নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নব্বই এর দশকের শেষভাবে ইরাক বিধ্বস্থ। আন্তর্জাতিক অবরোধ ইরাকীদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। ইরাক এয়ারওয়েজের বিমান আকাশে উড়ে না। বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান উড়া নিষিদ্ধ। বিচিত্র হাজারো সমস্যায় যখন ইরাক জর্জরিত ঠিক এই সময়ে ঢাকা থেকে বাগদাদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এক বছর ইরাকে থাকতে হবে তাই একই সাথে মানষিক প্রস্তুতিও নিচ্ছি। কুয়েত এয়ার ওয়েজে করে কুয়েত হয়ে বাগদাদ যেতে হবে। কুয়েতের ভিসা নেয়া হয়েছে। বাকী ব্যবস্থা কুয়েতে গেলে হবে আশা করা যাচ্ছে। যথা সময়ে বিমান দেশ ছেড়ে বিদেশের পথে উড়াল দিল। বিমানের সিটে গা এলিয়ে ভাবছিলাম আবার কতদিন পর দেশে ফিরব।
বিকেল বেলা কুয়েত বিমান বন্দরে নামলাম। বাইরে প্রচন্ড রোদ তবে বিমান বন্দরের ভেতর এসির ঠান্ডা আমেজ। আরব দেশে শীতকাল শুরু হবে হবে করছে। ডিউটি ফ্রি শপে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম তারপর ট্রানজিট লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলাম। যেখান থেকে আমাদের এয়ার পোর্টের সাফির হোটেলে নিয়ে গেল। কুয়েতে ট্রানজিট যাত্রীদের বাইরে যাওযার অনুমতি না থাকলে এই হোটেলে রাখা হয়। সন্ধ্যার দিকে হোটেলে এলাম। রুমগুলো সুন্দর, থাকার ব্যবস্থা বেশ ভাল । রিসেপশনে সন্ধ্যা সাতটার সময় ডিনারের জন্য ডাইনিং এ আসতে বলল। পরদিন ভোরের নাস্তা সকাল সাতটার মধ্যে শেষ করে আমাদের বাগদাদের বিমানে চড়তে হবে।
রুমে ফ্রেস হয়ে হোটেলের লাউঞ্জে নেমে এলাম। চারিদিকে কাঁচ লাগানো, দুরে রানওয়েতে প্লেনের উঠানামা দেখা যাচ্ছে। আসে পাশে কুয়েত বিমান বাহিনীর অনেক বিমান হ্যাংগারে রাখা । দুরে হাইওয়ে দিয়ে কুয়েত শহরের দিকে গাড়ী চলছে। চারিদিকে রুক্ষ মরুময় দৃশ্য, গাছপালা ও সবুজের অনুপস্থিতিতে চোখে কেমন যেন ধাক্কা লাগে। রিসিপশনে বেশ কয়েকটা দোকান। কসমেটিকস,ঘড়ি ও নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু কিছু জিনিষ সেখানে পাওয়া যায়। সেলস গার্লগুলো সবই ফিলিপিনো। স্থানীয় মালিক কিংবা কুয়েতি ম্যানেজারদের সাথে চোখে চোখে কথা বলছে। কলকল করে হাসছে। তাদের ঢলাঢলি বেশ চোখে পড়ার মত। ডিনারে যাওয়ার আগে এক সেলস গার্লকে নিয়ে এক কুয়েতি গাড়ী করে হাওয়া হয়ে গেল।
বুফে সিস্টেমে ডিনার, বেশ অনেক আইটেম। খেতে বসতেই দেখলাম একজন ওয়েটার আমাদের পাশে ঘোরাঘুরি করছে। কাছে ডাকলাম, বাংলাদেশের ছেলে। আমাদেরকে দেখে ও কথা বলতে পেরে বেশ খুশী হলো। কোন কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করল, সবই আছে তাই তাকে ব্যস্ত হতে মানা করলাম। তারপরও সে আমাদের জন্য স্পেশাল কিছু করতে চায়। খাওয়া শেষে কোথা থেকে মজার মজার কিছু ডেজার্ট ও ফল এনে দিল। রুমে নিয়ে খেতে বলল কিছু ফল। তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম, তার যদি কোন সমস্যা হয়,একথা বলাতে বলল, সে এই শিফটের দায়িত্বে আছে। হোটেলে বাংলাদেশী বোর্ডার তেমন পায় না তাই আমাদের দেখে তার আবেগ সামলাতে পারেনি। দেশের কথা শুনতে পেরে তার প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছে আজ। আমরাও তার আনন্দমাখা মুখ দেখে রুমে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ টিভি দেখে ঘুম।
ভোরবেলা উঠে জানালা দিয়ে একটু ঘোলাটে সকাল দেখছিলাম। তখনো সূর্য উঠেনি। দেশে এ সময়টা বেশ পবিত্র পবিত্র লাগে, এখানে কেমন যেন কুয়াশা কুয়াশা ভাব। সকালে নাস্তা সেরে মাইক্রোবাসে করে বাগদাদগামী বিমানে চড়ে বসলাম। প্রায় দুই ঘন্টা রুক্ষ মরুভূমির উপর দিয়ে উড়ার পর বিমান হাব্বানিয়া সামরিক বিমান ঘাটিতে নামল। স্থানীয় সময় তখন সকাল এগারোটা। আসার পথে নীচে মরুভূমির মধ্যে ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় ইরাকীদের ফেলে যাওয়া ও ধ্বŸংস হয়ে যাওয়া ট্যাংক, জীপ, ট্রাক ইত্যাদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখলাম। কাল কাল দাগ দেখে বোঝা যাচ্ছিল এগুলো বোমার আঘাতে ও আগুনে জ্বলে গেছে। সারা পথে কোন সবুজের চিহ্ন নেই। মানুষজন এত উপর থেকে দেখা যায় না, তেমন জনপদ ও দেখিনি। একঘেয়ে দৃশ্য কিছুক্ষণ দেখে আর দেখতে ইচ্ছা করেনি তাই চোখ বন্ধ করে তন্দ্রার চেষ্টা করছিলাম।
বিমান থেকে নেমে একটা গরমের হলকা অনুভব করলাম। বাইরে বেশ গরম । দুরে রানওয়েতে মরিচিকা দেখা যাচ্ছে। ইরাকী যুদ্ধ বিমান গুলো নো ফ্লাই জোনের কারনে উড়তে না পেরে মাটিতে গর্জন করছে। কতগুলো ধ্বংসও হয়ে গেছে দেখলাম। বিশাল বিমান ঘাটি। মাটির নীচে প্লেন রাখার জন্য বাংকার আছে। কোন কোনটা দোতালা। তেল পোড়া কটু গন্ধ ভাসছে চারিদিকে, বিমান গুলোর একজষ্ট থেকে বের হওয়া ধোঁয়া বদ্ধ মরুভুমির বাতাস ভারী করে তুলছে।
নামার পর কাষ্টমস চেকিং, হেলে দুলে ইরাকী কাষ্টমস অফিসাররা বিদেশীদের মালপত্র চেক করছে,তাদের কোন তাড়া নেই। ঘন্টাখানেক পর সব ফর্মালিটিজ শেষ করে বাইরে এলাম। মালপত্র ভ্যানে তুলে দিয়ে এসি কোষ্টারে বসলাম। এয়ার পোর্ট থেকে আমাদের বাস বাগদাদের পথে চলা শুরু করল। বিশাল এয়ার পোর্ট। চওড়া রাস্তা ও বিভিন্ন অলি গলিতে অনেকক্ষণ ঘুরপাক খেয়ে অবশেষে বাইরে এলাম। বাইরে খোলা মরুভূমির বাতাস একট ু ভালো মনে হলো। কাছেই হাব্বানিয়া শহর। এক সময় এই শহর বিখ্যাত টুরিষ্ট স্পট ছিল। এখানে টুরিষ্ট ভিলেজ, সুইমিং পুল, হোটেল , রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদি পরিকল্পিত উপায়ে বানানো রয়েছে। যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে এগুলো এখন পরিত্যক্ত। পর্যটকরা এই দুঃখ জাগানিয়া দেশে কেন আসবে। ইরাকে আনন্দের অবশিষ্ট আর কিই বা আছে।
গাড়ী দ্রুত বেগে চলছে। রাস্তাগুলো বিশাল পিচঢালা, মাঝে মাঝে একটু খারাপ হলেও বেশ মজবুত ভাবে বানানো। কিছুক্ষণ চলার পর একটা জনপদে ঢুকে পড়লাম। শহরে অল্প কিছু মানুষ,মুখে হাসি নেই। হেঁটে চলছে কিন্তু যেন প্রানহীন মলিন। দোকান পাট দেখা যাচ্ছে কিছু খোলা, কিছু বন্ধ। এই দুপুরের গরমে কিছু মানুষ বাইরে হাটছে তবে সংখ্যা হাতে গোনা। বাগদাদ শহরের কাছে যতই আসছে ততই ফ্লাই ওভার,মোটর ওয়ে দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমি দেশগুলোর মত বিভিন্ন শহরের নাম ও দুরত্ব রাস্তার উপর বোর্ডে লিখা রয়েছে। কোন শহরে কোন এক্সিট দিয়ে বের হতে হবে তা তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো রয়েছে। একটু বেখেয়াল হলে ২০/৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরে আবার সেই জায়গায় আসতে হবে। সব ওয়ানওয়ে রোড, ড্রাইভার একশ কিলোমিটারের বেশী স্পিড়ে গাড়ী চালাচ্ছে। সোমালীয় ড্রাইভার, আরবী ভাষা ভাষী, চুপচাপ নিজ মনে চালিয়ে যাচ্ছে। আরবী একটা গান বাজছে ক্যাসেটে।
তাইগ্রিস নদী , বাগদাদ আব ুনাওয়াজ সড়ক, বাগদাদ
আরব্য উপন্যাসের বাগদাদ নগরীতে চলে এলাম। বিশাল বিশাল রাস্তা বিশাল এলাকা নিয়ে নানা মনুমেন্ট, জায়গার যেমন কমতি নেই তেমনি বিশাল বিশাল মুনমেন্ট গুলোও শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। কোথাও অর্ধ সমাপ্ত দোতলা তিনতলা রাস্তা। পাঞ্চাশ বছরের নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এসব বানানো হচ্ছিল। যুদ্ধ সব থামিয়ে দিয়েছে। বাগদাদ এখন আর সেই লাস্যময়ী নগরী নয়। জীবন সংগ্রামে কোন মতে ধুকে ধুকে বাদদাদ বেঁচে রয়েছে। প্রানোচ্ছ্বল সেই বাগদাদ নগরীর কথা অনেক শুনেছিলাম,বাস্তবের বাগদাদ দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। ক্যানাল হোটেলে এসে নামলাম। এখানে বিভিন্ন ফর্মালিটিজ শেষে কারাদা দাখেলে গেলাম। এই রাস্তার পাশে বেশ কিছু হোটেল আছে। আপাতত এগুলোর যে কোন একটাতে কয়েক দিন কাটাতে হবে।
হে দুখিনী ইরাক তোমার দুঃখ বাড়াতে নয়
সুদিনের ফেলে আসা কিংবা অদেখা অজানা সুখের আশায় নয়
তোমাকে অনুভবে পেতে চেয়েছি তোমার দুঃসময়ে
সমব্যাথীর মমতায় সহানুভুতি ও সহৃদয়তায়।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৩
শোভন শামস বলেছেন: ছবি আপলোডে একটু সমস্যা হচ্ছে। পরের গুলো লিখছি । পরবেন আসা করি। ধন্যবাদ।
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯
হাঁসি মুখ বলেছেন: তোমাকে অনুভবে পেতে চেয়েছি তোমার দুঃসময়ে
সমব্যাথীর মমতায় সহানুভুতি ও সহৃদয়তায়।
অসাধারন।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫২
শোভন শামস বলেছেন: পরের গুলো পরবেন আসা করি। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৮
আরজু পনি বলেছেন:
একটা প্রাসংগিক ছবি দিলে আরো ভালো হতো।
পরেরটুকু লিখবেন তো?!