নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরব দেশগুলোতে শিয়া সুন্নীর মধ্যে কি সমস্যা বাংলাদেশ থেকে তা বোঝার তেমন কোন উপায় নেই। এখানে সবার সহাবস্থানেই আমরা অভ্যস্থ। বাগদাদ শহরে বেড়ানোর সময় মাঝে মাঝে লোকজন সালাম দিয়ে বলত হিন্দিয়া অর্থাৎ ভারতীয় কিনা? সালামের উত্তর দিয়ে বলতাম বাংলাদেশী। সালাম শুনে খুশী হয়ে সাদেকি বা বন্ধু বলে সম্ভাসন করত। বলত লা মুলকিলা কোন সমস্যা নেই। পুলিশ ও স্থানীয় বা বহিরাগত আরবদের এবং অন্যান্য ইউরোপীয় পর্যটকদের যেমন চেক করত বাংলাদেশী জানার পর তারা তেমন কড়াকড়ি কখনো করেনি। অবশ্য ইমিগ্রেশন এর লোকজনের কথা আলাদা। বাগদাদে আসলে বিকেলের দিকে সাধারণত হাটতে বেরুতাম বাগদাদের রাস্তায়। তখন আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামছে। সূর্যের তীব্রতা কমে শীতল হচ্ছে পৃথিবী, দোকান গুলো ও রাস্তায় লাইট জ্বলছে। অফুরন্ত তেল সম্পদের দেশে খাদ্য ও ঔষধ না থাকলে কি হবে বিদ্যুৎ আছে অফুরন্ত, বাগদাদের রাস্তা তাই আলোকিত। মাইকে মাগরেবের আজানে চারিদিক মুখরিত হয়। মুসল্লীরা মসজিদের দিকে নামাজের জন্য রওয়ানা হয়। রাস্তায় চলতে চলতে পাশেই মসজিদ দেখে ভেতরে ঢুকে গেলাম। মসজিদের লোকজনকে কেমন যেন অন্যরকম মনে হলো। জামাতে নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়ালাম। কেউ কেউ সেজদার জায়গায় ছোট গোলাকার কি যেন রাখছে। এসব কিছু গায়ে না লাগিয়ে জামাতে দাড়িয়ে গেলাম। মাগরেবের নামাজ আমরা তিন রাকাত পড়ি, তিন রাকাত শেষ করে ইমাম সাহেব দাড়িয়ে গেল। ঠিক বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে। নামাজ শেষে আবার খোৎবার মতন বক্তব্য শুরু হলো। বুঝলাম কিছু একটা গন্ডগোল আছে এখানে। আস্তে করে উঠে এলাম। একজন মুসল্লী আমাদের ডেকে বলল আজনবী? বিদেশী কিনা। তারপর বলল হিন্দিয়া? অর্থাৎ ভারতীয়? ইশারায় সালাত শেষ করার জন্য মসজিদের এক কোনা দেখিয়ে দিল। তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করে পথে বেরিয়ে গেলাম। পরে জেনেছি আমরা শিয়া মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। বিদেশী বলে বুঝতে পারিনি কোনটা কাদের মসজিদ এখন ও গেলে বুঝব না। আর সেজদার মাটিটা নাকি কারবালার মাটি। অনেক শিয়া এই মাটিতে সেজদা দেয়, বাজারে এটা কিনতে ও পাওয়া যায়। ইরাকী সুন্নী কয়েকজন পথচারী জিজ্ঞাসা করল কোন সমস্যা হয়নি তো? অবাক হবার পালা, নামাজ পড়তে গেলে সমস্যা কেন হবে। তারপর জানলাম আমরা আরব থেকে বহু দুরের দেশের মুসলিম বলে আমাদের জন্য শিয়া বা সুন্নী লা মুসকিলা, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ইরাকের সুন্নী কেউ শিয়াদের মসজিদে কখনোই যাবে না এবং শিয়ারাও এখানে সুন্নিদের মসজিদে যায় না।
বাগদাদে গিয়েআরবী ভাষা শিখতে ইচ্ছে হলো। বই কিনতে হবে। মুতান্নবী ষ্ট্রীটে গেলাম। বিশাল মার্কেট রাস্তার দুপাশে। ষ্টেশনারী,অফসেট পেপার ও অন্যান্য জিনিষের পাইকারী গোডাউন এখানে। বই কিনতে গিয়ে দোকানীদের সাথে কথা হলো তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও শিয়া মতাবলম্বী। সাদ্দাম হোসেনকে কেউ পছন্দ করে না। অবাক হলাম তাদের কথা শুনে। সাদ্দাম সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের উপর নানা বিধিনিষেধ দিয়ে তাদের জীবনকে বিপর্যস্থ করে তুলেছে। শিয়ারা মূলত ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে অর্থাৎ অর্থনীতি তাদের হাতে আর সুন্নী শাসকদের হাতে শাসন ক্ষমতা এই দুই দলের ভেতর তীব্র বিরোধ বাইরে থেকে কতটুকুই বা আমরা বুঝতে পারি। একটা বই ও চামড়ায় বাধানো নোট খাতা কিনলাম। এদেশে এত জিনিষ পত্র পাওয়া যায় তবুও জাতিসংঘের নির্দেশে বিদেশীরা এখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিষ না কিনে সাইপ্রাস থেকে প্লেনে করে তা নিয়ে আসে। এটাও অবরোধের আরেক চিত্র। দোকানদার চা খেতে দিয়ে গল্প শুরু করল। হিন্দিয়া, মুসলিম, ব্রাদার ,গুড গুড। হাবিবি সাদিকি অর্থাৎ বন্ধু। নো প্রবলেম। জানতে পারলাম ইরাকের সেনাবাহিনীতে শিয়া যুবকদের জোর করে যোগ দিতে বাধ্য করে। এক সময় ইরাকী সেনাবাহিনীতে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা ছিল। প্রায় সব কিছুই ছিল উন্নত মানের এবং খাবার দাবার ফ্রি এবং অঢেল,ইরাণ ইরাক যুদ্ধের পর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতিতে অর্থ সংকট দেখা দেয়াতে রেশন ও অন্যান্য সুবিধা সব বন্ধ। কষ্টের ট্রেনিং ঠিক আছে কিন্তুসুবিধা নেই, তাই কেউ সেনাবাহিনীতে যেতে চায়না। তা ছাড়া যুদ্ধে যুবক সম্প্রদায় প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কুয়েত যুদ্ধের পর ইরাকী সেনাবাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে দ্রুত আত্মসমর্থনের এটাও একটা কারণ। যুদ্ধ করার মত মনোবল তখন ইরাকী সৈন্যদের ছিল না। বাগদাদের রাস্তায় আশির দশকের জমকালো পরিবেশ কবে যে আবার ফিরে আসবে তা কেউ জানে না। তবে বাগদাদবাসী আশায় বুক বেঁধে আছে। শিয়া সুন্নীদের মধ্যকার বিবাদ এবং শাসক ও শিয়া ব্যবসায়ীদের বিরোধ বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও তার পরিনতি পৃথিবী দেখেছে। সাদ্দামের সময় শিয়ারা বিদ্রোহ করলে পুরো গ্রামের মানুষকে এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা হতো পরে গ্রামকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে চাষাবাদের ব্যবস্থা নেয়া হতো। এসব কথা যদিও লোক মুখে প্রচলিত ছিল এবং বিশ্বাস যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। নিজে না দেখলে এবং এর প্রমান না পেলে এগুলো বলা অবশ্যই ঠিক না। তবে এ সব কথা প্রচ্ছন্ন ভাবে বুঝিয়ে দেয় দেশের ভেতর শান্তি নেই। যে শান্তি ইরাকবাসী শিয়া, সুন্নী কিংবা কুর্দিরা প্রত্যাশা করছে তা কতদুরে কে বলতে পারে। আজও সে শান্তি কি বাগদাদবাসী কিংবা কুর্দিস্থানের অধিবাসীরা ফিরে পেয়েছে। আদৌ কি পাবে এসব প্রশ্ন মনে নিয়েই হোটেলে ফিরে আসতে হতো।
নাইফ পেইন্টিং
কুর্দিস্থান থেকে বাগদাদে বেড়াতে এলে একেক সময় একেক হোটেলে থাকতাম। প্রথমে ছিলাম ফন্দুক কান্দিল বা কান্দিল হোটেলে তখন বাগদাদে নতুন, সবকিছুই কেমন যেন থমথমে লাগত। বিদেশীদের জন্য বাগদাদ তখন আমন্ত্রনের হাতটা গুটিয়ে নিয়েছিল। সাধারণ হোটেল গুলো পর্যটকের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদেশীদের জন্য নিরাপত্তার অজুহাতে দুই তিনটা ফাইভ ষ্টার হোটেলে থাকার আদেশ ছিল । কান্দিল হোটেলের পাশে কারাদা রোড। এটা বাগদাদের মোটামুটি পরিচিত রাস্তা। এ রাস্তার দুপাশে অনেক মার্কেট আছে। সন্ধ্যায় কাজ না থাকলে কারাদা রোড দিয়ে হাঁটতে বেরোতাম। হাঁটতে হাটতে মাঝে মাঝে থেমে গিয়ে কোন খাবারের দোকানে ঢুকে পড়তাম। প্রায় দোকান গুলোতে সোয়ার্মা পাওয়া যেত। বিশাল লোহার শিকে স্তরে স্তরে মাংশের টুকরো ঢুকিয়ে তা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। মাংশের নিজস্ব চর্বি গলে মাংস পুড়িয়ে নরম করছে। বাড়তি কোন মশলার তেমন ব্যবহার দেখিনি। কেউ চাইলে দক্ষ হাতে ছুরি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাংস কেটে লম্বা মতন পাউরুটিতে ভরে শশা টমাটোর সালাদ সহ হাতে ধরিয়ে দিত। দাম মামুলী ২৫০ দিনার। ১ ডলারে তখন প্রায় ১৮০০ ইরাকী দিনার পাওয়া যেত। এর সাথে লেমন ড্রিংকস ২০০ দিনার দিয়ে খেলে চমৎকার ডিনার হয়ে যেত। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে দেখলাম কয়েক জন আর্টিষ্ট রাস্তার পাশে ্বসে ক্যানভাসে ছবি আঁকছে। পাশেই বহু আর্ট গ্যালারী, পেইন্টিং এ ভর্তি, কৌতুহল হওয়াতে কাছে গেলাম। ছোট ছোট পটের মধ্যে রং, কোন ব্রাস নেই একটা ছুরিতে একটু রং নিয়ে ছুরির খোঁচায় ছবি আঁকছে। এগুলো নাইফ পেইন্টিং। বাগদাদের চিত্রশিল্পীরা এভাবে তাদের ছবিগুলো আঁকে। বংশ পরষ্পরায় তারা শিল্পী এবং এই অভাবের দিনেও তাঁরা এঁকে যাচ্ছে জীবনের ছবি। আহমেদ মোহাম্মদ এদের খুব কমন নাম। বিদেশীদের কাছে এই নামই বলে। সালাম দিয়ে তরুন একজন আর্টিষ্ট এর পাশে বসলাম, হাসি মুখে বসতে বলল। আমাদের সামনেই অল্প একটু কালচে রং এ ছুরি ডুবিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে একটা ছবি এঁকে দিল। দশ ডলারে এ ধরনের ছবি বেশ কয়েকটা বিক্রি করে। তবে হাজার ডলারেরও ছবি আছে, ছবি যারা বোঝে তারা তা কিনে নিয়ে যায়। মুলত বিদেশীরাই এই ছবির ক্রেতা। আমরা তার পাশে বসে কিছুক্ষণ ছবি আঁকা দেখছিলাম। তার বাবা যুদ্ধে মারা গেছে তিনিও শিল্পী ছিলেন। বাপের পেশাতে ছেলে যোগ দিয়েছে। অন্য কিছু করতে তার ভাল লাগেনা। একটু ছরির খোঁচায় তার হাত দিয়ে একটার পর একটা ছবি বের হচ্ছে। বাগদাদের জীবন,বেদুইন বসতি,বাজার এর জনসমাগম, জলমগ্ন এলাকার বাড়ীঘর আরো কত দৃশ্য। জাহাজ, নৌকার ছবিও অনেক আছে। কারা কিনে এই ছবি একথা বলায় সে বলল অনেকেই আসে তবে আগে অনেক ক্রেতা ছিল এখন কম তাই মুখটা শুকনো, অভাব এখন চারধারে হানা দিয়েছে। আমরা থাকতে থাকতেই বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় গ্যালারী গুলোতে ঢুকে বড় বড় আকর্ষণীয় পেইন্টিং কেনাকাটা করছিল। অনেকগুলো কেনার পর মোটা প্লাষ্টিকের ড্রামে রোল করে গাড়ীতে করে নিয়ে যায়। পরে তুরস্ক কিংবা জর্ডান দিয়ে নিজ দেশে তা পাঠিয়ে দেয়। দেশে এভাবে ছবি আঁকা দেখা ও কেনার তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। ভাল লেগে গেল ছবি গুলো দেখে। বাগদাদের শিল্পীরা অপূর্ব পেট্রেট আঁকতে পারে। অনেক মানুষ বিভিন্ন সাইজের পোট্রেট বানাচ্ছে। ১০ ডলার থেকে শুরু করে ১০০ ডলার দিয়েও কেউ কেউ নিজের পোট্রেট একে নিচ্ছে। বাঁধাই করলে অসুবিধা হবে বলে রোল করে এসব ছবি নিয়ে যায়। পোট্রেট আঁকাতে হলে ছুটির দিনে সময় করে আসতে হয় এবং শিল্পীকে বেশ কিছু সময় দিতে হয়। এছাড়াও ছোট ছবি দিলেও তারা তা থেকে প্রোট্রেট এঁকে দেয়। নিজ্রে ছবি আকানোর ইচ্ছে ছিল না বলে পোট্রেট এর অর্ডার দেয়া হয়নি। আমাদের সাথে ডেনিশ ও ডাচরা বহু ছবি কিনে নিত। একবার তাদেরকে এত ছবি কেনার কারণ জিজ্ঞাসা করাতে বলল ইউরোপে এসব ছবির বেশ কদর। এখানে পাঁচ দশ ডলারে যে ছবি কেনা হচ্ছে ইউরোপে তা অনেক চড়া মূল্যে বিক্রি করা যাবে। বুঝতে পারলাম ব্যবসায়িক কারণে দিনারের অবমূল্যায়নের সুযোগে তারা দামী পেইন্টিং গুলো সংগ্রহ করছে। মোহাম্মদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জানলাম এই ছবি বিক্রির টাকায় তার সংসার চলে। যখন ভাল বিক্রি হয় তখন মনটা খুশীতে ভরে উঠে। মাঝে মাঝে তেমন বিক্রি হয় না তখন ক্লান্ত দেহে ঘরে ফেরা। মানুষ গুলো যেন দুঃখ বোধকে সহজ ভাবে গ্রহন করে নিতে শিখে গেছে। কয়েকটা ছবি কিনব বলাতে খুশি হয়ে আমাদেরকে তার আঁকা ছবি দেখিয়ে তার মধ্য থেকে পছন্দ করতে বলল। আমরা কজন দেখে দেখে ইরাকের স্মৃতি হিসেবে যেগুলো ভাল লাগল সেগুলো কিনলাম। মোহাম্মদ খুশি হয়ে আমাদের সামনেই রং দিয়ে একটা ছবি এঁকে উপহার হিসেবে দিল। বলল এটা আমার পক্ষ থেকে, আমাকে মনে রেখো। তার হাসিমুখ দেখে ছবি গুলো নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৪
শোভন শামস বলেছেন: সাম্নের লিখা গুলোতে ছবি দিতে চেষ্টা করছি । ধন্যবাদ
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮
নিমপাতা১২ বলেছেন: যুদ্ধ মানুষের জীবনে শুদু কষ্ট দেয়
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫
শোভন শামস বলেছেন: ধন্যবাদ, সত্যি এবং নির্মম বাস্তবতা
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৮
সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর বলেছেন: অননননননেক ভালো লাগলো। কিছু ছবি দিলে মনে হয় আরো বুঝতে পারতাম বিষয়গুলো, গভীরভাবে।