নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেশ বড় একটা সফরে বের হচ্ছি। আমাদের গন্তব্য আবিদজান থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরের জনপদ বোয়াকে। আবিদজান থেকে রওয়ানা হতে হতে ৮ টার উপর বেজে গেল । ফ্রান্সের জ্যাঁ মার্ক ও আমি দুজনে মিলে রওয়ানা হলাম। জ্যাঁ ম্যার্ক ড্রাইভ করল। রাস্তার দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে ইয়ামাসুকরুতে পৌছালাম। ইয়ামাসুকরুতে তেল ভরলাম গাড়ীতে, এরপর আমি ড্রাইভ করলাম।ইয়ামাসুকুরু থেকে দক্ষিনে গিয়ে আবার পূর্ব দিকে যেতে হয় ১৮০ কিঃমিঃ দুরত্ব। রাস্তা নিঝুম অনেক জায়গায় রক্ষণাবেক্ষণ নেই । ফুটপাত এর জায়গাতে গাছ এসে গেছে। নিথর প্রকৃতি, সুন্দর রাস্তা, মানব বসতি খুবই কম। ২/৩ টা শহরের উপর দিয়ে যেতে হয়। ২০০/৩০০ মানুষ দেখা যায় সব মিলিয়ে । রাস্তা মাঝে মাঝে একটু খারাপ। তোমাদি-বনগুয়ানো পার হয়ে দোয়াক্রোতে আসলাম। তিন ঘন্টার রাস্তা। এসব এলাকা দেখে মনে হয়না যুদ্ধ চলছে এদেশে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ ও মানুষের দিকে তাকালে বোঝা যায় কিসের যেন অভাব আছে। ঘরবাড়ী গুলো বেশ সুব্দর ও মজবুত দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এই দেশে যারা ধনী তারা আলিসান বাড়িতে থাকে, গরিবদের জন্য ঝোপের ভেতর ছোট্ট কুটির।পথে বৃষ্টি ও হলো ২/১ বার কিন্তু আবহাওয়া ভাল ছিল। যাওয়ার পথে গ্রামগুলো দেখলাম বেশিরভাগ মাটির ঘর কিছু কিছু বিল্ডিং ও আছে। দিমবোক্রো নামের একটা জায়গাতে পাহাড় ও লেক আছে। বেশ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য।
পথে গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণের বিরতি, আবিদজান থেকে আনা চিকেন ফ্রাই খেলাম লাঞ্চে। সমতল থেকে একটু পাহাড়ি এলাকাতে চলে এলাম, দোয়াক্রোর রাস্তা সুন্দর, একটু পাহাড়ি ও উঁচু নিচু, পীচ ঢালা সোজা রাস্তা বহুদুর চলে গেছে, পথে মানুষজন তেমন নেই।দোয়াক্রো শহরে বেশ কিছু গাড়ি দেখলাম, টোটালের পেট্রোল পাম্প আছে এখানে, নিয়মিত তেল আসে আবিদজান থেকে। দোকান গুলোতে খাবার দাবার ও অন্যান্য জিনিষপত্র আছে। দোয়াক্রোতে কিছুক্ষণ থেকে আমরা বোয়াকের পথে রওয়ানা হলাম। আমরা যেই পথ দিয়ে এসেছিলাম সেটাই ছিল মেইন রোড। একটু ঘুরা হবে তাই শটকাট একটা রাস্তা বের করে রওয়ানা হলাম। এই রাস্তায় আগে কখন ও আসা হয়নি এর এটা তেমন ব্যাবহার হয় বলে মনে হল না।জ্যাঁ ম্যার্ক ফরাসী এবং এই দেশ তাদের কলোনি ছিল, সে আগেও এখানে এসেছিল, তাই এই পথ বেছে নিল তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য।
বোয়াকের পথে
রাস্তা ভাল না বোয়াকে যেতে যেতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেল। রাতেও ড্রাইভ করতে হলো। নতুন অভিজ্ঞতা, বাজে রাস্তা। আঁটটার পর শহরে এসে পৌঁছালাম, বুয়াকের হোটেল ডি সেন্ট্রালে রুম খালি আছে দেখে উঠলাম, ১২০০০ সিএফএ ভাড়া ।আমার রুম নাম্বার ৬, রুমের অবস্থা বেশি ভাল না, পানি নেই বাথরুমে। খাওয়া দাওয়া বাইরে নিজের ব্যবস্থায় করতে হবে।
বুয়াকে আইভরি কোষ্টের উত্তর পূর্ব অঞ্চল, এখানে আসার সুবাদে এই এলাকা দেখা হলো। হোটেলে সাপ্লাইর পানি নেই, বালতিতে করে পানি দিয়ে যায়। এই এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে বলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নেই। মাঝে মাঝে জেনারেটার চলে। একটা পুরান টেলিভিশন আছে ঝির ঝির করে ছবি। চ্যানেল ও একটা। বাজে অবস্থা, আগামিকাল হোটেল বদলাতে হবে। টাকা থাকলেও এখানে এখন ভাল হোটেল পাওয়া যাবে না।এত রাতে হোটেল খুঁজতে ইচ্ছা করছিল না। আজ বেশ টায়ার্ড ছিলাম।
সকাল ৯টায় চেক আউট করলাম হোটেল থেকে। আমাদের জিনিসপত্র গাড়িতে নিয়ে নিলাম। বোয়াকে শহর দেখতে বের হলাম তারপর। আইভরি কোস্ট স্বাধীন হলেও ফরাসীরা এদেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আছে, এ এক আজব ব্যবস্থা, ৩ নভেম্বর ২০০৪ এ যখন ফরাসীদের উপর আক্রমন করা হয় তখন তারা বিমান আক্রমন করে বিদ্রোহীদের শহরগুলোতে। বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় এই আক্রমনে। আমরা বিমান আক্রমনের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে শহরে গেলাম। বিদ্রোহী ফোর্স নভেল এর অফিসে বিমান আক্রমনের পর তার ধ্বংসাবশেষ দেখলাম। আরও অনেক জায়গাতে বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। বোমার ভাঙা অংশ দেখলাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
বোয়াকে শহরের রাস্তায়
বোয়াকে শহরটা বেশ খোলামেলা, সাজান এই শহরে মানুষজন কম, ঘর বাড়ী গুলো বেশ সুন্দর ভাবে সাজান। রাস্তা প্লান করে বানানো, শহরের সব রাস্তা পাকা। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, হাসপাতাল ও নানা রকম সুবিধা ছিল আগে বর্তমানে যুদ্ধের ফলে আস্তে আস্তে তা কমে যাচ্ছে।
নতুন হোটেলে এলাম এই হোটেলের নাম হোটেল লা রিলাই, ৮০০০ সি এফ এ ভাড়া। বুয়াকে শহরের কোনাতে এলাকার এভিনিউ মামাদুতে এই হোটেল । এলাকাটা বেশ ভালই।সব কিছু সেট করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রাতে খাওয়া শেষে হোটেলে এসে হাঁটতে গেলাম। বুয়াকে শহরটা বেশ বড় তবে কেন যেন ছাড়াছাড়া মনে হয়। মানুষ কম, জংলাতে ভরে গেছে। কাটার লোক নাই।
সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করলাম, মরক্কো খাবার দিয়ে লাঞ্চ, প্রথমে ডিম ও ভাত সাজিয়ে সার্ভে করল। তারপর চিকেন ও কুসকুস, কাসাভার আটা দিয়ে গুড়োগুড়ো চালের মত এক রকম খাবারের নাম কুসকুস। তেমন ভাল লাগেনি এটা, ওরা কিসমিস দিয়ে রান্না করে। এরপর ভাত মাংস দিয়ে চপ ও আলু সিদ্ধ করে হালকা ভাজা। খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ গল্প হল। তারপর ফেরার পালা।
প্রথমে ইয়ামাসুকুরু তারপর সেখান থেকে আবিদজান। প্রায় তিনশত পঞ্চাশ কিলোমিটার রাস্তা। ইয়ামাসুকুরু পর্যন্ত আমি ড্রাইভ করেছি। ইয়ামাসুকুরু পার হয়ে জ্যাঁ ম্যাক কে দিলাম। ড্রাইভ মজাই লাগল ১০২ কিঃমিঃ রাস্তা, মাঝে মাঝে খারাপ। অনেক গুলো লরিকে ওভারটেক করতে হলো। সর্বোচ্চ ১৪০ কিঃমিঃ এর কাছাকাছি ড্রাইভ করেছি। রাস্তার দুপাশে জংগল মানুষ বসতি প্রায় চোখেই পড়ে না। দেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ আল্লাহর রহমতে দেখা হলো। উত্তর দিকে বাকী আছে হয়ত দেখা হবে। ৬-১০ এ আবিদজান পৌছে গেলাম। ট্রাফিক জ্যাম এর কারণে হোটেলে আসতে আসতে ৭টা বেজে গেল। ভালই লাগলো দেশের আরেকটা অংশ দেখলাম, নতুন অভিজ্ঞতা হল।
আবিদজান থেকে বিমানে বোয়াকে
আবিদজান থেকে সড়ক পথে বোয়াকে গিয়েছি দুইবার। এবার সুযোগ এলো বিমানে যাওয়ার। সকাল ৮ টার সময় হোটেল থেকে আবিদজান বুইনি উফু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওয়ানা হলাম। এয়ারপোর্টে এসে দেখি প্লেন লেট । নরমাল ছোট্ট টার্বো প্রপেলড বিমান, সিট ক্যাপাসিটি ৩৫ জনের মত । পৌনে ১০ টার দিকে আমাদের বিমান আবিদজান থেকে টেক অফ করল। আমাদের একটু দেরী হলো কারণ একটা হেলিকপ্টার যাত্রার একটু আগে আউট অব অর্ডার হয়ে যাওয়াতে ওটার যাত্রীদের নিতে হলো এই বিমানে। এক জন হোষ্টেস আছে যাত্রীদের দেখাশোনার জন্য, এই বিমানে যাত্রাপথে চা/কফি খেতে দেয় ।
যাত্রা সুন্দর ভাবেই শুরু হল। নীচে আবিদজান,সাগর তারপর আস্তে আস্তে শহর ছাড়িয়ে বোয়াকের পথে । আকাশ থেকে দেশটা দেখতে আরেক রকম যা আবার গাড়ীতে দেখা যায় না। আবিদজান থেকে ইয়ামাসুকুরুর মেইন রোড ছাড়া অন্য রাস্তা গুলো পাকা না। কাঁচা মাটির রাস্তাগুলো একটা ছোট্ট জনপদকে আরেকটা ছোট্ট জনপদের সাথে যুক্ত করেছে।নীচে কোকোর বাগান। ছোট জনপদগুলো কোকো শ্রমিকদের থাকার আস্তানা। বাকী দেশে রাস্তা ঘাট নেই। নীচে ঘন বন এই বনের মাঝে এত কোকোর বাগান আছে তা মেইন রাস্তা থেকে বোঝা যায় না। আবিদজান এর আশে পাশে আবার সাগর ঘেষে অসংখ্য নারকেলের বাগান আছে।এত নারকেল দিয়ে কিযে করে বোঝা যায় না। প্লেনে প্রায় ২৭/২৮ জনের মত যাত্রী।বোয়াকে যেতে ফ্লাইট টাইম এক ঘন্টা । এটা বিদ্রোহীদের এলাকা এদেরকে ফোর্স নোভেল বা সংক্ষেপে এফ এন বলে।
বোয়াকে এয়ারপোর্ট
সকাল ১১ টায় প্লেন বোয়াকে বিমান বন্দরে ল্যান্ড করল । একটা জীপে করে মরক্কোর লা রছির সাথে শহরের পথে রওয়ানা হলাম। কাজ শেষ করার পর শহরটা একটু ঘুরে দেখতে বের হলাম। মরক্কোর লা রছি আর ওমর মিলে আমাদেরকে বোয়াকে শহরটা গাড়ীতে চক্কর দিয়ে দেখালো । এরা ফরাসী ভাষাভাষী কাজেই যোগাযোগে কোন সমস্যা হয় না এদেশে। এদের আতিথেয়তা বেশ ভাল লাগল।বাংলাদেশের কয়েন ও একটা সুভেনির দিলাম ওদেরকে।
বিকেল বেলা আমাদের ফিরতি ফ্লাইট, আজ ফ্লাইট দেরী হবে কারণ সেনেগালের একটা ডেলিগেট এসেছে বোয়াকেতে, আইভরিকোস্টের নির্বাচনের বিষয়ে ফোর্স নোভেলের সাথে আলোচনা করার জন্য। আমরা এয়ারপোর্টে সময়মত এলাম। ছোট ডোমিষ্টিক এয়ারপোর্ট,কিছু ছবি তুললাম বোয়াকে এয়ারপোর্টের। ৪ টার সময় প্লেন টেক অফ করল, ৫ টার সময় আবিদজান বিমান বন্দরে পৌঁছে গেলাম। আজকের বিমান ভ্রমণটা বেশ আনন্দময়।
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১০
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৭
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: হায়রে যুদ্ধ!
৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:২৬
এম ই জাভেদ বলেছেন: কিছু বিগ সাইজের বাগেটের ছবি দিয়েন। লম্বা সাউজের ওই কিম্ভূত দর্শন পাউরুটি কেন যে ওরা বানায়!!
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৬
সোহান বাশার বলেছেন: ভালো লাগলো