নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

হোয়াইট নাইলের পাড়ে ছুটির দুপুর

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮



জুবাতে হোয়াইট নাইলের উপর একমাত্র ব্রিজ

ছুটির দিনগুলোতে জুবা শহরে বেড়াতে বের হতাম। শহর ছাড়িয়ে নদী পাড় হয়ে ওপারের খোলা মেলা সবুজে ছাওয়া জায়গা দেখতে বেশ ভাল লাগত। সেসব জায়গাতে চীনারা অনেক বড় এলাকা লীজ নিয়ে কৃষি খামার বানিয়েছে। একটু আধুনিক গ্রাম গ্রাম পরিবেশ। খামার গুলোতে অনেক স্থানীয়রা কাজ করে। এখানকার পাহারাদাররাও স্থানীয়। বিদেশী হিসেবে আমাদের ভেতরে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোন সমস্যা ছিল না। আমরা মাঝে মাঝে এসব খামার থেকে ফ্রেস শাক সব্জি কিনে আনতাম। ফসলের মাঠ থেকেই তারা এগুলো তুলে দিত।







বেড়ানোর জায়গা বেশী নেই তাই ঘোরাফেরার পর নদীর পাড়ের রেস্টুরেন্ট গুলোতে এসে একটু বিশ্রাম সাথে হালকা কিছু নাস্তা পানীয় সেরে নিতাম।এইসব হোটেলগুলোর লোকেশান চমৎকার। নদীর একদম ধার ঘেঁসে সুন্দর জেটি বানিয়ে, কাঠের মজবুত পাটাতনের উপর ছাতা বসিয়ে সুন্দর বসার আয়োজন আছে। সেখানে বসে নদীর ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে খোলামেলা দৃশ্য দেখে সময় বেশ ভাল কেটে যেত। জুবা শহরে ছবি তোলা মানা, এখানকার হোয়াইট নাইলের উপর একমাত্র ব্রিজের ছবি তোলা একেবারে দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে এখানে। এইসব হোটেল গুলোতে বসে মনের সুখে নদীর পাড় ও ব্রিজের ছবি তোলা যায়। এখানে কবি নীরব।





ও পাড়েতে যতসুখ আমার বিশ্বাস

এপারের তুলনায় ওপার এখনও তেমন উন্নত হয়নি। বেশী দেরী নেই আর ওপাড়েও নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা গড়ে উঠবে। ওপাড়ে একটা জেটি আছে, মাঝে মাঝে এই জেটি পারাপারের কাজে লাগে। হোটেলের পাটাতনের সাথে বাধা নৌকা কিংবা ছোট স্পীড বোটে করে শৌখিন মানুষেরা নদী ভ্রম্নে বের হয় মাঝে মাঝে। তবে ভাল চালক না হলে নদীতে না যাওয়াই ভাল। নদীর তলাতে অনেক পাথুরে পাহাড় এবং ডুবো চর আছে, যে কোন সময় এখানে অসতর্ক হলে বিপদ নেমে আসতে পাড়ে।





নদী পাড়ের হোটেল

গতানুগতিক রুটিনের বাহিরে এখানে এসে সময় কাটাতে বেশ ভাল লাগে। মাঝে মাঝে এখানে কনসার্টের আয়োজন হয়। তখন স্থানীয় কিংবা উগান্ডার ব্যান্ড দল আফ্রিকান বা ইংরেজি গান গেয়ে দর্শকদের আনন্দ দেয়। নদীর পাড়ে কিছু সময় কাটিয়ে আবার আমরা শহরের ভিড়ে হারিয়ে যেতাম। এভাবে কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসতাম নিজেদের প্রবাসী নিবাসে।

অনেক দিন জুবা শহরে বেড়াতে যাওয়া হচ্ছে না। জীবনযাত্রা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বহুদিন পর শনিবার বাহিরে গেলাম। প্রথমে টম্পিং এলাকার কাছেই একটা চীনা দোকানে গেলাম। এখানে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল, বেশ ভালই চলছিল। গত দুই মাসে প্রায় সব বিদেশী জুবা শহর ত্যাগ করে চলে গেছে তাই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এখন বন্ধ। নীচের তালার দোকানটা এখন খোলা। চীন থেকে অনেক পণ্য এসেছে। সব তাক জিনিসপত্রে ভর্তি। দোকানে খদ্দের প্রায় নেই বললেই চলে। কাউন্টারে একজন চীনা যুবতী বসে বই পড়ছে।

আজকে চীনা খাবার খাব তাই এখানে আসা। এখানে হটপট নামে একটা প্যাকেট আছে, এর ভেতর নানা মসলার মিশেল থাকে। এক লিটার পানির সাথে এক কাপ তেল সাথে এই প্যাকেটের পুরো মসলা মিশিয়ে দিতে হয়। কিছুদিন আগেও এক প্যাকেট দশ এস এস পিতে পাওয়া যেত, এখন দাম বেড়ে গেছে তাই পনের এস এস পি দিতে হল। রাতে ইন্ডাক্সান হিটারে সসপ্যান বসিয়ে দুই প্যাকেট মসলা, দুই লিটার পানি সাথে দুই কাপ তেল দিয়ে জ্বাল দিতে থাকলাম। বেশ সুন্দর গন্ধে রুমটা ভোরে গেল একটু পরে।

এই রান্নার আয়োজন একটু আগে থেকে করতে হয়। চীনা দোকান থেকে বের হয়ে জুবা বিমানবন্দরের সামনে দিয়ে কনিও কনিও মার্কেটে চলে এলাম। এটা জুবা শহরের বড় পাইকারি বাজার। এখানে শাক সবজি থেকে শুরু করে সব কিছুই পাওয়া যায়। আজ রাতের পার্টির জন্য গাজর, ক্যাপসিকাম, আলু মাশরুম টমেটো কিনলাম। সবগুলোই পিস হিসেবে দাম, আমাদের দেশের সাথে তুলনা করলে অনেক দাম হবে। এরপর এক হানা কলা কিনলাম পনের এস এস পি আর তিনটা আম কিনলাম বার এস এস পি দিয়ে।

রাস্তা ঘাট স্বাভাবিকই মনে হল, তবে তা বলি কি করে, জুবাতে এখন ও প্রায় পঞ্চাশ হাজার শরণার্থী আছে। প্রতিদিনই এদের সাথে দেখা হচ্ছে। তাঁরা আরও অনেক দিন এভাবে কাটাবে বলেই মনে হয়। জীবনকে সহজ করে নিয়ে তাঁরা শিবিরের ভেতরেই ছোট দোকানপাট খুলে বসেছে। সামনে একটা ছোট টুল বা টেবিলের উপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেছে তারা।এসব দোকানে তাজা শাকসবজি, মাংস, তেল ডাল সবই আছে। এর সাথে আছে আধুনিক যুগের অতি দরকারি মোবাইল কার্ড। জীবন কাটাতে হবে তাই জীবনের প্রয়োজনে তারা তাদের সাময়িক বাসস্থান একটু খানি হলেও আরামদায়ক করার চেষ্টা করছে।



সারা আফ্রিকা জুড়ে নৃশংস গণহত্যা চলেছে যুগ যুগ ধরে। অনেক স্বাধীন দেশেও নিজেদের মধ্যে অন্তকলহ চলছে।নতুন স্বাধীন দেশ সাউথ সুদান ও এর ব্যতিক্রম নয়। লাইবেরিয়াতে সামুয়েল দো গণহত্যা চালিয়ে ছিল, সিয়েরা লিয়নের ফ্রি টাউনের রাস্তায় পড়ে ছিল মানুষের লাশ। এসবই ছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট বাগবো গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়েও একগুঁয়েমি করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, এর ফলে বেরেছিল অযথা হত্যা আর রক্তপাত। বুরুন্ডি আর তার পাশের দেশ রুয়ান্ডার নৃশংস গণহত্যা পৃথিবীর মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। এই ধরনের জাতিগত সংঘাতের দিকে সাউথ সুদান এগিয়ে যাক এটা কারো কাম্য নয় এখন।

স্বাধীনতার আগে প্রায় আট বছর এদেশে স্বায়ত্তশাসন ছিল। এই সময়ে শাসনের দায়িত্বে যারা ছিল তারা দেশটাকে অব কাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রদেশগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। রাস্তায় বিশাল বিশাল খাদ, যান চলাচলের জন্য যা কখনই কাম্য নয়। নীল নদের উপর জুবা শহরে নতুন একটা ব্রিজ বানানো হয়ে উঠেনি আজ অবধি। বাজার অনুন্নত, বহু বছর ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, পানীয় জলের লাইন এখনো কার্যকরী হয়ে উঠেনি। এসব উন্নয়ন অনেক আগেই হতে পারত কিন্তু তা হয়নি। মানুষের দুর্ভোগ তাই সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে। স্বাধীনতা তাই তাদের কাছে এখনো ফলদায়ী হয়ে উঠেনি। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি একটু শান্ত হয়ে আসছে, সবাই দিনের শেষে একটু শান্তি চায়। শান্তির পায়রা এদেশে উড়ুক এটাই আমাদের সবার কাম্য।



মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০২

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: দৌড়ের উপ্রে আছি, পরে পড়ব।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ+++

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০০

সুমন কর বলেছেন: গুড পোস্ট।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ+++
আপনাদের ভাল লাগাতেই আনন্দ।

৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জুবার এই ব্রিজটা আমি দেখি নি, বা মনে পড়ে না। আমার একবার সুদানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। চমৎকার অভিজ্ঞতা।

হটপট কী জিনিস, ভুলে গেছি। মাত্র ৩টা আরবি শব্দ ব্যবহার করে সুদান ভ্রমণ শেষ করেছিলাম- সাদিক, কুল্লু খালাস---- আরেকটা শব্দের কথা ভুলে গেছি ;)

ভালো লাগলো লেখা।

সময় পেলে এ লেখাটায় ঢুঁ মারতে পারেন। দু-একটা ছবি আপলোড করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ছবিগুলো অন্য পিসিতে ;)

ভালো থাকুন।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০১

শোভন শামস বলেছেন: আপনার লিখাটা অবশ্যই পড়ব...।

ব্রিজটা জুবা শহরের একমাত্র ব্রিজ

লিখা ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম

সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ++++++

৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:২৫

উদাস কিশোর বলেছেন: ভাল লাগা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০১

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ++++++

৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: গুড পোস্ট।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০১

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ++++++

৬| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩১

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: নাইস পোস্ট। :)

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ++++++

৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০৯

শোভন শামস বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ+++
আপনাদের ভাল লাগাতেই আনন্দ।

৮| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

আদম_ বলেছেন: সবাই দিনের শেষে একটু শান্তি চায়।

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪

শোভন শামস বলেছেন: সব মানুষই আসলে এক।
সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ

৯| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো, ছবি লেখা সহ একটা পরিপূর্ণ বর্ননা। শুভেচ্ছা।

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:৩৫

শোভন শামস বলেছেন: আপনাদের ভাল লাগাতেই আনন্দ

সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.