নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নানা দেশ কত কথা

শোভন শামস

আমার দেখা নানা দেশের কথা সবার জন্য - পাঠকের ভাল লাগাতেই আনন্দ

শোভন শামস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আফ্রিকার এক দেশে - বাসাম বীচ

১৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫





ছুটির দিনগুলোতে আমরা কোথাও না কোথাও বেড়াতে বের হতাম। বাসাম বীচ শহররের কাছে হওয়াতে সেখানেই যাওয়া হোতো বেশির ভাগ সময়। জোন ক্যাতার থেকে যে কোন রাস্তা ফলো করে প্রথমে ভেলেরি জিসকারড বুলেভারডে যেতাম, তারপর এয়ারপোর্ট বামে রেখে সাগরের দিকের রাস্তা দিয়ে শহরের বাইরে চলে আসতাম।



আবিদজান শহরটাই আটলান্টিক পাড়ে তবে শহরের সাথে লাগোয়া বীচের অবস্থা বেশ সংগীন। গৃহযুদ্ধ, জ্বালাও পোড়াও, শহরের আবর্জনা সব মিলে বিচের অবস্থা ভাল না। তাছাড়া বিচ তেমন প্রশস্ত না। আটলান্টিকের পাড় এখানে খাড়া নেমে গেছে অনেক দুর। আমাদের কক্সবাজারের মত প্রাকৃতিক নিরাপদ বিচ এখানে আশা নেই।









বাসাম বীচ আবিদজানের খুব কাছের বীচ এলাকা। এখানে বালুবেলা প্রশস্ত। সাগরের খাদ একটু দুরে তাই পানিতে নামা যায়। তবে পানির নীচের তলদেশ এবরো থেবরো, সমতল না। কাজেই বিপদ এখানেও আছে। তবুও সান সী এবং স্যান্ড উপভোগকারীরা এখানে আসে এসব বাধা জয় করে। আবিদজান থেকে রাস্তা সাগরের সমান্তরালে চলে গেছে বাসামের দিকে। এটা একটা ছোটখাট জনপদ। রাস্তা পিচঢালা, আকাশ নীল অকৃপন সূর্যের আলো তাই গরমও বেশ। আটলান্টিকের গরম বাতাস নারকেল গাছের পাতাগুলি নাড়া দিয়ে বয়ে চলে প্রায় সময়। এই বাতাস বন্ধ হলেই আবহাওয়া গুমোট হয়ে যায়।









বাসাম এলাকায় রাস্তার দুপারে অনেক কুঁড়েঘরের মত দোকানের সারি। এই দোকানগুলোতে আফ্রিকান কাঠের মুখোশ, নানা নকশা, ফার্নিচার, পেইন্টিং এর কাজে নিয়োজিত শিল্পীরা তাদের নিজ নিজ হাতের কাজ করে চলছে। দোকানের সামনে সব পসরা সাজনো, ভেতরেও ভ্রমনকারীরা আমন্ত্রিত, কিভাবে কারিগর বা শিল্পী কাজ করে তা দেখা যায়। চাইলে কারিগর বা শিল্পীর পাশে বসে নিজের পছন্দ মত অর্ডার ও দেয়া যায়।



আফ্রিকার বিখ্যাত কালো এবনি কাঠের তৈরী নানা রকম সৌখিন জিনিস ও এখানে পাওয়া যায়। দাম অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। গৃহযুদ্ধের ফলে যেহেতু পর্যটক আসা কমে গেছে তাই অনেক কম দামেই এখানে জিনিস পাওয়া যায়।

বাসাম জনপদের অবস্থা তেমন ভাল না। বাড়িঘরে অনেকদিনের রক্ষনাবেক্ষনের অভাব। একতালা দোতলা কিছু বাড়ী এবং সামনে দোকান পাট। মোড় পেরিয়ে আমরা বিচে চলে আসি। আবিদজান থেকে আসার পথে রাস্তার দুপাশে নারকেলের বাগান। বীচ এলাকাতেও নারকেল গাছ রয়েছে আর অন্যপাশে বিশাল নারকেলের বন। এর ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্য গাছ ও ঝোপঝাড় রয়েছে। মানুষ প্রায় দেখাই যায় না। মাঝে মাঝে বাগনের কাজে নিয়োজিত লোকজনদের রাস্তায় দেখা যায়। ভেতরে বনের মাঝে তাদের আফ্রিকান কুঁড়ে ঘরগুলি। সরল জীবনের জন্য আর কিইবা লাগে। রাস্তায় কিছু গাড়ী দেখা যায়। পর্যটক নিয়ে যদিও তেমন গাড়ী চলে না তবে আবিদজান থেকে বাস, ট্রাক চলে এই রাস্তায়। মানুষ একান্ত বিপদে না পড়লে এদেশে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায় না। বাসগুলো আবিদজান থেকে বের হবার সময় বেশ কয়েকটা চেকপোষ্ট। অস্ত্র নিয়ে ইয়ং পেট্রিয়ন্ট বাহিনী চেকপোষ্টগুলো বসে থাকে। চোখ লাল, রাত জেগে বিয়ার খাওয়ার ফল। তাদের চেকপোষ্টে গান বাজছে উচ্চ ভলিউমে। তাদের কে খুশী করেই তবে বাস ও এর যাত্রীরা পার পায়। বাস থামিয়ে যাত্রী নামায়, মালপত্র অযথা চেক করে হয়রানির একশেষ। ক্লান্ত বিষন্ন বিরক্ত মানুষগুলোর সুখের পায়রারা উড়ে গেছে। গৃহ যুদ্ধের যাতনায় তারা সত্যিই ক্লান্ত।





বিচের মধ্যে এককালে অনেক জমজমাট কটেজ ছিল। এককালে আফ্রিকার তথা এদেশের ধনীরা এখানে এসে সাগরের বাতাসে গা এলিয়ে দিত। এখন বাংলো প্যাটার্নের কাঠের বাড়ির পোড়া কংকাল উপহাস করে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলোর মালিক ছিল ইউরোপীয়, লেবানীজ ও ধনী আইভরিয়ান। তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। দুএকজন হয়ত ফিরে আসছে। আইভরি কোষ্টের দুর্দশা অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে। আটলান্টিকের এই অংশে সাগর বিক্ষুদ্ধ না হলেও তেমন শান্ত নয়। ঢেউগুলো হালকা গর্জনে তীরে আছরে পড়ে। কাসাব্লাংকার এই আটলান্টিক বেশ গর্জনশীল দেখেছি আবার নিউইয়র্কে কোন শব্দই শুনিনি। সাগরের গভীরতার কারণেই দুরে অনেক জাহাজ চলাচল দেখা যেত। জাহাজগুলো পশ্চিম আফ্রিকার নানা দেশে বাণিজ্যের কাজে পণ্য আদান-প্রদান করে। এরকম জাহাজ আবিদজান বন্দরেও ভেড়ে এবং বন্দর থেকে বিভিন্ন দেশে যায়।



জেলেদের নৌকাও এখানে আছে। বড় বড় ঢেউ ভেংগে নৌকাগুলো মাছ ধরে আটলান্টিকে। এখানকার নৌকাগুলো অনেকটা বড় ডিংগী নৌকার মত। এগুলো দেখে আমাদের দেশের নৌকাগুলো অনেক সুন্দর মনে হয়েছে ।



রোদ কড়া হলে নারকেল গাছের ছায়ায় বসে সাগরের ঢেউ দেখা আর সাগরের নোনা বাতাস উপভোগ করতাম। তেজী সূর্য, নীল আকাশ, হালকা সাদা মেঘ আর গাঢ় নীল কালচে সাগরের পানি সব মিলিয়ে গম্ভীর পরিবেশ। এর মধ্যেই অনেক স্থানীয় পরিবার ও ছেলেমেয়ে সাগরে জলকেলীতে মেতে আছে। বীচ ধরে অনেকক্ষন হাঁটা যায় মোটামুটি তা চলে গেছে বহুদূর। একসময় বিচের সাথের কটেজগুলোতে অনেক পর্যটকের আনাগোনা ছিল। কয়েকটাতে ছোট সুইমিং পুলও আছে। এখন অবশ্য পুলে পানি নেই। তবে কটেজগুলোর আভিজাত্যের ছাপা রয়ে গেছে।

বিচে হকারের আধিক্য একদমই নেই। মানুষই অল্প কিছু। এত লোক আসবে কোথা থেকে। নিজের ঘোড়া নিয়ে এসেছে এক স্থানীয়, ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া দেয় ঘোড়া। কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে নারকেল নিয়ে এসেছে। কাছে ডাকলাম সবাই ফ্রেঞ্চ ভাষা বোঝে। পড়াশোনা তেমন করেনি কারো কারো গা উদোম। মাথার চুলগুলি কোকড়া ছোটছোট। নারকেল কেটে দিতে বলায় হাসিমুখে দ্রুত দা দিয়ে কেটে দিল। পানি অসম্ভব মিষ্টি ও ঠান্ডা। একটু পর নারকেলটা দু ভাগ করে চামচের মত কেটে ভেতরের শাঁষ খেতে দিল। ওদের ও দিলাম কয়েকটা, খুশী মনে খেতে বসে গেল। এত দ্রুত তাদের কাজ যে দেখলে অবাক হতে হয়। এই দাগুলো অত্যন্ত ধারালো এবং মানুষের মাথাও এক কোপে কাটা যায়।

পানিতে নেমে কিছুক্ষন দৌড়াদৌড়ি হলো। তীব্র আলোতে এবং লবনাক্ত হাওয়ায় চেহারায় কালচে ছাপা পড়ে। তবুও একটু পরিবর্তন কার না ভাল লাগে। সাগরের বিশালতা সবাইকে মুগ্ধ ও গ্রাস করে। গোসলের ব্যবস্থা নেই তাই চল ফিরে চল আপন ডেরায়। বিকেলের সূর্য ডুবি ডুবি করছে। হাওয়া ঠান্ডা হয়ে আসছে। এ সময় বীচ নিরাপদ নয়। এটা বিদেশীদের জন্য সতর্কবাণী। আফ্রিকাতে ম্যাচাতি দিয়ে মানুষ কেটে ফেলে কিন্তু ছিচকে চুরি বা ডাকাতি তেমন দেখিনি। অনেক অভাব নিয়েও মানুষগুলো নির্বিকারভাবে জীবন কাটায়। হঠাৎ যখন বিষ্ফোরন হয় তখন তাদের আর চেনা যায় না। ছুটির দিনগুলো মাঝে মাঝেই বিচে গিয়ে সময় কাটাতাম সাগর, নীলাকাশ, সূর্যের আলো বালুবেলা সব মিলিয়ে মনটা ফুরফুরে হয়ে যেত।



মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৬

রুপম শাহরিয়ার বলেছেন: আপনার এই পোষ্ট না পড়লে জানা হত না বাসাম বিছ সমন্ধে।
ধন্যবাদ

১৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪০

শোভন শামস বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম

সাথে থাকবেন আশাকরি

ধন্যবাদ

২| ১৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৮

এবং ব্রুটাস বলেছেন: +++++++++

১৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

শোভন শামস বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম

ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৭

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: +++++

এমন আরো লিখবেন আশা করি।

১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২২

শোভন শামস বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম

ধন্যবাদ লিখাটি পছন্দ করার জন্য

সাথে থাকুন

৪| ১৭ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
লেখাটি পড়ে মনে হল যেন সত্যি আমিও বুঝি ঘুরে এলাম এই মাত্র।

১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৪

শোভন শামস বলেছেন: যদি সে রকম লিখতে পারতাম ............

ধন্যবাদ লিখাটি পছন্দ করার জন্য

সাথে থাকুন

৫| ১৭ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০

সায়েম মুন বলেছেন: ভাল লাগলো পোস্টটা।

১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৪

শোভন শামস বলেছেন: লেখক বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম

ধন্যবাদ লিখাটি পছন্দ করার জন্য

সাথে থাকুন

৬| ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:১৭

ধুম্রজ্বাল বলেছেন: মনরোভিয়াতে স্বাগতম

১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৫১

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ

সাথে থাকুন

৭| ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১:০৪

ছন্ন ছাড়া০০০১ বলেছেন: ++++

১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:২৬

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ +++++

সাথে থাকুন

৮| ১৮ ই মে, ২০১৩ ভোর ৫:৩১

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: আফ্রিকার গল্প পড়তে ভালো লাগে।
+++

১৮ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:২৭

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ লিখাটি পছন্দ করার জন্য

সাথে থাকুন

৯| ১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২২

ইয়ার শরীফ বলেছেন: *কুনোব্যাঙ* বলেছেন: আফ্রিকার গল্প পড়তে ভালো লাগে।
+++

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৩

শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.