নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাউথ সুদানে নতুন বছর

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০০





সাউথ সুদানের দশটা প্রদেশ- ডানের তিনটা প্রদেশে যুদ্ধ চলছে



নতুন বছর ২০১৪ সাল চলে এসেছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে সাউথ সুদানে গৃহযুদ্ধ অবস্থা চলছে। এদেশের দুটো বড় গোত্র ডিঙ্কা ও নুয়ের এখন মুখোমুখি। অনেক সমস্যা থাকলেও জুবা শহরে মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতে পারতাম। এখন শহরের অবস্থা থমথমে, পাশের দেশ উগান্ডা থেকে সেনাবাহিনী এসেছে, তারা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারী বাহিনীকে সহায়তা করছে। মাঝে মাঝে রাস্তা বন্ধ করে নানা ধরনের চেকিং চলে। একসময় উগান্ডা, ইথিওপিয়া এবং আশেপাশের দেশের মানুষেরা এদেশে ব্যবসা করত। তারা এখন অনেকে দেশ ছেড়ে গেছে, মালাকাল ও বোর শহরে অনেক বিদেশীর দোকান লুট করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।







আপার নাইল, জংলে ও ইউনিটি প্রদেশে সরকার ও বিদ্রোহীদের মাঝে যুদ্ধ চলছে। শহর হাতবদলের পাশাপাশি মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ, গৃহহারা হচ্ছে অনেক পরিবার, মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। উদ্বাস্তুদের সংখ্যা চার লক্ষ আটষট্টি হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জুবা, মালাকাল ও বোর শহরের আশেপাশে এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।





ডিসেম্বর ১৩- জানুয়ারী ১৪’র গৃহ যুদ্ধে অনেক মানুষ এখন গৃহ হারা



চার্লসের সাথে কথা বলছিলাম, আমাদের সাথে সে ইংরেজিতে কথা বলে, নিজ দেশের মানুষের সাথে প্রায় সব কথা আরবিতে বলে। এই আরবি ভাষা আঞ্চলিক এবং এর সাথে মূল আরবি ভাষার মিল খুব সামান্য। সাউথ সুদানে মানুষরা তাদের নিজ গোত্রের ভাষা ও আরবি ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা কম জানে। চার্লস একজন ডিঙ্কা তার সামনের পাটির নীচের মাঝখানের দাঁত নেই। তার কথা একটু জড়িয়ে যায়। তাদের সামাজিক প্রথা মেনে ছোট বেলায় তার এই দাঁত তুলে ফেলা হয়েছে। একটু অসুবিধা হলেও সে এটা মেনে নিয়েছে, একজন ডিঙ্কা হিসেবে সে বেশ গর্বিত। সাউথ সুদানের গোত্র গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, সেগুলো হল নাইলটিক, নাইলো হেমিটিক এবং ওয়েস্টার্ন সুদানিক গ্রুপ।



নাইলটিক গোত্র গুলো হল, ডিঙ্কা, নুয়ের,সিল্লুক, মুরলে, আকলি, মাবান, বাঙ্গ, বাই, নডোগ,লাঙ্গ, আজা ইত্যাদি। চার্লস এই গোত্রগুলোরই একজন। বারি, মুন্দারি,লাটুকু, টোপসা , ডিডিঙ্গা ইত্যাদি নাইলো হেমিটিক দলের। এছাড়াও আছে ওয়েস্টার্ন সুদানিক গ্রুপ, এরা হল, জান্দে, মাদি, মুণ্ডু, বাকা, মাকারাকা ইত্যাদি গোত্র। ডিঙ্কারা প্রায় সাত শতাংশ এবং এরাই সাউথ সুদানে সংখ্যা গরিষ্ঠ।

পরিচিতি মুলক বইতে দেখলাম সাউথ সুদানিজরা তাদের দীর্ঘ দেহের জন্য বিখ্যাত। তারা সাহসী, দেশপ্রেমিক, অতিথিবৎসল, সৎ এবং পরিশ্রমী। এরা বর্ধিত পরিবারের আত্মীয়দের নিয়ে গ্রাম বানিয়ে বসবাস করে। আলাদা থাকা হলেও তারা একে অন্যের কাছাকাছি থাকে। এদের সমাজ আত্মীয় সম্পর্ক, গোত্র এবং গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই গ্রামের প্রধানরাই এখানকার নেতা। এরা সাহসী ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, তাই দশকের পর দশক ধরে এরা যুদ্ধ করেছে, এখন তারা স্বাধীন হয়েছে সত্য তবে যুদ্ধ তাদের আজও পিছু ছাড়েনি। এখন তারা নিজেদের মাঝে যুদ্ধ করছে।

সাউথ সুদানিরা খ্রিস্টান, ইসলাম এবং আদি ধর্ম পালন করে থাকে। সুদানের সাথে শরিয়া আইন নিয়ে এদের বেশ সমস্যা হচ্ছিল। তবে সাধারন মানুষ নিজেদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে তেমন মাতামাতি করে না। কিছু কিছু গোত্র আত্মার ক্ষমতাতে বিশ্বাস করে। প্রাচীন নিয়ম অনুসারে বৃষ্টি আনয়নকারী, গনক, ধর্মীয় প্রধানরা এদের সমাজে মর্যাদার আসনে থাকে। পরিবারের মধ্যে কাজের স্পষ্ট ভাগ আছে, পুরুষরা পরিবার রক্ষার ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। মহিলারা ঘরের সব কাজ সামলায়।

লিঙ্গ, বয়স এবং সামাজিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এরা একসাথে খাবার খেয়ে থাকে। গোত্র ভেদে এরা অনেক রকমের খাবার খেয়ে থাকে। এদের প্রধান খাবার দুধ, গরুর মাংস, মাইলো, মধু। মাছ, খাসির মাংস, শাকসবজি, বাদাম, বিন এবং ইয়াম প্রসিদ্ধ।





ট্র্যাডিশনাল সাউথ সুদানিজ ডান্স

সব গোত্রেরই বয়স প্রাপ্তির সময় কিছু আনুষ্ঠানিকটা আছে। কেউ নীচের পাটির একটা দাঁত ফেলে দেয়, কেউবা মুখে দাগ আঁকে, বিশেষ ধরনের অলংকার পড়ে বা খৎনা করে (বিশেষত বান্টু গোত্র গুলোতে)। নানা ধরনের অনুষ্ঠান তারা পালন করে থাকে, এসব অনুষ্ঠানে তারা স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র ও পোশাক ব্যবহার করে।

বিয়ে সাউথ সুদানিজ সমাজে একটা গুরুত্ব পূর্ণ অনুষ্ঠান, কিছু কিছু গোত্রে এই অনুষ্ঠানে বর ও কনের নিকট আত্মীয় এবং দূর সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনদের কে দাওয়াত দেয়া হয় কিংবা তাদের উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। রবার্টের বিয়ের সময় হয়েছে, সে তার পরিবারকে এব্যাপারে জানিয়েছে। সাধারনত ছেলেরা সরাসরি তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে না, পিতামাতার উপর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করার দায়িত্ব পড়ে। নানা ধরনের সামাজিকতা থাকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে, তাদের মধ্যে দুই পরিবারের মাঝে উপহার বিতরন একটা গুরুত্ব পূর্ণ এবং স্বাভাবিক রীতি।

বিয়ের সময় বর কনেকে যৌতুক দিতে হয়। ডিঙ্কাদের বিয়েতে গরু দিতে হয়। সাউথ সুদানিদের দৃষ্টিতে যে মেয়ে যত সুন্দর তার জন্য তত বেশী গরু যৌতুক হিসেবে দিতে হয়। শুকনা এবং লম্বা হওয়া ডিঙ্কা মেয়েদের সৌন্দর্যের মাপকাঠি। একটা বিয়ে গভীর পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি করে, খুব কঠিন সমস্যা না হলে বিবাহ বিচ্ছেদ একরকম অসম্ভবই বলা চলে। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে বরের পরিবারকে কনেকে দেয়া যৌতুকের কিছু অংশ কিংবা পুরোটাই ফেরত দিতে হয়।





লম্বা শিংওয়ালা গরু এখানে বিখ্যাত

শিশুর জন্মের সময় তার লিঙ্গ ভেদে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। কোন ঘটনা, ঋতু কিংবা পরিবারের আত্মীয়ের নামে নামকরন করা হয়। পশুর পাল যেহেতু পরিবারের মর্যাদার মাপকাঠি তাই কখনো কখনো পরিবারের পশু পালের রঙের নামেও শিশুর নাম রাখা হয়। ষাঁড় এর রঙে ছেলের নাম এবং গাভির রঙে মেয়ের নাম রাখা হয়।

মৃতদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া বেশ ভালভাবে এবং ঘটা করে পালন করা হয়। ডিঙ্কা গোত্রের ছেলেদেরকে ডান দিকে ও মেয়েদেরকে বাম দিকে দাফন করা হয়। কোন কোন সমাজে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও উত্তরাধিকার হিসেবে তার পরিবারের অংশ হয়ে যায়। মৃতের কোন আত্মীয় তাকে বিয়ে করে পরিবারের ধারা বজায় রাখে। মৃত বক্তির কাছের আত্মীয়রা সাধারণত বিধবাকে বিয়ে করে, কোন কোন গোত্রে বিধবা গোত্রের মধ্য থেকে তার পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে পারে।

এদেশে ও চাঁদের আলো আছে আছে জ্যোৎস্না, বিশাল রাতের তারাভরা আকাশে চাঁদের আলো রুপালী আমেজ নিয়ে সারা দেশের উপর ছড়িয়ে পড়ে। এখানে বহুতল ঘরবাড়ি নেই, ঝোপ গাছ , ঘাস আর ফাঁকা মাঠের অন্ধকারে চাঁদ যেন মনের সুখে তার আলো ছড়ায়। রাতে এখানে বিদ্যুৎ নেই বলে চাঁদের আলো আরও মায়াময় লাগে। এখানে রাতে একটু ঠাণ্ডা বাতাস পাওয়া যায়, সারা পৃথিবী তখন একটা শীতল আমেজে ভরে যায়। দেশ থেকে দূরে এই প্রবাসে প্রকৃতিকে কাছে পেলে কেমন যেন আপন মনে হয়।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এদেশে ও চাঁদের আলো আছে আছে জ্যোৎস্না, বিশাল রাতের তারাভরা আকাশে চাঁদের আলো রুপালী আমেজ নিয়ে সারা দেশের উপর ছড়িয়ে পড়ে। এখানে বহুতল ঘরবাড়ি নেই, ঝোপ গাছ , ঘাস আর ফাঁকা মাঠের অন্ধকারে চাঁদ যেন মনের সুখে তার আলো ছড়ায়। রাতে এখানে বিদ্যুৎ নেই বলে চাঁদের আলো আরও মায়াময় লাগে। এখানে রাতে একটু ঠাণ্ডা বাতাস পাওয়া যায়, সারা পৃথিবী তখন একটা শীতল আমেজে ভরে যায়। দেশ থেকে দূরে এই প্রবাসে প্রকৃতিকে কাছে পেলে কেমন যেন আপন মনে হয়।

সারা পৃথিবীটাই যেন এক চিলতে উঠোন। আকাশ তার চাঁদোয়া।
আপনার চোখে যেন ঘুরে এলাম এক অচিন উটোন থেকে...

ধণ্যবাদ।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬

শোভন শামস বলেছেন: দেশ থেকে দূরে দেশের কথা বিদেশের কথা জানতে ভাল লাগে।
লিখা পড়ে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ++++
সাথে থাকবেন, বাকী লিখা গুলো কেমন লাগল জানাবেন।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কত বিচিত্র জীবনধারা ।।
পোস্ট ে ভালোলাগা :)

৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কত বিচিত্র জীবনধারা ।।
পোস্ট ে ভালোলাগা :)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৩

শোভন শামস বলেছেন: জীবন এখানে আসলেই অন্য রকম।

এই জীবনেই এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের সময় পার করছে।

দেশটাকে দেখার চেষ্টা করছি।

সাথে থাকবেন, ধন্যবাদ।

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩২

জুন বলেছেন: আফ্রিকা এক রহস্যময় মহাদেশ যেখানে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠি আর তাদের বৈচিত্রময় জীবন যাত্রা চিরদিনই আমাকে প্রচন্ড আকর্ষন করতো। কত বই আর ম্যুভি দেখেছি বলার নয়। এখনো দেখি সুযোগ পেলে। সেই টারজান, মাউন্ট অফ কিলিমাঞ্জারো হাটারি, বিভুতিভুষনের চাদের পাহাড়। কাজী আনোয়ার হোসেনের একটা বই সেখানে কুমির বোঝাই লিম্পপো নদীর কথা। এছাড়াও আফ্রিকার উপর কত যে ইংরাজী বই পড়েছি তার শেষ নেই।
এখন স্যাটালাইটের কল্যানে সেই গোপন গভীর রহস্যের অনেকটুকুই অনাবৃত। তাছাড়া তাদের অফুরন্ত মুল্যবান সম্পদ তাদের কাল হয়ে দাড়িয়েছে। রক্তপাত আর হানাহানি এখন তীর ধনুক ছেড়ে একে ৪৭ এ এসে পৌছেছে।
খুব সুন্দর করে লিখছেন আজকাল্কার দুনিয়ার যত মাস্তান চালবাজ লোকদের কূট কৌশলের কাছে হেরে যাওয়া নিরীহ, নিরক্ষর, নিঃসার্থ সাধারন লোকদের অসহায় জীবন যাপন এর কাহিনী শোভন শামস।
+

৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শোভন শামস বলেছেন: আফ্রিকা এখনো বিচিত্র ই রয়ে গেছে।

এখনো সাউথ সুদানে থমথমে অবস্থা চলছে।

কাগজে কলমে ২৩ জানুয়ারী ২০১৪ তে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হলেও সাধারণ মানুষ এর সুফল পেতে আরও অনেক সময় লাগবে।

সাথে থকবেন, ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.