নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাম্পালার পথে

১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৫৩



ছবিগুলো আগের ছবি ব্লগে আছে- ধন্যবাদ



পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত উগান্ডা প্রজাতন্ত্র বিষুবরেখার উপর একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। উগান্ডা মূলত একটি উন্নয়নশীল, দরিদ্র ও কৃষিপ্রধান রাষ্ট্র উগান্ডার জনগণ ও জাতিগতভাবে বিচিত্র। ১৯শ শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের আগে এখানে অনেকগুলি শক্তিশালী রাজত্ব ছিল, যাদের মধ্যে বুগান্ডা ও বুনিয়োরো উল্লেখযোগ্য। বুগান্ডা রাজত্ব থেকে উগান্ডা নামটির উৎপত্তি হয়েছে । রাজধানী কাম্পালাসহ দেশের দক্ষিণাংশ নিয়ে এই রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।







১৮৯৪ সালে উগান্ডা একটি ব্রিটিশ প্রোটেক্টোরেটে পরিণত হয়। ১৯৬২ সালে এটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭০-এর দশকে ও ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে, ইদি আমিন ও মিল্টন ওবোতের শাসনামলে দুইটি রক্তঝরানো যুদ্ধের শিকার হয়। ১৯৮৬ সালে দেশটি ইয়োওয়েরি মুসেভেনির অধীনে স্থিতিশীল হয়। মুসেভিনি উগান্ডাতে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করেন। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট উএরি মুসভেনি ২০১৩।



উগান্ডা পূর্ব আফ্রিকার বৃহৎ হ্রদ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এডওয়ার্ড হ্রদ, আলবার্ট হ্রদ এবং ভিক্টোরিয়া হ্রদ দেশটিকে ঘিরে রেখেছে। দেশটির ভূপ্রকৃতি বিচিত্র। এখানে রয়েছে সাভান্না তৃণভূমি, উঁচু পর্বতমালা এবং ঘন অরণ্য । উগান্ডার বেশিরভাগ এলাকা মালভূমির উপর অবস্থিত।উগান্ডা বিষুবরেখার উপর অবস্থিত হলেও উচ্চতার কারণে এখানকার জলবায়ু তুলনামূলকভাবে আরামপ্রদ।

কাম্পালা উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। দেশটি পূর্বে কেনিয়া, উত্তরে সুদান, পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণে তানজানিয়া দ্বারা বেষ্টিত। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু উল্লেখযোগ্য ভূমি ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত। এই অংশটিই কেনিয়া এবং তানজানিয়ার সীমান্তবর্তী ।দেশটির আয়তন ২৩৬,০৪০ বর্গ কিমি - ৯১,১৩৬ বর্গমাইল ।



পরের দিন, সারাদিন কাজকর্ম সেরে বিকেল বেলা ঘুরতে বের হলাম।ডলার বদলে উগান্ডার সিলিং করলাম। এক ডলারে ২৫৫০ উগান্ডা সিলিং। এন্টেবির শহরতলী থেকে হেঁটে কিটোরো মার্কেটের দিকে রওয়ানা হলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর রাস্তায় কুইন্স রোড লিখা। এ রাস্তাটা পীচ ঢালা । পনেরো মিনিট হেঁটে কিটোরো মার্কেটে পৌঁছে গেলাম।



এখানে সুন্দর একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে। এক জায়গাতে বড় পেট্রোল পাম্প, সুভেনিরের দোকান, বাটার দোকান ইত্যাদি আছে। এই মোড় থেকে কাম্পালা গামী ট্যাক্সিগুলো ছেড়ে যায়। রাস্তা উঁচু থেকে নিচের দিকে নেমে গেছে। নীচে বাজার এলাকা। দোকান পাট আমাদের দেশের মতই, মুদি দোকান, কাপড়ের দোকান ও অন্যান্য সব জিনিসই এখানে পাওয়া যায়। চালের দাম একটু বেশি , বাংলাদেশ থেকে সব কিছুরই দাম একটু বাড়তি, তবে আফ্রিকার অন্যান্য দেশের তুলনায় দাম রিজনেবল। দূরে পাহাড়ের উপর সাজানো প্রেসিডেন্টশিয়াল প্যালেস দেখা যায়। রাতের বেলা এটা আলোকিত থাকে তাই দেখতে ভাল লাগে। হেঁটে হেঁটে দোকান ঘুরলাম কিছুক্ষণ। উগান্ডার পতাকা কিংবা সুভেনির কিনতে চাইলাম। তেমন কিছু নেই এখানে।

একটা দোকানে প্লাস্টিকের চাবির রিং পেলাম। কিছুক্ষণ ঘুরে পার্ল সুপার মার্কেটে ঢুকলাম ।এখানে চাল, ডাল, মসল্লা, জুস, সাবান সবই পাওয়া যায় । জুস কিনলাম এক প্যাকেট। সন্ধার আগেই ফেরত চলে এলাম। কুইন্স রোড বেশ প্রশস্ত এবং এর দুপাশের বাড়িগুলো একতালা অথবা ডুপ্লেক্স এবং সুন্দর ভাবে বানা নো । ছবি তুললাম কিছু। অনেক বাসার সামনের গেইটে বাগান বিলাস তার নানা রঙের পসরা সাজিয়ে রেখেছে। বিকেলে আকাশে মেঘ ছিল তবে বৃষ্টি হল না। উগান্ডার মানুষ বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে। এই বৃষ্টি তাদের খুব দরকার।

রাতে ট্যাক্সি নিয়ে ভিক্টোরিয়া লেকের পাশে বেড়াতে গেলাম। অন্ধকারের মধ্যে বীচে আর যাইনি ।বিচের সাথে লাগানো হোটেল গুলোতে মানুষজন মোমবাতি জ্বালিয়ে ক্যান্ডল লাইট ডিনার করছে।প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ রাতে জ্বলজ্বল করে। এটা পাহাড়ের উপর এবং দূর থেকে দেখা যায় ।ট্যাক্সিতে করে কিছুক্ষণ ঘুরলাম, তারপর রাতের এন্টেবি দেখতে দেখতে বাসায় ফিরে আসলাম ।



পরদিন সকাল ১১ টার সময় এন্টেবি থেকে কাম্পালার পথে রওয়ানা দিলাম। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এন্তেবির কিটোরো বাজার এলাকায়।কোন বাস সার্ভিস নেই, মাইক্রো বাস চলে এন্তেবি কাম্পালা রুটে। ১৪ জন যাত্রী ভর্তি হলে ট্যাক্সি রওয়ানা হয়। ভাড়া ২৫০০ উগান্ডা সিলিং মানে এক ডলার। ট্যাক্সি রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়, এতে প্রায় ২০ ডলার লাগে । এন্তেবি শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে লোক তুলে নেয় তবে লোক ভর্তি হয়ে গেলে সরাসরি রওয়ানা হয়।



আমাদের ট্যাক্সিটাতে যাত্রী পুরো হয়নি তাই বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যাত্রী উঠালো, এই ফাঁকে শহরটাও দেখা হয়ে গেল। লেক ভিক্টোরিয়ার পাশ ঘেঁসেই রাস্তা চলে গেছে।লেকের পাড়ে লোকজন হাঁটা হাঁটি করছে, পার্কের মত মনে হল জায়গাটা, বাচ্চারা লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে খেলা করছে।মানুষজন অনেক কম, একটা ওয়াক ওয়ে আছে পাড় বরাবর।এলাকা মোটামুটি পরিচ্ছন্ন ।



শহরের দোকানপাট সাধারন মানের, বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর আছে এবং সেখানে সব জিনিষ পাওয়া যায়। দাম রিজনেবল । পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো, রাস্তার দু পাশে মাঝে মাঝে ছোট খাটো দোকানপাট আছে। মানুষ কম তাই ভিড় ও তেমন নেই।



রাস্তার পাশের ঢালেও ঘর বাড়ি, স্কুল চার্চ ও দোকানপাট আছে।রাস্তা থেকে একটু দূরের পাহাড় গুলোর ঢালে নানা রঙ করা টালির সুন্দর সুন্দর একতালা দোতালা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি। এগুলো দেখতে চমৎকার লাগে।



কাম্পালা যাওয়ার পথে কাজাসি ও জানা নামের দুটো জনপদ আছে, ছোট শহরতলী সাধারন মানের সবকিছু। একতালা টিনের ঘর, টালির ঘর, আমাদের দেশের মতই দোকানপাট । মাঝে মাঝে বাজার ও হাট আছে সেখানে তাজা সবজি ফল বিক্রি হচ্ছে।কিছুদুর পরপর মেইন রোড থেকে মাটির পথ ভেতরের দিকে চলে গেছে।



এসব রাস্তা দিয়ে আশেপাশের পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠা এলাকা গুলোতে যাওয়া যায় । রাস্তার দুপাশে নির্মাণ কাজ চলছে। লালমাটি এবং একটু পাথুরে।মুল রাস্তা বেশ ভাল, রাস্তার মধ্যে কোন গর্ত নেই। পথে আমাদের গাড়িটা এক জায়গায় থামল। আরেকটা মাইক্রো এলো আমরা সেটাতে উঠলাম । আমাদের গাড়ি কি কারনে যেন এখন যাবে না । আবার যাত্রা শুরু, ড্রাইভার মাঝে মাঝেই জোরে চালাতে চায় তবে একটু পরপর পুলিশের গাড়ী থাকায় এরা ওভার স্পীডে চালাতে পারে না।



ট্যাক্সিতে উগান্ডার ছেলে মেথডিয়াস মুবাঙ্গিযির সাথে কথা হল। আমার পাশের যাত্রী । এন্তেবির বিশ্ববিদ্যালয়ের এম বি এর শেষ বর্ষের ছাত্র । ব্যাবহার বেশ ভাল, নেমে আমাদেরকে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের কাছে নিয়ে এলো । নীল নদের উৎস মুখ – জিঞ্জা যাওয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ড দেখিয়ে দিল।

ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে রাস্তা বেশ উঁচুতে উঠে গেছে।নিচে শত শত ট্যাক্সি গাদা গাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। মাইক্রো কে এখানে ট্যাক্সি বলে। কাম্পালা থেকে দেশের অন্যান্য শহরে এখান থেকে যাওয়া যায়।দুরপাল্লার বাস স্ট্যান্ড একটু দুরে।এসব বাসে করে কাম্পালা থেকে পাশের দেশ গুলোতে যাওয়া যায় ।





কাম্পালা শহরের অনেক দূরে থাকতেই ট্রাফিক জ্যাম শুরু । গাড়ি যেন আগাতেই চায় না । শহরের একটু দূরে একটা চার রাস্তার মোড় আছে, সেখান থেকে সোজা গেলেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড।আমরা তার আগেই নেমে গেলাম, হেঁটে সামনের মেগা স্ট্যান্ডারড সুপার মার্কেট নামের একটা বড় স্টোরে কেনাকাটার জন্য ঢুকলাম।

ডিপারটমেন্টাল স্টোর বেশ বড়।সব আইটেমই এখানে পাওয়া যায় । দাম বাংলাদেশের তুলনায় একটু বেশি। একটা পাউরুটি ৮০ টাকা, ছোট নিভিয়া ক্রিম ২০০ টাকা, ৩০-৪০ টাকাতে চকলেট বার আছে । এছাড়া জুস, কোক, চাল, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, সিরামিক, কাপড়চোপর সবই এখানে আছে। কিছু কেনা কাটা করে বাইরে আসলাম।



শহরের এই দিকটাতে বেশ ভিড় ।এখানে অনেক নতুন আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিং হচ্ছে । শহরের এই অংশে ব্যাংক, ইলেক্ট্রনিকস মার্কেট ও অন্যান্য আফিস আদালত আছে।



মোবাইল ফোন দেদার কেনা বেচা হচ্ছে। এখানে চাইনিজ টেকনো ফোন বেশ বাজার পেয়েছে। জায়গায় জায়গায় আফ্রিকান মিউজিক বাজছে। বেকার লোকজন বসে গান শুনছে। কয়েক ঘণ্টা ঘোরাফেরা করে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে চলে এলাম। যাত্রী ভর্তি হলেই ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। আমরা আসার কিছু পরেই তা ছেড়ে দিল।



ফেরার পথে রাস্তায় তেমন জ্যাম নেই, দ্রুত এন্টেবিতে চলে এলাম ।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৩৭

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: have a nice tour in africa :)

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৬:৫০

খেয়া ঘাট বলেছেন: ভ্রমন বিষয়ক যেকোনো লিখাই একেবারে নেশার মতো ভালো লাগে। অনেক ভালো লাগা রইলো।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬

অ্যানোনিমাস বলেছেন: ভালোলাগা দিলাম :)

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
এখানে নেটে একটু সমসসা থাকার কারনে ঠিক মত আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিনা।
মাঝে মাঝে ছবি দিতেও সমস্যা হচ্ছে।
অনুপ্রেরনার জন্য ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন, সাথে থাকবেন
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.