নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জুবা থেকে রুম্বেক যাচ্ছি। সাউথ সুদানের লেক প্রদেশের রাজধানী রুম্বেক, এই প্রদেশে কাউন্টির সংখ্যা আটটি। রুম্বেক হল প্রদেশটির রাজধানী শহর। জুবা থেকে দুপুর বেলা হেলিকপ্টারে করে রওয়ানা হলাম। ফ্লাইট টাইম দেড় ঘণ্টা। সময় যে আর কাটে না, হাল্কা ঘুম হয়ে গেল এই ফাঁকে। নিচের দৃশ্য প্রায় একরকম। রুম্বেকের কাছাকাছি আসতেই আকাশ থেকে রুম্বেক শহরটা একটু দেখে নিলাম। মোটামুটি সাজান মনে হল। হেলিকপ্টার লাল মারামের রানওয়েতে নেমে এল। বেশ শক্ত মাটি। এই বিমান বন্দরে প্লেন ও ল্যান্ড করে।
আকাশ থেকে রুম্বেক শহর
খুব সাদামাটা বিমানবন্দর। তেমন কিছুই নেই বলতে গেলে। ছোট ছোট কয়েকটা প্লেন দাঁড়িয়ে আছে দেখলাম। আমাদের ফরমালিটিজ শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বিকেল হয়ে যাচ্ছে, আবহাওয়া এখানে বেশ ভাল। সূর্যের তাপ কমে গেলেও আলো বেশ আছে চারিদিকে। হালাকা বাতাস আরও ভাললাগা এনে দিয়েছে।
রুম্বেক বিমান বন্দর
বিকেল বেলা শহর দেখতে বের হলাম। জানতে পারলাম এখানকার মানুষজন বেশ ভাল। জুবা কিংবা অন্য অনেক প্রদেশের মত বিদেশীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে না। লাল মারামের ধুলোমাখা পথে চলছি। একটা গান মনে পড়ে গেল - তোমার ওই মনটাকে একটা ধুলো মাখা পথ করে দাও , আমি পথিক হব............। এই পথ বহুদূরে বেনতিউ হয়ে সেই সুদানের খারতুমের দিকে চলে গেছে। বেশ প্রশস্থ রাস্তা। চলতে চলতে এই শহরের সবচেয়ে ভাল মাক্স রেস্টুরেন্টের কাছে চলে এলাম। বিদেশীদের জন্য এটা বেশ ভাল একটা খাবারের জায়গা, এরা এখানে সব খাবার বানিয়ে দিতে পারে, তবে এখানকার পিজা বিখ্যাত।
শহরের পথে
আমরা আরও এগিয়ে চললাম রুম্বেক বাজারের দিকে। বাজারে যাওয়ার আগে একটা চার রাস্তার মোড় ও গোল চক্কর আছে। সেখান থেকে সোজা রাস্তা বাজারের দিকে চলে গেছে। গোল চক্করটাও বেশ খোলামেলা, রাস্তায় তেমন ট্রাফিক নেই। মাঝে মাঝে কিছু মোটর সাইকেল চলে, দু একটা গাড়ি দেখা যায়। অনেক ট্রাক আসে বাহির থেকে মালামাল নিয়ে। এখানে সুদান থেকেও কিছু জিনিসপত্র আসে, বেশী আসে উগান্ডা থেকে।
গোল চক্কর
বাজারে বেশ দোকানপাট আছে। মোটামুটি মালপত্র ভালই আছে দেখলাম। মানুষজন কেনাকাটা করছে। শান্ত পরিবেশ। বাজারের মধ্যে মসজিদ আছে একটা, একতালা ঘর, সবুজ রঙ করা এখন একটু মলিন হয়ে গেছে। আমাদের কেনার কিছু নেই একটু ঘুর বেড়ানোই আসল উদ্দেশ্য।
রুম্বেক বাজার এলাকা
দুই তিন সারিতে দোকানগুলো আছে, এর পাশেই কাঁচা বাজার। বিকেল বেলা বলে কাঁচা বাজারে তেমন মানুষজন নেই। এখানে বেশ ভাল মাছ পাওয়া যায়। বাজারে খানিকক্ষণ থেকে আমরা স্বাধীনতা সরণিতে চলে এলাম। তরিতে এধরনের স্কয়ার দেখাছিলাম এখানেও একই রকম। বেশ বড় খোলা মাঠ। ছোট ছেলেরা খেলাধুলা করছে মাঠে। এখানে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয় মাঝে মাঝে, বিশেষত স্বাধীনতা দিবসের সময়। একটা স্থানীয় ছেলের সাথে কথা বললাম। খুশি মনেই বলল বেশ ভাল আছে, ইংরেজি বলতে পারে, বিদেশীদের প্রতি মনভাব ভালই লাগল। তার সাথে ছবি তুললাম। এই শহরে ছবি তোলায় কোন বাধা নেই। জুবাতে ছবি তোলা একদম মানা। এদেশের কিছু কিছু মানুষ হয়তবা তাদের প্রকৃত অবস্থা বাহিরের মানুষদেরকে দেখাতে চায় না।
স্বাধীনতা সরণী – রুম্বেক
ফেরার জন্য আরেক রাস্তা দিয়ে চললাম। এই রাস্তার পাশে বেশ বড় এবং সুন্দর একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে। অনেক বিদেশী এন জি ও এদেশে কাজ করে। এই ষ্টোরে বিদেশীদের জন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এটা সবার জন্যই খোলা। অনেক গাড়ি বাহিরে দাঁড়ান আছে দেখলাম।
ডিপার্টমেন্টাল স্টোর- রুম্বেক
ফেরার পথে ছোট একটা সাইনবোর্ডে পোস্ট অফিস লিখা দেখতে পেলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই অফিস এখন বন্ধ। সরকারী অফিস আদালত সব বন্ধ এখন। দোকানগুলো শুধু খোলা রয়েছে। সন্ধার পর এগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। সূর্যের লাল আভায় এখন প্রকৃতি আলোকিত। একটা মায়া মায়া পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে লাল মারামের উপর আলো পড়ে।
পোস্ট অফিস- রুম্বেক
পথের পাশে বেশ কিছু জনপদে কর্ম ব্যস্ততা দেখলাম। রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকানে মানুষজনের আড্ডা জমেছে। শিশা টানছে কেউ কেউ, দূরপাল্লার ট্রাক ড্রাইভাররা তাদের ট্রাক থামিয়ে বিস্রাম ও খাওয়া দাওয়া সেরে নিচ্ছে। হয়ত রাতটা তারা এখানে কাটিয়ে যাবে। মহিলারা ঘরের কাজকর্ম করছে, টুকুলের বাইরে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছে আজকের মত।
পথের পাশে ছোট জন বসতি
রাস্তার পাশ দিয়ে বিশাল গরুর পাল ঘরে ফিরে যাচ্ছে দেখলাম। পালের সাথে উদোম শরীরের একটা ছেলে হাতে একটা লাঠি নিয়ে ক্লান্ত পায়ে বাড়ীর পথে চলছে। এধরনের আরও কয়েকটা ছোট বড় পশুর পাল দেখলাম ফেরার পথে। প্রচুর ঘাস আছে এই সময় তাই খাবারের কোন অভাব নেই এখন। এখানকার গরুগুলোর শিং বেশ বড়, সাদা,লাল কাল সব রঙের উপস্থিতি আছে পালে। সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময়ে আমরা ফিরে এলাম। আজ রাতে মনে হল আকাশে চাঁদ যেন বেশ আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। আকাশ পরিস্কার, অনেক তারা জ্বলজ্বল করছে আকাশে। ব্যস্ত জীবনে রাতের চাঁদের আলো আর তারাভরা আকাশের রুপ দেখা হয়ে উঠে না। রাতে চাঁদের আলোতে গা ভিজিয়ে হাটলাম কিছুক্ষণ। ভালই সময় কেটে গেল।
প্রশস্ত লাল মারামের পথ -এই পথে সুদান যাওয়া যায়
সকাল বেলা নাস্তা সেরে রেডি হয়ে গেলাম। দশটার সময় বিমান। আজ এল ৪১০ বিমানে করে ফিরছি। এটা পনেরো সিটের বিমান। সময় মত বিমান জুবার পথে উড়াল দিল। আজ পথে আবহাওয়া বেশ ভাল। সাধারনত এই পথে মেঘ থাকে এবং বিমান বেশ ঝাকি খায়। আমদের ভাগ্য আজ বেশ ভাল। ফ্লাইট টাইম এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট। ভ্রমন ও বেশ ভালই লাগছে, দুপুরের কাছাকাছি সময়ে জুবাতে পৌঁছে গেলাম। স্মৃতির ক্যামেরাতে রুম্বেকের কিছু কথা গেঁথে রইল।
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৪
শোভন শামস বলেছেন: অবশ্যই ঘুরে আসবেন
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: লাল মাটি ,কেমন একটু অন্য রকম লাগে ।।
আফ্রিকা আসলেই এক রহস্য মনে হয় আমার কাছে
বর্ণনা অসাধারন সাথে আজকাল বেশ চমৎকার সব ছবি পাচ্ছি এই জন্য ধন্যবাদ ।
শুভকামনা রইল
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯
শোভন শামস বলেছেন: ছবি তোলা একটু সমস্যা এদেশে।
চেষ্টা করি কিছু তোলার,
সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪০
অশ্রু কারিগড় বলেছেন: ইচ্ছা আছে জীবনে একবার হলেও আফ্রিকা ঘুরে দেখার । পোষ্টে +