নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হোটেলে নাস্তা করে কু চি টানেল দেখতে রওয়ানা হলাম। হো চি মিন সিটি থেকে দেড়ঘণ্টার পথ। শহরটা একটু ঘিঞ্জি, পুরাণ খোলস পালটে আধুনিকতার ছোঁয়ালাগা শুরু হয়েছে শহরের এই দিকটাতে। ফরাসী কায়দায় বানানো কিছু বাড়ী ঘর দেখা যায় পথ চলতে। আমাদের দেশের মত টিনের ঘর ও দোকান পাট আছে শহরের বাহিরে। শহর থেকে বের হওয়ার পর রাস্তার দুপাশে অনেক খালি মাঠ, চাষাবাদ চলছে কলের লাঙলে, গরু দিয়ে চাষের রেওয়াজ নেই এখন।
কু চি টানেল - অভ্যর্থনা এলাকা
কু চি টানেল আমেরিকান সৈন্যদের জন্য আতংকের বিষয় ছিল এর পাশাপাশি কু চি টানেলের জীবন ভিয়েতকংদের জন্য ও তেমন সুখকর ছিল না। গরম, পোকামাকড়, বাতাসের অভাব, রোগব্যাধি সব মিলিয়ে এখানে জীবন ছিল কঠিন সংগ্রামের। অনেক সময় বিমান আক্রমন ও বোমা ফেলার কারনে দিনের পর দিন ভিয়েতকংদের টানেলের ভিতরে থাকতে হত। অনেক গেরিলা রোগে ভুগে বিশেষত ম্যালেরিয়ার কারনে মারা গিয়েছিল। যুদ্ধের কারনে মৃত্যুর থেকে এর সংখ্যা কম ছিল না। দিনের বেলায় গেরিলারা টানেলে থাকত রাতে তারা আমেরিকান সৈন্যদের আক্রমন করত, মৃত দেহ সরিয়ে ফেলত কিংবা তাদের রসদ সংগ্রহ করত। ১৯৬৮ সালের টেট অফেন্সিভ এর সময় ভিয়েতকংরা এই টানেলকে তাদের বেইজ হিসেবে ব্যবহার করত।
কু চি টানেল এলাকা বেশ বড় পরিসরে সাজিয়েছে এদেশের সরকার। বড় রাস্তা, সাজানো বাগান এবং পর্যটকদের ফ্রেস হওয়ার সুযোগ আছে। এখানে বেশ গরম, সবসময় তাপমাত্রা বেশী থাকে, পানি খেতে হয়, বাতাসে অনেক জলীয়বাষ্প এখানে প্রচুর ঘাম হয়।এই পরিবেশে ভিয়েত কং গেরিলারা যুদ্ধ করে আমেরিকার মত শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে হারিয়ে দিয়েছিল। ভিয়েত কং গেরিলারা ফ্রান্স আর আমেরিকার জন্য মূর্তিমান ত্রাস ছিল। ভিয়েত নামের জনগণ তাদের এই আত্মত্যাগের কথা সবসময় গর্বভরে স্মরণ করে ও সবাইকে জানায়।
টিকেট করে ভেতরে যেতে হয়, সাথে গাইড থাকে।
টানেলের বনপথ
গাইড এলাকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে
ব্রিফিং এর ছাউনি
ছোট ঝুরি নিয়ে গেরিলারা টানেল খুঁড়ত
আধুনিকতা এবং অতীত মিলিয়ে ব্রিফ
শত্রুদের জন্য বানানো ফাঁদ এখন পর্যটকদের জন্য সাজানো
বনপথে
কামারশালা
টানেলে ঢোকার রাস্তা –এখন টুরিস্টদের জন্য সাজানো
১৯৬০ সালে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে এই কু চি টানেল থেকে ভিয়েতকং গেরিলারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। কম্বোডিয়ার সীমান্ত থেকে এই টানেল হো চি মিন সিটি পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। শুধুমাত্র কু চি জেলাতে ২৫০ কিলোমিটার টানেল ছিল। মাটির নিচে কয়েক তালা পর্যন্ত এই টানেলের বিভিন্ন অংশ ছিল। এখানে অসংখ্য ট্র্যাপ ডোর বা ফাঁদ, থাকার জায়গদ,রসদের গুদাম, অস্ত্র তৈরির কারখানা, হাসপাতাল, কমান্ড সেন্টার এবং রান্নাঘর ছিল। মাটির উপর থেকে এই পাতাল এলাকার কোন আভাস পাওয়া যেত না।
১৯৬৬ সালের জানুয়ারী মাসে প্রায় ৮০০০ আমেরিকান সৈন্য কু চি টানেল ধ্বংস করার জন্য অপারেশন ক্রিম্প নামে এক অভিযানে নামে। প্রথমে বি ৫২ বিমান দিয়ে অনেক বোমা ও বিস্ফোরক ফেলার পর অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, তবে তা সফলতার মুখ দেখেনি। গেরিলারা টানেলের আরও ভিতরে চলে গিয়েছিল। এক বছর পর আবারও ৩০০০০ সৈন্য দিয়ে অপারেশন সিডার ফলস পরিচালিত হয়, গেরিলারা তখন অন্য জায়গাতে সরে যায় এবং পড়ে আবার ফিরে এসে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে টেট অফেন্সিভ পরিচালনা করে।
গাইডেড ট্যুর শেষে বাহিরের এলাকা
এখান থেকে বাস বা গাড়িতে করে এলাকা ছাড়ে
বনপথে প্রথমে একটা মাচানের কাছে গেলাম, এখানে বসার ব্যবস্থা আছে, পুরো কু চি টানেল এবং এখানকার যুদ্ধ সম্পর্কে বক্তৃতা ও ভিডি ওর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।
ভিয়েতকং গেরিলাদের ডাইনিং হলে বাঁশের বেঞ্চ আর টেবিলে বসিয়ে আমাদেরকে আনারস আর টুকরো করে কাটা কাসাভা খেতে দিল। এই এক বা দুটো টুকরো একজন গেরিলার এক দিনের খাবার ছিল। মাঝে মাঝে এসব ও জুটত না, উপোষ থেকেই যুদ্ধ করতে হত। পরের দিন খাবার খেতে ফিরে আসবে কিনা তাও ছিল অনিশ্চিত। টানেল দেখে শেষ করার পর পর্যটকরা চাইলে এখানকার সুন্দর ফায়ারিং রেঞ্জে এ কে ৪৭ বা অন্য রাইফেল পেমেন্ট করে ফায়ার করতে পারে। পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে তিন ঘণ্টা লাগে, আমরা একটু শর্ট করে দেখা শেষ করলাম। দুপুর হয়ে গেছে, বেজায় গরম আবহাওয়া। লাঞ্চ করার জন্য বাসে চড়ে সিটি সেন্টারের কাছে মুসলিম রেস্টুরেন্টে রওয়ানা হলাম।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২
শোভন শামস বলেছেন: সঠিক, সুপার পাওয়াররা তাদের বেশ শ্রদ্ধা করে।
তারাও মুচকি হেসে সবাইকে উন্নয়নের সাথী করে নিয়েছে।
সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬
পুলহ বলেছেন: আপনার লেখা সাবলীল এবং গোছানো, পড়ে আরাম পেয়েছি।
পোস্টের বিষয়বস্তুও যথেষ্ট রোমাঞ্চকর।
সব মিলে প্রিয়তে নেওয়ার মত পোস্ট।
শুভকামনা ভাই।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৩
শোভন শামস বলেছেন: আপনাদের ভাল লাগাতেই আনন্দ। সুন্দর ভাবে গাইড করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখায় এই ঐতিহাসিক জায়গাটা। এটা দেখানোর সময় তাদের আবেগ, ভালবাসা, আত্মত্যাগ এবং তাদের দেশপ্রেম ও গর্বের বহিঃপ্রকাশ থাকে।
সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৬
মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: ভিয়েতনাম বাশীকে আমার সালাম, সত্যিই তার আমেরিকাকে শিখিয়ে দিয়েছে।