগ

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৮

হ্যানয় শহর





হ্যানয়ের রাস্তা



হ্যানয় শহরে










হ্যানয় শহর -পার্ক


হ্যানয় শহরে

হ্যানয় পৌছুতে পৌছুতে রাত বারটা বেজে গেল। রেড রিভার ডেল্টা এলাকায় এই শহর গড়ে উঠেছে। রাতের হ্যানয় দেখতে দেখতে গন্তব্যের দিকে চলছি। বিমান বন্দর থেকে শহর বেশ দুরে। সুন্দর বিমান বন্দর, নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে শহরের দিকে চলছি। রেড রিভারের উপর অনেক ব্রিজ আছে। উন্নয়নের জোয়ার লেগেছে এই দেশে। হো চি মিন সিটি ভিয়েত নামের বাণিজ্যিক রাজধানী আর হ্যানয় দেশের রাজনৈতিক রাজধানী।


হ্যানয় ভ্রমনের প্রথম দিন সকাল বেলা আমরা গাড়িতে করে একশত কিলোমিটার দূরে বাক জিয়াং প্রদেশের পথে রওয়ানা হলাম। শহরের ভেতরের রাস্তা গুলো একটু সংকীর্ণ হলেও হাইওয়ে বেশ প্রশস্থ, হাইওয়েতে চলার জন্য টোলের ব্যবস্থা আছে। শহরে কিছুটা ট্রাফিক জ্যাম পেলাম। চলার পথে দারিদ্র এবং তার থেকে উত্তরণের ধাপগুলো দেখতে পেলাম। এখানে বস্তি যেমন আছে তেমনি সেগুলো ভেঙ্গে নতুন নতুন স্থাপনা বাসস্থান ও দোকানপাট তৈরি হচ্ছে। মানুষজনের পোশাক খুব সাধারন, এর পাশাপাশি মধ্য বিত্ত এবং ধনী মানুষদের জীবনযাত্রা তাদের ব্যবহারের দামি গাড়ি সব দেখতে পেলাম। মোটকথা ভিয়েতনাম উন্নয়নের পথে বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
টোল প্লাজা পার হয়ে আমরা হাইওয়েতে প্রবেশ করলাম। গাড়ী তেমন নেই, যা আছে তা বেশ সুন্দর ভাবে লেন ও স্পীড লিমিটের নিয়ম মেনে চলছে। রাস্তার দুপাশ খোলামেলা, দুরে মানুষের বসতি দেখা যায়। থাইল্যান্ড কিংবা মায়ানমারের চেয়ে ঘন বসতিপূর্ণ এই দেশ, সেসব দেশে আরও অনেক ফাঁকা জায়গা আছে। পাকা বিল্ডিং টিনের ঘর সবই আছে এখানে, রাস্তা থেকে দুরের জনপদের সেই চেনা দৃশ্য। পথের দুপাশে মাঝে মাঝে ফসলের ক্ষেত দেখা যায়, ফাঁকা মাঠে অনেক জায়গাতে কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। হ্যানয় শহরে জায়গার দাম অনেক বেশী, তাই অল্প জায়গাতে তারা বসতবাড়ি তৈরি করে। প্রায় সব বাড়ির জায়গার পরিমান একরকম। এই জায়গাতে তারা দুই তিন তালা ঘর বানিয়ে থাকে। শহরের বাহিরেও সেই একই দৃশ্য। খালি জায়গা থাকলেও তা বাসস্থানের জন্য ব্যবহার না করে ভবিষ্যতে অন্য কাজে লাগানোর জন্য রেখে দিয়েছে।
আমাদের সাথে ভিয়েতনামী গাইড , সে একজন তরুণ সরকারী কর্মকর্তা , বেশ ভাল পরিবার থেকে এসেছে। তারা এক ভাই এক বোন। বাবা উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন, কিছুদিন আগে মারা গেছেন, মা বেশ বড় ব্যবসায়ী। তার মা তাকে একটা মার্সিডিজ গাড়ী উপহার দিয়েছে তার বিয়ের পর। সে ড্রাইভ করা খুব পছন্দ করে। তার স্ত্রী আবার গাড়ী চালাতে পছন্দ করে না , তার জন্য আছে হোন্ডা স্কুটার। তাদের দুটো বাচ্চা বেশ ভাল স্কুলে পড়ে। সমাজতান্ত্রিক এদেশে উচ্চবিত্তরা বেশ ভালই আছে দেখলাম। কম্যুনিস্ট দেশ বলে এখানে ধর্মের চর্চা তেমন একটা নেই। আমাদের গাইড কোন ধর্ম পালন করে না।

হ্যানয়ের রাস্তা
তার বাবার মরদেহ ক্রিমেটরিয়ামে সৎকার করা হয়েছিল। দামী সুগন্ধ দিয়ে এই কাজ হয়েছে, কাজের শেষে দেহাবশেষের ছাই এবং কিছু হাড় তাদের পরিবার ফেরত পেয়েছে। তারা সেগুলো মাটি চাপা দিয়ে সেখানে একটা স্মৃতি স্তম্ভ ও নাম ফলক লাগিয়ে দিয়ে তার বিদেহী আত্মার শান্তির ব্যবস্থা করেছে। বড় ছেলে হিসেবে নিজের কাছে সে তার বাবার দেহাবশেষের ছবি সংরক্ষণ করছে। টাকা থাকলে এদেশে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করার সু বন্দোবস্ত আছে।
বাক জিয়াং প্রদেশে যাওয়ার পথে রাস্তার দুধারে অনেক সবুজ ধানী জমি দেখলাম, শহরের ভেতরে রাস্তার দুপাশে দোকানপাট একটু আঁটসাঁট অবস্থা, তবে মানুষের স্রোত নেই। আমাদের দেশের চেয়ে কম জনবহুল। এখানেও ঘরবাড়ি অল্প জায়গা নিয়ে বানানো, এই নিয়ম সবাই মেনে নিয়ে জীবন যাপন করছে। এব্যাপারে তাদের কোন সমস্যা নেই বলেই মনে হল।
এখানে হাঁসের খামার দেখলাম, খামারে উৎপাদিত ডিম ও মাংসের বিক্রির ব্যবস্থা আছে। একটা সমন্বিত উদ্যোগে এসব কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হয় এবং এলাকার জনগণ তার সুফল ভোগ করে। মানুষের জীবন যাত্রা সাধারন মানের , খাবারও এরা তেমন বেশী খায় না। ফলমূল বেশ আছে বাজারে দেখতে পেলাম। জনগণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দোকান গুলোতে আছে। এটা কর্মঠ এবং শারীরিক গঠন হালকা পাতলা। প্রায় সবাই মদ খায়, এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। শূকরের মাংস তাদের বেশ প্রিয় এবং সুযোগ থাকলে প্রায় সব কিছুতে তারা তা ব্যবহার করে। ফেরার পথে আবার সেই খোলা মাঠ ধানক্ষেত আর দুরের জনপদ দেখতে দেখতে ফিরে চললাম। দুপুর হয়ে গিয়েছিল তাই রাস্তায় একটু বেশী ভিড় দেখলাম। শহরে ঢুকে একটা ইন্ডিয়ান হোটেলে লাঞ্চের জন্য গেলাম। এখানে মুসলিম খাবার পরিবেশন করা হয়। বাবুর্চি ভারতের পশ্চিম বাংলার এখন বঙ্গ প্রদেশের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মুসলমান তরুণ। অনেক বছর ভিয়েতনামে আছে, পরিবার ভারতে থাকে বছরে একবার দেশে যায়।
এখানে হালাল মাংস আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেই ফ্রোজেন মাংস সংগ্রহ করে মুসলিম খাবার বানায় এখানে। মুসলিম খাবারের চাহিদা আছে এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহও আছে। দুপুরে হোটেলে ফিরে হালকা কাপড় চোপর পড়ে নিলাম। বিকেল বেলা হ্যানয় শহর একটু ঘুরে দেখার ইচ্ছে আছে, পায়ে হেঁটে শহর দেখার আনন্দই আলাদা।


হোটেল থেকে বের হয়ে একদিকে সেনাবাহিনীর এলাকা অন্য দিকে শহরের ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা। ভিয়েতনামীরা সবাই যোদ্ধা, এদেশের স্বাধীনতার জন্য তারা একতা বদ্ধ হয়ে পরাশক্তি আমেরিকা আর ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ করে অনেক রক্ত আর ত্যাগের মধ্যে দিয়ে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সারা দেশেই তারা সেই বীরদের স্মরণ করে। ফুটপাতে মানুষ কম, তবে এখানেও মাঝে মাঝে হকার দেখা যায়। রাস্তার মোড়ে গাড়ীর বেশ চাপ দেখলাম। বিকেল বেলা তাই সা রাস্তা জুড়ে গাড়ী এ মোটর সাইকেলে চড়ে সবাই ঘরে ফিরছিল। এই সময় রাস্তা পার হওয়া একটা মহা ঝামেলা। হঠাৎ করে হয় গাড়ী না হয় মোটরবাইক ছুটে আসে।



দুই রাস্তার মাঝে পার্কের মত খোলা চত্বর, এখানে সুন্দর মনুমেন্ট আছে, মনুমেন্টের পাশের খোলা জায়গাতে বাচ্চারা বল নিয়ে খেলছে। পার্কের মত বানানো এই এলাকা সবুজ ঘাস এবং ফুল দিয়ে সাজানো। অনেক ছায়া দান কারী বড় বড় গাছও আছে এখানে। দুপুরের প্রচণ্ড রোদের তাপ থেকে পথিককে এই ছায়া কিছুটা শান্তি দেয়।


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫

শামীম সরদার নিশু বলেছেন: ভালো লাগল

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪১

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: দারুণ লিখেছেন । বেশ গুছিয়ে লিখেছেন । আপনার চোখ দিয়ে হ্যানয় দেখলাম । ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪২

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫

সুমন কর বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪২

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৬

জুন বলেছেন: মার্কিন আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়ে বীরের মত লড়াই করেছিল ভিয়েতনাম । অত্যন্ত পরিশ্রমী এই জাতি খুব শীঘ্রই অনেক উন্নত হবে তারই পুর্বাভাস লক্ষ্য করা গেলো আপনার লেখায় । ভিয়েতনাম যাবার অনেক পরিকল্পনা করেও কেন জানি শেষ মুহুর্তে বাতিল হয়ে যাচ্ছে । আপনার লেখায় সেখানে যাবার আগ্রহ বৃদ্ধি পেলো । জাতি হিসেবেও তারা বেশ আন্তরিক । চীনের প্রাচীর দেখার সময় এক হাসিখুশী মহিলা তার দুটি কিশোর ছেলেকে নিয়ে আমাদের সংগী হয়েছিলেন । তবে ক্যাম্বোডিয়া আর লাওসের সরকারী কর্মচারীরা যথেষ্ট দুর্নীতিপরায়ন। ঐখানে কি অবস্থা ?
ভালোলাগলো আপনার ভ্রমন কাহিনী ।
+

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আগামী পাঁচ বছর পর আমার দেখা ভিয়েতনাম হয়ত আমি চিনতে পারব না। এরা জাপানী আর কোরিয়ান ব্যবসায়ী আর পর্যটকদের টার্গেট করে তাদের সম্পদ ও অর্থ বিনিয়োগ করছে।
এরা কেমন আমেরিকানরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল। দুর্নীতির ব্যাপারটা বুঝিনি, তবে প্রতারকের দেখা পাইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.