নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আযান্দেদের জনপদে

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০১

আযান্দেদের জনপদে

জুবা - মারিদি – ইয়াম্বিও- তাম্বুরা



মারিদি

জুবা থেকে মারিদি হেলিকপ্টারের ফ্লাইট টাইম এক ঘণ্টা পঁচিশ মিনিট।এটা ওয়েস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া প্রদেশের একটা ছোট জনপদ। এখানে বিশ মিনিটের মত যাত্রা বিরতি। এখানকার আবহাওয়া বেশ ঠাণ্ডা প্রকৃতি সবুজ, পরিবেশ মনোরম।এই জায়গাতে প্রচুর কলা আম ও পেঁপে হয়, দাম ও বেশ কম, তাছাড়া প্রচুর শাকসবজি ও এখানে পাওয়া যায়। মারিদি থেকে মাটির রাস্তা ইয়াম্বিও চলে গেছে, সেখান থেকে জুবা যেতে হয়। একটা পুরনো এয়ারস্ট্রিপ আছে এখানে, হেলিকপ্টার এখানেই ল্যান্ড করে।এখানকার মানুষগুলো শান্ত প্রকৃতির ও বন্ধুভাবাপন্ন। মারিদির কাছাকাছি আসতেই ভু প্রকৃতিতে একটু পরিবর্তন দেখলাম।বেশ বড় এলাকা নিয়ে সমতলের মধ্যে হঠাৎ মসৃণ পাথুরে পাহাড়, ছোট বড় নানা আকারের এসব পাহাড়ে কিছু ছোট গাছপালা ও ঘাস দেখা যায়। পাথরের পৃষ্ঠদেশ বেশ মসৃণ, পাহাড়ের গায়ে বর্ষাকালে পাহাড় থেকে পানির ধারা নেমে আসার দাগ দেখা যায়। পাহাড়গুলো দেখে মনে হয় যেন পৃথিবীর চামড়ার উপর ছোট গুটির মত উঠেছে।রাস্তাঘাট তেমন নেই আসার পথে গাড়িঘোড়াও দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজন নিজেদের লোকালয়ে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করে। পায়ে চলা এরকম অনেক পথ রয়েছে।মারিদি থেকে কঙ্গো সীমান্তে যাওয়া যায়, এটা সীমান্তের কাছাকাছি জনপদ।



মারিদি এয়ারস্ট্রিপ

মিশনারিদের বানানো বেশ কিছু স্কুল ও চার্চ রয়েছে এখানে, এগুলোর বেশিরভাগ ভবন দোতালা ও বেশ সুন্দর নকশাদার । দেখলেই বোঝা যায় নতুন হয়েছে। এনজিও দের বেশ কিছু কার্যক্রম ও এখানে আছে। মেয়েদের শিক্ষার জন্য চার্চ ও এনজিওগুলো কাজ করছে। টুকুল থেকে বুশের মেঠো পথে সাইকেল চালিয়ে মেয়েরা একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করছে। এই দৃশ্য ইয়াম্বিওতেও দেখা যায়।আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ইয়াম্বিও, ফ্লাইট টাইম চল্লিশ মিনিট।বেশ কয়েকমাস পর আবার এখানে আসলাম। জুবার তুলনায় এখানকার আবহাওয়া বেশ শীতল, বড় বড় গাছপালার জন্য এই এলাকা বিখ্যাত।



ইয়াম্বিও-ওয়েস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া

অনেক আমগাছ আছে এখানে এবং প্রায় সারা বছর এখানে আম পাওয়া যায়। তবে এপ্রিলের শেষের দিকে আম পাকার মৌসুম, তখন আমে ভরে যায় এই এলাকা। এখানকার মাটি লাল রঙের, রাস্তাঘাট মাটির এবং বেশ প্রসস্থ, নিরাপত্তা সমস্যা না থাকায় এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভাল বলে মানুষের সমস্যা এখানে কম।জুবা থেকে মারছি তার বোনের বাচ্চাদের জন্য কিছু টিনজাত খাবার পাঠিয়েছে সেগুলো তাঁকে দিয়ে দিলাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই এখানে পাওয়া যায় কেবলমাত্র দামী কিছু কিছু খাবার ও জিনিসপত্র জুবা থাকে আনতে হয়।



তাম্বুরা- ওয়েস্টার্ন ইকুয়েটরিয়া



তাম্বুরা বাজার এলাকা

সকাল বেলা তাম্বুরা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। আমাদের বাহন এল ৪১০ বিমান। পনেরজন যাত্রী এই বিমানে যেতে পারে। ইয়াম্বিও থেকে তাম্বুরা প্রায় ১৮৭ কিঃ মিঃ, রাস্তার অবস্থা ভাল না হওয়াতে জীপে প্রায় ছয় সাত ঘণ্টা সময় লাগে ।আমাদের ফ্লাইট টাইম তিরিশ মিনিট। এই জনপদ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের সীমান্তে। এখান থেকে রাস্তা সীমান্তের দিকে চলে গেছে। সীমান্তে যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগে। এটাও লাল মাটির এলাকা। এখানে প্রচুর আম ও কাসাভা হয়। আম গাছগুলো আমাদের দেশের গাছগুলো থেকে দুই তিন গুণ বড় ও লম্বা। একটা গাছে প্রচুর আম ধরে। গাছের মগডালের দিকে ঝুলে থাকা হলুদ ও লাল রঙয়ের পাকা আমের দৃশ্য দারুন লাগল দেখতে । এখানে বনে খাঁটি মধু পাওয়া যায়, এই মধুর ও বেশ সুনাম আছে।



তাম্বুরা থেকে ইয়াম্বিও ১৮৭ কিঃমিঃ

তাম্বুরা এয়ার স্ট্রিপ থেকে বের হলেই বাজার, তেমন আহামরি কিছু না, আমাদের দেশের গ্রামের বাজারের মতই, পাশের দেশ উগান্ডা থেকে বড় বড় লরিতে করে জিনিষপত্র এখানে আসে।বাজার থেকে সোজা রাস্তা চলে গেছে আমাদের গন্তব্যের দিকে। কিছুদুর গিয়ে আমরা ডানে মোড় নিলাম, সোজা রাস্তা চলে গেছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের সীমান্তে। ওয়াও, ইযো ইয়াম্বিও এই রাস্তাগুলো দিয়েই যেতে হয়।রাস্তার দুপাশে বড় বড় আমগাছ, অজস্র আম ধরে আছে এসব গাছে। বাজারে মানুষ আম বিক্রি করতে আনেনা এখানে, কেনার মানুষ নেই, সবার কাছেই আম আছে। কারো দরকার হলে একটা বাড়িতে গিয়ে কিনে নিতে হয়। এখানে আমের প্রোসেসিং কারখানা বানানো যায়, তবে সমস্যা হল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাজারজাতকরন। আরও অনেক দিন লাগবে এদেশে এধরনের শিল্প কারখানা হতে।



ঘর বাড়ীর কাছেই পারিবারিক কবর - তাম্বুরা

রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট ঘরবাড়ী, আমগাছ ও নানা গাছের ছায়ায় ছায়ায় পায়ে চলা রাস্তা, একটার পর একটা বাড়ী একটু দূরে দূরে, শান্ত গ্রামের পরিবেশ, মাঝে মাঝে স্কুল আছে কয়েকটা। আমরা প্রায় ষোল কিলোমিটার গ্রামের পথে ড্রাইভ করলাম। বাড়ীর সামনেই কবর, স্থানীয়রা তাদের মৃত আত্মীয়দের বাড়ীর কাছেই সমাহিত করে।কবর গুলো বেশ সুন্দরভাবে বাঁধান এবং প্রায় প্রতিটি বাড়ীর সামনেই এধরনের কবর রয়েছে।



গ্রামের ঘরবাড়ী - তাম্বুরা

গ্রামের মানুষেরা সাইকেলে কিংবা হেঁটে তাদের গন্তব্যে চলছে।মেয়েরাও এখানে রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করে।টুকুল গুলোর আশেপাশের এলাকা বেশ পরিস্কার এবং লাল মাটি দিয়ে লেপে দেয়া। আজান্দে গোত্রের মানুষেরা থাকে তাম্বুরাতে, অন্যান্য গোত্রের মানুষ এখানে খুবই কম। এলাকা শান্ত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভাল। এখানকার মানুষদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালই মনে হল।



গ্রাম এলাকা- তাম্বুরা

তাম্বুরাতে অনেক বাড়ীর পাশে ছোট ছোট ইটের ভাটা দেখলাম, স্থানীয় ভাবে বানান ইত দিয়ে এরা টুকুল গুলো তৈরি করে। কিছু কিছু টুকুল সিমেন্ট দিয়ে বানানো আবার কোন কোনটা মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে।মাটি দিয়ে ইট বানিয়ে গাছপালা ও ঘাস দিয়ে ঢেকে আগুন ধরিয়ে দেয়, তারপর সময়মত ইট বের করে নেয় ভাটা থেকে। রাস্তা থেকে ভেতরের দিকে ও এধরনের ভাটার ধোঁয়া দেখা যায়।রাস্তা দিয়ে যতই এগিয়ে যাচ্ছি বন এলাকা ততই কাছে চলে আসছে। আমরা বেশ কিছু সময় কাটালাম, দুপুরের দিকে একই বিমানে করে আবার ইয়াম্বিওতে ফিরে এলাম।



ছোট ছোট ইটের ভাটা - তাম্বুরা

তাম্বুরা থেকে ফিরে এসে আমরা ইয়াম্বিও বাজারে গেলাম। সময়টা দুপুর হলেও বাজার বেশ জমজমাট। বাজারে ঢুকতেই দেখলাম অনেক আম নিয়ে স্থানীয় লোকজন বিক্রির জন্য ঢোকার মুখায় বসে রয়েছে। চার থেকে পাঁচটা আম এক এস এস পি তে বিক্রি করছে। জুবাতে এই আমের দাম কমকরে হলেও তিন এস এস পি। নিজের জন্য কিছু আম কিনলাম। এরপর বাজারে ভেতর দেখলাম সবই পাওয়া যায়। শাক সবজির সরবরাহ অনেক, পেঁপে, আনারস, কলা, তেতুল সবই এখানে আছে। দোকানীরা ছোট ছোট ছাপরা বানিয়ে তাদের সওদা নিয়ে বসেছে। তিন মাসের একটা ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে মা দোকান চালাচ্ছে, বাচ্চাটা হাসিমুখে চারদিকে তাকাচ্ছে। সবকিছুই এখানে এখন স্বাভাবিক। জুবাতে যে জাতিগত সমস্যা হচ্ছে তা এখানে নেই তবে এখানকার সচেতন মানুষেরা বেশ সাবধানে আছে, তারা আশংকা করছে যে তাদের প্রদেশেও এই সমস্যার রেশ আসতে পারে।

পুলিশ অফিসার ইভান্সের সাথে কথা বলছিলাম, সে জানাল তার জীবনের নানা কথা। এক সময় সে মিশনারি স্কুলে পড়ার জন্য খার্তুমে যায়, সেখানে কিছুদিন পড়ার পর সে নিজের দেশে ফিরে এসে যুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধের পর দেশ যখন স্বাধীন তখন সে আবার আগের বেসামরিক জীবনে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করছিল, কিন্তু তার ধারনা হয় এই স্বাধীনতার দাম দেয়া এখন ও শেষ হয়নি।তাই সে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী নেয়। যদি আবার দরকার হয় তবে আবার সে বুশে ফিরে যাবে যুদ্ধ করার জন্য। জুবার অস্থিরতা তার ভাষায় রাজনীতির চাল, এটার সাথে তেল সম্পদের ভাগাভাগির সম্পর্ক রয়েছে। তার প্রদেশের নিচেও আছে হীরা ও নানা ধরনের খনিজ সম্পদ। এসব লুট করার জন্য আগ্রাসী মানুষেরা এখানেও অনেক রক্ত ঝরাবে। সাধারন মানুষের রক্তের বিনিময়ে ধনী হবে গুটিকতক দেশি ও বিদেশী মানুষ। তাই সে প্রস্তুত হয়ে আছে আবারও নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি তার দেশকে রক্ষা করার জন্য।

বিকেল বেলা সূর্যাস্তের একটু আগে হাঁটতে বের হলাম। একটু এগিয়ে গেলেই বেশ কয়েকটা টুকুল। এই টুকুল গুলো বেশ পরিচ্ছন্ন। শন দিয়ে ছাওয়া এদের ছাদ। এসব ঘরে রাতের বেলা ঘুমানো যায়। দিনের বেলা গাছের ছায়ায় মানুষেরা বসে থাকে। রাস্তার আরেক দিকে ছোট একটা দোকান, দোকানের সামনে এলাকার কিছু যুবক বসে আড্ডা দিচ্ছে, তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম।রাস্তার পাশেই অনেকগুলো আমগাছ, বাচ্চারা কাঁচা আমকে ঢিল হিসেবে ব্যাবহার করে উপরের পাকা আম পাড়ার চেষ্টা করছে।এক্তু এগিয়ে গিয়ে চার রাস্তার মোড়, এই বিকেলে কোন পুলিশ ডিউটিতে নেই, গাড়িঘোড়াও সামান্য চলছে। পাশের খেলার মাঠে ফুটবল কেলা চলছে পাশের গাছ থেকে বাচ্চাদের আম পাড়া ও চলছে। সূর্য ডুবে যেতেই একটু একটু অন্ধকার হয়ে আসছে, আমারা ফিরতি পথ ধরলাম।







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩৩

ভারসাম্য বলেছেন: ভাল লাগলো। ছবি থাকলে আরো ভাল লাগতো।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০০

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, নেটে সমস্যার জন্য ছবি দিতে পারিনি।

সাথে থাকবেন।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:১৬

আলী খান বলেছেন: টুকুল জিনিসটা দেখতে কেমন?


শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০৪

শোভন শামস বলেছেন: শন দিয়ে ছাওয়া, মাটি, বাঁশ কিংবা ইট দিয়ে বানানো ছোট গোল ঘর। সাউথ সুদানে এগুলোকে টুকুল বলে।

ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো।ভবিষ্যতে আরও আরও ছবি চাই ।ভালো থাকবেন।

২৭ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০৫

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ+++

নেটে সমস্যার জন্য ছবি দিতে পারিনি।

সাথে থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.