নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোজগারী শহর
নাজা ও হাউরে ফুটফুটে দুই বোন। হাউরের বয়স ৪ আর নাজার ৬ বছর। ওদের মা দুজনকে লাল টুকটুকে ফ্রক পরিয়ে দিলে তাদেরকে পরীর মত লাগত। দুজনই অসম্ভব ফর্সা,কালো চুল, নাজার চোখের রং বাদামী হাউরের চোখের রং সাদাটে। রোজগারীর দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ওদের বাসা। কর্ণার প্লট। বাসার দুপাশ দিয়ে রাস্তা। প্লটটা অসম কোনাকুনি তবে কোনাকুনি অংশটাতে সুন্দর ফুলের বাগান। নাজাদের বাসায় এখন আমরা থাকি । কার্দোদের বাসা ছেড়ে এখন এটাই আমাদের নতুন ঠিকানা। বাসাটা বেশ বড় ৩ তলা, বেডরুম ৪টা,বিশাল সুন্দর ড্রইং রুম। তিনতলার রুমের পাশে খোলা ছাদ ও বারান্দা। বারবিকিউ পার্টির জন্য আদর্শ জায়গা। ইউরোস্যাট ও এশিয়ার স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলো দেখার জন্য দুইটা ডিস এন্টেনা ছাদে।। অবস্থাপন্ন পরিবার। এখন নিয়তির পরিহাসে বাসা ভাড়া দিয়েছে বিদেশীদের কাছে। নাজারা এখন থাকে বেসমেন্টে। একসময় সেখানে তাদের ষ্টোররুম ছিল। ছোট পরিবার তাই কোন রকম কেটে যাচ্ছে। নাজার দাদী মারা গেছেন বৃদ্ধ দাদা,বাবা মা নিয়ে ওদের পরিবার। দাদা বৃদ্ধ হলেও এখনো শক্ত সমর্থ। নাজার মা ছোট খাট সুন্দরী মহিলা,তিনিই সংসার সামলান, মধ্য খানে বিশালদেহী নাজার বাবা, পিতা ও স্ত্রীর বাধ্য হয়ে নিরীহ গোবচারা জীবন যাপন করেন । বাসার দুদিকে ছয়ফিট বাউন্ডারী ওয়াল, দুটো গেইট। বেসমেন্টে যেতে বাড়ির মালিক অন্য গেইট ব্যবহার করেন। আমাদের দিকে সাধারণত আসে না। তবে বিকেল হলে ফুটফুটে বাচ্চা দুটোকে মা যখন সাজুগুজু করে বের করে দেয় তখন আমরা ডাকলে আমাদের বারান্দায় এসে বসে। চকলেট বিস্কিট দিলে খুশী মনে খায়। তারপর দুবোন মিলে বেড়াতে যায়।
গ্রীষ্মে কুর্দিস্থানের প্রচন্ড গরমে দুপুর বেলা টেকা দায়। তখন ডেজার্ট ফ্যান একমাত্র ভরসা। বিদ্যুৎ প্রায় থাকে না তাই এসি তেমন চলে না। যখন বিদ্যুৎ আসে তখন ডেজার্ট ফ্যান চালিয়ে দিলে ঘর ঠান্ডা হয়ে যায় ও জলীয় বাষ্প ও থাকে। বিশাল ফ্যান গুলো অনেকটা এসির মতই লাগে,পানির লাইন থাকে এতে, পানি শুকনো বাতাসকে ঠান্ডা করে। কুর্দিস্থানের গরমে ঘাম হয় না। তবে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যায়। তাই সবসময় পানির বোতল সাথে রাখতে হয় ও কিছুক্ষণ পরপর পানি খেতে হয়। তা না হলে ডিহাইড্রেশনের পাল্লায় পড়তে হয়।
শীতকালের বরফ গলা শুরু করলেই কুর্দিস্থানের মাটিতে প্রাণ আসে। সবুজ গাছপালা দ্রুত বেড়ে উঠে গাছে গাছে ফুল ফল ভরে উঠে। আমাদের বাসার ভেতর আঙ্গুরের বিশাল মাচা। আঙ্গুর গাছ আগে দেখিনি, এই শীতের পরেই দেখলাম তর তর করে গাছ বেড়ে উঠে সবুজ হয়ে গেছে। কদিন পর দেখি ছোট ছোট আঙ্গুর ফল দেখা যাচ্ছে। এক দেড় মাসের মাথায় বিশাল বিশাল আঙ্গুরের থোকা মাচা থেকে ঝুলছে, কদিন পরই পাকবে। আংঙ্গুরের মাচায় উঠার জন্য সুন্দর অ্যালুমিনিয়ামের মই আছে। মাচার নিচে মই দিয়ে উঠে কাচি দিয়ে এক থোকা আঙ্গুর পেড়ে এনে গোটা থোকাই বেশিনের পানিতে ধুয়ে গাছের আঙ্গুর ফল একটা একটা করে খাওয়ার অপূর্ব অভিজ্ঞতা পেলাম। গাছ পাকা বড় বড় মিষ্টি আঙ্গুর। কার গাছের ফল কোন বিদেশী খায়। এভাবেই মানুষের রিজিক হয়ত লিখা থাকে। নাজা হাউরেদের বাসায় ও আমরা আঙ্গুর পাঠাতাম, তবে তাদের গাছ বলেই তেমন আগ্রহ ছিল না আঙ্গুরের জন্য। অন্য পাশের বাগানে বেশ কয়েকটা নাসপাতি গাছেও তখন পাকা নাশপাতিতে ভরা ছিল। ফলের সময় কুর্দিস্থানে আপেল,কমলা, আঙ্গুর, নাশপাতি, চেরি পীচ ইত্যাদি ফলে ভরে উঠে। দাম অসম্ভব কমে যায়। ১ কেজি আপেল বা কমলা ৫ দিনার, পিচ বেশ মজার তবে তা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এটার দাম একটু বেশী তাও ১০/১৫ দিনার কেজিতে মজার পিচ পাওয়া যায়। ইরাণ থেকে আসা হালুয়ার মত খেজুরের দাম ২৫ দিনার। এই ফলের মৌসুম দ্রুত শেষ হয়ে আস্তে আস্তে তাপমাত্র বেড়ে গরম কাল শুরু হয়। তখন প্রকৃতি আবার রুক্ষ হয়ে যায়।
কুর্দিস্থানে আমাদের প্রথম রোজার ঈদ ছিল শীতের শেষে। চারিদিকে বরফ একটু একটু করে গলছে। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়াতে ঠান্ডা একটু বেশী এবং বরফ ও পড়ছে বেশ। সকালে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রাস্তার কাদা। ভোরে ঈদের পোষাক পড়ে নামাজের জন্য বের হলাম। মসজিদ একটু দুরে রোজগারীর দক্ষিণে, বড় রাস্তার ওপারে। মসজিদে গিয়ে দেখি মানুষ ভর্তি, বৃষ্টির কারণে খোলা জায়গাতে পানি তাই মানুষ বসতে পারছে না সেখানে। ভেতরে গুমট আবহাওয়া, শীতের সময়, তাই মোজার তীব্র গন্ধ ভেতরে। যাক নামাজ শুরু হলো। ঈদের নামাজের ছয় তাকবির প্রথম রাকাতেই ইমাম শেষ করেন। নামাজ পড়ে আসেপাশের দুএকজনের সাথে বুক মিলালাম। বাসায় সেরওান আমাদের জন্য সেমাই রান্না করেছে। নাজাদের বাসা থেকে ও হালুয়া এসেছে। আমরাও পাঠিয়েছি খাবার। দেশের সংগে যোগাযোগ ইনমার সেটের মাধ্যমে টেলিফোনে। তখন এক মিনিট কথা বলতে লাগত তিন ডলার। কুর্দিস্থানে কুরবানীর ঈদ ও করেছি একটা। তখন গরমকাল, সকালে নামাজ পড়ে এলাম। আমাদের কোরবানী দেশে হয়েছে তাই এখানে কোরবানী কেমনে হয় দেখতে বের হলাম। কোথায় গরু,ছাগল জবাইর ধুম দেখব ভাবছি, দেখি কিছুই নাই। সবাই যার যার বাসায়, কোন উচ্ছ্বাসই নেই। সিরওয়ানকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমাদের এখানে কোরবনী হয়না ? দেখলাম সে চুপ করে কি যেন ভাবছে, মনটা বিষন্ন। কিছুক্ষণ পর বলল হয়, আজকেও অনেকে কোরবানী দিচ্ছে তবে কেউ তা জানে না। চুপচাপ নিজেদের বাসায় তারা কোরবানী সেরে ফেলছে। পরে হয়ত আত্মীয়দের মাঝে মাংশ বিলি করে দেবে। যুদ্ধের পর মানুষের অভাব তাই তারা ঘটা করে কোরবানী করতে পারে না। যাদের সামর্থ আছে তারা তাই কারো মনে ব্যাথা না দিয়ে নিজেরা চুপে চুপে তা আদায় করে। সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা। কেউ বুঝতেই পারে না কে কোরবানী দিল আর কে দিল না। এখানে আমাদের মত গরু কোরবানীর চল নেই। দুম্বা,কিংবা খাসী কোরবানী হয় এখানে বেশী। দুই ঈদের দু রকম অভিজ্ঞতা হলো এই কুর্দিস্থানে। কুর্দিরা বেশ চাপা স্বভাবের হয়। নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যেই রাখে তেমন শেয়ার করার প্রবনতা নেই। কুর্দিস্থানে বিদেশীরা থাকতে পারে তবে চিরদিনই যেন তারা বিদেশী। ইরাকের বিভিন্ন জায়গায় কুর্দিরা এক সময় চাকুরীর সুবাদে থাকত। মাঝে মাঝে ইরাকী আরবদের সাথে কুর্দিদের বিয়েও হয়েছে তবে সবাই জানে যে ছেলে বা মেয়ে আরব, কুর্দি না। আমাদের বাসার সামনের বাসাতে একটা পরিবার থাকত। বাবা মা নেই এক ছেলে সেই এখন বাড়ীর মালিক। তার স্ত্রী ইরাকী আরব, আমরা বুঝতেই পারিনি সে মহিলা কুর্দি না। কিন্তু পুরো এলাকার সবাই জানে মহিলা আরব এবং প্রায় এক ঘরেই বলা যায়। কেউ তার সাথে তেমন মিশে না। স্বামী বেচারা বাইরে থেকে আড্ডা মেরে এসে বাসায় চুপচাপ বসে থাকে। ভদ্র মহিলার এক বছরের একটা ছেলে আছে। মা বেটা দুজনে বাসায় থাকে। মহিলার মানষিক চাপ নেয়ার ক্ষমতা প্রশংসার দাবী রাখে। সাদ্দাম থেকে আলাদা হওয়ার সাথে সাথে কুর্দিরা আরবী শেখাও বাদ দিয়ে দিয়েছে। কুর্দিরা সুন্নি মুসলিম, ইরাকেও সুন্নি আছে তবে এদের সম্পর্ক মনে হয় তেলে জলে। যুগ যুগ ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, বঞ্চনা,অত্যাচারের ফলশ্র“তিতে ধর্ম, দেশ ভাষা কোন কিছুই তাদেরকে পুনরায় একসাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিকে ফেরাতে পারবে না। কুর্দিরা তাদের ভাষাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং স্কুলের আরবী শিক্ষকরা এখন বেকার হয়ে গেছে। এক সময় এই আরবী ভাষা জানা শিক্ষকদের দাম ছিল সবচেয়ে বেশী। চলমান সময় সবকিছুই দ্রুত বদলে দেয়। সময়, সমাজ, এভাবেই এগিয়ে চলে নিয়তির টানে।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে । ভালো থাকবেন , বাকি লিখা গুলো পরবেন
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭
ফিরোজ-২ বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ.....
ভালো থাকবেন ........শুভকামনা রইল..........
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে । ভালো থাকবেন , বাকি লিখা গুলো পরবেন
৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: কুর্দি স্থান এর লেখায় এটা ও ছিল ...।
অনেক দিন পর আপনার বল্গ এ এলাম কেমন আছেন ?
লেখা আগে র মতোই উপভোগ্য
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৭
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ । ছবি দেয়ার চেষ্টা করছি । ভাল আরও কিভাবে করা যায় জানাবেন । ভাল আছি
আপনিও ভাল থাকবেন
৪| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫
ইয়ার শরীফ বলেছেন: আপনার বাকি লেখা গুলু পড়া শুরু করলাম
এতদিন কেন যে চোখে পরলনা
আপনার লেখনীতে কেমন যেন বিষাদের ছায়া আছে, ইরাকিদের চাপা স্বভাব সত্তেও যেভাবে তাদের বিমর্ষ ও হারানো অতীতের জন্য হাহাকার গুলোর কথা বলেছেন টা আসলেই মন খারাপ করে দেয়।
আশা করছি সময় নিয়ে সব গুলো লেখাই পড়ব।
আর হ্যা আপনি কিন্তু লিখে যাবেন। আরও অনেক অনেক ভ্রমন কাহিনী চাই ।
ভালো থাকবেন সব সময়
ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯
শোভন শামস বলেছেন: আপনাদের প্রেরণা ই আর লিখতে আগ্রহ বাড়াবে । পড়ে মন্তব্ব করবেন কেমন হল । ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা
৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১১
রোদেলা দুপুর বলেছেন: সহজ ভাষায় সুন্দর লিখা। আপনার কাছে অনুরধ এভাবেই সহজ ভাবে লিখবেন। কঠিন করার দরকার নাই।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫০
শোভন শামস বলেছেন: আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করবো ।ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪
ইয়ার শরীফ বলেছেন: ভালো লাগছে আপনার লেখা