নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইভরি কোস্টের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়ামাসুকুরু। আবিদজান থেকে ২৫০ কিঃ মিঃ দূরে । রাস্তা বেশ ভাল। প্রায় ১৫০ কিঃ মিঃ টু ওয়ে বাকী পথটুকু ওয়ান ওয়ে । রাস্তাতে ট্রাফিক তেমন বেশি না। মাঝে মাঝেই আবিদজান থেকে বাইরে যেতে হয়। উত্তরের প্রায় সব জায়গাতে যেতে হলে ইয়ামাসুকুরু হয়ে যেতে হবেই। অনেক বার ইয়ামাসুকুরু যেতে হয়েছে। কখনো চলতে পথে কখনোবা সেখানে থাকার জন্য।
বিশাল খালি একটা জায়গাতে পরিকল্পনা করে এই রাজধানী শহরটা বানানো হয়েছে। বিশাল বিশাল রাস্তা, বড় বড় সরকারী ভবন, প্রেসিডেন্টসিয়াল প্যালেস , বড় তারকা হোটেল সবই আছে। তবে সবকিছু জমে উঠার আগেই দেশে গৃহ যুদ্ধ শুরু হওয়াতে এটা কার্যকরী রাজধানী হতে পারেনি। এত রাস্তা এই শহরে কিন্তু তেমন কোন বিশেষ চিহ্ন না থাকাতে নতুন আসলে প্রথমদিকে রাস্তার গোলক ধাঁধাতে পরতে হয়।
আইভরি কোস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হুফে বাউনি ইয়ামাসুকুরুতে জন্ম গ্রহন করেন । তিনিই দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট । ১৯৮৩ সালে তিনি নিজ জন্মভূমি ইয়ামোসুক্রুকে দেশের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে সারা বিশ্বের কাছে নিজেকে এবং দেশকে চিরস্বরনীয় করে রাখতে নিজ জন্ম স্থানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করেন । ১৯৮৫ সালে এই গির্জার নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এটা শেষ হয় ১৯৮৯ সালে। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স গির্জার মত করে বানানো মনে হলেও এটির নিজস্বতা আছে।
আবিদজান থেকে সকাল বেলা রওয়ানা হলাম ২ টার কিছুক্ষণ পর ইয়ামাসুকুতে পৌছালাম। খুব সুন্দর ছিল রোদেলা সেই দুপুর । আমরা ব্যাসিলিক চার্চ এর বাইরে এলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চার্চ এটা । এই চার্চে পোপ এর থাকার কথা ছিল । কিন্তু যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে পোপ আসেনি হয়তো কখনই থাকবে না এখানে । মুল গেইট বন্ধই থাকে, পেছনের দিকে ভেতরে ঢুকার দরওয়াজা। বাইরে গাড়ী পার্ক করে ভিতরে গেলাম। ৫০০ সিএফএ টিকেট। ক্যামেরার জন্য আরো ৫০০ সিএফএ দিলাম পরে । অসম্ভব সুন্দর স্থাপত্য এই বাসিলিক । এক লেবানিজ আর্কিটেক্ট এটা বানিয়েছে। ভিতরে বিশাল কারবার। ছবি তুললাম বিশ কিছু। খোলা ছাদ, প্রায় ৬/৭ তলার উপর থেকে পুরো ইয়ামাসুকুরু শহর দেখা যায়। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো বাগান ও অন্যান্য জিনিষ গুলো। গির্জাটি ৩০,০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । এর চূড়া প্রায় ১৫৯ মিটার এর মত অথচ বোঝা যায় না। নীচের থেকে তাকালে উপরের বেলকনিটা ওয়াল এর সাথে মিশে আছে বলে মনে হয়। একটা বড় পিলার এর ভিতর লিফ্ট সেটা দিয়ে উপরে উঠার ব্যবস্থা অবশ্য সিড়িও আছে। গাইড নেয়া যায় আমরা গাইড নেইনি। এখানে এসে গ্যাব্রিয়েলের সাথে পরিচয় হল। সে গাইডের কাজ করে। নিজ থেকে আমাদেরকে সাথে থেকে আমাদেরকে সাহায্য করছিলো ।
বিশাল এ গির্জা নির্মাণে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয় । ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯০ তারিখে পোপ জন পল এর উদ্বোধন করেন। ইটালি থেকে আনা মার্বেল পাথরে মোড়ানো হয়েছে এই গির্জার প্রায় ৩০ একর এলাকা । হাঁটতে বেশ মজা লাগে এই ঝক ঝকে এলাকাতে। দরজা জানালাতে লাগানোর জন্য ফ্রান্স থেকে ৭০০০ বর্গ মিটার চোখ ধাঁধানো রঙ্গিন কাঁচ আনা হয় । ১২ টি বড় স্তম্ভ আছে এই স্থাপনায় এই স্তম্ভ গুলোর ভেতরে লিফটের ব্যবস্থা আছে যা দিয়ে উপরে উঠা যায়। বাহির থেকে লিফট আছে বোঝা যায় না । ছাদের বৃষ্টির পানি ও এই স্তম্ভ গুলোর মাঝের পথ দিয়ে বেরিয়ে আসে । লিফটে চড়ে আবার নেমে আসলাম নিচে। হল রুমটা আয়তনে বিশাল। এর ধারণ ক্ষমতা ১৮০০০; এর মধ্যে ৭০০০ লোক বসে এবং ১১০০০ লোক দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে পারে। এই ঘরটা ফাঁকাই থাকে। এত লোক কথা থেকে আসবে। সারা ইয়ামাসুকুরুতে এত খ্রিস্টান নেই। আশেপাশে সব ফাঁকা এলাকা। কবে যে প্রান আসবে এই এলাকাতে কে জানে। বহু দূর থেকে ইয়ামাসুকুরুর দিগন্তে এই বাসিলিক দেখা যায়।
ভেতরে বিশাল ঝাড়বাতি , রঙ্গিন কাঁচের মধ্যে আঁকা নানা ধরনের ধর্মীয় ছবি, এই কাঁচের ফাক দিয়ে আলো আধারির খেলা চলছে। দ্বিতীয় তালার গ্যালারীতে দাড়িয়ে নীচের বিশালতা অনুভব করলাম কিছুক্ষণ।
৩০০ মিলিয়ন ডলারের এ গির্জা নির্মাণ করতে গিয়ে আইভরিকোস্টের জাতীয় ঋণের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। এত কিছুর পরেও আইভরি কোস্টের মানুষ এই গির্জা নিয়ে বেশ গর্ব করে । মুগ্ধ চোখ আর মন নিয়ে চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখে বিকেলের দিকে বাইরে এলাম।
আইভরি কোস্টের উত্তর পূর্বে যেতে হলে ইয়ামাসুকুরুতে আসতে হবেই। আবিদজানের বাইরে যাব কয়েক দিনের জন্য। প্রস্তুতি নিয়ে রওয়ানা হলাম ইয়ামাসুকুরুর পথে। টয়োটা প্রাডোতে চড়ে রওয়ানা হলাম। দিনটা ভালই, রোদ আছে বৃষ্টি ছিল না আল্লাহর রহমতে। রাতে অবশ্য বৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে আমরা যাব দোয়াক্রো শহরে। ইয়ামাসুকুরু থেকে ৪৫ কিঃ মিঃ আগে টোমোডি থেকে আমরা পূর্ব দিকে রওয়ানা হলাম। রাস্তা চিনার জন্য লোকাল লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। সাথে অবশ্য ম্যাপ ও আছে। এখানে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম ১৮০ কিঃমিঃ এর মত রাস্তা ভালই। পথে ব্রেক নিলাম বিস্কিট পানি ইত্যাদি খেলাম। তারপর ছবি তোলা হলো কিছু। এরপর আবার যাত্রা শুরু।
১২-৩০ এর দিকে দোয়াক্রোতে পৌছে গেলাম । বেনিনের লোকজন আছে এখানে আমাদেরকে লাঞ্চের জন্য ইনভাইট করল। পাউরুটি,মটরশুটি, মুরগীর মাংশ ভাজা সাথে জুস খেতে দিল। কয়েক দিন আগে দুপুরে ব্রাজিলের তালোয়াকে ব্রোসেট খাওয়াতে নিয়ে গেলাম । আমাদের তরকারীওয়ালা নাইজারের ওসমানের/মেহেদীর দোকানের কাছে ম্যাগি ষ্টল এ বাগেট ও মিনি কাবারের এই ব্রোসেট। আমিই খাওয়ালাম আজ, বেশ মজা করে খেল তালোয়া। সে এই খবর জানত না বলল,বাকী ব্রাজিলিয়ানদেরকে এখানে নিয়ে আসবে।
লাঞ্চ করে আবার ইয়ামাসুকুরুর দিকে রওয়ানা দিলাম। যাওয়ার পথে গ্রামগুলো দেখলাম বেশিরভাগ মাটির ঘর কিছু কিছু বিল্ডিং ও আছে। দিমবোক্রো নামের একটা জায়গাতে পাহাড় ও লেক আছে। বেশ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। ফরাসী তেল কোম্পানী টোটাল এর পাম্প থেকে ডিজেল নিলাম। পথে বৃষ্টি ও হলো ২/১ বার কিন্তু আবহাওয়া ভাল ছিল।
১৮০ কিঃমিঃ ড্রাইভ করে টোমোডিতে এসে আবার আগের পথে। ইয়ামাসুকুরুতে এসে আমি ও কেনিয়ার মোঃ সোমোতি প্রেসিডেন্ট হোটেলে এলাম। এটা আইভরিকোষ্টের দ্বিতীয় ভাল হোটেল এবং ইয়ামাসুকুরুর বেস্ট হোটেল। লিখাটা হোটেলের অ্যাড মনে হলেও এই যুদ্ধ বিধস্ত দেশে এই হোটেলে এলে মনটা একটু ভাললাগে । রুম ভাড়া ২৮০০০ সিএফএ। ৭ তলায় ৭৫৯ নং রুম দিল আমাকে। বেশ সুন্দর রুম। রুমের সামনের কাঁচ এর দেয়াল দিয়ে বাইরের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। রুমে ২ ব্ডে ৩ টা ল্যাম্প। আয়না লাগানো দেয়াল আলমিরা, টিভি, সোফা, টেবিল। চমৎকার ব্যবস্থা । বেশ পরিষ্কার তবে অনেক দিন গেষ্ট থাকে না বলে নতুন জিনিষ হয়ত কেনা হয় না। বেড কভার গুলো ক্লিন কিন্তু পুরানো। গোসল করলাম । গরম পানির ব্যবস্থা আছে এখানে ।
হোটেলের ১৪ তলা থেকে গোটা শহর পরিস্কার দেখা যায়। ছবি তুললাম অনেক গুলো। রাতে পোশাক পাল্টিয়ে নামাজ পড়ে শহর দেখতে বের হলাম। ঘন্টা খানেক গাড়ীতে করে শহর দেখা হলো। বিশাল বিশাল রাস্তা, মানুষ কম, কৃত্রিম শহর, জমে উঠেনি এখনো।
লেবানিজ রেষ্টুরেন্ট ‘সুলতান’ এ এলাম। মালিক এর ভাই আলী ছিল। রেষ্টুরেন্টে ৭৫০ সিএফএ দিয়ে সোয়ার্মা কিনলাম এবং বাইরে বসে খেলাম। ডিনার খেয়ে ১০টায় হোটেলে ফিরে এলাম। মোহাম্মদ সোমাটের সাথে হোটেল এর বাইরে গল্প ও হাঁটা হলো কিছুক্ষণ। বিাশাল জায়গা নিয়ে বেশ সুন্দর এলাকা। । বড় পার্কিং লট ও বাগান রয়েছে সামনে। জায়গার তেমন কোন অভাব নাই তেমনি সাজানো ও হয়েছে। নীচে স্যুইমিং পুল আছে হোটেলের লাউঞ্জে হাঁটলাম কিছুক্ষণ। নীচে বারও আছে। রাতে রুম থেকে কিছুক্ষণ শহর দেখলাম্ তারপর টিভি দেখা হলো। অনেক চ্যানেল আছে। ১২ টার দিকে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরদিন সকাল ৬টার দিকে উঠে তৈরী হয়ে সোয়া আটটায় ব্রেকফাষ্ট শেষ করলাম। পরোটা, ডিম,মাংশ দিয়ে ভালই খেলাম। হোটেল এর চারপাশে হাঁটতে বের হলাম। ছবি তুললাম সুইমিং পুল ও আশেপাশের এলাকাতে,ভালই লাগল। তারপর বোয়াকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমিই ড্রাইভ করছি। আবিদজানে ফিরে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। তালোয়া চালাচ্ছিল পথে ২ বার থামলাম। ১ হানা ছোট কলা কিনলাম ১০০০ সিএফএ ও ৩০০ সিএফএ দিয়ে ছোট দুটো ছড়া কিলাম। লোকাল ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে কিছু দিলাম। কিছু গরীব কেও দিলাম।
যাত্রা ভাল ভাবেই শুরু হলো। ৭-২০ এ যাত্রা শুরু করলাম। ইয়ামাসুকুরু থেকে আবিদজান ২৫০ কিঃমিঃ । প্রথম ১০০ কিঃমিঃ রাস্তা ওয়ান ওয়ে ভাল না। পরবর্তী ১৫০ কিঃমিঃ ভাল রাস্তা। মাঝে মাঝে রাস্তায় গর্ত। এ ধরনের ২টা গর্তে বেশ স্পীডে গাড়ী পড়ল। সামনের চাকা পাংচার হয়ে গেল। গাড়ী থামাতে হলো। কেউ জানে না কোথায় জিনিষপত্র আছে। খোজা শুরু হলো। আমি জেক ও অন্যান্য ইকুপমেন্ট বের করলাম। তারপর স্পেয়ার চাকা নামালাম। এই রাস্তায় রাতে বেশ স্পীডে গাড়ী চলে । সাইন পোষ্ট লাগানো হলো যাতে ইনকামিং/এপ্রোচিং গাড়ী গুলো তা দেখে। ৪ জনের প্রচেষ্টায় চাকা চেইঞ্জ হলো। সোমোতি বেশ একটিভ ছিল একাজে। তারপর যাত্রা শুরু, রাত ৯-৩০ বেজে গেল এখানে। ৩০/৪০ কিঃমিঃ পরে মটরওয়ে পেলাম। স্পীড বেড়ে গেল ১৪০/১৫০ কিঃমিঃ আবিদজান আসছে আসতে ১১ টা বেজে গেল। শহরে ঢুকতে নতুন কুইজ, রাস্তা হারিয়ে ফেললাম এখানে প্রায় ১৫/২০ মিনিট ঘুরলাম। তারপর রাস্তা খুজে পেলাম এবং আবিদজান শহরে পৌঁছুতে রাত ১১ টা বেজে গেল।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন
৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩৬
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
আগেই পড়েছিলাম কমেন্ট করতে পারিনাই। এখন ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।
++++++
৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৩
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ +++++++
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৪
এহসান সাবির বলেছেন: বেশ...!