নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোজগারী আবাসিক এলাকা
রোজগারী সোলেমানিয়া শহরের সুন্দর পরিকল্পিত এক আবাসিক এলাকা। কখনো চড়াই কখনো উৎরাই নিয়ে এই জনপদ। মুল সড়ক থেকে প্রায় চারদিকেই অসংখ্য সংযোগ সড়ক বাড়ীগুলোকে রাস্তার সাথে বেঁধে রেখেছে। এর ভেতরেও সুন্দর রাস্তা সবই পরিকল্পনা মাফিক। বাড়ীগুলো প্রায় ডুপ্লেক্স ধরনের। তিন বা চার তলা বাড়ীও আছে কিছু কিছু। এক তলা বাড়ী প্রায় নেই বলা চলে। প্রতিটা বাড়ীর চার পাশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা দুইটা করে ও গেইট আছে অনেক বাসায়। এলাকার পশ্চিমের ঢালুতে বিশাল খোলা মাঠ উত্তরের চড়াইতে বড় রাস্তা এবং পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকা দক্ষিণে সোলেমানিয়ার মূল সড়ক। পূর্বে ও রাস্তা দিয়ে ঘেরা। এলাকা থেকে বহু রাস্তা এই বড় রাস্তাগুলোতে মিলেছে। উত্তর পূর্ব কোনে পাহাড়ের উপর মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে সোলেমানিয়া ইনডোর ষ্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক অবরোধ চলাকালে এখানে পতপত করে জাতিসংঘের পতাকা উড়ত। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার অফিস ছিল এখানের অর্ধেক অংশে, বাকী অর্ধেকে সেভ দি চিলড্রেন এনজিওর অফিস। এখান থেকে তাকালে সোলেমানিয়া শহরের দৃশ্য পুরোপুরি দেখা যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে কর্মরত বিদেশীরা আশেপাশের আবাসিক এলাকাতে বাড়ী ভাড়া করে থাকত। রোজগারী তাই অনেক বিদেশীদের সাময়িক আবাসস্থলে পরিণত হয়। পুরো সোলেমানিয়া শহর ও আশপাশ সমতল এবং উচু নীচু বাড়ীঘর গুলো ঠিক সেভাবে মানিয়ে বানানো। রাস্তাগুলোতে চড়াই উৎরাই সাধারণ ব্যাপার। সোলেমানিয়া ছাড়িয়ে সাইদ সাদিক কিংবা দোখান লেকের দিকে সমতলভূমি তবে মাওয়াত পেনজুইন এলাকা পাহাড়ী পথে যেতে হয়। রোজগারীতে আমাদের বাসা বেশ সুন্দর। দোতালা বাসা , সামনে লন, দোলনা, বাগান সব মিলিয়ে আকর্ষনীয়। ভেতরের আসবাব পত্রগুলোও চমৎকার। তখন গাছে বেশ নাসপাতি হয়েছিল। একটা জিনিষই প্রথমে মনে ধাক্কা দিয়েছিল তা হলো এলাকাটা উচু নিচু এবং সেই উচু নিচু রাস্তা দিয়ে বাসায় এসে পৌছেছিলাম । আমাদের দেশে সাধারনত ও ধরনের রাস্তা দেখা যায় না। পরে থাকতে থাকতে বন্ধুর রাস্তাকেই স¦াভাবিক মনে হতো। কত যে ড্রাইভ করেছি সে সব পথে।
রোজগারীতে আমরা প্রথমে কার্দোদের বাসায় উঠি। কার্দো ডাক্তারী পড়ছে বিশ একুশ বছর বয়স,ভদ্র এবং অমায়িক ব্যবহার। কার্দোরা একভাই এক বোন বোনটা ছোট, বাবা ডাক্তার ছিল অকালে মারা গেছে। মা অপূর্ব সুন্দরী চল্লিশের কোঠায় বয়স বৈধব্য মেনে নিয়ে বিয়ে করেনি। রোজগারী অভিজাত এলাকা এবং তাদের সুখের সংসার ভালই চলছিল। বাবার মৃত্যু, দেশে অভাব সব মিলিয়ে তাদের নিজের বাসা বিদেশীদের কাছে ভাড়া দেয় । ডুপ্লেক্স বাসা, সামনে সুন্দর সবুজ লন, লনে ডাবল সাইজ গদি লাগানো দোলনা, একপাশে কেরোসিন তেল রাখার ড্রাম, বিদ্যুৎ প্রায় থাকে না তাই শীতকালে হিটিং এর জন্য তেল দরকার । বাসার ডিজাইন চমৎকার উপরে বারান্দা ও দুটো রুম নীচে ড্রইং ডাইনিং বেডরুম। সনাবাথের ও ব্যবস্থা আছে বাড়ীতে। সুলেমানিয়ায় প্রায় সব অভিজাত বাড়ীতে এই সনাবাথের ব্যবস্থা আছে। সব সময় পানি থাকে না বা গোসল করা হয় না বলে মাসে ২/১ বার এরা সনাবাথ করে শরীর থেকে সব ময়লা সাফ করে। বাসার সামনে বাগান বিলাস ফুলের ঝোপ,সব মিলিয়ে অপূর্ব। বাসার সামনেই জিরের নানীর বাসা,জিরের বয়স দুই বছর। বুড়ো নানী তার ছেলে এখানে থাকে এখন জিরকে নিয়ে ওর মা নিজের মায়ের বাসায় উঠেছে। জিরের বাবা মাঝে মাঝে চুপি চুপি এসে চলে যায়। কখনো জানিনি কেন এরকম করে। তবে বুঝতে পারতাম যে চাকুরী নেই বেকার তাই লজ্জায় পরিবারের কাছে আসে না বা পরিবার চালাতে অক্ষম। কুর্দিস্থানে এই দুঃখ মনে গেঁথে গিয়েছিল। কুর্দিরা একটু চাপা স্বভাবের, তাদের নিজস্ব কষ্ট গুলোকে কারো সাথে তেমন একটা শেয়ার করত না। করবেই বা কাদের সাথে। ইরাকী আরবরা তাদের পছন্দ করে না, তারাও আরবদের পছন্দ করে না, আর বিদেশী, ইউরোপীয়দের তাদের দুঃখ বুঝতে বয়েই গেছে। জির বিকেল বেলা খেলা করত, পাশের বাসার বাচ্চারা তাকে নিয়ে আসত। সাদা গাবদা গোবদা ছেলে বেশ মায়া লাগত। মাঝে মাঝে কোলে নিয়ে চকলেট দিতাম ওর নানী ও মা আমাদের মনে হয় বেশ পছন্দ করত। জিরের মাও অপূর্ব সুন্দরী ত্রিশের কোঠায় বয়স মাঝে মাঝে দেখা হতো তার সাথে। তার বাচ্চাকে আদর করার সুবাদে আমাদেরকে বেশ পছন্দ করতেন। শব-ই-বরাত এর সন্ধ্যায় হঠাৎ করে দেখি জিরের মামা খাবার নিয়ে হাজির। বাকলাভা ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় জিনিষ সাথে মাংস পরোটা, কুর্দি ষ্টাইলে রান্না আমাদেরও বাংলাদেশী পিঠা,হালুয়া ছিল তাদেরকে তা দিলাম এবং জিরের জন্য কিছু চকলেট দিলাম। বেশ খুশী হলো,পরদিন বুড়িমা জানালো আমাদের খাবার বেশ মজা আমরাও তাকে খাবার পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ দিলাম।
সামনের আরেকটা বাসায় একটা পরিবার থাকত। এরা হাসিখুশী একছেলে দুই মেয়ে। ছেলেটা অন্যায় অবরোধ এর ব্যাপার বুঝত তাই এন জি ও গুলোতে কর্মরত বিদেশী ও জাতিসংঘের লোকজনের দিকে তেমন হাসিমুখে তাকাতো না। মেয়ে দুটো এখনও আনন্দের সময় পার করছে তাই তারা সামনের লনে খেলাধুলা করত। এরা বেশ রক্ষণশীল খৃষ্টান। বাড়ীর কর্তার মুখেও ম্লান বেদনা দেখতাম। আমাদের হাউজকিপার থেকে জানতে পেরেছিলাম যে, তারা ইউরোপের কোন দেশে চলে যাবে। দুর্বিসহ এই জীবন কারইবা ভাল লাগে।
আমাদের বাসার একপাশে তিনতলা বাড়ী, বেশ বনেদী সওদাগর। ভদ্রলোক মধ্য পঞ্চাশের এবং ভদ্র মহিলাও বয়স্ক তবে তাদের ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চা আছে। এই ভদ্র মহিলাও আমাদের প্রতি সদয় ছিলেন দেখা হলে সালাম দিয়ে চোয়ানী অর্থাৎ কেমন আছেন বললে হাসি দিয়ে বাসি চাখি বা তু চোয়ানী বা তুমি কেমন আছো বলত। এছাড়া অন্য প্রতিবেশী বা সামনের বাসাগুলোর কারোর সাথেই সখ্যতা গড়ে উঠেনি এবং তারাও হয়ত আমাদের মত বিদেশীদের এড়িয়ে চলতে চাইত। কুর্দিরা অতিথিপরায়ন তবে যে সময় আমরা সেখানে ছিলাম সে সময়টা তাদের জন্য ছিল দুঃসময়। জাতিসংঘের অবরোধ তাদের হতাশা ও দারিদ্রে ফেলে দিয়েছিল। সাদ্দাম এর সময় ভয়ভীতি থাকলেও চাকুরী ছিল খাবার ছিল। এখন তাও নেই। তাই জাতিসংঘ বা এই সংস্থায় কর্মরত বিদেশীদের তারা কখনো আপন করে নিতে পারেনি। ফুড ফর ওয়েল প্রোগ্রামের নামে যে সব ছলনা চলছিল তা কোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে স্বজ্ঞানে মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৬
শোভন শামস বলেছেন: বাকি লিখা গুলো পরবেন আশা করি, আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ছবি অ্যাড করে নতুন ভাবে লিখেছন ...
ভাল লেগেছে এটা বেশি ...
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩
শোভন শামস বলেছেন: তাই চেষ্টা করছি । ছোট করে লিখে ছবি দিবো । পরবেন সব সময়।ভালো থাকবেন । ধন্যবাদ।
৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩৬
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লাগছিল পড়তে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪৯
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২০
ফিরোজ-২ বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।