নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়া সোফিয়া তোপকাপি প্যালেস – ইস্তাম্বুল-৪

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫৬



ইজিপ্সিয়ান অবলিস্ক–হিপ্পোড্রোম
নীল মসজিদের পাশেই সুলতান আহমেত স্কয়ার। এই এলাকার আশেপাশেই রয়েছে সব ঐতিহাসিক জায়গা। রোমান আমলের ঘোড়দৌড়ের রাস্তা বা হিপ্পোড্রোমের এখনকার নাম সুলতান আহমেত মেয়দানী। প্রাচীনকালে এই এই হিপ্পোড্রোম মাঠে খেলাধুলা, সামাজিক, রাজকীয় অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত । রোমানদের সময় সম্রাটদের বিনোদনের জন্য রথের দৌড়ের আয়োজন হত, এজন্য রোমানসাম্রাজ্যের বিভিন্ন নগরীতে হিপ্পোড্রোম বানানো হয়েছিল।সম্রাট কনস্ট্যানটাইন ইস্তাম্বুলে রাজধানী স্থানান্তর করার দুইশ বছর আগে সম্রাট সেপ্টিমিয়াসের সময় ইস্তাম্বুলে এই হিপ্পোড্রোম তৈরি হয়। প্রায় ৪০০ মিটার লম্বা এবং ১২০ মিটার চওড়া চারকোনা মুল পথের এই স্টেডিয়ামের চারদিকে ছিল দুই স্তরের গ্যালারী, এই গ্যালারীতে এক লক্ষ দর্শক বসতে পারত। এক সময় এর উত্তর দিকে তামার তৈরী ঘোড়ার চারটি মুর্তি দিয়ে সাজান ছিল। ক্রুসেডাররা সেগুলো লুট করে নিয়ে যায়। জায়গাটাকে সাজানোর জন্য মিশর থেকে আনা ওবেলিস্ক, এবং ডেলফির এপোলো মন্দির থেকে সর্প স্তম্ভ এনে এখানে বসানো হয়।
অটোমান তুর্কীরা ইস্তাম্বুল দখল করার পর থেকে হিপ্পোড্রোম তার গুরুত্ব হারাতে থাকে। হিপ্পোড্রোমের পাশে ব্লু মস্ক তৈরীর সময়ে হিপ্পোড্রোমের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়।রথ দৌড়ের পথ, দেবদেবীর মুর্তি এখন আর নেই, তবে দেওয়াল ঘেরা ওবেলিস্ক, মিশরীয় ওবেলিস্ক, সর্প স্তম্ভ বা সারপেন্ট কলাম এখন ও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।ওবেলিস্ক গুলোর একটা দেখে মনে হয় কেউ এটা থেকে খুবলে খুবলে কি যেন নিয়ে গেছে। এক সময় এটাতে পিতলের আবরন ছিল, ক্রুসেডাররা সেই পিতলের আবরন তুলে নিয়ে গেছে। মিশরীয় ওবেলিস্কে প্রাচীন মিসরের পিরামিডের গায়ের চিত্রলিপি আঁকা আছে।
সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন ইস্তাম্বুল বা প্রাচীন বাইজেন্টিয়ামকে রাজধানী বানানোর পরে একে সাজানোর জন্য ডেলফির এপোলো মন্দির থেকে সর্প স্তম্ভ এনে হিপ্পোড্রোমে স্থাপন করেন। ব্রোঞ্জের নির্মিত পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে উপরে উঠে যাওয়া তিনটে সাপ দিয়ে এই স্তম্ভ বানানো । স্তম্ভের চুড়ায় ছিল সাপের মাথার আর তার উপর বসানো পিতলের পাত্র। কালের বিবর্তনে এখন মাটি থেকে পাঁচ ছয় ফুট গভীর গর্তে বসানো এ স্তম্ভের গোড়ার দিকটা কেবল টিকে আছে। দর্শকরা এই পিলার গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। এই চত্বর মানুষের সমাগমে জমজমাট।

মোজাইক মিউজিয়াম
ব্লু মস্ক থেকে বের হয়ে একটু নীচে বাজার। এখানে সুভেনির ও নানা ধরনের হস্তশিল্পের পণ্য পাওয়া যায়। বেশ অনেক দোকানপাট এখানে, নিজের জন্য কেনাকাটার তেমন কিছু ছিল না তাই এখানে বেশী সময় কাটাইনি। একটু এগিয়ে গেলে মোজাইক মিউজিয়াম। এখানে ভেতরে ঢুকতে টিকেট লাগে। ১৯৩৫ সালে গ্রেট প্যালেস এলাকাতে এই খনন কাজ শুরু হয়। প্রাচীন প্রাসাদে ব্যবহৃত চতুর্থ থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত নানা ধরনের মোজাইক এখানে ডিসপ্লে করা আছে। সময় নিয়ে আসলে আস্তে আস্তে ঘুরে এগুলো দেখা যায়। এখান থেকে সোজা রাস্তা আয়া সোফিয়া ও তোপকাপি প্রাসাদের দিকে চলে গেছে।



আয়া সোফিয়া
তোপকাপি প্রাসাদে ঢোকার আগে হাতের বাম দিকে বিশাল এলাকা নিয়ে হাগিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া চার্চ। এই গির্জাকে নানা নামে ডাকা হয়, সব নামেরই অর্থ হল পবিত্র জ্ঞান। ৩৬০ সালে সম্রাট দ্বিতীয় কনস্ট্যান্টিয়াসের আমলে এই জায়গাতে প্রথম গীর্জা নির্মান করা হয় । সেই গির্জা ধ্বংস হওয়ার পর সম্রাট দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস ৪১৫ খৃস্টাব্দে দ্বিতীয় গির্জা নির্মান করেন । ৫৩২ সালে গির্জাটি পুনরায় ধ্বংশ প্রাপ্ত হলে সম্রাট জাস্টিনিয়ান পুনরায় আবার গির্জা নির্মান কাজ শুরু করার আদেশ দেন । ৫৩৭ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হয়। পরবর্তী এক হাজার বছর ধরে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গীর্জা ছিল । বাইজেন্টাইন স্থাপত্যকলার এক অপূর্ব সুন্দর নিদর্শন এই গীর্জা । গীর্জাটি ২৭০ফুট লম্বা এবং ২৪০ ফুট চওড়া আর ১৮০ ফুট উচু। কোন স্টিলের ব্যবহার হয়নি এই গীর্জায় । এর গম্বুজের ব্যাস ১০০ ফুটেরও বেশী। চতুর্থ ক্রুসেডাররা ১২০৪ সালে আয়া সোফিয়া লুট করে এর অনেক সম্পদ নিয়ে যায়। ১২৬১ সালপর্যন্ত এটি রোমান ক্যাথলিক চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৪৫৩ সালে অটোম্যান সম্রাট দ্বিতীয় মেহমুদ ইস্তাম্বুলদখল করার পর আয়া সোফিয়া আবার লুন্ঠিত হয়, গীর্জার ভেতরের মুল্যবান পাথর, সোনাদানা সব তখন লুট হয়ে যায়। সম্রাট মেহমুত এই গীর্জা কেমসজিদ বানানোর নির্দেশ দেন। কাবা শরীফের দিকে মুখ করে মিহরাব তৈরী করা হয়, একই সাথে খৃস্টান ধর্মের নিদর্শন গুলো সরিয়ে ফেলা হয়। চারশ বছরের বেশী সময় ধরে আয়া সোফিয়া মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯৩৫ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল পাশার সময়ে এই মসজিদকে মিউজিয়ামে রুপান্তরিত করা হয়। এটা এখন ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ভেতরে ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু দেখার আছে, আশেপাশের সবকিছুই বেশ সাজানো। দিনটা চমৎকার থাকায় ঘুরতে ভাল লাগছিল। ঝকঝকে রোদ আর নীলাকাশ পরিবেশটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। বেরিয়ে এসে দেরী না করে তোপকাপি পালেসের দিকে রওয়ানা হলাম।

তোপকাপি পালেসের ভেতরে
- ঐতিহাসিক কিছু তথ্য নেট থেকে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ছবি আর বর্ণনায় মুগ্ধ

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:১২

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকুন

ধন্যবাদ ++++++

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

আরমিন বলেছেন: চমৎকার পোস্টে ৩য় ভালোলাগা ! :)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:১২

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকুন

ধন্যবাদ +++++

৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০০

লাবিব ফয়সাল বলেছেন: আয়া সোফিয়া ঘুরতে এসেছি। ট্রামে আপনার লেখা পড়েতে পড়তে পথের এতি টানছি..
আপনার বর্ণনা তথ্যববহুল ছিল।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৩

শোভন শামস বলেছেন: আমার লিখা আপনার কাজে লেগেছে জেনে ভাল লাগল, আশা করি তুরস্ক ভ্রমন মজার ছিল।
সাথে থাকবেন , ধন্যবাদ

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০৫

তারেক সিফাত বলেছেন: " ঝকঝকে রোদ আর নীল আকাশ পরিবেশটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। " আপনি কোন মাসে গিয়েছিলেন? দারুণ আবহাওয়া পেয়েছিলেন ছবি দেখে বুঝতে পারছি। ভালো লেগেছে ভ্রমণ গল্প।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩৫

শোভন শামস বলেছেন: রাতে কিছুটা ঠাণ্ডা ছিল তবে আবহাওয়া ছিল চমৎকার
আকাশের রঙ পরিস্কার নীল , মন টানে সেই আলোতে
ধন্যবাদ সাথে থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.